করোনাভাইরাসের ৮ লক্ষণ, ৯ প্রতিরোধ
করোনাভাইরাস - ছবি : সংগৃহীত
করোনাভাইরাস নিয়ে বিশ্বজুড়ে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ২০০০ জনের কাছাকাছি, এর মধ্যে বেশিরভাগই চীনের মানুষ। চীনেই সর্বপ্রথম এই ভাইরাসের খবর পাওয়া যায়। ধীরে ধীরে এটি গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে। থাইল্যান্ড, জাপান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো অন্যান্য দেশ থেকেও এই ভাইরাস সংক্রমণের ঘটনা জানা গেছে। তাই, বিশ্বব্যাপী মানুষের মধ্যে এই মারণ ভাইরাস নিয়ে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।
কীভাবে এই ভাইরাসে সংক্রমিত ব্যক্তিদের চিকিৎসা করা হবে, তা নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা(WHO) প্রচার করছে। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের বিশ্বাস, ২০০৩ সালে ৮০০-রও বেশি মানুষের মৃত্যু ও হাজার হাজার মানুষের আক্রান্ত হওয়ার কারণ 'সার্স' (সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিন্ড্রোম) ভাইরাসের পরিবার থেকেই এসেছে এই নতুন ধরনের করোনা ভাইরাস। তারা আরো জানিয়েছেন যে এই ভাইরাসটি চীনের বাজারে পাওয়া প্রাণীজ পণ্য বা সামুদ্রিক খাবার থেকে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে।
এখন জেনে নেয়া যাক, করোনা ভাইরাস কী এবং কীভাবে এটি ছড়িয়ে পড়ে।
করোনা ভাইরাস কী?
করোনা ভাইরাস বলতে এক গোত্রের অনেকগুলো ভাইরাসকে বোঝায়, যা মূলত প্রাণীদের মধ্যে পাওয়া যায়। বার্ড ফ্লু তথা সার্স ভাইরাসও এই গোত্রের। হিউম্যান করোনা ভাইরাস এক ধরনের জুনোটিক রোগ এবং এই সংক্রমণটি প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।
ভাইরাসটির অনেক রকম প্রজাতি আছে। কিন্তু, এখন পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা প্রায় ছয়টি করোনা ভাইরাস সনাক্ত করেছেন, যা মানুষকে প্রভাবিত করে এবং হালকা থেকে মারাত্মক লক্ষণ সৃষ্টি করে।
হিউম্যান করোনা ভাইরাসের প্রথম খোঁজ পাওয়া গিয়েছিল ১৯৬০ সালে একজন রোগীর মধ্যে, যিনি সর্দিতে ভুগছিলেন। করোনাভাইরাস নামটি এসেছে এর আকৃতির ওপর ভিত্তি করে। ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপে এই ভাইরাসটি ক্রাউন বা মুকুটের মতো দেখতে হওয়ায় এর নাম হয়েছে 'করোনা'।
মানুষ প্রায়ই তাদের জীবনের কোনও না কোনও সময়ে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়, সুস্থ হয়ে ওঠে এবং কয়েক মাস পরে আবার সংক্রমিত হতে পারে। মানুষের দেহে ছয় ধরনের করোনা ভাইরাস সংক্রমিত হতে পারে, যথা - আলফা করোনা ভাইরাস (NL63 এবং 229E), বিটা করোনা ভাইরাস (HKU1 ও OC43) এবং বাকি দুটি সার্স ও মার্স তাদের প্রাণঘাতী লক্ষণগুলোর জন্য পরিচিত।
হিউম্যান করোনা ভাইরাস ছড়ানোর কারণ হিউম্যান করোনা ভাইরাস সাধারণত একজন ব্যক্তির শ্বাসনালীকে প্রভাবিত করে। শ্বাসনালীতে সংক্রমিত তরল কাশি বা হাঁচির সময় এক ব্যক্তির থেকে আরেক ব্যক্তির মধ্যে চলে যায়। এছাড়াও, যদি সংক্রামিত ব্যক্তি মুখ না ঢেকে খোলা বাতাসে হাঁচি বা কাশি দেয়, তাহলে ভাইরাসটি বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে।
ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার অন্যান্য কারণ হলো, সংক্রামিত ব্যক্তির সঙ্গে হ্যান্ডশেক, সংক্রামিত কোনো বস্তুর সাথে নাক বা মুখ একসঙ্গে স্পর্শ করা এবং বিরল ক্ষেত্রে, রোগীর মলমূত্র স্পর্শ করা। হিউম্যান করোনা ভাইরাসের লক্ষণ NL63 এবং 229E, HKU1 ও OC43-এর কারণে ফ্লু-এর মতো লক্ষণ দেখা দেয় যা, হালকা থেকে মাঝারি আকার ধারণ করে। অন্যদিকে, মার্স ও সার্স মারাত্মক লক্ষণ সৃষ্টি করে।
এই ভাইরাসের পূর্ববর্তী লক্ষণগুলো হলো -
ক) সর্দি
খ) গলা ব্যথা
গ) কাশি
ঘ) মাথা ব্যাথা
ঙ) জ্বর
চ) হাঁচি
ছ) অবসাদ
জ) শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া।
এক্ষেত্রে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যায় এবং যারা বয়স্ক তাদের এই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে এবং নিউমোনিয়া বা শ্বাস নালীর ব্যাধির মতো মারাত্মক অসুস্থতায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও বেশি থাকে।
মার্স ও সার্স-এর লক্ষণগুলো মারাত্মক হয়, এর কারণে গুরুতর শ্বাসকষ্টের সমস্যা, কিডনিতে সমস্যা, ডায়রিয়া এবং কোনো ব্যক্তির মৃত্যুও হতে পারে বলে জানা গেছে।
হিউম্যান করোনা ভাইরাস নির্ণয় হিউম্যান করোনা ভাইরাস নির্দিষ্ট কয়েকটি পরীক্ষার মাধ্যমে নির্ণয় করা হয়, যথা - মলিকিউলার টেস্ট : সক্রিয় সংক্রমণের লক্ষণগুলি খুঁজে বের করতে।
সেরোলজি টেস্ট : এই পরীক্ষাটি নজরদারি করার উদ্দেশ্যে। এটি পূর্ববর্তী সংক্রমণ থেকে অ্যান্টিবডিগুলি সনাক্ত করার জন্য করা হয়, যা একজন ব্যক্তির ভাইরাসের ধরন প্রকাশিত করে।
হিউম্যান করোনা ভাইরাস চিকিৎসা এর সঠিক চিকিৎসা এখনো আবিষ্কার করা হয়নি। বেশ কয়েকটি ভ্যাকসিন নিয়ে এখনো গবেষণা চলছে। তবে, অনেকগুলো সহায়ক চিকিৎসা পদ্ধতি এবং ওষুধ রয়েছে যেগুলো এর হালকা থেকে মাঝারি উপসর্গগুলির চিকিৎসা করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ব্যথা ও জ্বরের চিকিৎসার জন্য ওষুধ বা গলা ব্যথা নিরাময়ের জন্য গরম পানি, ইত্যাদি।
হিউম্যান করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ
ক) হাঁচি বা কাশির পরে হাত ধুয়ে নিন।
খ) কাশি বা হাঁচির আগে মুখ ঢেকে নিন।
গ) আপনার যদি মনে হয় যে আপনি সংক্রামিত, তাহলে কোনো ব্যক্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা এড়িয়ে চলুন।
ঘ) রান্না না করা গোশত ও ডিম খাওয়া এড়ান। ]
ঙ) নিজেকে সারাক্ষণ হাইড্রেট রাখুন।
চ) লক্ষণগুলো দেখা দেয়া মাত্রই ওষুধ খান এবং পরিস্থিতি গুরুতর হয়ে উঠতে দেবেন না।
ছ) ধোঁয়াটে এলাকা বা ধূমপান করা এড়িয়ে চলুন।
জ) যথাযথ বিশ্রাম নিন।
ঝ) ভিড় থেকে দূরে থাকুন।
সূত্র : বোল্ডস্কাই