ট্রাম্পের ১০ শর্ত : কী হতে যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে
ট্রাম্পের ১০ শর্ত : কী হতে যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে - ছবি : সংগ্রহ
গত দেড় বছর ধরে ঢাকঢোল পেটানো হচ্ছে ট্রাম্পের ‘শতাব্দীর সেরা চুক্তি’-এর বিস্তারিত ঘোষণা দেয়ার। শুরু থেকেই আরব দেশগুলো কোনো সাড়া না দিলেও ইসরাইলি পত্রিকা ‘হায়ম’ দাবি করেছে, ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অঘোষিত মার্কিন পরিকল্পনার প্রতি সমর্থন জানিয়েছে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিসর ও জর্দান। ট্রাম্পের ইহুদি জামাতা ও শীর্ষ উপদেষ্টা জ্যারেড কুশনার ও মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত জেসন গ্রিনব্লাট চুক্তির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। কুশনারের এক পা ইসরাইলে অপর পা ইভানজালিক চার্চে। ধারণা করতে কোনো কষ্ট নয় নেতানিয়াহুর কলাকৌশলীরা এই ধারা উপাধারা তৈরি করে ট্রাম্প প্রশাসনের হাতে দিয়েছে। এখন ট্রাম্প মোক্ষম সময়ে সেটি প্রচার করলেন। প্রচারের অনুষ্ঠানে পাশে ছিলেন কট্টর নেতানিয়াহু এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট ইভানজালিক পেন্স। নেতানিয়াহু দুইবার নির্বাচন করেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি এবং সরকার গঠন করতে না পেরে তৃতীয়বারের মতো নির্বাচন করতে যাচ্ছেন। ট্রাম্প জেনারেল সোলাইমানিকে হত্যা করার পর আমেরিকার অন্তত এক-তৃতীয়াশ লোক মনে করে তার ক্রিমিনাল অপরাধে তার বিচার হওয়া উচিত। তদুপরি মুলার রিপোর্ট, ইউক্রেন ও ইমপিসমেন্ট ইস্যু নিয়ে নাকাল অবস্থায় জনগণের ভোটের অপেক্ষমাণ সময়ে ‘সেরা চুক্তি’ উপহার দিলেন। দু’জনেই ভোট ব্যাংকের জন্য দু’জনে দু’জনার।
ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস এ পরিকল্পনাকে এবং এর মধ্যস্থতাকারীকেও প্রত্যাখ্যান করেছেন। ফিলিস্তিন হয়তো এ লড়াইয়ে শক্তিশালী কোনো পক্ষ নয়; কিন্তু এও সত্য যে, তাদের অনুমোদন ছাড়া এই শান্তি প্রক্রিয়া সফল হবে না। তাদের সামরিক শক্তি না থাকতে পারে; কিন্তু তারাই কেবল এই প্রক্রিয়াটিকে বৈধতায় রূপ দিতে পারে। পিএলও কমিটির সেক্রেটারি জেনারেল সায়েব এরেকাত বলেন, কুশনার ও গ্রিনব্লাট ফিলিস্তিনের নেতৃত্বকে উৎখাত করতে চাইছে। আল কুদস নিউজপেপারকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, যদি মাহমুদ আব্বাস তাদের এই আলোচনায় রাজি নাও হন, তাহলেও তারা যেকোনো উপায়ে এটি কার্যকর করতে চাইবেন।
জর্দানের বাদশাহ আবদুল্লাহর ওপর পশ্চিমাদের একই ধরনের চাপ অব্যাহত রয়েছে। সম্প্রতি জর্দানে আইএমএফের পরামর্শে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করা হলে এবং নতুন ট্যাক্স আইন প্রণয়ন করলে দেশটিতে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়। সাহায্যনির্ভর অর্থনীতির জর্দানে আন্তর্জাতিক আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল সেই প্রয়োজন মেটানোর বিপরীতে আম্মানের সহযোগিতা নিশ্চিত করতে চায়। কিন্তু এর পরও জর্দানের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কোনো আশার বাণী পাননি কুশনার।
মার্কিন শান্তি পরিকল্পনা ফিলিস্তিনের ইস্যুকে এড়িয়ে জর্দানীয়দের পরিচয়ের সঙ্কটও সৃষ্টি করছে। এর ফলে ফিলিস্তিনিদের পরে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে জর্দান। সম্পদ খুবই সীমিত হওয়ায় বিশাল মরুর দেশ জর্দান আন্তর্জাতিক দাতাদের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। দেশটি প্রতি বছর যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে এক বিলিয়ন ডলার পেয়ে থাকে। লোকসংখ্যা ৯৫ লাখ। দেশটির অর্ধেকেরও বেশি লোক ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত। এর মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ হলেন জর্দানের নাগরিক এবং অন্যরা শরণার্থী। কুশনারের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হলে, অনেক শরণার্থীকেই জর্দানে স্থায়ীভাবে নাগরিকত্ব দেয়া হবে বলে আশঙ্কা করছে জর্দানের নাগরিকরা। জর্দানে দুই মিলিয়নেরও বেশি ফিলিস্তিনি শরণার্থী জাতিসঙ্ঘের নিবন্ধিত। জর্দানে বেকারত্বের হার ১৮.৫ শতাংশ। তার পরও অস্থিতিশীল মধ্যপ্রাচ্যের জন্য দেশটির স্থিতিশীলতাকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। গত বছর অর্থনৈতিক কারণে ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে দেশটি কেঁপে উঠেছিল। লাখ লাখ ফিলিস্তিনিকে আশ্রয় দেয়ার পাশাপাশি দেশটিতে সঙ্ঘাতপূর্ণ প্রতিবেশী দেশ সিরিয়া ও ইরাক থেকে প্রচুর শরণার্থী এসেছে; যা দেশটির অর্থনীতির ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে। চুক্তি কার্যকর হলে জর্দান পরবর্তী আগ্রাসনের শিকার হবে।
১৮৫ পৃষ্ঠাব্যাপী বর্ণিত এই চুক্তিতে ধারাগুলোকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। আগের ইতিহাসের একপেশে আলোচনাকেও টেনে আনা হয়েছে। চুক্তির মূল বিষয়গুলো সংক্ষেপে এই রকম : ১. ফিলিস্তিনিদের অবশ্যই ইসরাইল ও ইহুদি রাষ্ট্রকে মেনে নিতে হবে;
২. জর্দান নদীর পুরো পশ্চিম অংশে ইসরাইলের নিরাপত্তা বলয় বর্তমানের মতো চালু থাকবে, স্থায়ীভাবে ইসরাইলকে পূর্বের সীমান্ত এলাকা দিয়ে দিতে হবে;
৩. ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য একটি রোডম্যাপ থাকবে। পশ্চিম তীরর মতো এলাকায় রাষ্ট্র হতে পারে, গাজায়ও ফিলিস্তিনিরা থাকবে, মিসর সীমান্তের দুটি এলাকায় ফিলিস্তিনিরা থাকবে। সিনাইয়ের বেশ কিছু অংশে ফিলিস্তিনিরা বসবাস করতে পারে, (যদি এটি সত্যি হয় তবে আমিরাত অর্থ দিয়ে এবং মিসর জায়গা দিয়ে এই প্রকল্পে সহায়তা করেছে সেটি বিশ্ববাসীর কাছে প্রমাণিত হবে।) চুক্তির সাথে প্রকাশিত ম্যাপে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে খ- খণ্ডভাবে দেখানো হয়েছে এবং ভূমি বিনিময়ের কথা উল্লেখ রয়েছে। বড় বড় ব্রিজ, রাস্তা ও টানেলের মাধ্যমে এলাকাগুলো সংযুক্ত থাকবে। জর্দান ভেলি, যা পশ্চিম তীরের এক-চতুর্থাংশ সেটি সম্পূর্ণ ইসরাইলি কর্তৃত্বে থাকবে;
৪. হামাসকে সব অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে এবং গাজাতে কোনো সামরিক স্থাপনা ও সরঞ্জাম থাকবে না, সেনাবিহীন থাকবে। গাজা বর্তমানে ইসলামিক হামাস মুভমেন্ট দ্বারা পরিচালিত, তারা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে বা ইসরাইলের পছন্দমতো কোনো কর্তৃপক্ষকে কর্তৃত্ব ছেড়ে দেবে;
৫. জেরুসালেম অবিভক্তভাবে ও ইসরাইলি কর্তৃত্বের অধীন থাকবে। পূর্ব জেরুসালেমের বেশির ভাগ দখলকৃত অংশ, ওল্ড সিটি ও পবিত্র স্থানগুলো ইসরাইলের অধিকারে ও দখলে থাকবে, ফিলিস্তিনিরা জেরুসালেম নগরের পার্শ্ববর্তী এলাকায় পৃথকীকরণ দেয়ালের বাইরে রাজধানী প্রতিষ্ঠা করতে পারবে;
(৬) ধর্মীয় স্থাপনাগুলো সব ধর্মের অনুসারীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। আল আকসা মসজিদ ও কম্পাউন্ড মুসলমানদের দেয়া হবে এবং টেম্পল মাউন্ট এলাকা ইহুদিরা পাবে;
৭. ফিলিস্তিনি ও ইসরাইলি কাউকে তাদের বাড়িঘর থেকে উৎখাত করা যাবে না;
৮. কোনো ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুকে ইসরাইলি রাষ্ট্রে অভিনিবেশ করা হবে না, ইসরাইল প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর, ১৯৪৮ সাল থেকে বিভিন্ন সময়ে পাঁচ লাখ ফিলিস্তিনি বাস্তুহারা হয়েছে। এরা বিভিন্ন এলাকায় ও দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে, এরা ফিলিস্তিন রাষ্ট্রে, অন্য কোনো দেশে থাকতে পারে, যুক্তরাষ্ট্র তাদের ‘কিছু ক্ষতিপূরণ’ দেবে;
৯. দখলকৃত পশ্চিম এলাকার সব নির্মিত বসতি এলাকা অচিরেই ইসরাইলের মূল ভূখণ্ডের সাথে সংযুক্ত করা হবে এবং যেসব জায়গায় ফিলিস্তিনিরা বসবাস করবে সেখানে কোনো নতুন বসত নির্মাণ করা হবে না;
১০. ইসরাইল ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের পূর্ণ নিরাপত্তার দায়িত্ব নেবে, তাই ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের কোনো সেনাবাহিনী থাকবে না, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য পুলিশ বাহিনী থাকবে। ইসরাইল সীমান্ত ও বর্ডার ক্রসিং নিয়ন্ত্রণ করবে। এজন্য একটি বর্ডার ক্রসিং বোর্ড থাকবে, তিনজন ফিলিস্তিনি, তিনজন ইসরাইলি ও একজন আমেরিকান নিয়ে বোর্ড গঠিত হবে।
গত ২৫ মার্চ, ২০১৯, সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে দখলকৃত গোলান মালভূমিকে ইসরাইলি ভূখণ্ডে স্বীকৃতি দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এদিন ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সিরিয়া কি এখন এই ভূমি উদ্ধার করার বা বাধা দেয়ার কোনো ক্ষমতা রাখে? রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা বলছেন, সিরিয়া এক ব্যর্থ রাষ্ট্র। অন্যের সহায়তা নিয়েই এখনও বেঁচে বর্তে আছে।
আসাদ বাড়াবাড়ি করলে বিদায় নিতে হবে। দেশের মূল্যবান ভূখ-ের বিনিময়ে আসাদ বেঁচেবর্তে আছেন। ট্রাম্প ঘোষণার মাধ্যমে জেরুসালেমকে ইসরাইলের রাজধানী করেছেন। এখন সেরা চুক্তির মাধ্যমে দখলকৃত পশ্চিম তীর ও জর্দান ভেলি ইসরাইলীকরণ করবেন। সব কিছুই তিনি ঈশ্বরের নির্দেশে করছেন, কেননা তিনি পবিত্র আত্মা! এই বিষয়ে ইতোমধ্যে নয়া দিগন্তে প্রকাশিত আমার লেখা ‘ট্রাম্পের মেসাইয়া ভাবনা’ পড়তে পারেন। এরকম এক ব্যক্তিত্ব দু’পক্ষের মধ্যস্থতার যোগ্যতা রাখেন? ট্রাম্প কি আদৌ নিরপেক্ষ? কেন ফিলিস্তিনিরা তার কথা শুনবে? ফিলিস্তিনিদের যেটুকু আছে সেটুকু ট্রাম্প ও নেতানিয়াহু টুকরো টুকরো করছেন। অনেক আগেই ট্রাম্প টঘডজঅ-কে সব তহবিল দেয়া স্থগিত করেছেন। এই সংস্থার দু’টি শিক্ষাবিষয়ক পদে ইউনিসেফ অর্থ দেয়।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল একই সাথে সে ইউনিসেফের সদস্যপদ ছেড়ে দিয়েছে যেন কোনো আর্থিক সহায়তা দিতে না হয়। ইসরাইলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে তদন্ত ও বিচারে যেসব আইনজ্ঞ রয়েছেন তাদের ভিসাও প্রত্যাখ্যান করার ব্যবস্থা করছে যুক্তরাষ্ট্র। এতসব হওয়ার পরও বিশ্বের বেশির ভাগ রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান চুপ। প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর হিসেবে শুধু তুরস্ক ও ইরান রয়েছে। তুরস্ক প্রতিরোধের আহ্বান জানিয়েছে। ইরান বলেছে, এটি ‘শতাব্দীর সবচেয়ে ঘৃণ্য পরিকল্পনা’। মূলত এই দু’টি দেশ ফিলিস্তিনি আলোকবর্তিকাকে প্রজ্জ্বলিত রেখেছে। পূর্ব জেরুসালেম ও গোলান মালভূমি দখলের প্রতিবাদ হিসেবে এরদোগান ইস্তাম্বুলের হেজিয়া সুফিয়াকে মসজিদে রূপান্তরের ঘোষণা দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার, যিনি খোমেনিকে ধরার জন্য মিশন পাঠিয়েছিলেন, বলেন ট্রাম্পের এই ঘোষণা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। তিনি অচিরেই আরব ভূমি দখল করা থেকে বিরত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তার আমলেই ১৯৭৮ সালে ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি সম্পন্ন হয়, মিসর-ইসরাইলের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেন। আরব দেশগুলো নিজের মুখ রক্ষার জন্য ১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ কায়রোতে আরব লিগের বৈঠক ডাকে। জানানো হয় ফিলিস্তিনিরা মার্কিন প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। নিবন্ধ লেখা পর্যন্ত ওআইসির কোনো ভাষ্য পাওয়া যায়নি, পাওয়া যায়নি কুয়ালালামপুর জোট কর্তৃপক্ষের।
ফিলিস্তিনিরা চুক্তি প্রত্যাখ্যান করায় রাজজামাতা কুশনার ফিলিস্তিনিদের ‘বোকার হদ্দ’ আখ্যা দিয়েছেন। প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী গোল্ডা মায়ার আরবদের বলতেন ‘অসভ্য’। কুশনার আরো বলেছেন, ‘সম্ভবত ফিলিস্তিনিদের এটি হজম করার জন্য ঠাণ্ডা শাওয়ার দরকার’। তার প্রিয় শ্বশুর বলেছেন, ‘এটি ফিলিস্তিনিদের শেষ সুযোগ।’
নদী থেকে সমুদ্র পর্যন্ত ইহুদির চেয়ে ফিলিস্তিনি বেশি। ২০১৬ সালের ইসরাইলের সেন্ট্রাল ব্যুরো অব স্ট্যাটিস্টিক, সিবিএস অনুসারে জর্দান নদী এবং ভূমধ্যসাগর এলাকায় ৬.৫ মিলিয়ন মুসলমান এবং ৬.৪৪ মিলিয়ন ইহুদির বসবাস। নতুন এই চুক্তির ঘোষণাকে সৌদি আরব, মিসর, আমিরাত সমর্থন দিয়েছে, কাতারও এদের সাথে আছে। যদিও ১৯৬৭ সালের যুদ্ধপূর্ব সীমানা নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে আলোচনা হওয়ার জন্য আরব দেশগুলো দেনদরবার করে আসছিল। এই চুক্তি সমর্থন করায় সেই অবস্থান থেকেও সবাই সরে গেলেন। এখন যেন আলজেইমারগ্রস্ত ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের ব্রেনের এমআরআই করা হচ্ছে। স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র কখনো আলোর মুখ দেখবে বলে মনে হয় না।
ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র আন্দোলনকে পুরোপুরো খেয়ে ফেলা হয়েছে বলেই মনে হয়। বলা হচ্ছে, দুই শক্তিধর আরব ক্রাউন প্রিন্স জেরুসালেম বিক্রি করেছেন এখন ফিলিস্তিনিদের বিক্রির বাজারে ছেড়েছেন।
ফিলিস্তিনিরা আসলেই বড্ড একা হয়ে পড়েছে। দরকষাকষির অবস্থানেও তাদের ভূমিকা নেই। বৈঠকে ডাকাও হয়নি। কুশনার বলেছেন, প্রকাশের আগেই না বলায় তাদের ডাকা হয়নি। তাহলে চুক্তিটা হবে কার সাথে? মাহমুদ আব্বাস বলেছেন, তাকে ডাকা হয়নি। এখন ফিলিস্তিনিদের কোনো জেরুসালেম নেই, স্বদেশে ফিরে আসার অধিকার নেই, উদ্বাস্তু হিসেবে আসার অধিকার নেই, গোলান মালভূমি নেই, থাকবে না জর্দান উপত্যাকাও, তাদের কোনো আরব বন্ধু নেই, সিরিয়া ধ্বংসস্তূপ হয়েছে, ইরাক বিভক্ত, মিসর ও সৌদি আরব এখন ইসরাইলের ক্রীড়নক, ধনী আরব শ্রেণী নিজেদের ব্যবসা ও সম্পদ নিয়ে ব্যস্ত, কোথাও পালানোর সুযোগও ফিলিস্তিনিদের নেই। গণ দেশান্তর ইউরোপীয়রা বন্ধ করে দিয়েছে অনেক আগে, ফিলিস্তিনি যারা এখনো নিজ দেশের মাটিতেই রয়ে গেছে, তারা সেখানে থেকে যুদ্ধ করা ছাড়া কোনো সোজা পথ নেই। যুদ্ধ মানে পাথরের বিপরীতে আধুনিক অস্ত্র। ওদের কোনো মুসলিম দেশ অস্ত্রও দিতে পারছে না। তুর্কিরা খাবার ও মানবিক সহায়তা দেয়ার জন্য জাহাজ পাঠিয়েছিল, ইসরাইলি কমান্ডোরা তাদের ডাণ্ডাপেটা করেছে। ফিলিস্তিনিরা যুদ্ধ করেছে, এখনো যুদ্ধই করতে হবে। ডেবিড হার্স্ট বলেছেন, যুদ্ধই একমাত্র মুক্তির পথ। ১৯৯৩ সালে পিএলও ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিয়ে কি হয়েছিল? ইয়াসির আরাফাতকে বরং স্নো পয়জন দিয়ে হত্যা করা হয়। এখন চুক্তি মানলে অস্তিত্বও হারাবে বলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন।
ফিলিস্তিনিদের পর মূল আরব দেশগুলো আগ্রাসনের শিকার হবে। মাছ যখন চাঁইয়ের মধ্যে ঢোকে তখন বের হওয়ার জন্য ছটফট করে কিন্তু বের হতে পারে না। আরব দেশগুলো এখন চাঁইয়ের মুখ দিয়ে গহ্বরে ঢুকছে।
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব ও গ্রন্থকার