বিজেপি ছাড়ছেন মুসলিমরা

রোহিনি চ্যাটার্জি | Jan 30, 2020 08:35 am
বিজেপি ছাড়ছেন মুসলিমরা

বিজেপি ছাড়ছেন মুসলিমরা - ছবি : সংগৃহীত

 

বিজেপির উপর মহল বৈষম্যমূলক নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) নিয়ে ঘোষিত অবস্থান থেকে সরে না আসার ইঙ্গিত দিতে থাকলেও দলের মধ্যেই এ নিয়ে কিছু প্রতিবাদ দেখা গেছে। মঙ্গলবার মধ্য প্রদেশের মাইাহারের বিজেপি এমএলএ নারায়ন ত্রিপাঠিও দলের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেছেন। তিনি বলেছেন, সিএএ রাজ্যে গৃহযুদ্ধ-ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
ত্রিপাঠির উদ্ধৃতি দিয়ে হিন্দুস্তান টাইমস বলেছেন, প্রতিটি রাস্তায় গৃহযুদ্ধ-ধরনের পরিস্থিতি বিরাজ করছে, যা আমাদের দেশের জন্য ভয়াবহ বিষয়। আমরা গৃহযুদ্ধ-ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টির কথা কল্পনাও করতে পারি না। আমি পরিস্থিতিটি উপলব্ধি করেই সিএএর বিরোধিতা করি। কেবল মাইহারে আমার এলাকায় নয়, অন্যান্য স্থানেও একই ধরনের পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

গত ১১ ডিসেম্বর সিএএ আইনে পরিণত হওয়ার পর থেকে ভারতজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ হচ্ছে। বিক্ষোভকারীরা অব্যাহতভাবে এটি সংবিধানসম্মত কিনা সে প্রশ্ন তুলছে। উল্লেখ্য, এই আইনে আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে ভারতে যাওয়া ধর্মীয় নির্যাতনের শিকার হিন্দু, শিখ, খ্রিস্টান, পারসি, জৈন ও বৌদ্ধদের নাগরিকত্ব প্রদান করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু মুসলিমদেরকে এতে কোনো সুযোগ দেয়া হয়নি।
ত্রিপাঠি বলেন, আমরা হয় সংবিধান অনুযায়ী দেশ পরিচালনা করব অথবা বিজেপির উচিত হবে বি আর আম্বেদকরের সংবিধান (এতে ধর্ম-নির্বিশেষে সব মানুষকে একসাথে বসবাসের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছে) ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে আমাদের মতো করে দেশ পরিচালনা করতে পারি। দেশকে ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ করা যায় না।
অবশ্য, সিএএ-সংশ্লিষ্ট সমস্যা নিয়ে প্রথম বিজেপি নেতা হিসেবে ত্রিপাঠি কথা বলেননি। আরো অনেকেই এ ব্যাপারে সোচ্চার হয়েছেন।
সুভাষ চন্দ্র বসুর ভাইয়ের ছেলে ও পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির সহ-সভাপতি চন্দ্র কুমার বসুও মুসলিমদেরকে বাদ দেয়ার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

গত বুধবার টেলিফোনে হাফপোস্টকে বসু আবারো জোর দিয়ে তার অবস্থান তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এই আইনে হিন্দু, শিখ, জৈন ও বৌদ্ধদের কথা বলা হয়েছে। তবে সংখ্যালঘু মুসলিমদের কোনো কথঅ নেই। অথচ তারাও আমাদের দেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটা যদি অন্তর্ভুক্তমূলক আইন হয়, তবে কেন কোনো ধর্মের কথা উল্লেখ করা হলো? হয় ধর্মের কথা বাদ দিতে হবে অথবা স্বচ্ছ হতে হবে।

বসু অবশ্য সাথে সাথেই বলেন, তিনি সিএএকে সমর্থন করেন।
তবে তিনি বলেন, বর্তমান আকারের সিএএ কেবল বিরোধীদের হাতে অস্ত্র তুলে দেয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, ভারত অবশ্যই সেক্যুলার, অন্তর্ভুক্তমূলক রাষ্টট্র। আমরা ভারতের সংবিধানের বরিুদ্ধে যেতে পারি না। হয় সংবিধান পরিবর্তন করতে হবে, নয়তো সেটিকেই অনুসরণ করতে হবে।
তিনি বলেন, নীতিগতভাবে আমি সিএএকে সমর্থন করি, তবে আমি এসব সংশোধন চাচ্ছি।
বসু বলেন, বিজেপিকে অবশ্যই জনগণের কথা শুনতে হবে, হিন্দু-মুসলিম বৈষম্য বন্ধ করতে হবে।
তিনি বলেন, ভোটের জন্য মেরুকরণ করা ঠিক নয়। এটি একটি বড় বিপদ।
কয়েক দিনের মধ্যে দিল্লির নির্বাচন হবে। বিজেপি সিএএ ইস্যুকে কেন্দ্র করে মেরুকরণের চেষ্টা করছে। বিশেষ করে দিল্লির শাহিন বাগের প্রতিবাদের বিরুদ্ধে তারা অবস্থান গ্রহণ করেছে। কেন্দ্রীয় অনুরাগ ঠাকুর সমাবেশে উস্কানিমূলক বক্তব্য রেখেছেন, বিজেপি এমপি পরবেশ বার্মা বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও ভীতি ছড়ানোর চেষ্টা করেছেন।
দলের মধ্যে আরো কিছু সতর্কতামূলক বক্তব্য রয়েছে। বিজেপির রাজ্য সভার এমপি স্বপন দাসগুপ্ত চলতি মাসের প্রথম দিকে বলেছিলেন যে আইনটি প্রণয়নের সময় সরকার এই বিরোধিতার বিষয়টি অবমূল্যায়ন করেছিল। সরকার বাস্তবতা সম্পর্কে তেমন সচেত ছিল না।

পশ্চিমবঙ্গে মমতা ব্যানার্জি তীব্রভাবে বিরোধিতা করছেন সিএএর। এমনকি পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির প্রধান দিলিপ ঘোষ পর্যন্ত বলেছেন, এই রাজ্যে কোনো এনআরসি হবে না।
সিএএ প্রশ্নে বিরোধিতা প্রকাশ করে বিজেপির ৭৬ জন বিজেপি কর্মী দল ত্যাগ করেছেন। তারা মধ্য প্রদেশ, ইন্দোর, দেওয়াস ও খারগোন জেলার অধিবাসী।
এর আগে ভুপাল থেকে সিএএ ও এনআরসির বিরোধিতা করে ৪৮ জন বিজেপি সংখ্যালঘু দল ত্যাগ করে। গত ডিসেম্বরে বিজেপির শতাধিক মুসলিম সদস্য দল ত্যাগ করে।
জেলা বিজেপি প্রধান আফজাল খান ও সাবেক মেয়র আখতার শেখ এক বিবৃতিতে বলেন, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনটি ও এনআরসি সংবিধানবিরোধী ও মুসলিমবিরোধী। আমাদের সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে অবিচার হচ্ছে। এই অবিচার নিয়েও বিজেপিতে থাকা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।

হাফপোস্ট

 


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us