করোনা ভাইরাসের ভয়ে
করোনা ভাইরাসের ভয়ে - ছবি : সংগ্রহ
করোনাভাইরাসের আক্রমণে নাস্তানাবুদ হয়ে যাচ্ছে অতিকায় রাষ্ট্র চীন। সারা বিশ্ব থেকে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে দেশটি। ভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে বুধবার সকাল পর্যন্ত ৪৯০ জন প্রাণ হারিয়েছেন। চীনে আক্রান্তের সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। মৃত্যুর হার ও আক্রান্তের হার প্রতিদিন বর্ধিতহারে বাড়ছে। শুরু হয়েছিল এক-দু’জনের মৃত্যু দিয়ে।
এখন সেটা দিনে ৫০-এর অধিক হয়েছে। প্রতিদিন আক্রান্তের হারও তিন হাজার ছাড়িয়ে গেছে। করোনাভাইরাস আরো কতটা বিস্তার লাভ করবে কিংবা এর আক্রমণ কত দিন প্রলম্বিত হবে, সেটা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অনেকের দৃষ্টি চীনের তাক লাগানো দানবীয় অর্থনীতির কী হবে, সেদিকে। ইতোমধ্যে দেশটির শেয়ারবাজার পড়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্র দ্রুততার সাথে চীনের শেয়ারবাজার থেকে বিপুল অর্থ তুলে নিয়েছে। হঠাৎ করে পুরো বিশ্ব যেন থমকে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের প্রতিক্রিয়া চীনের প্রতি সহমর্মিতার নয়। চার দিক থেকে চীনের ব্যাপারে যেন একটা ‘অচ্ছুত ভাব’।
যেসব নাগরিক চীন থেকে ফিরছেন, যুক্তরাষ্ট্রে তাদের একটানা ১৪ দিন আলাদা করে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিগত দুই সপ্তাহে যারা চীন সফর করেছেন তাদের কেউ যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে পারবে না। একই ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া ও ইসরাইল সরকার। অস্ট্রেলিয়া আরো একটু এগিয়ে চীন থেকে আগত ব্যক্তিদের মূল ভূখণ্ড থেকে প্রায় দুই হাজার কিলোমিটার দূরে এক নির্জন দ্বীপে আপাত নির্জনবাস দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়া নিউজিল্যান্ড সিঙ্গাপুর মালয়েশিয়া মঙ্গোলিয়া ও ফিলিপাইন যুক্তরাষ্ট্রের মতো চীন ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। চীনের সাথে স্থলসীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে রাশিয়া, মঙ্গোলিয়া, কাজাখস্তান ও নেপাল। চীনা নাগরিকদের ভিসা দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে অনেক দেশ। এভাবে পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনৈতিক শক্তি চীন প্রায় একঘরে হয়ে গেছে।
বাংলাদেশও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। শাহজালাল বিমানবন্দরের পূর্ব দিকে আশকোনায় হজক্যাম্পে চীন থেকে আসা নাগরিকদের আলাদা করে রাখা হয়েছে। তাদের কারো দেহে এখনো এ ভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়নি। চীন থেকে আসা বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রকল্পে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের ২০ জনকে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে কোয়ারেন্টাইন করে রাখা হয়েছে। চীনের অংশগ্রহণে বাংলাদেশে বড় প্রকল্প রয়েছে অনেক। এগুলোর বাস্তবায়ন কতটা বিলম্বিত হয়, সেটা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। আপাতত চীনে থাকা, এসব প্রকল্পের কারো আসার অনুমতি নেই বাংলাদেশে। বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) মহাপ্রকল্প দিয়ে চীন পুরো বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিয়েছে। এর আওতায় পুরো বিশ্বে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। একুশ শতকে বিশ্ব পুরোটাই চীনের আয়ত্তে চলে যাচ্ছিল। ‘সামান্য’ একটি ভাইরাস সব কিছুকে আপাতত বেশ কিছুটা নাড়িয়ে দিলো।
আক্রান্ত হুবেই প্রদেশকে চীন নিজেই গোটা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। এই প্রদেশে উড়োজাহাজ চলা বন্ধ রয়েছে, সংযোগ সড়কগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সড়ক দিয়ে যাতে কেউ প্রদেশের বাইরে যেতে না পারে, সেজন্য রয়েছে পুলিশের পাহারা। এ প্রদেশের উহান শহর এখন নবভীতির কেন্দ্র। এর সাথে যুক্ত হয়েছে একটি খবর। চীনের সর্বশেষ রাজবংশের পতন আন্দোলন শুরু হয়েছিল এ শহর থেকেই। শাসকরা সব সময় ভীতিতে থাকেন। তারা জানেন, কিভাবে ক্ষমতায় তারা টিকে রয়েছেন। সেজন্য তারা আশঙ্কায় থাকেন, তাদের ওপর না জানি কোন সময় নেমে আসে ভয়াবহ শাস্তি।
ইউরোপে উন্নয়নের সমান্তরালে এক ধরনের নৈতিক বিকাশও ঘটেছিল। মানবাধিকার এবং গণতন্ত্র ব্যবস্থাকে তারা নিজেদের জন্য পছন্দ করে নিয়েছেন। একইভাবে সারা বিশ্বে এ ব্যবস্থাকে ছড়িয়ে দেয়ার উদ্যোগও তারা নিয়েছেন। তবে শান্তিপূর্ণ এ ব্যবস্থাপনায় আসার আগে পশ্চিমা দুনিয়া কয়েক শ’ বছর বড় ধরনের রক্তপাত ও গোলযোগের মধ্য দিয়ে গেছে। অন্য দিকে, চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে নৈতিকতা চর্চার সমান্তরাল বিকাশ ঘটেনি। পৃথিবীর ‘একমাত্র রাষ্ট্র’ চীন যারা সরাসরি অনৈতিক সব কর্মকাণ্ডকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সমর্থন করে। এমন বিশ্বাস আজ বিশ্বে অনেকটা সুপ্রতিষ্ঠিত। তাদের নেতৃত্বে বিশ্বব্যাপী হুলস্থুল যেসব উন্নয়ন চলছে, এগুলোর খরচের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের নিয়মকানুনের বালাই নেই। যোগাযোগ খাতে বাংলাদেশের মেগা প্রকল্পগুলো এর সাক্ষী হয়ে থাকবে। বালিশ ও পর্দাকাণ্ডের মহাসাগর চুরির যে রেকর্ড বাংলাদেশী দুর্নীতিবাজরা করেছে, এর প্রণোদনা তারা চীন থেকে পেয়েছে বলেই অনেকের ধারণা।
সংখ্যালঘু ও ভিন্নমতাবলম্বীদের প্রতি পৃথিবীর সর্ববৃহৎ (জনসংখ্যায়) রাষ্ট্র চীন কোনো ধরনের দায় অনুভব করে না। এ ব্যাপারে তাদের কোনো দয়ামায়া নেই।
তিয়ানআনমেন স্কয়ারে লাশের স্তূপ বেশি দিন আগের ইতিহাস নয়। দেশটির সংখ্যালঘু উইঘুর জনগোষ্ঠীকে নিষ্ঠুর দমনের ইতিহাস সব বর্বরতাকে ছাড়িয়ে গেছে। মানুষের ওপর কথিত সাম্যবাদের বোঝা জোর করে চাপিয়ে দেয়া হয়েছে সেখানে। জিনজিয়াংয়ের প্রার্থনাগারগুলোকে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়া হয়েছে। তাদের ছেলেসন্তানদের কেড়ে নেয়া হয়েছে। রাখা হয়েছে কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে। ওইসব ক্যাম্পে বন্দীর ওপর নারকীয় নিষ্ঠুরতা চালানো হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে- মানুষদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নিয়ে নানা ধরনের ‘অভিজ্ঞতা’ চালানো হচ্ছে ওইসব ক্যাম্পে। এ ব্যাপারে বিশ্বসম্প্রদায়ের কোনো আপত্তিকে চীনারা মূল্য দেয় না। ভয়াবহ একনায়কোচিত দমনমূলক কমিউনিস্ট শাসন কিছু মানুষের জন্য ‘স্বর্গ’ হয়ে দেখা দিলেও অনেকের জন্য দেশটি একপ্রকার নরকে পরিণত হয়েছে।
এখন চীনের উহানের নাগরিকদের চরম বৈষম্যের শিকার হতে হচ্ছে। কেউ শহর থেকে বের হতে পারছেন না। শহরের ওপর দিয়ে যানবাহন চলছে। কিন্তু সেখানে দূরপাল্লার যান থামছে না। কেউ উঠতে পারছে না, কেউ নামতেও পারছে না। শহরের চার দিকে নিরাপত্তা চৌকি বসানো হয়েছে। শহর থেকে কেউ বাইরে বেরোতে পারছে না নিরাপত্তা চৌকি এড়িয়ে। উহানের মানুষরা, যারা চীনের বিভিন্ন প্রদেশে রয়েছেন, তারা মহাবিপদে পড়ছেন। কোনো হোটেলে তাদের থাকতে দেয়া হচ্ছে না। কেউ যদি নিজ শহর উহানে ফেরত যেতে চান, সেটাও সম্ভব হচ্ছে না। কারণ, ট্রেন সেই শহরে থামছে না। আর উহানের সবাইকে আটক করে আলাদা ক্যাম্পে রাখা হচ্ছে বিভিন্ন জায়গায়। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজেস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) আশঙ্কা করছে, উহানের সামুদ্রিক খাবারের একটি বাজার থেকে এই ভাইরাস ছড়িয়েছে। ইসরাইলের একজন যুদ্ধাস্ত্র গবেষক অন্য একটি আশঙ্কার কথা বলেছেন। তিনি খবর দিচ্ছেন, করোনাভাইরাসটি চীনের বায়োওয়্যারফেয়ার ল্যাব থেকে বেরিয়ে আসতে পারে।
যেকোনোভাবেই হোক, এই ভাইরাসের ব্যাপারে উহানের সাধারণ নাগরিকদের কোনো দায় নেই। সারা বিশ্ব যেমন চীনকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে এই সময়ে, একই ভাবে চীনও উহানবাসীকে দূরে ঠেলে দিতে চাইছে। এমনটা কোনোভাবে মানবিকতা হতে পারে না।
করোনাভাইরাসের ব্যাপারে চীন প্রাথমিকভাবে অবহেলা করেছে। তারা বলেছেন, এই ভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায় না। পরে অবশ্য তারা স্বীকার করে নিয়েছেন যে, এ ভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায়। এই ভাইরাসের হাত থেকে মানুষের আরোগ্য লাভের ব্যবস্থা করতে মাত্র এক সপ্তাহে তারা প্রকাণ্ড হাসপাতালও তৈরি করে ফেলেছেন। সম্ভবত আরো দু’টি বড় হাসপাতাল অতি অল্প সময়ের মধ্যে তারা তৈরি করে ফেলতে যাচ্ছেন। এখন এটাকে চীন অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে নিচ্ছে। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বিশ্ববাসীর প্রতিক্রিয়া এমনভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে, তাতে যেন চীনকে একটা শাস্তি দেয়া হচ্ছে। বাস্তবে এ ভাইরাসের জন্য চীনের ১৫০ কোটি মানুষ দায়ী হতে পারেন না।
চার দিকে অতি উচ্চমাত্রার সতর্কতা দেখে মনে হচ্ছে, মানবজাতি একটা বড় বিপদের মুখে পড়তে যাচ্ছে। এর মোকাবেলায় চার দিকে হুলস্থুল পড়ে গেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ৩০ জানুয়ারি এ জন্য বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে। আমরা করোনাভাইরাসের আশঙ্কার দিকটি একটু মিলিয়ে দেখতে পারি। ২০০৩ সালে সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রম বা সার্স নামের ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছিল। তাতে আক্রান্তের ৯ দশমিক ৬ শতাংশ প্রাণ হারাতেন। ২০১২ সালে ছড়িয়ে পড়া মিডলইস্ট রেসপিরেটরি সিনড্রম বা মার্স-এ আক্রান্তের মৃত্যুর সংখ্যা এর প্রায় চারগুণ বেশি ছিল। প্রতি ১০০ জনে ৩৫ জন প্রাণ হারিয়েছিল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব মতে, এ পর্যন্ত এ ভাইরাসে আক্রান্ত দুই হাজার ৫০৬ জন। এতে মারা গেছেন ৮৬২ জন। চীনে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে মৃত্যু আরো অনেক কম- ২ দশমিক ২ শতাংশ। তবে এ ভাইরাসটির ভীতিজনক দিকটি হচ্ছে, এটি দ্রুত ছড়াচ্ছে। কোনো ধরনের লক্ষণ ছাড়াই এটি মানুষ থেকে মানুষের মধ্যে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে।
চীনের বিজ্ঞানীরা দ্রুততার সাথে ভাইরাসটির জেনেটিক ক্রম (সিকুয়েন্স) শনাক্ত করেছেন। ভাইরাসটির জিনগত তথ্য সংগ্রহ করে গবেষণাগারে সেটি পুনরায় জন্ম দেয়ার কাজটিও তারা করেছেন। এখন সেটি উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। এতে করে সারা বিশ্বের রোগ নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাগুলো এর টিকা উদ্ভাবনের প্রচেষ্টা চালাতে পারবেন। আশা করা হচ্ছে, এর টিকা উদ্ভাবনে তিন মাস লাগবে। এ দিকে, ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার ভয়টি অনেক বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। কিন্তু বিশ্বসম্প্রদায় যেভাবে এর প্রতি সাড়া দিচ্ছে, সেটা ন্যায়সঙ্গত কি না সে প্রশ্নটি উঠতে পারে।
চীনের জন্য সেটা রীতিমতো ভয়াবহ হয়ে উঠছে। করোনা যদি লাখ লাখ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে কয়েক হাজার মানুষ মারা যায়, তাহলে চীন পুরো বিশ্ব থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। ধসে পড়বে চীনের অর্থনীতি। দীর্ঘমেয়াদে এর নেতিবাচক প্রভাবে পুরো বিশ্বই মন্দার কবলে পড়ে যেতে পারে। এটা কোনোভাবে কাম্য হতে পারে না। পৃথিবীতে যে পরিমাণ অনিয়ম অন্যায় অনাচার চলছে তাতে এমন রোগব্যাধির বিস্তার অস্বাভাবিক কিছু নয়। এর আগে ডায়রিয়া কলেরা গুটিবসন্তসহ অসংখ্য ভয়াবহ বিপদ দেখেছে বিশ্ব। প্লেগে আক্রান্ত হয়ে জনপদ ধ্বংস হয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। চীনকে আলাদা করে ফেলে, এ রোগের প্রাদুর্ভাব থেকে বাকি বিশ্ব বাঁচতে পারবে না। ইতোমধ্যে অনেক দেশেই এর ছড়িয়ে পড়া ঠেকানো যায়নি।
গত মঙ্গলবার দেশের একটি জাতীয় দৈনিক প্রধান সংবাদ করেছে, প্রতি বছর বাংলাদেশে দেড় লাখ লোক ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। এর মধ্যে এক লাখ লোক চিকিৎসার সুযোগ পাচ্ছে না। মানুষের মনে এ ধারণাই প্রোথিত হয়ে গেছে, ‘ক্যান্সারের কোনো আনসার নেই’। আমরা দেখেছি, গত বছর এ দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ৯০ হাজার ছাড়িয়ে যায়। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে শতাধিক মানুষ প্রাণ হারান। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়নি। চীনের উহান থেকে ফেরত আসা বাংলাদেশীদের হজক্যাম্পে কোয়ারেন্টাইন করে রাখা হয়েছে। আমরা জানি না, শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশে এর প্রাদুর্ভাব ঠেকানো যায় কি না। মানুষের মৃত্যু স্বাভাবিক ঘটনা। পৃথিবীতে মানুষের আগমনের হার ক্রমান্বয়ে বেড়েছে। এর সাথে মৃত্যুর সংখ্যাও বেড়েছে।
বছরে প্রতি হাজারে আটজন মানুষ মারা যাচ্ছেন। পুরো বছরে সাড়ে পাঁচ কোটির বেশি মানুষ পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নিচ্ছেন। আবার জন্ম নিচ্ছে ১৩ কোটির বেশি। সামনের দিকে বছরে মৃত মানুষের সংখ্যা আরো বাড়বে। জীবন ও মৃত্যু পাশাপাশি চলছে। মানুষ বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় চরম উন্নতি সাধন করেছে। তবে নিজেদের মৃত্যু তারা ঠেকাতে পারবে, এমন কোনো সুদূর সম্ভাবনাও তারা এখনো জাগাতে পারেনি। আবহাওয়ার পরিবর্তনে, মনুষ্য সৃষ্ট নানা অনাচারে বিভিন্ন জনপদে নানান অসুখ-বিসুখ ছড়িয়ে পড়ে। এতে কিছু মানুষের মৃত্যু ঘটে। স্বাভাবিক মৃত্যুর সাথে এটাকে মানুষ মেলাতে পারে না। প্রাকৃতিক নিয়মের খুব একটা হেরফের কিন্তু হয় না। অদূরভবিষ্যতে মানুষের জন্য নতুন নতুন রোগের আবির্ভাব হতে পারে। সেগুলোর সাথে খাপ খেয়েই চলতে হবে। উদ্ভূত পরিস্থিতি বোঝা এবং প্রয়োজনীয় সতর্কতা ও সচেতনতা জরুরি। ভীতি ছড়িয়ে কোনো সুফল পাওয়া যাবে না।
jjshim146@yahoo.com