খোদ ভারতের মাটিতে জিন্নাহর এমন জয়!
জিন্নাহ - ছবি : সংগৃহীত
সিনিয়র কংগ্রেস নেতা ও ভারতের বুদ্ধিবৃত্তিক মহলে শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিত্ব শশী থারুর দ্বিজাতি তত্ত্ববিষয়ক কয়েদে আজমের ভিশনের আকুষ্ঠ প্রশংসা করেছেন। নাগরিকত্ব (সংশোধনী) আইন (সিএএ) বাস্তবায়নের নিন্দা করে, মুসলিম সংখ্যালঘুদের টার্গেট করে করা কঠোর আইনের সমালোচনা করে বলেছেন যে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ যদি তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী পরিচালিত হয়, তবে তা হবে জিন্নাহর ভিশনের পূর্ণাঙ্গ জয়।
তিনি বলেন, আমি বলছি না যে জিন্নাহ পুরোপুরি জিতে গেছেন, তবে তিনি জিতে যাচ্ছেন। জয়পুর লিটারেচার ফেস্টিভ্যালের ফাঁকে বক্তব্য রাখার সময় মোদি-শাহ জুটিকে তিনি এভাবেই হুঁশিয়ার করে দেন। উল্লেখ্য, এই জুটি ভারতে মুসলিম সংখ্যালঘুদের নির্যাতন করতেই ব্যস্ত। তিনি বলেন, দেশ সম্পর্কে জিন্নাহর আদর্শ ও গান্ধীর আদর্শের মধ্যে একটিকে বেছে নেয়ার সময় এখনো আছে। কিন্তু আপনারা যদি জিন্নাহর পদাঙ্গ অনুসরণ করেন তবে ভারতকে সেক্যুলার রাষ্ট্র বলা বন্ধ করে দিয়ে ধর্মকেই জাতিত্বের ভিত্তি হিসেবে স্বীকার করে নিন।
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন
‘সেক্যুলার ইন্ডিয়ার’ সেক্যুলার আবরণে ফাটল ধরনোর জন্যই মোদির নির্দেশনায় অমিত শাহ লোকসভায় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল উপস্থাপন করেছেন। এই আইনে পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান থেকে ধর্মীয় নির্যাতনের শিকার হওয়া ছয়টি অমুসলিম সম্প্রদায় তথা শিখ, জৈন, পারসি, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ ও হিন্দুদের ভারতে বিশেষ ব্যবস্থায় নাগরিকত্ব প্রদান করার কথা বলা হয়েছে।
এখানেই শেষ নয়, মোদি সরকার এনপিআর (জাতীয় জনসংখ্যা নিবন্ধন) ও এনআরসি (জাতীয় নাগরিকপঞ্জি) প্রণয়ন করছেন ভারতে বসবাসরত মুসলিমদের পরিচিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলতে। আসামে ইতোমধ্যেই ২০ লাখ লোকের নাম তালিকা থেকে বাদ পড়েছে। এদের মধ্যে একটি বড় অংশ মুসলিম।
থারুর বলেন, সিএএ হলো জিন্নার জন্য একটি বিজয় বা বিজয়ের রূপরেখা। আর জিন্নাহকে আমরাই জয়ী করে দিচ্ছি। আর সিএএর পরে এনআরসি ও এনপিআর হয়, তবে জিন্নাহর জয় সম্পূর্ণ হয়ে যায়।
মুসলিম সংখ্যালঘুদের দুর্দশার কথা উল্লেখ করে থারুর বলেন, কাউকে যদি নগরীর ঘুরে ঘুরে সন্দেহভাজন লোকদের শনাক্ত করতে বলা হয়, তবে আমরা সবাই জানি, তারা হবে সেই সন্দেহভাজন নাগরিক।
কারো নাম উল্লেখ না করে থারুর বলেন, সেটা হবে মূলত একটি সম্প্রদায়, সিএএ-তে যাদের নাম নেই। আর তা যদি হয়, তবে তা হবে জিন্নার পূর্ণাঙ্গ বিজয়।
থারুর সিএএর বাস্তবায়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার এবং এই বিলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারীদের প্রতি প্রকাশ্যে সমর্থন ব্যক্ত করেছেন। ১৯৪৭ সালে ভারতের মাটি ভাগ হয়েছিল আর সিএএ পার্লামেন্টে অনুমোদন হওয়া মাটে ভারতের আত্মাকে ভাগ করা। তিনি বলেন, এখন জিন্নাহ এই অবস্থা দেখলে বলতেন, দেখো আমি ১৯৪০ সালে ঠিক কথাই বলেছিলাম। আমরা একটি জাতিকে ভাগ করছি এবং মুসলিমদের আলাদা দেশ প্রয়োজন। কারণ হিন্দুরা ন্যায়পরায়ণ নয়।
একজন ভারতীয় উপস্থাপন করেছিলেন দ্বিজাতি তত্ত্ব
থারুর বুদ্ধিমত্তার সাথে বিলটির বিরুদ্ধে সোচ্চার হলেও তিনি ধর্মের ভিত্তিতে পাকিস্তান সৃষ্টি ও দ্বিজাতি তত্ত্ব নিয়ে ভিন্ন ধারণা দিয়েছেন। ইতিহাস অবশ্য নানা ভাষ্য দিচ্ছে। তবে সবচেয়ে বহুল প্রচলিত ভাষ্য হলো, দ্বিজাতি তত্ত্ব প্রথমে সামনে আনেন ১৮৫৮ সালে জন ব্রাইট। তারপর সেটির কথা বলেন স্যার সৈয়দ আহমদ খান এবং সবশেষে উত্থাপন করেন কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ।
তবে থারুরের সম্ভবত ভিন্ন ঐতিহাসিক ধারণা রয়েছে। তার মতে, আরএসএসের প্রতিষ্ঠাতা ভি ডি সাভারকার প্রথম ব্যক্তি হিসেবে দ্বিজাতি তত্ত্ব উত্থাপন করেছিলেন।
‘হিন্দুত্ববাদ : হিন্দু কে?’ শীর্ষক গ্রন্থে সাভারকার হিন্দুত্ববাদ নিয়ে একটি ধারণা গড়ে তোলেন। তার মতে, হিন্দুত্ববাদ কেবল একটি শব্দ নয়, বরং একটি ভারতীয় জনগণের আধ্যাত্মিক ও ধর্মীয় জীবন। এটিই ভারতের পুরো সভ্যতা। তিনি বলেন, হিন্দুত্ববাদের একটি অংশ হলো হিন্দু ধর্ম।
ফ্যাসিবাদী মতাদর্শ অনুসরণকারী সাভারকার যে ‘অখণ্ড ভারত’ চেয়েছিলেন, সেখানে মুসলিমদের কোনো স্থান ছিল না।
কংগ্রেস একদিকে জিন্নাহর দর্শনকে যৌক্তিক বলে দাবি করছে , আবার অন্যদিকে গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ঘটনাটির জন্য কৃতিত্ব দিচ্ছেন সাভারকারকে। এটা কোন খেলা? আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, সিএএ যদি একটি টেনিস খেলা হয়, (যেভাবে শশী থারুর ব্যাখ্যা করেছেন) তবে বিজেপি কার বিরুদ্ধে খেলছেন?
গ্লোবাল ভিলেজ স্পেস