বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে মিয়ানমার সামরিক বাহিনীতে!
লে. জেনারেল সো হতাত - ছবি : সংগৃহীত
সোমবার মিয়ানমার নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিয়োগ করেছে। এই নিয়োগের ফলে দেশটির রাজনীতি ও নিরাপত্তা ইস্যুগুলোর ব্যবস্থাপনা এবং সেইসাথে বেসামরিক-সামরিক সম্পর্ক বিশেষ কোনো দিকে মোড় নেবে কিনা সে প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে।
এই লেখাটি তৈরীর সময় মিয়ানমারের সরকার নানা সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল। ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি) দেশটির ক্ষমতায় থাকলেও তাতমাদাও নামে পরিচিত দেশটির সামরিক বাহিন এখনো সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বিপুল ক্ষমতা জাহির করে চলেছে। সামরিক বাহিনীকে পার্লামেন্টে কিছু আসনের নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে। এর সাথে প্রতিরক্ষা, সীমান্ত, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও তাদের হাতে রয়েছে। ২০০৮ সালে সামরিক বাহিনীর প্রণীত সংবিধানে তাদের এসব সুবিধা দেয়া হয়েছে।
সোমবার বেসামরিক-সামরিক সমীকরণে নতুন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হাতে রয়েছে গোয়েন্দা বাহিনী, পুলিশ, কারাগারসহ দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ। লে. জেনারেল সো হতাতকে নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিযুক্ত করা হয়েছে। তিনি পদত্যাগকারী কিয়াও সের স্থলাভিষিক্ত হলেন।
মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী ও রাজনীতিতে সো হতাত নতুন কেউ নন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর অফিসের সাবেক মন্ত্রী পরলোকগত লুন মাঙের ছেলে। লুন ২০০১ সালে মিয়ানমারে এক হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছিলেন। সো হতাত ২০১৬ সাল থেকে সামরিক নিরাপত্তা বিষয়াদি তত্ত্বাবধান করে আসছিলেন। এর আগে তিনি ইস্টার্ন সেন্ট্রাল কমান্ড ও সেন্ট্রাল কমান্ডের কমান্ডার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
অতীত রেকর্ড ও সামরিক বাহিনীর মধ্যে তার যোগাযোগের ফলে এই পরিবর্তন বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। অনেক বিশ্লেষক এমন কথাও বলছেন যে আং সান সু চির সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকার কারণেই বিদায়ী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে সরে যেতে বাধ্য করা হয়েছে।
এই নিয়োগের তাৎপর্য আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই পরিষ্কার হয়ে যাবে। তিনি কিভাবে তার ক্ষমতা প্রয়োগ করেন, কোন কোন নীতিতে পরিবর্তন আনেন, নির্বাচনী বছরে ক্ষমতাসীন এনএলডি ও সু চির সাথে কেমন সম্পর্ক রাখেন, সেগুলো দেখার বিষয় হবে। তাছাড়া সামরিক বাহিনীর অবস্থানও তার মাধ্যমে ফুটে ওঠবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ইরাবতী ১০ ফেব্রুয়ারি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, তারা জানতে পেরেছে যে সামরিক বাহিনীর আসন্ন ত্রিমাসিক বৈঠকে বাহিনীর মধ্যে ব্যাপক পরিবর্তন আসছে। অবশ্য, এই প্রতিবেদনের সত্যতা যাচাই করা হয়নি।
দি ডিপ্লোম্যাট
মিয়ানমারের বিরুদ্ধে যৌথ বিবৃতি দিতে ব্যর্থ নিরাপত্তা পরিষদ
এপি
রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) দেয়া আদেশ নিয়ে আলোচনা করেছে জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদ। মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) এক রুদ্ধদ্বার বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হলেও কোনো যৌথ বিবৃতি আসেনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কূটনীতিক সূত্র জানিয়েছে, মিয়ানমারের মিত্র হিসেবে নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য চীন ও অস্থায়ী সদস্য ভিয়েতনাম বিবৃতি দেয়ার বিরোধিতা করে।
গত ২৩ জানুয়ারি জাতিসঙ্ঘের সর্বোচ্চ বিচারালয় আইসিজে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা নিশ্চিতে চারটি অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ ঘোষণা করে। এগুলো হলোÑ ০১. রোহিঙ্গাদের হত্যা, মানসিক ও শারীরিক নিপীড়ন ও ইচ্ছাকৃত আঘাত করা যাবে না। ০২. গণহত্যার আলামত নষ্ট করা যাবে না। ০৩. গণহত্যা কিংবা গণহত্যার প্রচেষ্টা বা ষড়যন্ত্র না করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ। ০৪. সেখানে পরিস্থিতি উন্নয়নে নেয়া পদক্ষেপের বিষয়ে চার মাসের মধ্যে আদালতে মিয়ানমারকে রিপোর্ট উপস্থাপন করতে হবে। জাতিসঙ্ঘসহ পশ্চিমা দেশগুলো এই আদেশ বাস্তবায়নে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। তবে গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করে নেপিদো।
মঙ্গলবার আলোচনার পর নিরাপত্তা পরিষদের ইউরোপীয় সদস্য দেশগুলো যৌথ বিবৃতি দিয়েছে। এতে মিয়ানমারকে আইসিজের আদেশ বাস্তবায়নের ওপর জোর দিয়ে বলা হয়, আন্তর্জাতিক আইনে এটা মেনে চলা বাধ্যতামূলক। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘মিয়ানমারকে অবশ্যই রাখাইনের পাশাপাশি কাচিন ও শান প্রদেশের সঙ্ঘাতের মূল অনুসন্ধান করতে হবে। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে মানবাধিকার ও মানবিক আইন ভঙের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নিতে হবে।’