করোনা ভাইরাসে কী ক্ষতি হয়
করোনা ভাইরাস - করোনা ভাইরাসে কী ক্ষতি হয়
করোনা ভাইরাস একটি গ্রুপ অব ভাইরাস। করোনা ভিরিডি ফ্যামিলির অন্তর্গত। এই ভাইরাস অনেকটা সাধারণ ঠান্ডা জ্বর বা ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো। করোনা নামটা এসেছে ‘ক্রাউন’ থেকে। মাইক্রোস্কোপে এই ভাইরাস ক্রাউন বা মুকুটের মতো দেখায়। সেখান থেকেই এই ভাইরাসের নাম করোনা। আর জিনগত বা মিউটেশনের ফলে নাম হয়েছে, নোভেল করোনা ভাইরাস। গোটা পৃথিবীতেই যত রকমের ভাইরাস রোগ সৃষ্টি করে, তার বেশির ভাগই আরএনএ ভাইরাস। এই ভাইরাসগুলোতে দুটো নিউক্লিক অ্যাসিডের (ডিএনএ ও আরএনএ) মধ্যে যেকোনো একটি থাকে। বেশিরভাগ ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসই আরএনএ ভাইরাস!
এই ভাইরাস সাধারণত মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়ে পড়ে। বাতাসে এরা ভাসে। কাশি, হাঁচি ইত্যাদির মাধ্যমে এরা বাতাসে প্রবেশ করে। সেখান থেকে মানুষের নাসারন্ধ্র বা হাঁ-এর মাধ্যমে গলার ভিতর ‘আপার রেসপিরেটরি ট্র্যাক্ট’-এ বাসা বাঁধতে শুরু করে অর্থাৎ সংক্রমণ ছড়ায়। তখন সর্দি, কাশি, গলা জ্বালা, জ্বর হয়। দেখে মনে হবে যে সাধারণ ঠাণ্ডা লেগেছে। পরে সেই সংক্রমণ লোয়ার রেসপিরেটরি ট্রাকে নেমে গেলে জটিল আকার ধারণ করে। আর তখনই এই ভাইরাস নিউমোনিয়া তৈরি করে। তবে, নিউমোনিয়া ছাড়াও শরীরের অন্যান্য অঙ্গকেও আক্রান্ত করে করোনা ভাইরাস। তাই এর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশি। এই রোগে মূলত শিকার হয় বাচ্চা ও বয়স্করা। উপসর্গ দেখে চিকিৎসা ছাড়া এর কোনো চিকিৎসা নেই।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই ভাইরাস প্রথমে জীবজন্তু এবং পরে পাখিদের মধ্যে দেখা যায়। পরে তাদের থেকেই ছড়িয়ে পড়ে। গৃহপালিত জন্তু বা পাখির মাধ্যমে প্রথমে বাড়ির সদস্যদের মধ্যে এবং তারপর বৃহত্তর জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। জীবজন্তুদের এই ভাইরাস মানুষের শরীরে একবার ঢুকলে তার জিনগত পরিবর্তন হয়, তখন তারা এক মানুষ থেকে আর এক মানুষে সংক্রমণ ছড়ায়। কারণ, ভাইরাস ভীষণভাবে ‘হোস্ট স্পেসিফিক’। জানা যাচ্ছে, চীনের মাছ, মাংসের বাজার থেকে ছড়িয়েছে এই করোনা।
করোনা আক্রাম্ত রোগীকে অন্যদের থেকে আলাদা রেখে চিকিৎসা করতে হবে। রোগীর উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসা করতে হয়। জ্বরের জন্য প্যারাসিটেমল, শরীরে যাতে বেশি করে জল যায়, সেজন্য ফলের রস, তরল খাবার, গলায় ইনফেকশন সারাতে প্রয়োজনে অ্যান্টি-বায়োটিক ইত্যাদি। কারণ, অ্যান্টি-ভাইরাল ওষুধ যেমন বাজারে হাতে গোনা, তেমনই অ্যান্টি-বায়োটিকের মতো স্পেসিফিক নয়। ডাক্তার ও নার্সদের হাতে গ্লাভস, মাস্ক, ফুল অ্যাপ্রন পরে রোগীকে চিকিৎসা করতে হবে। খাবারের ক্ষেত্রে বলে রাখি — ভালোভাবে রান্না করা খাবার খাওয়া উচিত। কারণ, কাঁচা মাংস রান্না করতে গিয়ে হাতে লেগে সংক্রমণ ছড়াতে পারে। কিন্তু, রান্না করার পর অর্থাৎ ৫৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের অধিক তাপমাত্রায় বেশিরভাগ ভাইরাস আর বেঁচে থাকে না।
করোনা সংক্রমণ থেকে রেহাই পেতে এই শীতকালটা একটু নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিয়ে চলতে হবে। গরম পড়ে গেলে এর লেশমাত্র থাকবে না। করোনা ভাইরাসের আক্রমণ বেশিরভাগই ঠান্ডার দেশে দেখা যায়। এই একই কারণে আমাদের দেশে ইনফ্লুয়েঞ্জায় প্রাণহানি কম হয়। অতএব শীত পেরলেই দেশবাসী নিরাপদ। এই পরিস্থিতিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ কিছু মেসেজ ভাইরাল হয়েছে, যেখানে এটা খাবেন না, ওটা করবেন না বলে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে, সেগুলি একেবারেই গুজব। বাদুড়িয়ায় যখন প্রথম চিকুনগুনিয়া চিহ্নিত করা হয়, তখন অনেকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ডাক্তারবাবু তাহলে কি চিকেন খাব না? তখন তাদের বলা হয়েছিল, একা খাবেন না, রেঁধে আমার জন্যও একটু আনবেন। অর্থাৎ, এসব গুজবে একেবারেই কান দেবেন না।
তবে, করোনাকে কেন্দ্র করে চীনের বিরুদ্ধে যে জীবাণু অস্ত্র তৈরির অভিযোগ, তাকেও একেবারে উড়িয়ে দোয়া যায় না। কারণ, ওরা অনেক সময় নাম গোপন করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালায় তো। যারা কাজটা করছেন, তাদের কাছেও বিষয় বা উদ্দেশ্য খোলসা করে না। শুধু নির্দেশ দেয়া হয়, এই ভাইরাসটা মাল্টিপ্লাই করে দাও! তখন অসাবধানতাবশত ওই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তেই পারে।
সূত্র : বর্তমান