কওমি মাদরাসা ও বাংলা ভাষাচর্চা
কওমি মাদরাসা ও বাংলা ভাষাচর্চা - ছবি : সংগ্রহ
ভাষা আল্লাহতায়ালার বিরাট একটি দান। ভাষার রয়েছে প্রচণ্ড শক্তি; মনের ভাব প্রকাশের একমাত্র মাধ্যম ভাষা। জ্ঞান ও প্রজ্ঞা হাসিলের মাধ্যম হচ্ছে ভাষা অনুশীলন। জনমতকে সুসংগঠিত করার জোরালো মাধ্যম ভাষার ওজস্বিতা। দীনের দাওয়াত-তাবলিগ, সংস্কৃৃৃতির বিকাশ ও সভ্যতার অগ্রগতিতে ভাষার অবদান অনস্বীকার্য। কোনো ভাষার প্রতি বিদ্বেষপরায়ণ হওয়া উন্নত রুচির পরিচয় বহন করে না। একজনের পক্ষে সব ভাষা আয়ত্ত করা সম্ভব নয়। তবে জ্ঞানার্জনের উদ্দেশ্যে অন্তত কয়েকটা ভাষা শেখা আবশ্যক। মাতৃভাষা, ধর্মীয় ভাষা ও কমপক্ষে ২-৩টি বিদেশী ভাষা। বর্তমান দুনিয়ায় ভাষা আছে ৬ হাজার ৫০০টি। বেশি মানুষ কথা বলে প্রধানত ১০টি ভাষায়।
জাতিসঙ্ঘ কর্তৃক ২১ ফেব্রুয়ারি ‘ আন্তর্জাতিক মাতৃ ভাষা দিবস’ ঘোষিত হয়েছে। বাংলা ভাষার প্রতি এটা আন্তজাতিক শাহ বিশ্বের সম্মান। বাংলা ভাষার মানুষ হিসেবে এটা আমাদের জন্য কম গৌরবের কথা নয়। ভাষার জন্য এ দেশের মানুষ বুকের তাজা রক্ত দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। বাংলায় অনূদিত ‘অষ্টাদশ পুরাণ’ কিংবা ‘রামের চরিত’ পাঠ ও শ্রবণ করলে ‘রৌরব’ নরকে নিক্ষেপ করা হবে এমন শক্তিশালী ধারণা চালু থাকায় অতীতে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিকশিত হয়নি। মুসলমান শাসকবর্গের উদার পৃষ্ঠপোষকতা না থাকলে বাংলা ভাষা অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে যেত। বাংলা ভাষার লালন ও অনুশীলনে আলেম-ওলামার অবদান খাটো করে দেখার সুযোগ নেই।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের কওমি মাদরাসাগুলোতে বাংলা ভাষার অনুশীলন ও চর্চা তুলনামূলকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। চট্টগ্রামের হাটহাজারী ও পটিয়া, ঢাকার বেশ কিছু মাদরাসায় দাওরায়ে হাদিস সম্পন্ন করার পর আগ্রহী ছাত্রদের জন্য এক বছর বা দুই বছরব্যাপী বাংলা সাহিত্য, সাংবাদিকতা ও ইসলামী গবেষণা বিভাগ খোলা হয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন কওমি মাদরাসায় বিশেষত চট্টগ্রামের দারুল মা’আরিফ, কক্সবাজারের পোকখালী মাদরাসাসহ খুলনা, রাজশাহী, সিলেট, বগুড়া, বরিশালের বহু কওমি মাদরাসায় প্রাথমিক থেকে নিম্নমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত বাংলা ভাষা ও সাহিত্য পাঠ্যতালিকাভুক্ত। মাতৃভাষার প্রতি এটা গভীর মমত্ববোধের পরিচয় বহন করে। নিম্ন পর্যায় থেকে দাওরায়ে হাদিস পর্যন্ত ‘শিক্ষার মাধ্যম’ হিসেবে বাংলাচর্চার প্রচলন শুরু হয়েছে। যে সব মাদরাসায় শিক্ষার মাধ্যম এখনো উর্দু তাকে কিন্তু উন্নত ও মানোত্তীর্ণ উর্দু বলা চলে না। ভারত ও পাকিস্তানের আলেমগণ কুরআন, হাদিস, তাফসির, ফিকহ, ইতিহাস, দর্শনকে উর্দুতে ভাষান্তর করে বিরাট খেদমত আঞ্জাম দিয়েছেন অবশ্য। এটা উর্দুভাষী আলেমদের নিজ মাতৃভাষার প্রতি সুগভীর অনুরাগেরই স্বীকৃতি।
বাংলাভাষী দেওবন্দী বহু আলেম বিগত ছয় দশক ধরে বাংলার চর্চা, অনুশীলন ও প্রচলনের জন্য ব্যাপক মেহনত করে আসছেন। এক্ষেত্রে মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী, পটিয়া মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা মুফতি আজিজুুল হক, হজরত মাওলানা মুহাম্মদ ইউনুছ, খতিবে আযম মাওলানা ছিদ্দিক আহমদ, শায়খুল হাদিস মাওলানা আজিজুল হক, মাওলানা নূর মোহাম্মদ আজমী, মাওলানা মুহিউদ্দীন খান, মাওলানা আমিনুল ইসলাম, মাওলানা আফলাতুন কায়সার, মাওলানা রিজাউল করিম ইসলামাবাদীয়র নাম সবিশেষ উল্লেখযোগ্য। পটিয়া জামিয়া ইসলামিয়ার প্রতিষ্ঠাতা মুফতি আজিজুল হক ষাট বছর আগেই ‘বাংলা সাহিত্য ও ইসলামী গবেষণা’ নামে একটি বিভাগ চালু করেন। তারই ধারাবাহিকতায় পটিয়া মাদরাসার অন্যতম প্রধান পরিচালক মাওলানা মোহাম্মদ ইউনুছ ইসলামী সাহিত্য ও গবেষণা জার্নাল হিসেবে মাসিক ‘আত-তাওহীদ’ চালু করেন ৪৯ বছর আগে। মাওলানা মুহীউদ্দীন খান সম্পাদিত মাসিক মদীনা ছিল এক সময়ে বাংলা ভাষায় দ্বীনী সাহিত্য চর্চার একমাত্র জনপ্রিয় মাধ্যম। মাওলানা নুর মোহাম্মদ আজমী মিশকাত শরীফের বঙ্গানুবাদ, শায়খুল হাদিস মাওলানা আজিজুল হকের বুখারি শরিফের বাংলা অনুবাদ, মাওলানা আমিনুল ইসলাম কর্তৃক বাংলায় রচিত ৩০ খণ্ডে সমাপ্ত তাফসীর গ্রন্থ ‘নুরুল কুরআন’, মাওলানা রিজাউল করীম ইসলামাবাদীর ‘মুয়াত্তা মালিক’ এর অনুবাদ, মাওলানা মুহিউদ্দীন খান রহ:-এর বিপুল অনুবাদ প্রভৃতি ভাষা ও সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে।
কওমি ঘরানার অনেক আলেম মিডিয়ার জগতে পা রেখেছেন, যা প্রশংসার দাবি রাখে। তাদের মধ্যে অনেকের রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি। এ প্রজন্মের অনেক আলেম বাংলা ভাষায় সাহিত্য চর্চায় এগিয়ে এসেছেন, যা কওমি মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষকদের মধ্যে বেশ আশার সঞ্চার করে। যে সব আলেম বাংলাভাষার ব্যাপক চর্চা করেছেন তাদের প্রতি জনগণের রয়েছে গভীর শ্রদ্ধা। দেশের বড় বড় মাদরাসা থেকে যে সব নিয়মিত বাংলা মাসিক জার্নাল বের হয়; বাংলা সাহিত্য চর্চা ও দাওয়াতি কার্যক্রমে রয়েছে সেগুলোর তাৎপর্যপূর্ণ অবদান।
এক সময় কিশোরগঞ্জের জামিয়া ইমদাদিয়া থেকে মাওলানা আতাউর রহমান খানের (সাবেক সংসদ সদস্য) সম্পাদনায় একটি বাংলা মাসিক পত্রিকা বের হতো। হাটহাজারী মুঈনুল ইসলাম মাদরাসা থেকে ‘মুঈনুল ইসলাম’, ঢাকার ফরিদাবাদ মাদরাসা থেকে ‘নেয়ামত’, চট্টগ্রাম দারুল মাআরিফ থেকে ‘আল-হক’, ঢাকার মারকাজুদ দাওয়াহ থেকে ‘আল কাউছার’, ঢাকা মুহাম্মদপূর জামিয়া রহমানিয়া থেকে ‘রাহমানী পয়গাম’, ঢাকা কামরাঙ্গিচর মাদরাসাতুল মদীনা থেকে ‘পুষ্প’, চট্টগ্রাম নাজিরহাট নাছিরুল ইসলাম মাদরাসা থেকে ‘দাওয়াতুল হক’, মৌলভীবাজারের বরুনা মাদরাসা থেকে ‘হেফাজতে ইসলাম’, সিলেটের দারুল উলুম মাদানিয়া থেকে ‘আল ফারুক’- এসব মাসিক পত্রিকা ভাষার উৎকর্ষ, বিষয় বৈচিত্র্য ও ভাব গাম্ভীর্যের দিক দিয়ে প্রশংসার দাবি রাখে।
বড় বড় কওমি মাদরাসা থেকে প্রতি বছর দাওরায়ে হাদিস ফারেগিনদের উদ্যোগে স্মারক-ডায়েরি বের হয় বাংলায়। এতে গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় নিবন্ধসমূহ প্রকাশিত হয়। বিগত ২০ বছরে কওমি আলেমদের একনিষ্ঠ প্রয়াসের ফলে বাংলা ভাষায় রচিত হয়েছে বিপুল ইসলামী সাহিত্য। আরবি-উর্দু থেকে অনূদিত হয়েছে রেকর্ড পরিমাণ তাফসির, হাদিস, ফিকহ, ইতিহাস, সিরাত ও জীবনীবিষয়ক মৌলিক গ্রন্থ। একজন আলেমের লিখিত বাংলা বানান, প্রমিত উচ্চারণ ও ভাষারীতির ৩০০ পৃষ্ঠার গাইডবুক ‘বানানচর্চা’ বেশ পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে। আরেক আলেমের লিখিত বানানবিষয়ক গ্রন্থও শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে গেছে।
কওমি মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষকগণ বাংলা ভাষা ও সাহিত্য চর্চায় এগিয়ে আসছেন, এটা সুখকর। এ অভিযাত্রাকে আরো জোরদার করাই সময়ের দাবি। যুগচাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে সবাই এগিয়ে আসবেন, এটা উম্মাহর প্রত্যাশা। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে দক্ষতা অর্জন মানে, ৩০ কোটি মানুষের সামনে ইসলামের শাশ্বত সৌন্দর্য ও উন্নত জীবনবোধ তুলে ধরার সুযোগ লাভ করা। সংস্কৃতির বিকাশ ও সভ্যতার অগ্রগতিতে ভাষার অবদান অস্বীকার করার উপায় নেই।
বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের অনেক মাদরাসায় আরবি নাহু-সারাফের কায়েদাগুলো ফার্সি কিতাবের মাধ্যমে পড়ানো হয়, উর্দুতে তরজমা করা হয়, বাংলায় ব্যাখ্যা করা হয়। এতে একাধিক ভাষার চাপের ফলে শিক্ষার্থীদের নাভিশ্বাস ওঠে, আরবি শেখা তথা ইলমে দ্বীনে পাণ্ডিত্য হাসিলের আসল উদ্দেশ্য অনেকটা ব্যাহত হয়। কোনো দেশে একটি বিদেশী ভাষা শিক্ষার জন্য আরো দু’টি বিদেশী ভাষার সহায়তা নেয়ার সিস্টেম আছে কি না জানা নেই। সরাসরি মাতৃভাষার মাধ্যমে কায়েদাগুলো শিক্ষার্থীদের রপ্ত ও অনুশীলন করানোর ব্যবস্থা দরকার।
একজন সচেতন আলেমের মাতৃভাষা বাংলা, ধর্মীয় ভাষা আরবি ও আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে ইংরেজি শেখা প্রয়োজন। হালকাভাবে শিখলে চলবে না; দক্ষতার স্বাক্ষর রাখতে হবে। মাদরাসা শিক্ষার বাইরে আধুনিক ও যুগোপযোগী শিক্ষার বিস্তৃত দিগন্ত রয়েছে, এ সব বিষয় সম্পর্কে বেশির ভাগ আলেমের ধারণা দুর্ভাগ্যজনকভাবে অত্যন্ত সীমিত।
মধ্যযুগে মুসলমানগণ পবিত্র কুরআন, হাদিস, ফিকহ ও দর্শন শাস্ত্র চর্চার পাশাপাশি ভূগোল, খগোল, জ্যোতির্বিদ্যা, পদার্থ ও চিকিৎসা বিজ্ঞান, রসায়ন, গণিত, প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম হন। তারা বিদেশী গ্রিকভাষা ভাষা শিখে গ্রিক জ্ঞান-বিজ্ঞানকে আরবি ভাষায় তরজমা এবং প্রয়োজনীয় টীকা টিপ্পনি সংযোজন করে জ্ঞানের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছিলেন। তাদের উচ্চতর জ্ঞান সাধনার ফলে গোটা এশিয়া, ইউরোপ, আফ্রিকার বিস্তীর্ণ অঞ্চল জ্ঞানের দীপ্তিতে আলোকিত হয়ে পড়ে। ইংরেজ পণ্ডিত Bernard Lewis তার বিখ্যাত What Went Wrong? গ্রন্থে যে চমৎকার মন্তব্য করেন তা এ ক্ষেত্রে প্রণিধানযোগ্য :
মধ্যযুগে মুসলমানরা বিশ্ব সংস্কৃতি ও সভ্যতার মালিক ছিলেন, তেমনি আধুনিক যুগেও ভাষা, সংস্কৃতি, তথ্য-প্রযুক্তি ও মিডিয়ায় তাদের অপ্রতিহত প্রভাব রাখতে হবে, এটাই আজকের প্রত্যাশা।
আল্লাহতায়ালা মানবজাতির হেদায়াতের জন্য যত নবী ও রাসূল প্রেরণ করেন তাঁরা প্রত্যেকেই সমসাময়িক প্রতিপক্ষ শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই এবং যুগের চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করেছেন সার্থকতার সাথে। আলেমদেরও একবিংশ শতাব্দীর সঙ্কট মোকাবেলায় এগিয়ে আসতে হবে। মুসলিম উম্মাহর মেধাবী সন্তানদের বিশেষত আলেমদের এগিয়ে আসতে হবে সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে থাকা জ্ঞানের ভাণ্ডারকে আত্মস্থ করার মহান ব্রত নিয়ে। আধুনিক যুগের আবিষ্কার ও অভিজ্ঞতাকে বিজ্ঞান গবেষণা, তথ্য-প্রযুক্তি, সাংবাদিকতা, যোগাযোগ ও শিক্ষাক্ষেত্রে কাজে লাগাতে হবে। একবিংশ শতাব্দীর সঙ্কট মোকাবেলায় সক্ষমতা অর্জনের জন্য আত্মবিশ্বাস ও হারানো আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে; যে বিশ্বাস ও আস্থার ফলে মধ্যযুগে মুসলমানগণ যুগের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সফল হয়েছিলেন। কর্মকৌশল ও পরিকল্পনার মাধ্যমে, প্রশাসন, অর্থনীতি এবং বাণিজ্য, ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়াকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। তৈরি করতে হবে দক্ষ মিডিয়া কর্মী। ইসলামকে বিজয়ী শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে আলেম সাংবাদিক, লেখক, সাহিত্যিক, প্রকৌশলী, বিজ্ঞানী, গবেষক ও চিকিৎসক তৈরি করা ছাড়া বিকল্প নেই। বাংলাদেশের সচেতন জনগোষ্ঠী বিশেষত আলেম সমাজকে আগামী দিনের মোকাবেলার জন্য এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে। বিপদ ও সঙ্ঘাত মানুষের মনে নব চেতনার সঞ্চার করে, বেঁচে থাকার প্রেরণা জোগায়।
বাংলাভাষী অনেক কবি, সাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিকের লিখিত সাহিত্যকর্ম আরবি, উর্দু ও ইংরেজি ভাষায় তরজমা করে বহির্বিশ্বে প্রচারের জন্য আলেমদের এগিয়ে আসতে হবে। কাজী নজরুলের ভাষার ওজস্বিতা, উপমা-উৎপেক্ষার অভিনবত্ব, ছন্দ প্রকরণ ও বর্ণনাশৈলী ইরানিদের অভিভূত করে দেয় একজন আলেমের ফার্সিতে অনুদিত গ্রন্থের সুবাদে।
শতাব্দীর বিরলপ্রজ ইসলামী গবেষক ও বরেণ্য স্কলার আল্লামা সাইয়িদ আবুল হাসান আলী নদভী ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ সফরকালে কওমি আলেমদের সমাবেশে যে কথা বলেন তা বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য, ‘বাংলা ভাষার সাধারণ চর্চা এখন আর যথেষ্ট নয়। এ কাজ সবাই করবেন। এখন কিছু মানুষকে বাংলা ভাষার কর্তৃত্ব হাতে নেয়ার জন্য প্রাণপণ সাধনায় আত্মনিয়োগ করতে হবে। এটা আলেমদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য জরুরি, তেমনি বাংলা ভাষাভাষী মুসলমান ও খোদ বাংলা ভাষার জন্যও অপরিহার্য। বাংলা ভাষার শোধন, সংস্কার ও সমৃদ্ধির জন্য এ কাজ খুবই জরুরি। কেননা দীর্ঘ দিন যাবৎ বাংলা ভাষার কর্তৃত্ব ইসলামবিরোধী গোষ্ঠীর হাতে; যাদের চিন্তা ও চেতনা এবং জীবন ও চরিত্র কলুষমুক্ত নয়; বরং তারা আকিদা ও চিন্তাগত ভ্রান্তিতে আক্রান্ত। তাদের মাধ্যমে এ ভাষাতেও প্রবেশ করেছে কলুষ ও চিন্তার বিষবাষ্প।
এ জন্য বাংলা ভাষায় রূহ ও রুহানিয়াত ও প্রাণ ও প্রাণময়তা সৃষ্টি ও সঠিক পরিচর্যার জন্য এমন কিছু মানুষকে প্রাণপণ সাধনায় আত্মনিয়োগ করতে হবে, যারা সমুন্নত চিন্তাচেতনা এবং পবিত্র রুচি ও আদর্শের অধিকারী। “বাংলা ভাষা ও সাহিত্য চর্চায় কোনো পুণ্য নেই, যত পুণ্য সব আরবি আর উর্দুতে”, এ ধারণা বর্জন করুন। এ ধারণা নিছক মূর্খতা’। তিনি আরো বলেছিলেন, বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে ইসলাম বিরোধীদের দয়া-করুণার ওপর ছেড়ে দিবেন না। ‘ওরা লিখবে আর আপনারা পড়বেন’ এ অবস্থা কিছুতেই বরদাশত করা উচিত নয়’ (১৯৮৪ সালের ১৪ মার্চ জামিয়া ইমদাদিয়া, কিশোরগঞ্জ-এর প্রাঙ্গণে বিশিষ্ট আলেম-উলামা, বুদ্ধিজীবী ও ছাত্র-শিক্ষক সমাবেশে প্রদত্ত ভাষণ)।
বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে পারঙ্গম একদল আলেম কলমসৈনিকের আজ বড্ড প্রয়োজন। বাংলা ভাষার চর্চা যদি আলেমরা ছেড়ে দেন, তাহলে কওম ও মিল্লাতের সমূহ ক্ষতির কারণ হতে পারে। যে সব কওমি মাদরাসা বাংলা ভাষা ও সাহিত্য চর্চায় পেছনে রয়েছে, জনগণের প্রত্যাশা হচ্ছে- সময়ের দাবি ও যুগ চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অনুকূল মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসবেন।
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান,
ওমর গণি এম.ই.এস ডিগ্রি কলেজ, চট্টগ্রাম।