বাংলাদেশে নির্বাচন ও গণতন্ত্র : একটি বিশ্লেষণ
বাংলাদেশে নির্বাচন ও গণতন্ত্র : একটি বিশ্লেষণ - ছবি : সংগ্রহ
সবারই জানা নির্বাচন ও গণতন্ত্র শব্দ দু’টি সমার্থক নয়। তবে নির্বাচন গণতন্ত্রে উত্তরণের একটি অত্যাবশ্যকীয় অনুষঙ্গ। নির্বাচন অবাধ নিরপেক্ষ এবং সুষ্ঠু না হলে গণতন্ত্রের পথ সুগম হয় না। অন্যভাবে বলতে গেলে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান একটি দেশের গণতন্ত্র চর্চার পথকে কণ্টকমুক্ত করে। দুঃখজনক হলেও একটি ঐতিহাসিক সত্য এই যে, বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হয় না। ফলে এখানে গণতন্ত্রের চর্চাও নেই। আছে জোর যার মল্লুুক তার নীতি। সেটা স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশেই হোক বা স্বাধীনতাপূর্ব বাংলাদেশেই হোক। এই নিবন্ধে সেটাই এবং এর ফলাফল দেখাবার চেষ্টা করব।
প্রথমত ১৯৫৪ সালের ৮ এবং ১২ মার্চ নির্বাচনে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর আওয়ামী লীগ ও শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক সাহেবের কৃষক শ্রমিক পার্টির সমন্নয়ে গঠিত যুক্তফ্রন্ট তদানীন্তন পূর্ববাংলা আইন পরিষদে বিজয়ী হয়েছিল। এটি ছিল ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর প্রথম নির্বাচন।
ওই নির্বাচনে মুসলিম লীগের সব মন্ত্রীরা আইন সভায় তাদের আসন হারিয়েছিলেন। তবে যুক্তফ্রন্ট সরকার বেশিদিন টেকেনি। ১৯৫৪ সালের ২৪ অক্টোবরে তদানীন্তন পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল গোলাম মোহাম্মদ সে আইন পরিষদ ভেঙে দেন। পরবর্তী আইন পরিষদে ১৯৫৮ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের আইন পরিষদের ডেপুটি স্পিকার শাহেদ আলী পাটওয়ারীর আহত হওয়া ও এর দু’দিন পর তার মৃত্যু, দেশে চলমান নানাবিধ দুর্নীতি ও অরাজকতার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৫৮ সালের ২৭ অক্টোবর সেনাপ্রধান জেনারেল আইয়ুব খান সামরিক আইন জারি করেন। পরবর্তীকালে ১৯৬০ সালে আইয়ুব খান ‘বেসিক ডেমোক্র্যাসি’ নামে এক সীমিত গণতান্ত্রিক প্রথা চালু করে ১৯৬৫ সালের ২ জানুয়ারি নির্বাচন দেন। এতে প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত সারা দেশের ৮০ হাজার প্রতিনিধির ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বী ফাতেমা জিন্নাহ্কে পরাজিত করে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। অবশ্য যদিও ওই নির্বাচনে ‘পপুলার’ ভোটে ফাতিমা জিন্নাহ্ বিজয়ী হন। সে নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ উঠেছিল। ফলে দেশে ওয়েস্টমিনিস্টার ধারার গণতন্ত্র যাকে আদর্শ বলে ধরা হয় তার বিকাশ ব্যাহত হয়। ১৯৬৯ সালে দেশজুড়ে ব্যাপক গণঅভ্যুত্থানের মুখে আইয়ুব খান ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ান এবং সেনাপ্রধান জেনারেল ইয়াহিয়া খান ১৯৬৯ সালের ২৫ মার্চ সামরিক আইন জারি করেন।
১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর জেনারেল ইয়াহিয়া খান দেশে সাধারণ নির্বাচন দেন। পশ্চিম এবং পূর্ব পাকিস্তান উভয় অঞ্চলে এ নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি হয়েছে। জনগণকে ভোট দিতে হয়নি। সংশ্লিষ্ট দলের নেতাকর্মীরাই একেক জন বিশ-ত্রিশটি করে ভোট দিয়ে ব্যালট বাক্স পূর্ণ করেছে। পূর্ব পাকিস্তানে শেখ মুজিবুর রহমানের পাকিস্তান আওয়ামী লীগ ও পশ্চিম পাকিস্তানে জুলফিকার আলী ভুট্টোর পাকিস্তান পিপল’স পার্টি (পিপিপি) ভোটে বিজয়ী হয়। এ নির্বাচনে পাকিস্তান আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ম্যানিফেস্টো ছয় দফার প্রতি এ অঞ্চলের জনগণের সমর্থন ছিল। যে কারণে নির্বাচনে ভোট দিতে না পারলেও জনগণ এ নির্বাচনের ফলাফল মেনে নিয়েছিল। পশ্চিম পাকিস্তান যেহেতু ৬ দফার বিপক্ষে ছিল তাই সে অঞ্চলের বিজয়ী দল পিপিপিকে তারা মেনে নিয়েছিল। ফলে এ নির্বাচনের পর পাকিস্তান দুই মেরুতে বিভক্ত হয়ে পড়ে। যার পরিণতি পায় দেশ বিভক্তিতে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। স্বাধীন বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। এরপর থেকে বাংলাদেশে শুরু হয় ‘গণতন্ত্র’ ও সামরিক শাসনের এক নতুন অধ্যায়।
স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম সাধারণ নির্বাচন হয় ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৩০০ আসনের পার্লমেন্টে ২৯৩ আসন লাভ করে। সে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এতটাই দাপট ছিল যে, ভিন্নমতাবলম্বীরা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতেই সাহস পায়নি, জেতা দূরের কথা। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৫ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের বহুদলীয় গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা পরিবর্তিত হয়ে একদলীয় বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগের (বাকশাল) শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়। এর অল্প ক’দিনের মধ্যেই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাকশালপ্রধান শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হন এবং তারই অন্যতম শীর্ষ কমরেড আওয়ামী লীগ নেতা খন্দকার মোস্তাক আহমদ দেশে সামরিক আইন প্রবর্তন করে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ৬ নভেম্বর পর্যন্ত ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকেন। আওয়ামী লীগের প্রায় সব নেতাই মোস্তাক সরকারে যোগদান করেন। এতে বোঝা যায় একদলীয় বাকশাল ব্যবস্থার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের ভেতরই একটি বিরোধী গ্রুপ সক্রিয় ছিল, যারা বাকশাল ব্যবস্থাকে মেনে নিতে পারেননি। বর্তমান আওয়ামী লীগের বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা গ্রহণের মধ্য দিয়েও এ কথার সমর্থন পাওয়া যায়। বাদবাকি তিন শীর্ষনেতা ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিহত হন। এ সামরিক শাসন কিছুদিন চলার পর সামরিক অভ্যুত্থান পাল্টা অভ্যুত্থানের জেরে সেনাপ্রধান জেনারেল জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসেন। এরপর ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর জেনারেল জিয়া নিজ রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) গঠন করে ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রবর্তন করেন। সে নির্বাচনে বিএনপি ৩০০ আসনের পার্লামেন্টে ২০৭ আসন পেয়ে বিজয়ী হয়। এরপর ১৯৮১ সালের ৩০ মে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামে নিহত হলে বিএনপির বিচারপতি আবদুস সাত্তার বাংলাদেশের প্রেসিডেন্টের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।
১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ সেনাপ্রধান জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এক রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বিচারপতি সাত্তারকে ক্ষমতাচ্যুত করে দেশে সামরিক আইন জারি করেন। ১৯৮৬ সালের ১ জানুয়ারি তিনি নিজ দল জাতীয় পার্টি গঠন করে নিজে ক্ষমতায় থেকে ১৯৮৬ সালের ৭ মে জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেন। সে নির্বাচনে বিজয়ের আশায় আওয়ামী লীগ অংশগ্রহণ করে পরাজিত হয় এবং কারচুপির মাধ্যমে এরশাদের জাতীয় পার্টি বিজয়ী হয়। বিএনপি সে নির্বাচন বয়কট করে। ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর এরশাদ দেশব্যাপী গণঅভ্যুত্থানের জেরে বিচারপতি শাহাবুদ্দীনের নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ান। বিচারপতি শাহাবুদ্দীনের সরকার ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করেন এবং সে নির্বাচনে বিএনপি বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নিজ দলীয় সরকারের অধীন বিএনপি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদের ৩০০ আসনের ৩০০টিতেই বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। এ নির্বাচন প্রায় সব বিরোধী দল বয়কট করেছিল। এই নির্বাচন বাতিল করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীন নির্বাচনের দাবিতে বিরোধীরা তুমুল আন্দোলন গড়ে তুললে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া ১৯৯৬ সালে পার্লমেন্টে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের বিল পাস করে ক্ষমতা ছাড়েন। ১৯৯৬ সালের ৩ এপ্রিল সাবেক প্রধান বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়। এই সরকার ১৯৯৬ সালের ১২ জুন জাতীয় নির্বাচন দিলে ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ১৪৬টি আসন পেয়ে সরকার গঠন করে এবং বিএনপি ১১৬টি আসন পেয়ে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে সংসদে প্রবেশ করে।
এমনি করে ২০০১ সালের পরবর্তী নির্বাচনটিও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীন অনুষ্ঠিত হয় এবং বিএনপি পুনরায় ক্ষমতায় আসীন হয়। পরবর্তী সময়ে নির্বাচন নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হওয়ার লক্ষ্যে খালেদা জিয়া ২০০৬ সালের ২৭ অক্টোবর ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ালেও রক্তাক্ত গোলযোগপূর্ণ পরিস্থিতির জেরে সেনাসমর্থিত ফখরুদ্দীন আহমেদের তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২০০৬-২০০৮ সময়কালে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকে। এই সময়কালে বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ নেত্রী উভয়কেই কারাবরণ করতে হয়। পরবর্তীকালে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সে নির্বাচনে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি ক্ষমতা গ্রহণের মধ্য দিয়ে ফখরুদ্দীন সরকার বিদায় নেয়।
এবার ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের ধারাটি সংবিধান থেকে মুছে দেয়। এর পরবর্তী যে ক’টি নির্বাচন ২০১৪, ২০১৯ সালে হয়েছে এর সব ক’টি আওয়ামী লীগের দলীয় সরকারের অধীন হয়েছে এবং আওয়ামী লীগ প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের মাধ্যমে বিজয়ী হয়েছে- প্রথমটি প্রতিদ্বন্দ্বীহীন ও পরেরটি ভোটারবিহীন। এভাবে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও বিএনপি সবাই প্রমাণ করেছে যে, এ দেশে দলীয় সরকারের অধীন নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। যে দল ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন করবে তাকে গণ-আন্দোলন ব্যতীত ক্ষমতা থেকে হটানো কোনো প্রকারেই সম্ভব নয়। এ প্রকারে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ ‘যুদ্ধাপরাধীদের’ বিচার ও বিএপি নেতাকর্মীদের ওপর দমন-পীড়ন করে এতটাই ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে যে এ দলের নেতারা প্রকাশ্যেই বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থেকে গেলে কম পক্ষে পাঁচ লাখ লোক মারা পড়বে। আওয়ামী লীগ তাই ক্ষমতায় থাকতে মরিয়া।
এতেই বোঝা যায় বাংলাদেশের গণতন্ত্র এমনই বিচিত্র যে, যে দল যখন ক্ষমতায় থাকে তার অধীনে নির্বাচন করে তাকে ক্ষমতা থেকে সরানো অসম্ভব। নির্বাচনটা ছল। ক্ষমতাই আসল। বিগত পাকিস্তান আমলের আইয়ুব শাসন আমল থেকে বর্তমান আওয়ামী লীগ আমল পর্যন্ত আমরা এই দেখে আসছি। এটা সম্ভব হয় দলীয় নেতাকর্মী, সমাজের এলিট শ্রেণী, ব্যবসায়ী, আমলা ও সরকারের বিভিন্ন বাহিনীকে দুর্নীতিগ্রস্ত করে নির্বাচনী ও প্রশাসন যন্ত্রকে যথেচ্ছ ব্যবহারের মাধ্যমে। এ শ্রেণীটির নিজস্ব কোনো নীতি-আদর্শ নেই, একমাত্র ক্ষমতাবানদের কাছ থেকে সুবিধা আদায় করা ছাড়া। এরা গণবিচ্ছিন্ন এক পরগাছা শ্রেণী যারা ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলেও ছিল, এখনো আছে। এতে সমাজের বুদ্ধিজীবীদের একটি অংশও আছে বটে। সমাজের মধ্যবিত্ত শ্রেণীটির চরিত্রও অনেকটা তাই। আত্মপ্রেম ছাড়া এদের কোনো দেশপ্রেম নেই। ভালো-মন্দ যা হোক, রাজনৈতিক ক্ষমতা পরিবর্তনের ব্যাপারে এরা উদাসীন।
এ ধরনের সমাজে গণতন্ত্র ভঙ্গুর। অর্থ-বিত্ত-ক্ষমতা-প্রভাব-প্রতিপত্তির লোভ যেখানে প্রবল, গণতন্ত্র সেখানে দুর্বল। তাই দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে ক্ষমতায় আসা এমনই উপাদেয় যে, এ রীতি কেউ ছাড়তে চায় না। আওয়ামী লীগ এই ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা থেকেই নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সরকার পদ্ধতিটি সংবিধান থেকে মুছে দিয়েছে। ফল দাঁড়িয়েছে এই যে, উপর্যুপরি দু’দুটি প্রতিদ্বন্দ্বীহীন ও ভোটরবিহীন নির্বাচনে জিতে আওয়ামী লীগ দেশের সব সুবিধাভোগীদের ভোট-বিমুখ করে ছেড়েছে। এর প্রমাণ ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারির ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে পাওয়া গেছে। এ জাতীয় ‘গণতান্ত্রিক’ দেশ বিশ্বের দরবারে পরমুখাপেক্ষী একটি মান-মর্যাদাহীন দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
এ জাতীয় দেশ বিপদকালে বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশগুলোর কাছ থেকে মৌখিক আশ্বাস ছাড়া আর কিছুই পায় না। রোহিঙ্গা সমস্যা এরূপ একটি উদাহরণ। এছাড়াও অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রের অভাবে দেশ দুর্বল অবস্থানে চলে যায়। জাতি ঐক্যবদ্ধ থাকে না বলে দেশী-বিদেশী কায়েমি স্বার্থবাদী শক্তি কোনো বিনিময় ছাড়াই ইচ্ছে মতো সুবিধা আদায় করে নেয়। যেমন ভারত বাংলাদেশ থেকে নিয়েছে এবং নিচ্ছে। দেশে গণতন্ত্রহীনতার ফাটল পথে বিদেশীরা দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করে, যেমনটা বিদেশী কূটনীতিকরা বাংলাদেশে করছে। দেশের স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি বলে কিছু থাকে না। যেমনটা বাংলাদেশের নেই। প্রমাণ বিগত ৭৩ বছর ধরে নির্যাতিত কাশ্মিরি জনগণের পক্ষে বাংলাদেশ মুখ খুলতে পারে না, যদিও ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধকালে বাংলাদেশ তেমনই ভীতিকর অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে গিয়েছে। এ ফিরিস্তির অন্ত নেই। যে স্বাধীন দেশে জনগণের রাষ্ট্র পরিচলানায় ভূমিকা নেই, সে দেশকে বিশ্ব লোক দেখানো মূল্য ছাড়া কিছু দেয় না। দেশের অভ্যন্তরে গণতন্ত্রের চর্চার অভাবে বাংলাদেশকে এ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
লেখক: অর্থনীতির অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক