ইকবালের কবিতায় পাকিস্তান মাতালেন এরদোগান
এরদোগানের কণ্ঠে আল্লামা ইকবালের কবিতা - ছবি : এএফপি
পাকিস্তানের পার্লামেন্টে ভাষণ দেয়ার সময় কবি আল্লামা ইকবালকে স্মরণ করলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তৈয়ব এরদোগান।
শুক্রবার ভাষণ দেয়ার শুরুতেই তুরস্কের স্বাধীনতার লড়াইয়ে পাকিস্তানিদের অবদানের কথা স্মরণ করেন এরদোগান। তিনি বলেন, আল্লামা ইকবালের নেতৃত্বে তখন লাহোরে বিশাল গণসমাবেশে হয়েছিল।
তুর্কি প্রেসিডেন্ট বলেন, ১৯১৫ সালে দারদানিল প্রণালীতে মারাত্মক প্রতিরোধ গড়েছিল তুরস্কের সেনাবাহিনী। সম্মুখসারি থেকে যা ছিল ছয় হাজার কিলোমিটার দূরে। ইতিহাসে যা অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
‘সেদিনে লাহোরের ওই সমাবেশের মূল বিষয় ছিল জানককলায়া। আমরা যখন টিকে থাকার লড়াই করছিলাম, তখন আমাদের সমর্থনে জনতায় ভরে গিয়েছিল লাহোর স্কয়ার। যদিও এ অঞ্চলে আমাদের ভাই-বোনেরা ঔপনিবেশিক চাপের মধ্যে ছিলেন।’
তিনি জানান, নানা প্রতিকূলতা ও হুমকির পরেও জনককলায়র জন্য আমাদের সহায়তায় বিপুল অর্থ সংগ্রহ করা হয়েছিল।
গ্যালিপলি অভিযান জানককলায়া যুদ্ধ নামে পরিচিত। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী লড়াই ছিল এটি। উসমানীয় খেলাফতকে উৎখাত করতে মিত্রবাহিনী তুর্কি উপদ্বীপে অবতরণ করলে এই যুদ্ধ শুরু হয়েছিল। এতে দুই পক্ষের হাজার হাজার লোক নিহত হন।
তুর্কিশ যুদ্ধে পাকিস্তানের সহায়তার কথা স্মরণ করে তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। এরদোগান বলেন, কাজেই যে কারো চেয়ে পাকিস্তানি ভাই-বোনদের প্রতি আমরা বেশি টান ও ভালোবাসা অনুভব করি। আমাদের সম্পর্ক কেবল স্বার্থের ওপর নির্ভরশীল নয়, এখানে ভালোবাসাও রয়েছে।
এসময় আল্লামা ইকবালের কবিতা আবৃত্তি করেন এরদোগান। তিনি বলেন, সেই কবির মতো, তার কবিতার প্রতি শব্দের সাথে সেদিন লাহোর চত্বরে উপস্থিত লোকজনের চোখ ফেটে পানি বেরিয়ে এসেছিল। সেই সাহায্যের কথা আমরা কোনো দিন ভুলতে পারবো না। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের সমর্থনে তারা নিজেদের খাবার বিলিয়ে দিয়েছেন।
‘শত বছর আগে জানককলায়ায় যা ঘটেছিল, অধিকৃত কাশ্মীরে সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। কাজেই কাশ্মীরে ভারতীয় নিপীড়নের বিরুদ্ধে তুরস্কের সোচ্চার প্রতিবাদ অব্যাহত থাকবে।’
রেকর্ডসংখ্যক চতুর্থবারের মতো পাকিস্তানের পার্লামেন্টের যৌথ অধিবেশেন ভাষণ দিয়েছেন এরদোগান। এসময় কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তানের অবস্থান ও অর্থনৈতিক টাস্ক ফোর্সে (এফএটিএফ) দক্ষিণ এশিয়ার দেশটিকে সমর্থনের কথা জানিয়েছে তুর্কি প্রেসিডেন্ট।
শুক্রবার ভাষণের শুরুতে তিনি বলেন, এখানে ভাষণ দেয়ার সুযোগ দেয়ার জন্য আল্লাহর কাছে আমি শুকরিয়া আদায় করছি। পার্লামেন্টের এই যৌথ অধিবেশনে যারা আমাকে কথা বলার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছেন, তাদের বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাই। তুরস্ক ৮ কোটি ভাইবোনদের পক্ষ থেকে আপনাদের শুভেচ্ছা।
এরদোগান বলেন, পাকিস্তানের জনগণ আমাকে যেভাবে অভ্যর্থনা জানিয়েছে, তাতে আমি কৃতজ্ঞ। এখানে এসে আমাকে কখনো বিদেশি নাগরিক মনে হয় না। মনে হয়, এটাই যেন আমার বাড়ি। আমরা এখানে এসেছি আপনাদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হতে।
‘বর্তমানে আমাদের সম্পর্ক যে পর্যায়ে রয়েছে, তা দুই দেশের জন্যই মর্যাদাকর। আজকে তুরস্ক-পাকিস্তান ভ্রাতৃত্ববোধ সবচেয়ে আকাঙ্ক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। এটা সত্যিকারের ভ্রাতৃত্ববোধ। ঐতিহাসিকভাবেই এটা জোরদার এবং ঐতিহাসিক ঘটনাবলীতে তা আরও শক্তিশালী হয়েছে।’
বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনাবলীর কথা নিয়েছে এসেছেন এরদোগান তার বক্তৃতায়। যেটাকে তুরস্ক-পাকিস্তানের একটি শতকের স্বর্ণালী উদহারণ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
মুসলিম বিশ্বের এই জনপ্রিয় নেতা বলেন, আজ পাকিস্তানি ভাইদের মতো কাশ্মরিরাও আমাদের ঘনিষ্ঠ। কাজেই বিশ্বাসীদের হৃদয়ের মাঝে কেউ কোনো দূরত্বের দেয়াল কেউ তৈরি করতে পারবে না। পৃথিবীর কোনো প্রান্তে যদি কোনো ঈমানদারের প্রতি নির্যাতন চালানো হয়, তবে সেই ঈমানদারকে সহায়তা করা আমাদের দায়িত্ব।
‘কয়েক দশক ধরে আমাদের কাশ্মীরি ভাই-বোনেরা নিপীড়ন সহ্য করে আসছেন। কিন্তু সম্প্রতি ভারত সরকারের একতরফা পদক্ষেপের কারণেই সেই যন্ত্রণা আরও গভীরতর হয়েছে।’
তবে কোনো সংঘাত কিংবা নিপীড়নের মধ্য দিয়ে কাশ্মীর সংকটের সমাধান হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, কেবল সুষ্ঠু ন্যায়বিচারই সবার অধিকার নিশ্চিত করতে পারে।