ইরাকিরা কি টোপ গিলবে?
ইরাকিরা কি টোপ গিলবে? - ছবি : সংগৃহীত
সুসময় থাকলে হয়তো ওয়াশিংটন ও তেহরান একসাথে সমঝোতার প্রার্থী হিসেবে ইরাকের প্রধানমন্ত্রী পদে মোহাম্মদ তৌফিক আলাভির কথা ঘোষণা করতেন।
কেন নয়? তিনি সাদ্দাম হোসেনের স্বৈরতন্ত্রের বিরোধিতা করেছিলেন। তবে সাদ্দামের নির্যাতন থেকে রক্ষঅ পেয়ে যেসব শিয়া রাজনীতিবিদ ইরানে পালিয়ে গিয়েছিলেন, তিনি তাদের মতো ছিলেন না। তবে তিনি যুক্তরাজ্যের ঘনিষ্ঠ ছিলেন।
আবার তিনি তার বিখ্যাত (বা কুখ্যাত) ভাই আয়াদ আলাভির মতোও ছিলেন না তিনি। আয়াদ যুক্তরাজ্যেই বাস করতেন। মার্কিনিদের ইরাক দখলদারিত্বের আমলে প্রথম সরকার গঠনের সময় (২০০৪-২০০৫)যুক্তরাষ্ট্র তাকেই বেছে নিয়েছিল। কিন্তু মোহাম্মদ আলাভি কখনোই পাশ্চাত্য গুপ্তচরদের বিরুদ্ধে কাজ করেননি।
এমনকি তিনি কখনো তেহরানের বেতনভুগ ছিলেন কিনা সে কথা বলতেও সাহসহীন হননি। বাস্তবে তিনি তার আরেক বিখ্যাত স্বজন আহমদ চেলাবির মতো ছিলেন না।
যদিও তিনি শিয়া অভিজাত সম্প্রদায়ের সদস্য লেন, কিন্তু তিনি ইরাকি রাজনীতিবিদদেরকে ইরানের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে অনুপ্রাণিত করতেন।
বলা হয়ে থাকে, মোহাম্মদ আলাবি অত্যন্ত ধর্মভীরু, কিন্তু তবুও সেক্যুলার মানসিকতাসম্পন্ন। তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী নুরি আল মালিকির সাম্প্রদায়িক এজেন্ডা ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের প্রতিবাদে দুবার পদত্যাগ করেছিলেন।
এই আঞ্চলিক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে বাগদাদের নতুন সরকারের প্রধান হিসেবে তাবেদার কাউকে বসাতে ইরানের ব্যর্থতা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র কেন খুশি হতে পারছে না সে ব্যাপারে বোধগম্য কোনো যুক্তি পাওয়া যাচ্ছে না।
তবে অন্য যেকোনো কিছুর চেয়ে ইরাকের স্থিতিশীলতা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় মোহাম্মদ আলাভির নিয়োগকে স্বাগত জানিয়েছেন তেহরান।অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট বারহাম সলি নিয়োগপত্র দেয়ার ৫ নি পরও ওয়াশিংটন সেটি আটকে রেখেছে।
আমেরিকান থিঙ্ক ট্যাঙ্কগুলো মনে করছে, মোহাম্মদ আলাভি আসলে মুক্তাদা আল সদরের সাইরুন জোট ও হাদি আল আমিরের নেতৃত্বাধীন তার প্রতিদ্বন্দ্বী ফাতাহ ফ্রন্টম্যান হিসেবই কাজ করবেন। তাদের অনুমান মোহাম্মদ আলাভি ব্যর্থ হবেন।
এর মূলে রয়েছে আমেরিকানদের মনে এই ধারণা বদ্ধমূল হয়ে রয়েছে যে মোহাম্মদ আলাভিকে পার্লামেন্ট প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিশ্চিত করার সাথে সাথেই তিনি কেবল যুক্তরাষ্ট্র-ইরাক সম্পর্ক পুনর্গঠন করবেন না, সেইসাথে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা যে বিক্ষোভে ইন্ধন দিয়ে আসছিল, তা প্রশমিত করে ফেলবেন।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ইরাকি রাজনীতির বিভিন্ন প্রভাব বিস্তারকারী পক্ষগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা ক্ষমতা প্রায় হারিয়ে ফেলেছে। ফলে চার মাস ধরে চলা প্রতিবাদ সমাবেশই ছিল ওয়াশিংটন (এবং এর সৌদি ও আমিরাতি মিত্রদের জন্য) প্রধান হাতিয়ার। তারা আশা করেছিল, এই অস্ত্র ব্যবহার করেই ইরাকে থাকা ইরানি প্রভাব খর্ব করতে পারবে। এই প্রতিবাদ বিক্ষোভের একটি বড় বৈশিষ্ট্য হলো বিক্ষোভকারীদের বেশির ভাগের বয়স ২৫ বছরের কম এবং তাদের অনেকে নারী।
ইরাকি প্রতিবাদ আন্দোলনের সাথে হংকংয়ের প্রতিবাদীদের ব্যাপক মিল রয়েছে। হংকংও চায় স্থানীয় সরকার তাদের কাছে নতি স্বীকার করুক। ইরাকি প্রতিবাদী আন্দোলনেরও কোনো ঐক্যবদ্ধ নেতৃত্ব নেই। তারা কেবল বর্তমান রাজনৈতিক এলিটদের বিদায় চায়। তাদের বদলে কারা আসবে, সে সম্পর্কে তাদের সুনির্দিষ্ট কোনো ধারণা নেই। হংকংয়ে যেমন গোপন শক্তি বিক্ষোভকারীদের ইন্ধন দিয়ে আসছে, ইরাকের ক্ষেত্রেও একই কাজ হচ্ছে।
বিদায়ী ইরাকি প্রধানমন্ত্রী আবেল আবদুল-মাহদি তিক্তভাবে ইরাকি পার্লামেন্টে ৫ জানুয়ারি অভিযোগ করেছেন যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে তার দুবার টেলিফোন আলাপ হয়েছে। আর দুবাবরই তিনি হুমকি দিয়েছেন যে মার্কিন দাবি না মানলে বিক্ষোভকারীদের দিয়ে তিনি সরকারের পতন ঘটাবেন।
অভিযোগ রয়েছে যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হুমকি দিয়েছেন, তিনি উঁচু ভবনগুলোর শীর্ষে মার্কিন মেরিনদের মোতায়েন করবেন যাতে তারা বিক্ষোভকারী ও নিরাপত্তা বাহিনী উভয়দের ওপরই হামলা চালায়। আর তা করা হবে প্রধানমন্ত্রীর ওপর চাপ সৃষ্টি করার জন্য।
ফলে বিক্ষোভকারীদের মোহাম্মদ আলাভির নিয়োগ প্রত্যাখ্যান করার ঘটনার ব্যাপক তাৎপর্য রয়েছে। ইরাকে এখন রাজনৈতিক অচলাবস্থা রয়েছে। নতুন সরকার যাতে দৃঢ়ভাবে ক্ষমতায় বসতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্র সম্ভব সবকিছু করবে।
মনে রাখতে হবে, যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য চুক্তি হওয়ামাত্র হংকংয়ের গোলযোগ কমতে শুরু করে। ইরাকেও যদি যুক্তরাষ্ট্রের শর্ত গ্রহণ করা হয়, সেখানে বিক্ষোভ থেমে যাবে।
ট্রাম্প প্রশাসন এখন চাচ্ছে বাগদাদের সাথে সম্পর্ক ভালো করতে এবং সেখান থেকে আমেরিকান সৈন্য প্রত্যাহারের দাবি নমনীয় করতে। বিষয়টি নিশ্চিত করতেই মঙ্গলবার বাগদাদ সফরে যাচ্ছেন মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক শীর্ষ মার্কিন কমান্ডার জেনারেল ফ্রাঙ্ক ম্যাকেঞ্জি।
আবার ইরানি পক্ষও এত সহজে হাল ছাড়ার মতো অবস্থানে নেই। সদরবাদীরাও মাঠে সক্রিয় রয়েছে। তারাও তাদের চাল চালছে।
ফলে যুক্তরাষ্ট্রে মার্কিন বাহিনী অব্যাহত রাখা বেশ কঠিন কাজই হবে।
ইন্ডিয়া পাঞ্চলাইন