সেই 'মাফলার ম্যান'ই এখন মহানায়ক
অরবিন্দ কেজরিওয়াল - ছবি : সংগৃহীত
ফল ঘোষণার আগের দিন অর্থাৎ সোমবারও তিনি দাবি করেছিলেন, ভারতের রাজধানীতে দিল্লিতে বিজেপি ৪৮টা আসন পাচ্ছেই। এমনকী ৫৫ আসন বিজেপি পেলেও তিনি অবাক হবেন না বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু মঙ্গলবার বেলা যত বেড়েছে, ততই মুখ শুকিয়েছে দিল্লির বিজেপি সভাপতি মনোজ তিওয়ারির। বিজেপিকে কার্যত মাটি ধরিয়ে ৬২ আসনে জয়ী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি, বিজেপির আসন সংখ্যা ৮ আর কংগ্রেসের হাতে শূণ্য আসন!
বিপুল জয় পেয়ে ক্ষমতায় ফিরে ভগবান হনুমানকে স্মরণ করলেন তৃতীয় বার দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসতে চলা অরবিন্দ কেজরিওয়াল। মঙ্গলবার বিকেলে তিনটি স্লোগানও দিলেন কেজরি। 'ভারত মাতা কি জয়', 'ইনকিলাব জিন্দাবাদ' ও 'বন্দে মাতরম'! দলের কর্মীদের উদ্দেশেও বললেন, 'আপনারা আমাকে অবাক করেছেন...আমি আপনাদের ভালোবাসি।'
এখানেই থামেননি তিনি। বলেন, 'নতুন ধারার এক রাজনীতির জন্ম হল। যেটা উন্নয়নের রাজনীতি।' তার কথায়, 'ভোটের ফলে এই বার্তাই স্পষ্ট যে, যারা স্কুল ও মহল্লা ক্লিনিক বানাবে, সস্তায় বিদ্যুৎ দেবে, ঘরে ঘরে জল পৌঁছে দেবে এবং রাস্তা নির্মাণ করবে, তাদেরই ভোট দেবেন দিল্লির মানুষ। এটা একটা নতুন ধারার রাজনীতি এবং গোটা দেশের জন্যই শুভ বার্তা।' কেজরিওয়াল মনে করেন, 'কেবল এই ধরনের রাজনীতিই ভারতকে একবিংশ শতাব্দীতে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। এই জয় শুধু দিল্লির নয়, ভারতমাতারও।''
গত বিধানসভা ভোটে (২০১৫ সালে) দিল্লির ৭০টি আসনের মধ্যে ৬৭টিতেই জিতেছিল (আপ)। কিন্তু ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের নিরিখে চিত্রটা একদম উলটো। ৭০টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে ৬৫টিতে এগিয়ে ছিল বিজেপি। পাঁচটিতে কংগ্রেস। আপ একটিতেও নয়। লোকসভার সাতটি আসনের সাতটিতেই জেতে বিজেপি। ২০১৪ সালের লোকসভা ভোট, যে ভোটে জিতে প্রথম বার প্রধানমন্ত্রী হন নরেন্দ্র মোদি, সেই ভোটেও বিজেপি দিল্লিতে সাতে সাত জিতেছিল। কিন্তু পরের বছরই বিধানসভা ভোটে আপ স্রোতে ভেসে গিয়েছিল বিজেপি। এবারও যেন তারই ফটোকপির দেখা মিলল।
এ দিন ভোট গণনার মাঝামাঝি সময়ে দিল্লির বিজেপি সভাপতি দাবি করেন, 'এখনো সেই সব ভোট গণনা হয়নি, যাঁরা শনিবার বিকেলের দিকে ভোটদান করেছেন৷ এই ভোটদাতারাই ফারাক গড়ে দেবেন৷' শনিবার তিনি একটি টুইটে দাবি করেছিলেন, 'টিভি চ্যানেলে দেখানো সব এগজিট পোল ভুল প্রমাণিত হবে৷ আমার এই টুইট মনে রাখবেন৷'
তবে বাস্তবে দেখা যায় এই টুইটের মতোই তাঁর জেতার দাবিও মুখ থুবড়ে পড়েছে। কিন্তু তাতেও রণে ভঙ্গ দেননি তিনি। দাবি করেন, তাঁদের ভোট শেয়ার বৃদ্ধি পাওয়ার। তার পরে অবশ্য তিনি কেজরিওয়ালকে অভিনন্দন জানান। একই সঙ্গে বলেন, 'কেন আমরা জনতার আশীর্বাদ থেকে বঞ্চিত হয়েছি, তার সমীক্ষা করে দেখা হবে৷ তবে দিল্লির জনতা যে রায় দিয়েছেন, তা আমরা গ্রহণ করছি৷' রাজনৈতিক মহলের মতে, শাহীন বাগ, জামিয়া কিংবা জেএনইউ নিয়ে বিজেপির বিভাজনের রাজনীতি কাজ করেনি, বরং দিল্লির নিবাসীরা আস্থা রেখেছেন কেজরিওয়ালের উন্নয়নে। যে উন্নয়নকে পাখির চোখ করেই ২০২১-এর ছক তৈরি করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
খাতায় কলমে না হলেও কৌশলগত দিক থেকে অমিত শাহ-ই ছিলেন দিল্লি ভোটের মুখ। ফলে কেজরিওয়ালের জয় যত না মনোজের, তার চেয়ে অনেক বেশি অমিতেরই। আর এই বিপর্যয়ের দিনে এবার বাংলাকেই মূল লক্ষ্য করে এগোতে চাইছে বিজেপি। সেই সূত্রেই মার্চেই কলকাতা সফরে আসছেন অমিত শাহ৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজ্যে সিএএ ও এনপিআর-এর সমর্থনে সভাও করবেন তিনি৷ দিল্লি বিধানসভার ভোটে বিজেপির ভরাডুবির পরে রাজ্যে বিজেপির হাল যাতে আরও খারাপ না হয়, তা নিশ্চিত করার জন্যই এ বার কোমর বেঁধে নামছেন অমিত শাহ৷
অপরদিকে দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে এ বারও শোচনীয় হাল হল কংগ্রেসের! মূল লড়াই যে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আমআদমি পার্টির সঙ্গে বিজেপি'র হবে, সে ইঙ্গিত বুথফেরত সমীক্ষাতেই ছিল। কংগ্রেস যে সর্বশক্তি নিয়ে দিল্লির জন্য ঝাঁপিয়ে ছিল, তা-ও নয়। কিন্তু, শীলা দীক্ষিতের মুখ্যমন্ত্রিত্বে যে কংগ্রেস ১৫ বছর দিল্লি শাসন করেছে, তার জনসমর্থন ৫ শতাংশের নীচে নেমে আসবে, তা অনেকের কল্পনাতেও বোধ হয় ছিল না। ৬৩ জন কংগ্রেস প্রার্থীর জামানত জব্দ হয়েছে। কেবলমাত্র কংগ্রেসের তিন প্রার্থী-- গান্ধীনগর থেকে অরবিন্দর সিং লাভলি, বাদলি থেকে দেবেন্দ্র যাদব এবং কস্তুরবা নগর থেকে অভিষেক দত্ত জামানত রক্ষা করতে পেরেছেন। ফলে, স্বাভাবিক ভাবেই কংগ্রেসের একজনও কেউ খাতা খুলতে পারেননি। এই নিয়ে দ্বিতীয়বার কংগ্রেসকে শূন্য হাতে ফেরাল দিল্লি।
সূত্র : আজকাল