‘দিল্লির নির্বাচনী হার : এটা কি প্রধানমন্ত্রী মোদির শেষ দিনের শুরু?’
কেজরিওয়াল ও মোদি - ছবি : সংগ্রহ
দিল্লি রাজ্য নির্বাচনে মোদি-অমিতের বিজেপির ব্যাপক পরাজয় ঘটেছে। আম আদমি পার্টি (আপ) দলের আগের ২০১৫ সালের নির্বাচনের মতোই এবারো অরবিন্দ কেজরিওয়ালের নেতৃত্বে ৭০ আসনের দিল্লির ৬০-এর বেশি আসন পেয়ে নির্বাচিত হয়েছে। জার্মান ডয়েচ ভেলে গ্লোবাল মিডিয়া হিসেবে অত জনপ্রিয় না হলেও ফেলনা গুরুত্বের নয়। সেই ইংরেজি ডয়েচ ভেলের শিরোনাম, ‘দিল্লির নির্বাচনী হার : এটা কি প্রধানমন্ত্রী মোদির শেষ দিনের শুরু?’
এটা ঠিক যে, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বা সিএএ সব পশ্চিমা দেশে এক ব্যাপক নাড়াচাড়া দিয়ে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া হয়েছে। ভারতের লোকসংখ্যা বা ভোক্তা বাজার ১৩৬ কোটির; সে কথা পশ্চিমবিশ্ব সবসময় খুবই মনে রাখে। তারা তাই এমন কিছুই বলতে চায় না পাছে তা এই বাজার হাতছাড়া হওয়ার কারণ তৈরি করে ফেলে। কিন্তু মোদি-অমিতের বৈষম্যমূলক ও মুসলমানবিদ্বেষী নতুন নাগরিকত্ব আইন পশ্চিমের জন্য ওই ভোক্তা বাজারের লোভের চেয়েও আরো বড় বিপদের। সাধারণভাবে তারা আতঙ্কিত এজন্য যে, তাদের আশঙ্কা এই আইন দুনিয়াতে বিপুল সংখ্যক রিফিউজি তৈরি করতে পারে যারা আবার রাষ্ট্রচ্যুত। মোদির এই আইন আগামীতে ভারতীয় মুসলমানদের রাষ্ট্রহীন রিফিউজির সারিবদ্ধ ঢল নামাতে পারে, যেটা সিরিয়ান রিফিউজিদের চেয়েও হবে ভয়ঙ্কর। কারণ এদের বাড়তি বৈশিষ্ট্য হলো এরা হবে রাষ্ট্রহীন; ‘থেকেও নাই’ রাষ্ট্রচ্যুত বলে তাড়ানো এক জনগোষ্ঠী।
ইউরোপীয় পার্লামেন্টে ‘এই আশঙ্কার’ ওপর দাঁড়ানো নিন্দা প্রস্তাব মধ্য মার্চ পর্যন্ত মুলতবি করে রাখা আছে। নতুন রিফিউজির ঢলের উদ্ভব বা মানবাধিকার রক্ষার দায় হিসেবে এর ভাগ বা দায় গ্রহণ প্রশ্নে ইউরোপ আমেরিকার চেয়েও বেশি ভীত, বিশেষ করে গ্লোবাল অর্থনীতির স্থবিরতা প্রায় নিয়মিত হয়ে পড়া দশার পরিপ্রেক্ষিতে। ডয়েচ ভেলের এই শিরোনাম এসব আশঙ্কায় আক্রান্ত বলে হয়ে থাকতে পারে। তা আমরা অনুমান করতে করি।
দিল্লির রাজ্যনির্বাচন শেষে ফল প্রকাশিত হয়েছে গত ১১ ফেব্রুয়ারি। বিজেপিবিরোধী আঞ্চলিক দল আম আদমি পার্টি (আপ) এবারের নির্বাচনে ৬২ আসনের সংখ্যাগরিষ্ঠতায় জিতেছে। অসংখ্য কর্নার থেকে কেন ফলাফল এমন হলো এর ব্যাখ্যা বিশ্লেষণে মিডিয়া ভরপুর হয়ে উঠেছে। রাজ্য হিসেবে দিল্লি খুবই ছোট; ভারতের পুরান মাঝারি রাজ্যগুলোতে ২০০ থেকে ২৫০-এর মধ্যে আসন থাকে। সেই বিচারে তাদের তিন ভাগের একভাগ হলো দিল্লি। তবুও তার এই নির্বাচন নিয়ে উৎসাহ অনেক বেশি। কেন?
মূল কারণ, মোদি-অমিতের নাগরিক বৈষম্যমূলক ও মুসলমানবিদ্বেষী সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বা সিএএ পাস করার পরের আপত্তি ও প্রতিক্রিয়া; আর তা নিয়ে ভারতজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় বয়ে যাওয়ার পর এটা ছিল কোনো রাজ্যে অমিত শাহের প্রথম নির্বাচনের মুখোমুখি হওয়া। এমনিতেও দিল্লির নির্বাচন পরিচালনায় মূল দায়িত্বে ছিলেন অমিত। তাই এখানে কী বলে, কোন কৌশলে বিজেপি ভোটে অংশ নেয় আর তাতে ভোট প্রদানের ধরনের মধ্যে কী মেসেজ ফুটে ওঠে- এসব জানার জন্য সব মহলের ব্যাপক কৌতূহল থেকেই এত বিশ্লেষণ।
এ বিশ্লেষণগুলোতে কমন ব্যাখ্যার ধারাটা হলো, এটা ‘উন্নয়ন বনাম কেন্দ্রের ইস্যু’ এরই লড়াই যেখানে ‘উন্নয়ন’ জিতেছে। এখানে ‘উন্নয়ন’ মানে কী? আমাদের দেশের মতোই ‘উন্নয়ন’ বনাম নাগরিক অধিকার- কোনটা চান- এর মতো? না, ঠিক তা নয়। তবে হয়তো কিছু কাছাকাছি। দিল্লির বেলায় এর মানে হলো, নাগরিক মিউনিসিপ্যাল সুবিধা ও সার্ভিসগুলো; যেমন, পানি, বিদ্যুৎ, নিষ্কাশন, বাসভাড়া, শিক্ষা ইত্যাদি সার্ভিস ব্যবস্থাপনা আর এর স্বল্পচার্জ বা মওকুফ করা চার্জ- এভাবে আপ দলের মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল গত পাঁচ বছরের সাফল্য এনেছেন।
এর বিপরীতে কেন্দ্রের ইস্যু কী? এখানে কেন্দ্রের ইস্যু হলো সবচেয়ে জ্বলন্ত সিএএ বা সাথে এনআরসি, এছাড়া ধীরগতির ধসে পড়া অর্থনীতি, কাজ সৃষ্টি না হওয়া ইত্যাদি। এ ছাড়াও আরেকভাবে ব্যাপারটা বলার চেষ্টা আছে। যেমন নির্বাচনী ফলাফল কী হতে পারে সেই আগাম অনুমিত ফলাফল তৈরির লক্ষ্যে করা সার্ভেতে যে শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে সেটা হলো, ‘জাতীয় নিরাপত্তা’। বলাই বাহুল্য, এটা খুবই প্রলেপ লাগানো শব্দ। আসলে কদর্য কিছু ধারণাকে লুকিয়ে রাখতে বলা ‘ভদ্র শব্দ’। এর পেছনের মূল কথাটা হলো ‘মুসলমানবিদ্বেষী উসকানি দিয়ে প্রচারণা’। যেটাকে আবার বিজেপি নিজেও আরেকটা শব্দে- ‘পোলারাইজেশন’ বলে প্রকাশ করে থাকে। যেমন এই নির্বাচনে অমিত শাহ ও তার দলের বিদ্বেষী ভাষ্য হলো, কেজরিওয়াল একজন ‘জঙ্গি’ নেতা, সে পাকিস্তানের বন্ধু, মুসলমান তোষণকারী ইত্যাদি। দিল্লির এক মুসলমান-প্রধান এলাকা শাহীনবাগ, এখানকার সিএএ-বিরোধী মূলত নারীদের একটা স্থায়ী প্রতিবাদ মঞ্চ আছে। এ সম্পর্কে অমিতের মন্তব্য এটা নাকি এক ‘মিনি-পাকিস্তান’। তাই ‘জাতীয় নিরাপত্তা’ কথাটার আসল মানে হলো, বিজেপির হিন্দুত্ববাদী বয়ান ও এর প্রপাগান্ডাকে গুরুত্ব দিয়ে কারা বিজেপিকে ভোট দিয়েছে। এরাই ‘জাতীয় নিরাপত্তা’ ক্যাটাগরিতে দেয়া ভোটার। এমনকি আনন্দবাজারের ভাষাতেও- এটা হলো ‘বিজেপির (হিন্দু) জাতীয়তাবাদী প্রচার এবং হিন্দু ভোট একাট্টা করার কৌশল।’ অর্থাৎ হিন্দুত্বের জোশ তুলে সব হিন্দু ভোট যেন বিজেপির বাক্সে আসে, বিজেপির এই কৌশল নেয়া। এটাও অনেক সময় আরেকটা শব্দে প্রকাশ করা হয়- পোলারাইজেশন বা মেরুকরণ। ‘হিন্দুর হিন্দুকে ভোট দিতে হবে আর সেটা কেবল বিজেপিকেই- এটাই হিন্দুত্ববাদী প্রচারণা কৌশলের সারকথা। এটাকেই বিজেপির হিন্দুত্ববাদ নিজেদের ‘পোলারাইজেশনের রাজনীতি’ অথবা এটা বিজেপির কৌশল বলে প্রকাশ্যেই দাবি করে থাকে।
দিল্লির নির্বাচনের পরে ভারতের টিভির টকশোতে এসেছিলেন আরএসএসের ভাবাদর্শ তৈরির এক নেতা শেষাদ্রি চারি, তিনি আবার আরএসএসের মুখপত্র ও প্রাচীন পত্রিকা ‘অরগ্যানাইজার’-এর সাবেক সম্পাদক। তিনি এই ‘ঘৃণা তৈরির’ নিন্দনীয় কাজকে অনৈতিক বলে মানতে রাজি হননি। বরং দাবি করেছেন এটাই ‘বিজেপি রাজনীতির কৌশল’।
ভারতের কনস্টিটিউশন এবং নির্বাচনী আইন অনুসারে ধর্মের ভিত্তিতে ভোট চাওয়া বেআইনি। কিন্তু যেখানে সারা ভারত ‘হিন্দুত্বে’ ভাসছে সেখানে এর বিরুদ্ধে আপত্তি তুলবে কে? আর নির্বাচন কমিশন সেখানে কোনো প্রশ্ন না তুলে আরামে কাজ করার পথ ধরবে সেটা তো স্বাভাবিক।
ঠিক এ কারণে বিজেপির অমিত শাহের ‘পোলারাইজেশনের রাজনীতি’ এবার কিভাবে কাজ করে, আদৌ করে কিনা, সেটা সবাই দেখতে চেয়েছিল। কঠিন বাস্তবতা হলো, এবারই এটা শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়েছে। এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ, খোদ অমিত শাহ এবার তা নিজ মুখে প্রেসের কাছে স্বীকার করেছেন।
‘ভারতে হিন্দুরাই রাজত্ব করবে, অন্য কারও কথা চলবে না। যারা অমান্য করবে তারা দেশদ্রোহী; এদের গোলি মারো। এভাবে বিজেপির সমাবেশ মঞ্চ থেকে স্লোগান দেয়া শুধু নয়, লিখিত বিবৃতি মানে ঠাণ্ডা মাথায় লেখা এমন এক বিবৃতি পাঠ করা হয়েছিল। কিন্তু ১১ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর থেকে অমিত শাহের ‘পাবলিক অ্যাপিয়ারেন্স’ ছিল না। দু’দিন পরে ১৩ তারিখ সন্ধ্যায় এক টিভি অনুষ্ঠানে প্রেসের সামনে তিনি বলেন, ‘গোলি মারো বলে বিবৃতি দেয়া অথবা ‘ইন্দো-পাক ম্যাচ’ ধরনের মন্তব্য করাটা আমাদের ঠিক হয়নি। আমাদের দল এসব মন্তব্য থেকে নিজেকে দূরে রাখতে চায়।’ তিনি স্বীকার করে নেন যে, খুব সম্ভবত এমন মন্তব্যের জন্যই দিল্লিতে ‘আমাদের পরাজয় ঘটেছে’। এর সাথে তিনি এটাও স্বীকার করে নেন যে, দিল্লি নির্বাচন সম্পর্কে ‘তার আগাম অনুমানে ভুল ছিল’। সাথে সাথেই বড় ধূর্ততার সাথে নিজেই বলে রাখেন- কিন্তু তাই বলে ‘দিল্লিতে বিরোধীদের বিজয় সিএএ-এনআরসিবিরোধী কোনো গণরায় নয়।’
এটা সে গণরায় কিনা তা সামনে স্পষ্টই বুঝা যাবে। এখনই বুথ ফেরত জরিপে দেখা যাচ্ছে দিল্লি রাজ্যে মুসলমান জনসংখ্যা যেখানে ১৩% সেখানে মুসলমান ভোটারদের ৭৫% (আর এরই সাথে শিখ ভোটের ৪২% ) আপ দলের পক্ষে ভোট দিয়েছে। শাহীনবাগ যে কনস্টিটিউয়েন্সিতে এর নাম ‘ওখলা’। সেখানে এবার ভোটারের উপস্থিতি রেকর্ড সংখ্যক। মোট উপস্থিত ভোটারের হার যেখানে ৬২% এর মতো সেখানে ওখলাতে তা ৭১%-এর বেশি। আর ‘আপ’ দলের আমানুল্লাহ খান জিতেছেন প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি প্রার্থীর চেয়ে ডাবলের বেশি ভোটে।
উত্তরপ্রদেশের ‘গেরুয়া মুখ্যমন্ত্রী’ যোগী আদিত্যনাথ যার একমাত্র যোগ্যতা মুসলমানদের মারব-ধরব বলে গালিগালাজ করা, তাকে পড়শি রাজ্য দিল্লিতে ভাড়া করে আনা হয়েছিল প্রায় ১৩টা বিজেপি কনস্টিটিউয়েন্সিতে প্রধান সমাবেশে বক্তৃতা করতে। তিনি কেজরিওয়ালকে জঙ্গি মদদদাতা দেশদ্রোহী গাদ্দার পাকিস্তানের বন্ধু ইত্যাদি বলে বক্তৃতা করেছিলেন। ওই ১৩ আসনের ১১টাতেই বিজেপি অনেক ব্যবধানে পরাজিত হয়েছে।
অনেকেই অমিত শাহের স্বীকারোক্তিকে তার দলের এই হারের ফলাফল পাঠ করে, করা মন্তব্য বলে দেখেছেন। এখন মূল প্রশ্ন হলো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কি এখন থেকে তাহলে ভালো হয়ে গেলেন বলে আমরা ধরে নিতে পারি?
অমিত শাহকে নিজ দলে ম্যাজিসিয়ান বলা হয়। গুজরাটের দাঙ্গা থেকে এ পর্যন্ত দাঙ্গায় তার জয়জয়কার। তিনি যেটা চান তাই করে আনতে পারেন। দাঙ্গায় যারা ক্ষতিগ্রস্ত আহত-নিহত হন, তাদেরও ভোট তিনি ব্যাগে ভরতে জানেন। সেই ‘দাঙ্গা-ওস্তাদ’ এবার দিল্লিতে হেরে গেছেন। না, এর পরেও তার স্বভাব বদলাবে না। কারণ তিনি কেবল এই ‘দাঙ্গা’ কাজটাই ভালো পারেন।
এছাড়া আরো বড় ফ্যাক্টর হলো, ২০১৬ সালের নোট বাতিলের পর থেকে ডুবে যাওয়া অর্থনীতি মোদি লুকিয়ে রেখেছিলেন ২০১৯ এর প্রথমার্ধ পর্যন্ত। এরপর তা প্রকাশ হয়ে পড়ে। তাই সেই থেকে মোদি-ম্যাজিক বলে আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। অতএব, আগামী সব নির্বাচনে বিজেপির একমাত্র ভরসা হবে ‘হিন্দুত্ববাদ’। কাজেই মুসলমানদের প্রতি ঘৃণা ছড়িয়েই তাকে আবার ভোট চাইতে যেতে হবে। হয়তো পরের বার আরো ভালো ও কার্যকর উদ্যোগ নিয়ে ঘৃণা ছড়াবে। এক কংগ্রেস নেতা ব্যাপারটাকে ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে যে, তার কাছে গোপন সংবাদ আছে, ‘পাকিস্তান’ এখন দিল্লি ত্যাগ করে বিহারে চলে গেছে। আগামী অক্টোবরে বিহারে নির্বাচন।
কেজরিওয়ালের উন্নয়নের বিজয় কী ও কতটা সত্য?
বড় সত্যটা হলো, রাজ্য নির্বাচনে ভারতের কেন্দ্রীয় ইস্যুগুলো মানুষ ভুলে যায় না, যেতেই পারে না। এর পরেও এ ক্ষেত্রে একটা কিন্তু আছে। সেটা হলো দিল্লির গঠন। দিল্লি ছিল জেলা শহর মাত্র। তার পড়শি রাজ্য পাঞ্জাব-হরিয়ানা আর অন্য দিকে উত্তর প্রদেশ- এসব রাজ্য থেকে কেটে আনা জেলা শহর নিজের ভিতরে ঢুকিয়ে নিয়ে আজ দিল্লি রাজ্য হয়েছে- ১১ জেলা শহরের। এভাবে অন্তর্ভুক্তি আবার একদিনে হয়নি, ১৯৯৭ থেকে সর্বশেষে ২০১২ সাল পর্যন্ত। এর সোজা অর্থ, এই অন্তর্ভুক্ত করে নেয়া জেলাগুলোতে পানি-বিদ্যুৎ-বাস-স্কুল টাইপের নাগরিক মৌলিক সুবিধাগুলো কিছুই ছিল না। এসব অভাব চরমে ওঠা আর নাগরিক ক্ষোভ থেকেই একে পুঁজি করে আম আদমি পার্টির জন্ম ২০১২ সালে। আর গত পাঁচ বছরে ক্ষমতায় থেকে এই ব্যবস্থার চরম উন্নতি ঘটিয়েছে আপ দলটা। রাজ্যের রাজস্ব আয় বাড়িয়েছে ৩১%। কিন্তু এর চেয়েও বড় কথা, স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য এর নেতা কেজরিওয়াল আদর্শ মুখ্যমন্ত্রী। পদত্যাগী এই সাবেক আমলা ম্যানেজমেন্ট বোঝেন ভালোই। তিনি বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী বড়লোকদের বিল থেকে আয় করে, তা দিয়ে গরিব কম ব্যবহারকারীদের ভর্তুকির ব্যবস্থা গড়ে তুলেছেন।
২০০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ ফ্রি। একই ব্যবস্থা পানি ব্যবহারেও। আবার নারী বাসযাত্রীর ভাড়া ফ্রি। স্কুল ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজিয়ে বিনিয়োগ করেছেন। তাতে ইংলিশ স্কুল ছেড়ে অবস্থাপন্নরাও সরকারি স্কুলে ফিরছেন। আর এসব ম্যানেজমেন্ট কৃতিত্বের সুফলভোগী হলো সরাসরি স্বল্প আয়ের মানুষেরা। নির্বাচনে কেজরিওয়াল নিজের এই সফলতাকে তুলে ধরেছেন, প্রতিদান চেয়েছেন। এমনকি ভোটারদের বলেছেন, আপনি বিজেপি বা কংগ্রেসের সদস্য বা সমর্থক হলেও দল ত্যাগ না করে আমার কাজের প্রতিদান ও আমাকে উৎসাহ দিতে আমার দলকে একটা ভোট দিন। আসলেই তো তিনি ‘স্বল্প আয়ের মানুষের বন্ধু’। না হলে দিল্লির মতো ব্যয়বহুল রাজধানী শহরে তাদের থাকা আরো কঠিন হয়ে যেত। এর মানে এই নয় যে, সিএএ-এনআরসি ইস্যু বা কাজ সৃষ্টির ইস্যুতে তাদের কিছু এসে যায় না।
তবে সার কথা হলো, দিল্লিই প্রথম কথিত ম্যাজিসিয়ান অমিত শাহ ও তার দলের যে অপরাজেয় ভাব তৈরি হয়ে গিয়েছিল সেই দর্প চূর্ণ হয়ে গিয়েছে। নিঃসন্দেহে এই ভাঙা আত্মবিশ্বাস কতটা অমিতেরা ফেরত আনতে পারেন তা এখন দেখার বিষয়!
লেখক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com