মোদিকে যে বার্তা দিলো দিল্লির নির্বাচন

শোয়াইব দানিয়েল | Feb 12, 2020 07:30 am
মোদি ও কেজরিওয়াল

মোদি ও কেজরিওয়াল - ছবি : সংগৃহীত

 

মঙ্গলবার ভোট গণনা যখন শেষ হচ্ছিল, ততক্ষণে ফলাফল পরিষ্কার হয়ে গেছে : সন্ধ্যা ৭:৩০-এ আম আদমি পার্টি দিল্লির ৭০ আসনবিশিষ্ট বিধান সভায় অবাক করা ৬২টি আসনে জয়ী হচ্ছে। যেকোনো রাজ্য বিধান সভার নির্বাচনে এটি অন্যতম বৃহত্তম জয়। আর কোনো ৬০ সদস্যের বেশি রাজ্য বিধান সভায় এত বিপুল ব্যবধানে জয়ের মাত্র তিনটি ঘটনা রয়েছে।

আর ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) জন্য একটি অশুভ ইঙ্গিত। এই নির্বাচনে জয়ের জন্য তারা সম্ভব সবকিছুই করেছে। তারা জোরালো কণ্ঠে ও প্রবলভাবে সাম্প্রদায়িক কথাবার্তা বলেছে, নতুন নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ও প্রস্তাবিত জাতীয় নাগরিকপঞ্জির (এনআরসি) মতো জাতীয় ইস্যুগুলোকে সামনে এনেছে। এসব নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদরত লোকজনকে দানব হিসেবেও উপস্থাপন করেছে।
তিক্ত প্রচারণার মধ্যে ছিল প্রতিবাদকারীদের গুলি করার হুমকি, আম আদমি পার্টি শরিয়া আইন জারি করতে চায়- এমন ধরনের অপ্রপ্রচার।
অন্য দিকে আম আদমি পার্টি স্কুল ও সস্তা বিদ্যুতের মতো স্থানীয় উন্নয়নের দিকে নজর দিয়েছে। দলটি নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে কথা না বললেও একে এই নির্বাচনের কোনো ইস্যুতে পরিণত করতে চায়নি, এমনকি দিল্লিতেই এই আইনের বিরুদ্ধে সবচেয়ে কড়া প্রতিবাদ হলেও তারা এ ব্যাপারে সরব হয়নি।
স্পষ্টভাবেই বোঝা যাচ্ছে, দিল্লির ভোটাররা ব্যাপকভাবে স্থানীয় ইস্যুতে ভোট দিয়েছে, বিজেপির জাতীয় ইস্যুগুলোতে প্রত্যাখ্যান করেছে।

জাতীয় বনাম রাজ্য
মাত্র এক বছরেরও কম সময় আগে হওয়া লোকসভার নির্বাচনে দিল্লির ভোটাররা যেভাবে ভোট দিয়েছে, এবার ঘটনা ঘটেছে সম্পূর্ণ ভিন্নভঅবে। ওই নির্বাচনে দিল্লির সাতটি আসনের সবগুলোতেই বিজেপি জয়ী হয়েছিল।
এখন এই নির্বাচন বিজেপির জন্য একটি নির্দিষ্ট চিত্র সামনে নিয়ে এলো। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচ পাকিস্তানের সৃষ্ট কথিত সমস্যা, হিন্দু পরিচিতির মতো সর্বভারতীয় বিষয়গুলো খুবই গুরুত্ব পেয়েছিল। কিন্তু স্থানীয় নির্বাচনে লোকজনের জীবন-জীবিকাই প্রধান বিষয়ে পরিণত হয়েছে।
বিজেপি ২০১৮ সাল থেকে রাজ্য পর্যায়ের নির্বাচনে হেরেই যাচ্ছে। এমনকি ২০১৯ সালের লোকসভার নির্বাচনে বিপুলভাবে যেসব রাজ্যে জয়ী হয়েছে, ওইসব রাজ্যেও তারা বিপুলভাবে হারছে।
উদাহরণ হিসেবে দিল্লির কথা বলা যায়। ২০১৯ সালের লোকসভায় এখানে বিজেপি যেখানে ভোট পেয়েছিল ৫৬.৯ ভাগ, সেখানে এবার পেয়েছে ৩৮.৫ ভাগ। আরেকটি উদাহরণ আরো বিপর্যয়কর। তেলেঙ্গানায় বিজেপি রাজ্য বিধান সভার চেয়ে তিনগুণ বেশি ভোট পেয়েছিল। ওই নির্বাচনে তেলেঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতি জয়ী হয়েছিল।
হরিয়ানা, রাজস্তান, ছত্তিশগড়, মধ্য প্রদেশ ও কর্নাটকে রাজ্য বিধান সভার চেয়ে ৫০ ভাগ বেশি ভোট পেয়েছিল বিজেপি।

ভারতের নির্বাচনের এই ধরনটিকে রাজনীতি-বিজ্ঞানীরা ‘বিভক্ত টিকেট ভোটপ্রদান’ হিসেবে অভিহিত করছেন। রাজ্য বা জাতীয় নির্বাচনে তারা কাকে ভোট দেবেন তা নির্ভর করছে দল ও প্রার্থীর ওপর।
বিজেপির পেশীবহুল জাতীয়তাবাদ ও সংখ্যাগরিষ্ঠতাবাদ পরিচিতির ফলে দলটি ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিপুলভাবে জয়ী হয়। কিন্তু রাজ্য বিধান সভার নির্বাচনে ভোটারেরা জীবন-জীবিকা, স্থানীয় বিষয়গুলোকেই প্রাধান্য দিয়েছে। এর ফলে ভারতের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ কোনো দল হিসেবে ২০২০ সালে সবচেয়ে কম রাজ্যে নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারল।

নিরাপত্তার স্বস্তি
এসব ঘটনা রাজ্য পর্যায়ে বিজেপি সঙ্কটে আছে বলে প্রকাশ করলেও এর আরেকটি অর্থ হলো জাতীয় পর্যায়ে তাদেরকে চ্যালেঞ্জ করার মতো বলতে গেলে কেউ নেইা। ঝাড়খন্ডের হেমন্ত সরেন থেকে দিল্লির অরবিন্দ কেজরিওয়ালরা তাদের রাজ্যে বিশাল বিজেপিকে কুপোকাত করলেও লোকসভার নির্বাচনে মোদির সাথে পাল্লা দেয়ার মতো অবস্থান সৃষ্টি করতে পারেনি।
দিল্লি বাস্তবে বিভক্ত টিকেট ভোট প্রদানের বিষয়টি ফুটিয়ে তুলেছে। এটি ভারতের রাজধানী হওয়ায় এর জাতীয় ইস্যুগুলোতে এখানে সচেতনতা অনেক বেশি। স্ক্রল.ইনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রধান প্রধান আদর্শগত ইস্যুতে আম আদমির অনেক ভোটার আসলে বিজেপি ও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মোদিকেই সমর্থন করে। নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারীরা রাষ্ট্রীয় সম্পত্তির ক্ষতি করছে বলে বিজেপির নির্জলা মিথ্যা বক্তব্য পর্যন্ত অনেক আম আদমি ভোটার বিশ্বাস করে।

এই ভাবাবেগে চালিত হয়ে নির্বাচনী প্রচারণার একেবারে শেষ দিকে আম আদমি পার্টি তাদের দ্ব্যর্থবোধকতা ছেড়ে ফেলে ওই প্রতিবাদের বিরুদ্ধে পর্যন্ত অবস্থান গ্রহণ করে। ৩ ফেব্রুয়ারি কেজরিওয়াল বলেন যে দিল্লি পুলিশের ওপর তার নিয়ন্ত্রণ থাকলে তিনি রাস্তা পরিষ্কার করে ফেলতেন। উল্লেখ্য, সেখানে প্রায় দুই মাস ধরে বিক্ষোভ চলছে।
অর্থাৎ ভোটাররা রাজ্য পর্যায়ের নির্বাচনে বিকল্প গ্রহণ করতে প্রস্তুত থাকলেও জাতীয় পর্যায়ে বিজেপি চ্যালেঞ্জহীনই থাকছেন। একের পর এক রাজ্য বিধান সভার নির্বাচনে পরাজয় গেরুয়া শিবিরের জন্য খারাপ খবর হলেও তাদের জাতীয় পর্যায়ের মর্যাদা তুলনামূলকভাবে চ্যালেঞ্জহীনই রয়ে গেছে।

স্ক্রল.ইন

 


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us