আফগানিস্তান : যুক্তরাষ্ট্র আউট, চীন ইন
সৈয়দ ফজল-ই-হায়দার - ছবি : সংগৃহীত
আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের পর চীন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে আরো বড় ভূমিকায় আবির্ভূত হতে যাচ্ছে। বেইজিংয়ের ট্রিলিয়ন ডলারের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই)-এর জন্য আফগানিস্তান ভূকৌশলগত দিক থেকে এখন অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি মূল্যবান।
চীন মনে করে কৌশলগত স্থানে থাকা আফগানিস্তান বিআরআইয়ের আওতায় পূর্ব, দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া অঞ্চলের মধ্যে কানেকটিভিটি সম্প্রসারণ করতে পারে।
চীনের জন্য আফগানিস্তান একইসাথে একটি সুযোগ ও চ্যালেঞ্জ। চীনের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো তারা কিভাবে আফগান সীমান্তে তার উত্তপ্ত জিনজিয়াং প্রদেশের বিচ্ছিন্নতাবাদী ভাবাবেগকে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে ক্রমবর্ধমান হারে উপস্থিতির মাধ্যমে কৌশলগত সুযোগে রূপান্তরিত করবে।
আফগানিস্তানে চীনের স্বার্থের মূলে আছে পশ্চিম চীনের উন্নয়নের বৃত্ততর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন, তার আঞ্চলিক বাণিজ্যিক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করা, জ্বালানি পাইপলাইন স্থাপন করা এবং এই অঞ্চলে তা অর্থনৈতিক প্রভাব বিস্তৃত করা।
চীন চায় ককেশাসকে পশ্চিম চীনের সাথে সংযুক্ত করার জন্য নতুন সিল্ক রোড প্রতিষ্ঠার লক্ষে একটি ‘পামির গ্রুপ’ গঠনের জন্য পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সাথে তার কৌশলগত অংশীদারিত্ব জোরদার করতে।
ঐতিহাসিকভাবে পামির পার্বত্যমালাকে বিবেচনা করা হয় উত্তর সিল্প রোডে উজবেকিস্তানের কোকান্ড ও চীনের কাশগরে মধ্যকার কৌশলগত বাণিজ্য রুট হিসেবে।
মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের পর ঘনিষ্ঠ মিত্র পাকিস্তানের সহায়তায় যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে সবচেয়ে বড় খেলোয়াড় হিসেবে চীনের আত্মপ্রকাশের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। ২০২০ সাল হতে পারে আফগানিস্তানে আরো বড় ভূমিকা পালনের জন্য চীনের সবচেয়ে বড় পরীক্ষায় অংশ নেয়া।
চীনের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করতে মার্কিন-আফগান কৌশল
গত নভেম্বরে আফগানিস্তানে আকস্মিক ও অঘোষিত সফরে যান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি প্রথমবারের মতো বাগরাম বিমান ঘাঁটিতে অবতরণ করে ঘোষণা করে তালেবানের সাথে শান্তি আলোচনা আবার শুরু করার কথা ঘোষণা করেন।
কাতারে যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবানের মধ্যে আবার শান্তি আলোচনা শুরু করেছে। এর আগে ট্রাম্প হঠাৎ করে তালেবানের সাথে আলোচনা বাতিল করে দিয়েছিলেন।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবান উভয় পক্ষই দুই এক সপ্তাহের মধ্যে সমঝোতা প্রতিষ্ঠার আশা করছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের আফগান নীতি অনেকটাই দ্ব্যর্থবোধক এবং মার্কিন ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধটি বন্ধের ব্যাপারে মার্কিন কর্মকর্তারা শান্তি ও যুদ্ধের দোলাচলে দুলছে।
আফগানিস্তানের রাজনৈতিক সমস্যা?
এ কারণে শান্তিপ্রক্রিয়া স্থগিত করার ফলে আফগানিস্তানে চীনের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে। ট্রাম্প হঠাৎ করে শান্তি আলোচনা বাতিল করে দেয়ার পর চীন আফগান সরকার ও তালেবান উভয়ের সাথে যোগাযোগ করে।
সমন্বয় প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে তালেবান প্রতিনিধিদের সাথে শান্তি আলোচনায় বসে চীন।
আফগানিস্তানে চীনের ক্রমবর্ধমান স্বার্থ রয়েছে
আফগানিস্তান সঙ্ঘাতে গত তিন দশক ধরে দূরে অবস্থান করছে চীন। ২০০৭ সালে তার ওই অবস্থানে পরিবর্তন ঘটে। ওই সময় তিন বিলিয়ন ডলারের আানাক কপার খনি উন্নয়নের চুক্তিটি পায় চীন। আফগানিস্তানের লগার প্রদেশে অবস্থিত একটি বিশ্বের অন্যতম কপার খনি।
বিনিয়োগকারী ও উন্নয়নকারী হিসেবে প্রবেশ করার পর চীন ধরে ধীরে গত ১২ বছরে আফগানস্তানের অর্থনীতি ও রাজনীতিতে ক্রমবর্ধমান ভূমিকা পালন করতে থাকে। দেশটির তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান প্রকল্পেও জড়িত হয় চীন।
যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে তালেবানের কাছ থেকে এই আশ্বাস চায় যে আফগান মাটি ভবিষ্যতে কখনো বৈশ্বিক সন্ত্রাসের জন্য ব্যবহৃত হবে না। তালেবান যদি যুক্তরাষ্ট্রকে এই আশ্বাস দেয়, তবে তারা কেন চীনকে বিআরআইয়ের উচ্চাভিলাষী প্রকল্প আফগাস্তিান দিয়ে অতিক্রম করার সুযোগটি দেবে না?
আফগানিস্তানের রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রবেশের ক্ষেত্রে পাকিস্তান হলো চীনের ট্রাম্প কার্ড। আফগান তালেবানের ওপর পাকিস্তানের রয়েছে বিপুল প্রভাব।
পাকিস্তান যদি তালেবান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আলোচনার ব্যবস্থা করে দিতে পারে, তবে সে চীনের সাথেও যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনার ব্যবস্থা করে দিতে পারবে।
নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, যুক্তরাষ্ট্র চায় তার শর্তে সে যেন আফগানিস্তান থেকে বের হয়ে যেতে পারে, আর চীন চায় আফগানিস্তানে তার অবস্থান আরো সুসংহত করতে।
আফগানিস্তানে বিআরআইয়ের সম্প্রসারণ
চীনের সাথে সমঝোতা স্মারকে সই করা ৮৬টি দেশের একটি হলো আফগানিস্তান। কিন্তু আফগানস্তান এখনো বিআরআই চুক্তিতে সই করেনি। অথচ দেশটি দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্য এশিয়া এবং পূর্ব এশিয়া ও পশ্চিম এশিয়ার মধ্যে যোগসূাত্রে পরিণত হতে পারে যদি সে বিআরআইয়ে যোগ দেয়।
চীন ইতোমধ্যেই বিআরআইয়ে যোগ দিতে আফগানিস্তানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। কাবুলকে এই দিকে রাজি করানোর মতো সুবিধাজনক অবস্থায় আছে চীন। আবার আফগানিস্তান এতে যোগ দিলে পুরো দৃশ্যপটই পাল্টে যেতেক পারে।
দি আরব জোন