দিল্লিতে বিজেপিকে যেভাবে হারিয়ে দিলো মুসলিমরা

নিলাম পান্ডে | Feb 13, 2020 07:35 am
দিল্লিতে বিজয়ী ৫ মুসলিম প্রার্থী

দিল্লিতে বিজয়ী ৫ মুসলিম প্রার্থী - ছবি : সংগৃহীত

 

দিল্লি নির্বাচন নিয়ে নির্বাচন কমিশনের চূড়ান্ত তথ্যে দেখা যাচ্ছে যে কংগ্রেসের ভোটগুলো (তারা এতে একটি আসনও পায়নি) কেবল আম আদমির দিকেই যায়নি, বিজেপির দিকেও গেছে।

বিজেপি দিল্লির শাহিনবাগের নাগরিকত্ব আইনবিরোধী প্রতিবাদকে কেন্দ্র করে মেরুকরণের প্রচারণা চালিয়েছিল। এতে করে আম আদমি পার্টির (আপ) ৫টি আসনের (বালিমারন, মতিয়া মহল, মোস্তফাবাদ, ওখলা ও সিলামপুর) সবগুলোতেই জয় পেতে সুবিধা হয়। এসব এলাকায় মোট জনসংখ্যার ৫০ ভাগের বেশি মুসলিম বলে ধরা হয়।
আপ এই ৫ আসনেই মুসলিম প্রার্থী দিয়েছিল।

তাদের মধ্যে রয়েছেন মতিয়া মহল আসনে শোয়াইব ইকবাল, বালিমারন থেকে ইমরান হোসাইন, ওখলা থেকে আমানাতুল্লাহ খান, মোস্তফাবাদ থেকে হাজি ইউনুস ও সিলামপুর থেকে আবদুল রহমান।
আরো সাতটি আসন রয়েছে যেখানে মুসলিম জনসংখ্যঅ ৩০ থেকে ৫০ ভাগ। এগুলো হচ্ছে শাহদারা, বাবরপুর, সিমাপুরি, সদর বাজার, নন্দ নাগরি, কিরারি ও চাঁদনি চক।
আপ এই ১২টি আসনের সবগুলোতেই জয় হলেও নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযাযী, সদরবাজার , বাবরপুর, কিরারি ও শাহদারায় কংগ্রেসের সব ভোট বিজেপিতে গেছে। দিল্লি নির্বাচনে একজন মুসলিম প্রার্থীও দেয়নি বিজেপি।
ভারতের জাতীয় রাজধানীতে (এখানে মুসলিম জনসংখ্যা ১৩ ভাগ) ঐতিহ্যগতভাবেই সংখ্যালঘু ভোট পেয়ে আসা কংগ্রেস এবার কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতাতেই আসতে পারেনি। তারা মুসলিম প্রাধান্যপূর্ণ এসব আসবে তিন বা চার নম্বর স্থানে ছিল।

দি প্রিন্টের নির্বাচন কমিশন বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৫ সালে কংগ্রেস সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েছিল মতিয়া মহল, মোস্তফাবাদ, চাঁদনি চক, সিলামপুর ও সিমাপুরিতে। এবার এসব ভোট গেছে আপে।
মতিয়া মহলে ২০১৫ সালে কংগ্রেস পেয়েছিল ২৬.৭৫ ভাগ ভোট। ২০২০ সালে তা কমে এসেছে ৩.৮৫-এ। তাদের ভোট কমেছে ২২.৯ ভাগ।
২০১৫ সালে আপ পেয়েছিল ৫৯.২৩ ভাগ ভোট। ২০২০ সালে তারা পেয়েছে ৭৫.৯৬ ভোট। তাদের ভোট বেড়েছে ১৬ ভাগ। বিজেপি ২০১৫ সালে পেয়েছিল ১১.৩৩ ভাগ ভোট, তারা এবার পেয়েছে ১৯.২৪ ভাগ ভোট। তাদের ভোট বেড়েছে ৭.৯১ ভাগ।
ওখলা ও বালিমারনে কংগ্রেসের ভোট গেছে আপ ও বিজেপি উভয় দিকেই।
বালিমারনে কংগ্রেসের ভোট ২০১৫ সাল থেকে ১৩.৮ ভাগ হ্রাস পেয়ে হয়েছে ৪.৭৩ ভাগ। আপ ২০১৫ সালে পেয়েছিল ৫৯.৭ ভাগ, এবার পেয়েছে ৬৪.৬৫ ভাগ। বিজেপি ২০১৫ সালে পেয়েছিল ২৪.৩ ভাগ, এবার ২৯.০৩ ভাগ পেয়েছে।

মোস্তফাবাদ আগে ছিল বিজেপির, এখন আপের
মজার ঘটনা ঘটছে মোস্তফাবাদ আসনে। এখানে ২০১৫ সালে বিজেপি জয়ী হয়েছিল। কিন্তু এবার জিতেছে আপ।
২০১৫ সালে বিজেপি প্রাথৃী জগদীশ প্রধান ৩৫.৩৩ ভাগ ভোট পেয়েছিলেন। কংগ্রেস পেয়েছিল ৩১.৬৮ ভাগ। আর আপ পেয়েছিল ২৩.০৬ ভাগ।
২০২০ সালে কংগ্রেস পেয়েছে মাত্র ২.৮৯ ভাগ ভোট। তাদের ভোট হ্রাস পেয়েছে ২৮.৭৯ ভাগ। এই ভোট প্রধানত আপ প্রার্থী হাজি ইউনুসের কাছে গেছে। তিনি ৫৩.২ ভাগ ভোট পেয়ে ওই আসনে জয়ী হয়েছেন। আর বিজেপির ভোট বেড়ে হয়েছে ৪২ ভাগ।
বিরিয়ানি ও শাহিনবাগ
দিল্লি নির্বাচনী প্রচারণার সময় মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল ও আপ নেতারা সচেতনভাবে শাহিনবাগ যাওয়া এড়িয়ে গেছেন। এখানে মুসলিমরা দুই মাস ধরে সিএএবিরোধী বিক্ষোভ প্রদর্শন করছেন।
এমনকি ভীম আর্মির প্রধান চন্দ্রশেখর আজাদ জামা মসজিদে মসলিম পরিবেষ্টিত হয়ে সংবিধানের কপি তুলে ধরে টিভি স্ক্রিনগুলো কাঁপিয়ে তুলছিলেন, তখন আপ নেতারা দূরে ছিলেন।
ধারণা করা হচ্ছে, আপ নেতারা মনে করেছিলেন যে শাহিনবাগ বা জামা মসজিদে গেলে বিজেপি এটা বলার সুযোগ পেয়ে যাবে যে দলটি মুসলিমদের তোষণ করার চেষ্টা করছে।
তা সত্ত্বেও বিজেপি তা করেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথসহ বড় বড় নেতা বারবার তাদের সমাবেশে শাহিনবাগের কথা উত্থাপন করেছেন, অভিযোগ করেছেন যে বিক্ষোভকারীদের পেছনে আপের হাত রয়েছে।

আদিত্যনাম বলেছেন, এক পাকিস্তানি মন্ত্রী কেজরিওয়ালকে সমর্থন করছেন কারণ ‘তিনি জানেন যে একমাত্র কেজরিওয়ালই শাহিন বাগের বিক্ষোভকারীদের বিরিয়ানি খাওয়াতে পারেন।‘
সাম্প্রদায়িকতাপূর্ণ-মেরুকরণ করা নির্বাচনী প্রচারণায় শাহিন বাগ পরিণত হয় বিজেপির প্রধান নির্বাচনী মূলমন্ত্র। এ কারণেই বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহ, আদিত্যনাথরা বারবার তাদের প্রচারণায় উত্থাপন করেছেন।
অন্য দিকে আপ তাদের নির্বাচনী প্রচারকাজে কেবল সুশাসনের দিকেই নজর দিয়েছে।
এমনকি বিজেপি যখন শাহিনবাগের বিক্ষোভকারীদের তাড়িয়ে দেয়ার কথা বলেছে কিংবা বিক্ষোভের ফলে ওই এলাকায় চলাচলে বিঘ্নতা সৃষ্টি নিয়ে কথা বলেছে, তখনও কেজরিওয়াল দায়িত্বটি কেন্দ্রীয় সরকারের ওপর ন্যস্ত করে জানিয়ে দিয়েছেন যে, দিল্লি পুলিশের দায়িত্ব কেন্দ্রের ওপরও রয়েছে।

দি প্রিন্ট


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us