ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে কালো মেঘ!
ট্রাম্প ও মোদি - ছবি : সংগৃহীত
মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি রবার্ট লাইটথিজার চলতি সপ্তাহে তার নির্ধারিত ভারত সফর স্থগিত করেছেন। অন্তত দুজন কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সফরের সামান্য আগ দিয়ে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য আলোচনা জটিল অবস্থায় উপনীত হচ্ছে, এমন ইঙ্গিতের মধ্যে সফরটি স্থগিত হলো।
আলোচনার ব্যাপারে অবগত সূত্র মতে, মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধির ১৩ ফেব্রুয়ারির সফর পরিবর্তন করার কোনো কারণ বলা হয়নি। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ভারত সফরের সময় তার সঙ্গী হওয়ার সম্ভাবনা এখনো আছে এবং তখন তিনি তার ভারতীয় প্রতিপক্ষ বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী পিযুশ গোয়ালের সাথে একটি বাণিজ্য প্যাকেজ বা ‘মিনি বাণিজ্যচুক্তি’ করতে পারেন।
হারানো সুযোগ
সূত্র জানিয়েছে, দুই প্রধান আলোচক নিয়মিতভাবেই ফোনে আলোচনা করেন।
ইউএস চেম্বার্স অব কমার্সের ইউএস-ইন্ডিয়া বিজনেস কাউন্সিলের নিশা বিসওয়াল বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও নরেন্দ্র মোদি যদি মোটামুটি পর্যায়ের কোনো চুক্তিতেও উপনীত হতে ব্যর্থ হন, তবে উভয় দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করার যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, তা শেষ হয়ে যাবে। তিনি চলতি সপ্তাহে ভারত সফরকালে এক সাক্ষাতকারে এ কথা বলেন।
অবশ্য বিসওয়াল বলেন, তিনি তিনি এখনো আশাবাদী যে একটি সীমিত বাণিজ্য চুক্তি হতে পারে। ট্রাম্প ও তার স্ত্রী মেলেনিয়া ২৪ ও ২৫ ফেব্রুয়ারি দিল্লি ও আহমদাবাদ সফর করবেন। তিনি আগ্রাও যেতে পারেন।
সূত্র জানিয়েছে, ভারতের চিকিৎসাসামগ্রীর ওপর আরোপিত কর নিয়ে কিছু অগ্রগতি হয়েছে। দুই পক্ষই মার্কিন কৃষিপণ্য ও দুগ্ধজাত সামগ্রীর বাজার নিয়ে আলোচনা করছেন।
তবে ভারতের জিএসপি (জেনারালাইজড সিস্টেম অব প্রিফারেন্সেস) মর্যাদা ফিরিয়ে দেয়া নিয়ে সম্ভবত এখনই কোনো অগ্রগতি হচ্ছে না। কারণ মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি চলতি সপ্তাহেই বলেছেন, তিনি ভারত ও আরো কয়েকটি দেশকে ‘উন্নত দেশ’ হিসেবে মর্যাদা দেন। তিনি আরো বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কোনো উন্নত দেশকে জিএসপি সুবিধা দিতে চান না। এর বদলে ভারতীয় রফতানিকারকদের কিছু জিএসপি ছাড় দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে বলে সূত্র জানায়। তবে সেটাও নির্ভর করবে, যেসব খাতে মার্কিন আমদানিকারকরা ভারতীয় পণ্যের ওপর নির্ভরশীল তার ওপর।
কর্মকর্তারা বলেন, জিএসপি প্রশ্নে মার্কিন অবস্থান দুই দেশের মধ্যকার বাণিজ্য আলোচনাকে জটিল করে তুলেছে।
এদিকে বিসওয়াল মনে করেন, মার্কিন কর্মকর্তাদের দিল্লি সফরের সময় প্রতিরক্ষা খাতে বড় ধরনের চুক্তি হতে পারে। এর মধ্যে থাকতে পরে ২.৪ বিলিয়ন ডলারের হেলিকপ্টার ও একটি বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থা চুক্তি।
ইতোপূর্বে ওবামা প্রশাসনের আমলে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী মন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকারী বিসওয়াল বলেন, ভারত সরকার তাদের বাজেটে প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দ না বাড়ালেও দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা খাতে চুক্তি হতে পারে।
ভারত যুক্তরাষ্ট্র থেকে এলএনজি আমদানি বাড়াতে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের টেলুরিয়ান ইনকের এলএনজি প্রকল্পে ভারতের গ্যাস আমদানিকারক পেট্রোনেট ২.৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। ট্রাম্পের সফরের সময় এ নিয়েও চুক্তি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রতিরক্ষা খাতে সবচেয়ে বড় চুক্তি হতে পারে ভারতীয় নৌবাহিনীর জন্য ২৪টি এমএইচ-৬০আর মাল্টিরোল হেলিকপ্টার ক্রয়। এছাড়া দিল্লির সুরক্ষার জন্য প্রতিরক্ষা নিয়েও চুক্তি হতে পারে। হেলিকপ্টার চুক্তিটির আর্থিক মূল্য ২.৪ বিলিয়ন ডলার। এটি ক্যাবিনেট কমিটির অন সিকিউরিটিতে অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র সশস্ত্র ড্রোন, আরো ছয়টি পি-৮১ নজরদারি বিমান ও দুটি রেথিয়ন আইএসটিএআর বিমান বিক্রি নিয়েও আলোচনা করছে।
দি হিন্দু