চীন-পাকিস্তান-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে নতুন হিসাব!
চীন-পাকিস্তান-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে নতুন হিসাব! - ছবি : সংগৃহীত
গত সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ছয় মাসের মধ্যে তৃতীয়বার বৈঠকে বসেন। সুইজারল্যান্ডের ডাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের ফাঁসে তাদের বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। দুই দেশের মধ্যে সাম্প্রতিক অতীতে নজিরবিহীন তিক্ততা ও অবিশ্বাসের প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে ক্রমবর্ধমান মতবিনিময় ঘটছে। এই আপাত বন্ধুত্বের সূচনা হয় ২০১৯ সালের শুরুর দিকে যখন ট্রাম্প প্রশাসনের অনুরোধে আফগান তালেবানকে আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করে পাকিস্তান। অতীতের বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবানের মধ্যে এবার অগ্রগতি হচ্ছে।
গত বছরের জুলাই মাসে ইমরান খান যখন হোয়াইট হাউসে তার প্রথম সফরটি করেছিলেন, তখন তা ছিল আসলে আফগান শান্তিপ্রয়াসে পাকিস্তানের ইতিবাচক ভূমিকার স্বীকৃতি। দুই নেতার মধ্যে মত বিনিময়ের খবর প্রকাশের সময় ট্রাম্প অপ্রত্যাশিতভাবে কাশ্মির নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে চলা অচলাবস্থা নিরসনে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে মধ্যস্ততার প্রস্তাব দেন। এটা পাকিস্তানিদের কানে মধুর সঙ্গীতের মতো শোনা গেলেও ভারতের জন্য তা ছিল বিপদসঙ্কেত। ভারত সবসময়েই বলে আসছে যে এটি একটি দ্বিপক্ষীয় বিষয়, এখানে তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্ততার কোনো সুযোগ নেই। পরে ট্রাম্প তার অবস্থান থেকে সরে এসে বলেন যে এটি একটি দ্বিপক্ষীয় বিষয় এবং দুই দেশকেই কোনো সমাধান বের করতে হবে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্ক প্রতিষ্ঠাকারী ট্রাম্পের পক্ষে নয়া দিল্লিকে রাগানো সম্ভব ছিল না কৌশলগত ও অর্থনৈতিক কারণে।
কিন্তু মাত্র দুই মাস পরেই নিউ ইয়র্কে জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদের ফাঁকে ইমরান খান যখন ট্রাম্পের সাথে বৈঠক করেন, তখন তিনি আবার কাশ্মির ইস্যুটি উত্থাপন করেন। তবে ভারত তার অবস্থান থেকে সরে আসেনি। ট্রাম্পের বারবার দেয়া মধ্যস্ততার প্রস্তাবেও অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। কিন্তু তা সত্ত্বেও ডাভোসে ট্রাম্পই কাশ্মির ইস্যুটি উত্থাপন করেন এবং তা নিয়ে ইমরান খানের সাথে আলোচনা করেন। প্রশ্ন হলো, কেন ট্রাম্প ভারতের অবস্থান জানার পরও বারবার কাশ্মির ইস্যুটি সামনে আনছেন? এবার তিনি তা করলেন ভারত সফরকে সামনে রেখে। ট্রাম্প কি খুবই আনাড়ি নাকি তিনি খেলো বোঝেন ভালোমতোই? মনে হচ্ছে, তিনি খেলাটা বোঝেন ভালোমতোই। তিনি বুঝতে পেরেছেন যে কাশ্মিরের উল্লেখে সবসময়ই পাকিস্তানের প্রতি ইতিবাচক বার্তা যায়। প্রশ্ন হলো, এর বিনিময়ে তিনি কী চান? নিশ্চিতভাবেই তা হলো আফগান শান্তি চুক্তিতে পাকিস্তানের সহায়তা।
আরেকটি বিষয় রয়েছে। তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে খুব কমই। তা হলো সিপিইসি। ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা এখন প্রায়ই পাকিস্তানের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করছেন। ইমরান খানের সাথে ট্রাম্পের আলোচনার সময়ও বিষয়টি উত্থাপিত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র কি বেশি বেশি বাণিজ্যিক সম্পর্কের বিনিময়ে সিপিইসি থেকে পাকিস্তানকে সরিয়ে নিতে চাইছে? যুক্তরাষ্ট্রের সিপিইসির বিরোধিতা গোপন কোনো বিষয় নয়। দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক প্রধান মার্কিন কূটনীতিক অ্যালিস ওয়েলস সম্প্রতি ইসলামাবাদ সফরের সময় আবারো সিপিইসির কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, সিপিইসি একটি ঋণ ফাঁদ বলেও তিনি উল্লেখ করে বলেন, এটি দীর্ঘ মেয়াদে পাকিস্তানের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। তবে চীনও এর যথাযথ জবাব দিয়ে জানায়, বেইজিং পাকিস্তান-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক উন্নয়নে বাধা হতে চায় না। তবে তারা সিপিইসিতে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ অনুমোদন করবে না। মনে হচ্ছে, এটি কেবল যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিই নয়, পাকিস্তানের প্রতিও একটি বার্তা। এর অর্থ হলো, পাকিস্তানকে আসল কূটনৈতিক পরীক্ষার মুখে পড়তে হবে। পাকিস্তান মনে করে যে সিপিইসি একটি গেম চেঞ্জার, তবে সে যুক্তরাষ্ট্রকে ক্ষেপাতে চায় না। পাকিস্তান কি এই জটিল ভারসাম্য বজায় রাখতে পারবে?
এক্সপ্রেস ট্রিবিউন