ফেঁসে যাবে ভারত!
ফেঁসে যাবে ভারত! - ছবি : সংগ্রহ
মুসলমানবিদ্বেষী ও বৈষম্যমূলক নাগরিকত্ব আইন সংশোধনী বিল ভারতের দুই কক্ষের সংসদে পাস হয়েছে গত ১১ ডিসেম্বরের মধ্যে। আর পরদিন প্রেসিডেন্টের স্বাক্ষরের পর তা আইনে পরিণত হয়েছে। সংক্ষেপে বিভিন্ন মিডিয়ায় একে ‘সিএএ’ (সিটিজেনশিপ এমেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট) এভাবে ডাকা ও লেখা হচ্ছে।
এই বিতর্কিত ও বৈষম্যমূলক আইনের বিরুদ্ধে পশ্চিমের রাষ্ট্রগুলো তাদের চরম উদ্বেগ, প্রতিবাদ ও আপত্তি জানিয়েছে। এবার সুনির্দিষ্ট করে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের (ইপি) সদস্যরা পার্লামেন্টে তাদের বিভিন্ন রাজনৈতিক ধারা অনুসারে সংগঠিত ছয়টি গ্রুপের পক্ষে প্রস্তাব এনেছে; যাতে এবার তা পার্লামেন্টে সবার আলোচনার পর এক নিন্দা প্রস্তাব হিসেবে পাস হয়। অথবা আরো কঠোর কোনো পদক্ষেপ নেয়ার জন্য আলাদা আলাদা প্রস্তাবের সবগুলোকে একত্রে একটা প্রস্তাব হিসেবে আলোচনার পর তা পাস করা হয়। এভাবে কোনো প্রস্তাব পাস হয়ে গেলে, বলাই বাহুল্য ভারতের জন্য সেটা হবে চরম বিব্রতকর ও লজ্জার। ভারতের এনডিটিভি লিখেছে, ‘ভারত এখন এক বিরাট কূটনৈতিক নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখার মুখোমুখি। কারণ ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টে সিএএ নিয়ে আর কাশ্মিরে ধরপাকড় নিয়ে হিউম্যান রাইটস লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে প্রস্তাব উঠতে যাচ্ছে।’ এ ছাড়া ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টে যদি আরো কঠোর অবরোধ ধরনের কোনো প্রস্তাব পাস হয়, তবে তা অর্থনৈতিক দিক থেকেও ভারতের জন্য ক্ষতিকর হবে। আবার এতে প্রায়ই কথায় কথায় আমরা যেমন দাবি শুনি ‘বৃহৎ গণতন্ত্রের’ ভারত- সেই ভ্যানিটির এক গুরুত্বপূর্ণ পালক এখন থেকে এতে খসে পড়বে তা বলার অপেক্ষা করে না। এই পরিস্থিতিতে ভারতের দিক থেকে এসবের পাল্টা কোথাও হাত জোড় করে নরম অথবা কোথাও ব্যবসা-সুবিধা না দেয়ার গরম হুমকি ইত্যাদি সব ধরনের অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ভারতের কূটনীতিকরা মাঠে নেমে পড়েছে, লবি চলছে, সব দিকে সব কিছুর এক বড় তোড়জোড় চলছে।
ভারতকে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের এই নড়াচড়াকে গুরুত্ব দিতে হচ্ছে। কারণ ৭৫১ জন সদস্যের মধ্যে সিএএ’র বিরুদ্ধে নানা প্রশ্ন তুলেছে অন্তত ৬২৬ জনই।
ইউরোপীয় পার্লামেন্টে আনা ওসব প্রস্তাবে আপত্তিগুলোর একেবারে প্রথমে হলো, ভারতের নতুন নাগরিক আইন, নাগরিক অধিকারের দিক থেকে বৈষম্যমূলক। মানে ‘নাগরিক অধিকার’ হলো এর ফোকাস। ব্যাপারটা খুব সংক্ষেপে বললে, আমাদের চলতি বিশ্বের রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রব্যবস্থায় স্টান্ডার্ড এবং এর সবচেয়ে বড় কমন দিকটা হলো তা ‘অধিকারভিত্তিক রাষ্ট্র’। অর্থাৎ রাজতন্ত্র নয়, কলোনি-মালিকের অধীন রাষ্ট্র নয় বরং স্বাধীন রিপাবলিক ও গণক্ষমতার রাষ্ট্র যার সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো এগুলো নাগরিকের অধিকারভিত্তিক।
ফলে এর কমন বৈশিষ্ট্যই শুধু নয়, এক কমন আন্ডারস্ট্যান্ডিং হলো নাগরিক অধিকারভিত্তিক স্বাধীন রাষ্ট্র গড়া। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মাঝামাঝি থেকেই এই মূল মেরুকরণ শুরু হয়েছিল। আমেরিকার নেতৃত্বের কাম্য সেই দুনিয়াতে কলোনি আর নয়, নাগরিক অধিকারভিত্তিক স্বাধীন রাষ্ট্র এই পক্ষই জয়লাভ করে যুদ্ধ শেষ হয়েছিল। আর সেই স্বাধীন রাষ্ট্রগুলোসহ সব রাষ্ট্রের এক অ্যাসোসিয়েশন হয় জাতিসঙ্ঘ। এরপর জাতিসঙ্ঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলো সবাই বসে বিভিন্ন আইন ও কনভেনশন থেকে অধিকারের চার্টার লেখা হয়েছিল। আর স্বাক্ষরকারী সদস্য দেশের ওপর আইন ও কনভেনশন পালনীয় বাধ্যতামূলক হয়ে যায়।
অবশ্য সাথে তৈরি হয়ে যায় নানা ফাঁকফোকরও। বিশেষ করে আইন ও কনভেনশনের বাধ্যবাধকতা বাস্তবায়ন কে কার ওপর করবে, কিভাবে করবে, কতটা করবে এসব প্রশ্নে। এ ছাড়া সবার উপরে তো আছেই রাষ্ট্রের বৈষয়িক লাভালাভের স্বার্থ আর এই ভিত্তিতে পক্ষে-বিপক্ষে থাকা না থাকার জোট বাঁধা। দেখা গেছে, বৈষয়িক স্বার্থের লোভে কোনো রাষ্ট্র অন্যকে অধিকার লঙ্ঘনের প্রশ্নে আপস বা ছাড় দিয়ে বসতে দেখা যায়। যেমন ১৩৬ কোটি জনসংখ্যার ভারতের বাজার সুবিধা পেতে পশ্চিমের অনেকে ভারতের নাগরিক অধিকার লঙ্ঘনের প্রশ্নে ছাড় বা উপেক্ষা করে বসে। এসব সমস্যা থেকে দুনিয়া একেবারে মুক্ত হতে পারেনি এখনো, সে কথা সত্য। কিন্তু তাই বলে আবার অধিকারভিত্তিক রাষ্ট্রের স্ট্যান্ডার্ড গড়ে তুলে কোনোই লাভ হয় না অথবা এ নিয়ে ব্যত্যয় ঘটলে কারো বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলা হয় তাকে বিব্রত করার জন্য এসব কথাও ভিত্তিহীন অবশ্যই। যদিও জাতিসঙ্ঘের অধীনের বিচার বা তদারকি কাঠামো- এই ব্যবস্থার মধ্যে কোনো রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা ও তা প্রমাণ করা বা প্রস্তাব পাস করে আনা খুব সহজ কাজ নয়। অভিযোগ সবটা বা সবার বিরুদ্ধে প্রমাণ কখনো সমর্থ না হলেও কারো বিরুদ্ধে মিথ্যা বা ভিত্তিহীন অভিযোগ তোলা হয়েছে এমন বাস্তবতা নেই।
তবে সবচেয়ে কমন ঝোঁক হলো, কোনো রাষ্ট্র তার বিরুদ্ধে নাগরিক অধিকার লঙ্ঘন বা অধিকার বৈষম্যের অভিযোগে নিন্দা প্রস্তাব উঠলে নিরুপায় সে তখন অন্যের অভিযোগ তোলাটাকে নিজের ‘সার্বভৌমত্বের’ লঙ্ঘন বা ভিন রাষ্ট্রের বিষয়ে ‘হস্তক্ষেপ’ বলে নিজ মুখ রক্ষার চেষ্টা করে থাকে। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক আদালতে অন্তর্বর্তী রায়ে অভিযুক্ত হয়ে ধরা খেয়ে মিয়ানমার এটা করেছে। আর সিএএ ইস্যুতে এবার ভারতের প্রতিক্রিয়াও তাই। এটা ভারতের ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়’ বলে দাবি করা হয়েছে। মানে বলতে যাচ্ছে যেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টে আনা প্রস্তাবে ভারতের পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন বলে প্রশ্ন তুলেছে। এ ব্যাপারে আগের কমিউনিস্ট রাষ্ট্রগুলো আরো সরেস। তাদের বিরুদ্ধে নাগরিক অধিকার লঙ্ঘনের প্রশ্ন আসা মাত্রই তারা একে ‘সাম্রাজ্যবাদের ষড়যন্ত্র’ বা ‘হস্তক্ষেপ’ বলে প্রতিক্রিয়া দিয়ে থাকে। আবার খোদ আমেরিকার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে সেও কম যায় না। সে নিজে জাতিসঙ্ঘের ওই অঙ্গসংগঠন থেকে নিজের সদস্যপদ প্রত্যাহার করে নিয়ে অথবা আর কখনো চাঁদা দেবো না বলে বা ওকে অকেজো করার হুমকি দিয়ে থাকে। যদিও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কালে কলোনি ব্যবস্থার সমাপ্তি ও অধিকারভিত্তিক স্বাধীন রিপাবলিক ধারণার রাষ্ট্রের প্রস্তাবক হলেন সেকালের আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নিজে। শুধু প্রস্তাবকই নয়, যুদ্ধে নিজের অংশ গ্রহণ ও মিত্রদের সামরিক-অর্থনৈতিক সহায়তার পূর্বশর্ত হিসেবে তিনি বলেছিলেন এটা।
সেকালে হিটলারের কাছে হারার ভয়ে নিরুপায় হয়ে হিটলার-বিরোধী ইউরোপীয় মিত্র রাষ্ট্রগুলো আমেরিকান প্রস্তাব মেনে নিয়েছিল। তবে এর আগে থেকেই যদিও ইউরোপ দাবি করত যে, তারা সবাই রিপাবলিক রাষ্ট্রই। কিন্তু তা সত্ত্বেও যুদ্ধ শেষে সবার আগে তারা নিজেই নিজেদের রাষ্ট্র ও ক্ষমতা কাঠামো ব্যবস্থা সংস্কার করে অধিকারভিত্তিক রাষ্ট্র করে নিয়েছিল। অর্থাৎ মানে দাঁড়িয়েছিল যে, আগে নিজেদের রিপাবলিক রাষ্ট্র বলে দাবি করলেই মেনে নিয়েছিল যে তারা নাগরিক অধিকারভিত্তিক রাষ্ট্র ছিল না। এ কারণে শুধু তাই নয়, নিজেদের সব নাগরিকের জন্য এক কমন অধিকারের চার্টার রচনা কাজ করে নিয়েছিল, যার নাম ছিল ইউরোপীয় কনভেনশন অব হিউম্যান রাইট। আর এটা বাধ্যতামূলক প্রযোজ্য করা হয়েছিল কাউন্সিল অব ইউরোপ নামে নিজেদের নবগঠিত ৪৭ ইউরোপীয় রাষ্ট্রজোটের সব রাষ্ট্রের ওপর। আর অধিকার সম্পর্কিত ইস্যুতে অভিযোগ তদারকির জন্য আলাদা সুপ্রিম কোর্ট গঠন করে নেয়া হয়েছিল ইউরোপীয় কোর্ট অব হিউম্যান রাইট নামে। আসলে এটাই ছিল হিটলারের ফ্যাসিবাদ ও বর্ণবাদ বা জাতনিধনের বিরুদ্ধে ইউরোপের নিজেকে রক্ষাকবচ। এভাবে ৪৭ ইউরোপীয় রাষ্ট্রজোটের প্রতিষ্ঠানগুলোরই জন্ম হয়েছিল সেই ১৯৫৩ সালে; আজকের ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা ইইউ গঠন প্রক্রিয়া শুরুরও বহু আগের ও আলাদা ঘটনা সেটা।
মূলত এই গুরুত্বপূর্ণ অতীতের কারণে আজকের ইউরোপীয় পার্লামেন্ট ভারতের সিএএ-বিরোধিতা করে অধিকারবিষয়ক যেকোনো প্রস্তাব আলাদা গুরুত্বের হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ ছাড়া আরো একটি কারণে এখনকার ইউরোপীয় পার্লামেন্টে ভারতের সিএএ ইস্যুতে প্রস্তাব আনা আলাদা বিশেষ গুরুত্বের। গ্লোবাল অর্থনীতিতে অর্থনৈতিক পরাশক্তি হিসেবে আমেরিকাকে ছাড়িয়ে চীন সে জায়গা নিতে চাচ্ছে বা যাচ্ছে। এই প্রতিযোগিতায় চীনকে ঘায়েল করতে আমেরিকা চীনের বিরুদ্ধে সময়ে সময়ে হিউম্যান রাইট ইস্যু ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু এ প্রসঙ্গে চীনের প্রতি ইইউর অবস্থান ভিন্ন। কমিউনিস্ট কাঠামোর রাষ্ট্র হিসেবে চীনের হিউম্যান রাইটের রেকর্ড সবসময় খারাপ থাকে।
আর আমেরিকা চীনকে দাবড়ে রাখতে চায় বলে চিনের হিউম্যান রাইটের রেকর্ডের কথা তুলে ঘায়েল করতে চায়। কিন্তু ইইউর অবস্থান আমেরিকার মতো ঘায়েল করা নয়। বরং চীনকে হিউম্যান রাইট মেনে চলা কম্প্লায়েন্স রাষ্ট্র করে গড়ে উঠতে সাহায্য-সহযোগিতা করা। আর এভাবে চীন-ইইউর ঘনিষ্ঠ বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে তোলা। গত ২০১৯ সালের এপ্রিলে ব্রাসেলসে চীন-ইইউ এক শীর্ষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেখান থেকে ২৪ দফা যৌথ ঘোষণা প্রকাশিত হয়েছিল, সেটাই হিউম্যান রাইট প্রসঙ্গে চীন-ইইউ সহযোগিতামূলক সম্পর্ক গড়তে চাওয়ার এক প্রামাণ্য দলিল।
কিন্তু মোদির কপাল সত্যিই খারাপ। আগামী মার্চ ২০২০ সালে ভারতের সাথেও একই রকমভাবে ভারত-ইইউ সামিট হতে যাচ্ছে ব্রাসেলসে। তাই ওই সময়ে মোদির ব্রাসেলস সফর নিশ্চিত করা হয়েছে। তাই যারা ভাবছেন ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টে ভারতের সিএএ ইস্যুতে নাগরিক অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলা আগের মতোই কোনো মামুলি ব্যাপার অথবা ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টে কোনো শক্তিশালী প্রভাব ফেলার মতো প্রতিষ্ঠান বা ব্যাপার নয় তারা সম্ভবত ভুল প্রমাণিত হবেন। আগের ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট শক্ত অথবা নরম যাই ভূমিকা নিয়ে থাকুক না কেন এবারের ইউরোপীয় পার্লামেন্ট আগের চেয়ে ভিন্ন এটা প্রমাণিত হবেই। এর মূল কারণ, হিউম্যান রাইটের নীতির ভিত্তিতে সব কূটনৈতিক সম্পর্ক এখন থেকে তারা সাজাবেনই, এ নিয়ে তারা নিজেদের কাছে অঙ্গীকারবদ্ধ।
সেটা এ জন্য যে, এমন নীতি ভিত্তিতে আরো আগে না দাঁড়াতে পাড়ার জন্য চীনকে বিশেষ করে বেল্ট-রোড ইস্যুতে চিনের সাথে যুক্ত হওয়া বিষয়টাকে মোকাবেলা করতে গিয়ে ইইউ গুরুত্বপূর্ণ সদস্য প্রায় সবাই আলাদা এককভাবে চীনের সাথে সম্পর্ক করতে প্রায় চলেই গিয়েছিল। শেষ পর্যায়ে সেখান থেকে সরে এসে তারা ইইউ হিসেবে একসাথে চীনকে মোকাবেলা করতে সমর্থ হওয়া থেকেই চীনকেও হিউম্যান রাইট মেনে চলতে বাধ্য ও রাজি করাতে পেরেছে তারা। এতে বিপর্যয় এড়িয়ে নিজেদের ভাঙন এড়িয়ে ও শক্তি অক্ষুণ্ন রাখতে পেরেছে বলে মনে করে। এতে এমনকি এরপর গত বছরের মে মাসে চীনে বেল্ট-রোড টু এর সম্মেলনও এই নীতির ভিত্তিতেই ২৯ রাষ্ট্রপ্রধানের এক যৌথ ঘোষণা প্রকাশিত হয়েছিল।
সর্বশেষ অবস্থা হলো, ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টে ওই ছয় প্রস্তাব একসাথে একটা প্রস্তাব হিসেবে পেশ করা হয়েছে। কিন্তু এটা নিয়ে নিজেদের আরো আলোচনা ও তা পাস হওয়ার ব্যাপারটা আগামী মার্চ মাস পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। ভারতের কিছু পত্রিকা লিখছে এই স্থগিত করাকে মোদি সরকার নিজের কূটনৈতিক বিজয় মনে করছে।
এটাও ভুল প্রমাণিত হবে। কারণ মার্চ মাসেই ভারত-ইইউর সামিট অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে মোদি সিএএ’র ব্যাপারে পিছিয়ে সরে এসে যদি হিউম্যান রাইট মেনে চলার জোরালো অঙ্গীকার না করেন তবে এর পরিণতি খুবই খারাপ দিকে যেতে পারে। তবে বড়জোর ভারত হিউম্যান রাইট মেনে চলার জন্য সময় চাইতে পারে। কিন্তু সেটা কেবল এই শর্তে যে, তত দিন নতুন নাগরিক আইন ও এনআরসির বাস্তবায়ন স্থগিত করতে হবে। অন্যথায় চরম খারাপ দিকটা হলো, ইইউ অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করা পর্যন্ত গিয়ে বসতে পারে। এক কথায় সিএএ-এনআরসি বাস্তবায়ন আর ইইউর সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক- এই দুটো আর আগের মতো একসাথে চলতে পারবে না।
এমনকি বাংলাদেশের চলতি নির্বাচন নিয়ে যে ‘পর্যবেক্ষণ’ ইস্যুতে তর্কাতর্কি চলছে। এটাকেই হাল্কা বিষয় হিসেবে দেখা হচ্ছে, এটাও ভুল হবে। ইইউ হিউম্যান রাইট মেনে চলা বা এর কম্প্লায়েন্স ইস্যু এখন থেকে খুবই কঠোরভাবে অনুসরণ করবে। এ ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি। কেবল বাস্তবায়নের জন্য সময় বেশি চাইলে অর্থাৎ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ধীরে ধীরে তা করতে চাইতে পারি। তবুও সেটা সুনির্দিষ্ট ও বিশ্বাসযোগ্য প্রতিশ্রুতির অধীনেই কেবল হতে পারে।
হিউম্যান রাইট কমপ্লায়েন্স এটা হতে যাচ্ছে ধীরে ধীরে অর্ডার অব দ্যা কামিং ডেজ!
লেখক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com