যে মন্ত্রে নতুন করে ঝাঁপিয়ে পড়ল টাইগারেরা
যে মন্ত্রে নতুন করে ঝাঁপিয়ে পড়ল টাইগারেরা - ছবি : সংগৃহীত
জিততে হলে খুব মাথা ঠাণ্ডা রেখে খেলতে হবে। টিকে থাকতে হবে ক্রিজে। তাড়াহুড়ো করলে ঘটতে পারে বিপদ। কারণ হাতে আছে মাত্র তিনটি উইকেট। এ অবস্থায় জুনিয়র টাইগারদের চিৎকার করে উৎসাহ দিতে থাকেন দলের কন্ডিশন অ্যান্ড ফিটনেস কোচ রিচার্ড স্টোনিয়ার। অবাঙালি হয়েও জুনিয়র টাইগারদের বাংলায় চিৎকার করে বলেন ‘শেষ করে আসো’।
বাংলাদেশ-ভারত অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের ফাইনাল চলাকালে গ্যালারিতে দাঁড়িয়ে এভাবেই চিৎকার করতে দেখা যায় তাকে। তখন হাতে আছে মাত্র তিন উইকেট। বিশ্বকাপ জিততে হলে করতে হবে মাত্র ১৫ রান। বল আছে ৫৪টি। এ অবস্থায় দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন দলীয় ক্যাপ্টেন আকবর আলী। ৭৭ বল খেলে ৪৩ রান করে দলের জন্য যেন খুঁটি হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। অপর প্রান্তে আকবরকে ভালোভাবেই সঙ্গ দিচ্ছিলেন রাকিবুল হাসান।
বাংলাদেশের প্রয়োজন যখন ৫৪ বলে ১৫ রান। এমন সময়ই পচেফস্ট্রমের সেনওয়েজ পার্কে নেমে আসে বৃষ্টি। ফলে খেলা বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় বাংলাদেশের রান ছিল ৪১ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৬৩। খেলা শুরু হওয়ার পর বৃষ্টি আইন ডি/এল মেথডে কমিয়ে দেয়া হয় ৪ ওভার। কমিয়ে দেয়া হয় ৮ রানও। ফলে বাংলাশের সামনে বিশ্ব জয় আরো সহজ হয়ে যায়।
শেষ পর্যন্ত রাকিবুলের ব্যাট থেকেই জয়সূচক রানটি আসে। রাকিবুল হাসান ৯ রান করে অপরাজিত থাকেন।
বাংলাদেশ দল আজকে জিতবে তা আগেই যেন অনুমান করতে পেরেছিলেন রিচার্ড স্টোনিয়ার। এ জন্য গতকাল টুইটবার্তায় তিনি লিখেছেন,‘এবারের অনূর্ধ্ব-১৯ দল বাংলাদেশের পক্ষে এখন পর্যন্ত অন্যতম পরিপক্ক একটি দল’।
মায়ের দোয়া নিয়ে খেলতে নেমে ছিলেন আকবর আলী
‘আমার ছেলে (আকবর আলি) জয় নিয়ে দেশে ফিরবে এই পণ করে খেলতে গিয়েছিল। ছেলে আমার অদম্য। ওর ইচ্ছে পূর্ণ হয়েছে। সাথে আমরা একটা বিশ্বকাপ পেলাম।’
চোখের পানি ফেলতে ফেলতে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অধিনায়ক আকবর আলির মা সাহিদা আক্তার।
রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে বাংলাদেশের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বিশ্বকাপ জয়ের পর নিজ বাড়িতে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
আকবরের মা সাহিদা আক্তার বলেন, ‘আকবর আমার দোয়া নিয়ে খেলতে গেছে। আল্লাহর রহমতে সে দেশের মুখ বিশ্বে উজ্জ্বল করেছে। তার এ জয় পুরো দেশবাসীর।’
এদিকে, টিভির পর্দায় সারাক্ষণ তাকিয়ে থাকা আকবরের বাবা মোস্তফা হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘আমি কান্না থামাতে পারছি না। এ কান্না খুশির কান্না। আল্লাহ তার ওপর রহমত করেছেন বলেই আজ আকবর পুরো বিশ্বে দেশের নাম উজ্জ্বল করেছে।’
এ সময় তিনি সবার কাছে তার ছেলের জন্য দোয়া চেয়ে বলেন, ‘আমার ছেলে স্বপ্ন দেখত, দেশের হয়ে খেলবে। সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। ওর ইচ্ছে ছিল জয় ছিনিয়ে আনবে। দৃঢ় মনোবলে সেই স্বপ্ন পূরণ করেছে।’
বাংলাদেশ দলের বিজয় নিশ্চিত হওয়ার আগ থেকেই আকবরের বাড়ি রংপুরের পশ্চিম জুম্মাপাড়ায় সংবাদকর্মীসহ অসংখ্য শুভাকাঙ্ক্ষীর ঢল নামে। পরে বিজয় আনন্দে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে বাড়িসহ পুরো এলাকা। জয় উৎসবে রংপুরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আনন্দ মিছিল এসে তার বাড়ির সামনে যুক্ত হয়।