মুসলিমদের জন্য চমক : টোকিওতে অভিনব ভ্রাম্যমান মসজিদে
ভ্রাম্যমান মসজিদে - ছবি : সংগৃহীত
চলতি বছরে জাপানের রাজধানী টোকিওতে অলিম্পিক গেমস অনুষ্ঠিত হবে। আর এই অলিম্পিকের আসরে থাকবে ভ্রাম্যমাণ মসজিদ। অনেক আগে থেকেই দেশটির সরকার ‘মোবাইল মসজিদ’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছিল। বৈশ্বিক এই ইভেন্টকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে একটি ‘মোবাইল মসজিদ’ তৈরিও করেছে জাপান সরকার। এই মোবাইল মসজিদ বানাতে চার বছর লেগেছে। একটি ২৫ টনি ট্রাককে একটু মডিফাই করে সেটিতে নামাজের জন্য ৪৮ বর্গমিটারের মিটার জায়গা তৈরি করা হয়েছে। ওই জায়গায় একসঙ্গে ৫০ জন নামায পড়তে পারবেন। এমনকি এই মোবাইল মসজিদের ভেতর ওজুর জন্য পানি রয়েছে। কিবলার দিকও নির্দেশ করা আছে।
অলিম্পিকের আসরে বিভিন্ন দেশের যে অসংখ্য মুসলিম অ্যাথলিট অলিম্পিকে অংশ নিতে আসেন, তাদের নামাজ পড়তে যাতে কোনো অসুবিধে না হয়, তার জন্য এমন অভিনব ব্যবস্থা। একটি বড়মাপের ট্রাকে গড়ে তোলা হয়েছে। একটি পরিপূর্ণ মসজিদ, যা অলিম্পিক চলার সময় টোকিওর রাস্তায় ঘুরে বেড়াবে। জুলাইয়ে যখন অলিম্পিক শুরু হবে, তখন গেমস ভিলেজে নামাজের জন্য পৃথক ঘরের বন্দোবস্ত থাকবে। কিন্তু কিছু ভেন্যুতে তেমন ব্যবস্থা নেই। উপরন্তু, রাজধানী টোকিওতে খুব বেশি মসজিদও নেই। যে কারণেই এমন ভ্রাম্যমাণ মসজিদের ব্যবস্থা।
মোবাইল মসজিদ আইডিয়ার জনক টোকিওর বাসিন্দা ৫৮ বছর বয়সী ইয়াসুহারু ইনোইউয়ে। এর আগে ২০০৪ সালে এথেন্সে ২০০৪ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে ফুটবাথ তৈরি করে ছিলেন। এরপর ২০১২ সালে লন্ডন গেমসে একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করেন তিনি। গ্রেট ইস্ট জাপান ভূমিকম্পের পর বিভিন্ন দেশের সহযোগিতার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে গিয়ে তিনি ওই অনুষ্ঠান আয়োজন করেন।
তবে কাতারে একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করতে গিয়ে মোবাইল মসজিদ বানানোর এই আইডিয়া তার মাথায় আসে। তিনি বলেন, নামাজ মুসলমানদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। নামাজ পড়ার আরামদায়ক পরিবেশ তৈরির মাধ্যমে আমি মুসলমানদের ২০২০ সালে টোকিও অলিম্পিকে আমন্ত্রণ জানাতে চাই।
মোবাইল মসজিদ একটি ট্রাককে সাজানো হয়েছে। মসজিদের মতো করে তাতে ৪৮ বর্গমিটারের একটি নামাজের রুম থাকবে। যেখানে আরবি অক্ষরে ইসলামীয় রীতি মেনে নানা উপাচার সামগ্রী রাখা হবে। গাড়ির বাইরে হাত – পা ধোয়ার জন্য জল থাকবে। এই প্রকল্পের দায়িত্বে যে সংস্থা, সেই ইয়াসু প্রোজেক্ট অলিম্পিকের সময় এই ভ্রাম্যমান মসজিদ অলিম্পিকের নানা ভেন্যুতে রাখার পরিকল্পনা করেছে। সংস্থার সিইও ইয়াসুহারু ইনোউ বলছেন, ‘আমি চাই অ্যাথলিটরা চূড়ান্তভাবে নিজেদের মোটিভেট করে ট্র্যাকে নামুন। সেই সঙ্গে যে সব দর্শকরা এই সুবিধে পেতে চান, তাঁরা পেতে পারেন। আমরা চাই, তাঁরাও অ্যাথলিটদের দুর্দান্ত অনুপ্রেরণা দিন। টোকিও টাওয়ারের কাছেই সাদা ট্রাকটি বৃহস্পতিবার পার্ক করা ছিল। সে দিকে নির্দেশ করে ইনোউ বলছেন, আমি চাই, এর মধ্যে দিয়ে নানা মত, নানা ধর্ম বিষয়ে জনগণের মধ্যে একটা সচেতনতা গড়ে উঠুক। শান্তি এবং সম্প্রীতির আবহে এ দেশে অলিম্পিক এবং প্যারা – অলিম্পিক হোক।’
জাপানে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ২০০টি মসজিদ রয়েছে। তবে ‘ মোবাইল মসজিদ’-এর মাধ্যমে যেমন অলিম্পিকের মতো বড় আসরের প্রচারণা ও প্রসার কাজ চলছে তেমনি এই ধারণা মুসলমানদের মধ্যে জনপ্রিয় করার চেষ্টা হচ্ছে।
গত কালই টোকিওর অলিম্পিক কর্তৃপক্ষ বলেছেন, তাঁরা সব ধর্মের মানষের ধর্মাচরণের জন্য ব্যবস্থা রাখছেন। সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে ই – মেলে টোকিওর অলিম্পিক সংস্থা লিখেছে, আয়োজক কমিটি সব দেশের অ্যাথলিটদের একটা তালিকা তৈরি করছে। তার কোন ধর্মের, তা জেনে তাদের ধর্মাচরণের সুযোগ দেওয়ার জন্য।’ এরই মধ্যে, করোনা ভাইরাস নিয়ে জাপানে যে গুজব ছড়িয়েছে, তাকে পাত্তা দিচ্ছেন না অলিম্পিক আয়োজক সংস্থার কর্তৃপক্ষ। সংস্থার সিইও তোশিরো মোতো জানাচ্ছেন, দ্রুত সংক্রামক রোগটিকে প্রতিহত করার জন্য তাঁরা ইতিমধ্যেই একটি টাস্কফোর্স গড়েছেন।
তাঁর বক্তব্য, ‘যে পরিকল্পনা মাফিক অলিম্পিক এগোচ্ছে, তা সে ভাবেই এগোক। এই পরিস্থিতিতে মাথা ঠান্ডা রাখা জরুরি। এখন পরিস্থিতি এমন নয়, যাতে জনতাকে সচেতন করার মতো সময় এসেছে। যে সংক্রমন এ দেশে হয়েছে, তা এখনও সীমিত। তাই অলিম্পিক আয়োজন নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও আমাদের বাড়তি সচেনতার কথা বলেনি। এর আগে রিও অলিম্পিকের সময়ও জিকা ভাইরাস নিয়ে অযথা এক শ্রেণির লোক উদ্বিগ্ন হয়েছিল। এ ক্ষেত্রে তেমন ভয়ের কোনো কারণ নেই।
সূত্র : টিডিএন