গোতাবায়ার ঘোষণা ও শ্রীলঙ্কার তামিলদের আকুতি
গোতাবায়ার ঘোষণা ও শ্রীলঙ্কার তামিলদের আকুতি - ছবি : সংগৃহীত
প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসার নতুন সরকার মঙ্গলবার ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভের ৭২ বছর উদযাপন করেছে সিংহলি ও তামিল উভয় ভাষায় জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার আগের সরকারের ঐতিহ্য পরিত্যাগ করার মাধ্যমে।
প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া যদিও সব সম্প্রদায়ের অধিকার সমুন্নত রাখার প্রতিজ্ঞা করেছেন, কিন্তু সরকারি অনুষ্ঠানে তামিল ভাষার জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হয়নি। এর প্রতিবাদে জাতীয় সহাবস্থান, সংলাপ ও সরকারি ভাষাবিষয়ক সাবেক মন্ত্রী মনো গনেশান প্রেসিডেন্টের সরকারি ডিনারসহ সব আয়োজন বয়কট করেন।
সোমবার গনেশান গত চার বছর ধরে তামিল ভাষায় জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার ঐতিহ্যটি বহাল রাখার জন্য শেষবারের মতো আবেদন জানান। তিনি তার টুইটার পোস্টে বলেন, জাতীয় সঙ্গী স্রেফ অন্য কোনো গানের মতো নয়। এটা তামিল ভাষাভাষী সম্প্রদায়ের সাথে শ্রীলঙ্কার পরিচিতিকে জুড়ে দেয়ার বিষয়।
তিনি আরো বলেন, আশা করছি আপনার প্রশাসন গত চার বছর ধরে জাতীয় দিবস উদযাপনে তামিল ভাষায় শ্রীলঙ্কার জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার প্রথা বাতিল করবে না।
প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া তার স্বাধীনতা দিবস ভাষণে প্রতিজ্ঞা করেন যে দেশের প্রতিটি জাতিগত ও ধর্মীয় গ্রুপ সমান অধিকার লাভ করবে, যদিও তিনি প্রধানত সিংহলি-বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠদের ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন।
প্রথাগত সাদা পোশাক পরা গোতাবায়ার বুকে তখন সামরিক পদকগুলো শোভা পাচ্ছিল। এটি তার জাতীয়তাবাদী ও সামরিক পরিচিতিকে তুলে ধরেছিল।
গোতাবায়া বলেন, শ্রীলঙ্কা একটি এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র। তিনি এর মাধ্যমে ক্ষমতা ভাগাভাগির ব্যবস্থা-সংবলিত ফেডারেল ধরনের সরকার প্রতিষ্ঠার তামিলদের ৭১ বছরের দাবিকে প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি গত মাসের প্রথম দিকে পার্লামেন্টে এক বিবৃতির মাধ্যমেই এ বক্তব্য দিয়েছিলেন।
গোতাবায়া বলেছেন যে স্বাধীনতা ও সাম্যতা নিহিত রয়েছে আর্থ-সামাজিক অবস্থার ওপর; আঞ্চলিক, ধর্মীয় বা জাতিগত পরিচিতির ওপর নয়।
তিনি বলেন, এককেন্দ্রিক রাষ্ট্রের সব নাগরিকের সমান অধিখার থাকা উচিত। আমাদের সমাজে ধনী ও গরিবের মধ্যে পার্থক্য অনেক বেশি। নগর এলাকায় যেসব সুযোগ-সুবিধা আছে, সেগুলো গ্রামীণ এলাকায় নেই, সব ঐলাকায় শিক্ষার মান সমান নয়। স্বাস্থ্য পরিচর্যা কেন্দ্রগুলো সমানভাবে বিস্তৃত নয়। চাকরির সুযোগ সব অঞ্চলে সমানভাবে বিস্তৃত হয়নি। এসব বৈষম্যের কারণ বর্ণগত বা ধর্মীয় নয়।
শ্রীলঙ্কার নতুন প্রেসিডেন্ট প্রতিশ্রুতি দেন যে এককেন্দ্রিক রাষ্ট্রের মধ্যে সব নাগরিক কথা বলার সমান স্বাধীনতা পাবে।
তিনি বলেন, আমরা তাদের স্বাধীনভাবে চিন্তা করার, স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের অধিকার সমুন্নত করেছি। সব নাগরিক যাতে তাদের পছন্দ অনুযায়ী ধর্ম অনুসরণ করতে পারে, ওই অধিকারের প্রতি আমরা সবসময় সম্মান প্রদর্শন করব। সব নাগরিকের সভাসমিতি ও প্রতিষ্ঠান করার অধিকার রয়েছে। আমরা সবসময় নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে সব নাগরিকের রাজনৈতিক ও শাসন ক্ষমতায় অংশীদারিত্ব দেব। আমরা মনে করি, এসব অধিকার সবার এবং সেগুলো কেউ চ্যালেঞ্জ করতে পারে না।
তিনি বলেন, আজকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমি জাতি, ধর্ম, দল-মত-নির্বিশেষে পুরো শ্রীলঙ্কা জাতির প্রতিনিধিত্ব করছি।
স্বাধীনতা দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন রুশ স্থল বাহিনীর কমান্ডার জেনারেল ওলেগ স্যালিকভ। এতে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে গোতাবায়া সরকার পাশ্চাত্য বিশ্বের সাথে সম্পর্ক ন্যূনতম পর্যায়ে নামিয়ে আনতে চাচ্ছেন। উল্লেখ্য, আগের মহিন্দা রাজাপাকসা সরকারের আমলে পাশ্চাত্যবিশ্ব জ্বালাতন সৃষ্টি করেছিল যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ এনে ও শ্রীলঙ্কার সামরিক ব্যক্তিদের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল গঠন করার ওপর জোর দিয়ে।