পার্বত্য অঞ্চলে সাংস্কৃতিক পরিবর্তন
পার্বত্য অঞ্চলে সাংস্কৃতিক পরিবর্তন - ছবি : সংগ্রহ
বাংলাদেশের পার্বত্য এলাকায় বসবাসরত ৪৫টি ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর ২৫ লাখ অধিবাসী তাদের ঐতিহ্য, ধর্ম ও কৃষ্টি হারিয়ে ভিনদেশী সংস্কৃতি ও ধর্মাচারে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে বলেই দেখা যাচ্ছে। এই রূপান্তরের নেপথ্যে রয়েছে প্রধানত বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট কিছু বেসরকারি সেবা সংস্থা। সেবার আড়ালে তারা মূলত পার্বত্য এলাকার দারিদ্র্যপীড়িত জনগোষ্ঠীকে পাশ্চাত্য জীবনাচার ও দর্শনের দিকে আকৃষ্ট করার প্রয়াস চালাচ্ছে। মুখরোচক কর্মসূচির আড়ালে রয়েছে এ দেশে ইউরোপীয় সংস্কৃতি ও খ্রিষ্টান ধর্ম প্রচার করার নীলনকশা। পার্বত্য চট্টগ্রামের বেশির ভাগ চাকমা ও মারমা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী, টিপরা উপজাতি হিন্দু ধর্মের আর মিজো, বম ও খেয়াংরা খ্রিষ্টান। কিছু গোত্র আত্মা, প্রাণী ও উদ্ভিদের পূজারী।’ (বাংলা পিডিয়া, পঞ্চম খণ্ড)।
বিদেশী ফান্ডে পরিপুষ্ট অনেক এনজিও এখন তিন পার্বত্য জেলায় সক্রিয়। আর্তমানবতার সেবার নামে এসব এনজিওর বেশির ভাগই আসলে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীকে ধর্মান্তরিত করার কাজে কোমর বেঁধে নেমেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে ঢাকার একটি দৈনিকে বলা হয়েছে, গত ২০ বছরে সেখানে ১২ হাজার উপজাতীয় পরিবারকে খ্রিষ্টান বানানো হয়েছে। ওই রিপোর্টের তথ্য অনুযায়ী, তিন পার্বত্য জেলায় বর্তমানে ১৯৪টি গির্জা। খাগড়াছড়ি জেলায় আছে ৭৩টি গির্জা। ১৯৯২ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত এ জেলায় চার হাজার ৩১টি পরিবার খ্রিষ্টান হয়েছে। বান্দরবান জেলায় গির্জা আছে ১১৭টি। এখানে একই সময়ে খ্রিষ্টান হয়েছে ছয় হাজার ৪৮০টি উপজাতীয় পরিবার। রাঙ্গামাটিতে চারটি চার্চ খ্রিষ্টান বানিয়েছে এক হাজার ৬৯০টি উপজাতীয় পরিবারকে। পাহাড়ি যেসব জনগোষ্ঠীর লোকসংখ্যা কম, তাদের প্রায় শতভাগ খ্রিষ্টান হয়ে গেছে অনেক আগেই।
ঔপনিবেশিক শাসনামলে উভয় বাংলায় (পূর্ব ও পশ্চিম) ধর্মান্তরিত খ্রিষ্টান ছিল এক লাখ ১১ হাজার ৪২৬ জন। এর মধ্যে বাংলাদেশে ছিল ৫০ হাজার। ১৯৯১ সালে তা দাঁড়িয়েছে দুই লাখ থেকে চার লাখে। আগামী ২০ বছরে তাদের সংখ্যা এক কোটিতে উন্নীত করার প্রয়াস চালানো হচ্ছে। নিজস্ব সংস্কৃতি অটুট রাখার জন্য কুম্ভীরাশ্রু বিসর্জনকারী গোষ্ঠীর প্রত্যক্ষ মদদে চলা ধর্মান্তরকরণ পাহাড়ে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে যে, উপজাতীয়দের নিজস্ব সংস্কৃতি, ধর্মীয় মূল্যবোধ আজ বিপন্ন। তাদের সামাজিক ও পারিবারিক বন্ধন শিথিল হয়ে যাচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে খ্রিষ্টান হয়ে যাওয়া পাহাড়িদের দ্রুত সংখ্যা বৃদ্ধি যারা ঘটাচ্ছে, তারা যদি এই মানুষগুলোর রাষ্ট্রীয় আনুগত্যের শিকড় কেটে দিতে সক্ষম হয়, তা বাংলাদেশের অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য বড় ধরনের হুমকি হয়ে উঠবে। দেশের কোনো ¯পর্শকাতর এলাকায় ডেমোগ্রাফির নাটকীয় পরিবর্তন স্বাভাবিক বলে মেনে নেয়া যায় না। ত্রাণ ও সেবার নামে আসলে দরিদ্র ও পিছিয়ে পড়া লোকজনকে ধর্মান্তরিত হতে প্রলুব্ধ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ কথা সত্য, আমরা বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ সমতলবাসী বাঙালিরা পাহাড়িদের আর্থসামাজিক উন্নতির জন্য পর্যাপ্ত সহযোগিতা করিনি। এটাও সত্য, ব্রিটিশ রাজশক্তি ঔপনিবেশিক আমলে বিশেষ মতলব নিয়ে পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে বিভাজন রেখা টেনে দিয়েছিল যাতে পর¯পরের মধ্যে সার্বিক দূরত্ব তৈরি হয়। তাদের সেই দীর্ঘমেয়াদি অপপরিকল্পনার ‘ফল পাকতে শুরু করেছে’ বলে মনে হয় (Dr. Father Tapan De Rozario, Christian Mission and Evangilizatian in Bangladesh, Bangladesh Journal of Society, Vol.8 no.1.2011।
উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর দরিদ্রতার সুযোগে এবং তাদের শিক্ষা ও চিকিৎসার অভাবকে পুঁজি করে খ্রিষ্টান এনজিও কর্মী ও মিশনারি পাদ্রিরা দুর্গম পার্বত্য এলাকায় ধর্মান্তরের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
বাংলাদেশে এনজিওর সংখ্যা ৩০ হাজার এবং প্রতি বর্গমাইলে গড়ে প্রায় চারটি এনজিও ‘উন্নয়নের অংশীদার’ ব্যানারে কর্মতৎপর। এনজিওদের অনেকেরই গোপন অ্যাজেন্ডা হচ্ছে নব্য উপনিবেশবাদ তৈরি করা, যা ৮৬ শতাংশ মুসলমান অধ্যুষিত দেশের প্রতি প্রচণ্ড হুমকি। এ দেশে বহুজাতিক কোম্পানির আর্থরাজনৈতিক স্বার্থে এবং অসহায়, নিঃস্ব, নিরক্ষর ও প্রপীড়িত মানুষকে সেবা করার নামে ইউরোপীয় সংস্কৃতির বিকাশ এবং বিশেষ ধর্মে দীক্ষিত করার তৎপরতায় কয়েকটি এনজিও জড়িত রয়েছে। এদের বাজেটের শতকরা ৯৫ ভাগ অর্থ খ্রিষ্টানদের বা খ্রিষ্টধর্মে দীক্ষিত হওয়ার সম্ভাবনাময় ব্যক্তিদের স্বার্থে, নির্বাহী কর্মকর্তা ও বিদেশী কনসালটেন্টের পেছনে ব্যয়িত হয়। মাত্র পাঁচ শতাংশ খরচ করে টার্গেট গ্রুপের জন্য (Saidul Islam, The Christianization of Bangladesh, www.iviews.com)।
রেজাউল হক হেলাল সম্প্রতি খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার সাজেক ইউনিয়নে ১০ হাজার উপজাতির সাংস্কৃতিক পরিবর্তন ও ধর্মান্তরের এক চাঞ্চল্যকর সংবাদ দিয়েছেন। সাজেক ইউনিয়নটি দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে অবস্থিত, যা আয়তনে বাংলাদেশের কোনো কোনো জেলার সমান। এ উপত্যকায় পৌঁছতে খাগড়াছড়ি বা রাঙ্গামাটি শহর থেকে দুই দিন সময় লাগে। এ ইউনিয়নের ২০টি গ্রামে খেয়াং, বম, পাংখু, লুসাই উপজাতির বাস। সাজেক উপত্যকাটি ভারতীয় সীমান্ত রাজ্য মিজোরাম সংলগ্ন। ২০ বছর আগেও এখানে খ্রিষ্টধর্মের নামগন্ধ ছিল না। উপজাতীয়দের ভাষা, সংস্কৃতি সবই ছিল। আজ কিছুই নেই। সেখানকার অধিবাসীরা গিটার বাজিয়ে ইংরেজি গান গায়; মেয়েরা পরে প্যান্ট-শার্ট-স্কার্ট। দেখে মনে হয় যেন ‘বাংলার বুকে এক খণ্ড ইউরোপ’। দীর্ঘদিন ধরে এই দুর্গম এলাকায় মিশনারিরা অনেক কৌশল ও টাকা ব্যয়ের মাধ্যমে উপজাতীয়দের ধর্মান্তরিত করে চলেছে। পাংখু উপজাতি পুরোপুরি খ্রিষ্টান হয়ে গেছে; বদলে গেছে তাদের ভাষা; এমনকি তাদের ভাষার হরফও ইংরেজি বর্ণমালায় রূপান্তর করা হয়েছে। এনজিও নাম ধারণ করে কয়েকটি মিশনারি প্রতিষ্ঠান এই দুর্গম এলাকায় হাসপাতাল, বিনোদনকেন্দ্র, চার্চ ইত্যাদি গড়ে তুলেছে। উপজাতীয় আদি ভাষা ও সংস্কৃতি এরা হারিয়ে ফেলেছে।
বাংলাদেশের পার্বত্য এলাকায় গড়ে উঠেছে সুদৃশ্য গির্জা। প্রাথমিকভাবে মিশনারিদের টার্গেট ছিল হিন্দু ও পাহাড়ি আদিবাসী জনগোষ্ঠী এবং পরবর্তীকালে মুসলমান। বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও ময়মনসিংহের অরণ্যে বসবাসরত আধুনিক সভ্যতার আলোকধারা থেকে বঞ্চিত মানুষ বিশেষত চাকমা, মারমা, তনচঙ্গ্যা, চাক, খ্যাং, খুমি, বোম, মো, মুরুং, টিপরা, খাসিয়া, মনিপুরী, খেয়াং, পাংখু, লুসাই, মগ, গারো উপজাতির মধ্যে খ্রিষ্ট সংস্কৃতি ও ধর্মের বিকাশ এবং অনুশীলন তাদের জীবনধারায় এনেছে আমূল পরিবর্তন।
হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ ও সিলেটে ৩০ হাজার খাসিয়া বাস করে। দেড় শতাধিক বছর আগে মিশনারিরা খাসিয়াদের মধ্যে ধর্ম প্রচার শুরু করেছিল। বর্তমানে ৮০-৯০ শতাংশ খাসিয়া খ্রিষ্টান এবং তাদের প্রায় প্রতিটি পুঞ্জিতে (গ্রাম) গির্জা আছে। ধর্মান্তকরণের ফলে খাসিয়াদের আর্থসামাজিক কাঠামো বদলে গেছে। খাসিয়া ভাষা সীমান্তের ওপারে রোমান হরফে লেখা হচ্ছে। ইদানীং মিশনারিদের প্রচেষ্টায় সাঁওতাল লিপির বর্ণমালাও রোমান হরফে পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে (বাংলাপিডিয়া)।
সাংবাদিক স্টালিন সরকার লিখেছেন, দেশের উত্তরাঞ্চলে ধর্মান্তরের ঘটনা আশঙ্কাজনকহারে বেড়ে গেছে। মুসলমান, হিন্দু আর সাঁওতালদের মধ্যে নিজেদের ধর্ম ত্যাগ করে খ্রিষ্টান হওয়ার ঘটনা ঘটছে অহরহ। বৃহত্তর রংপুর ও দিনাজপুরের আটটি জেলায় চার্চে মাত্র পাঁচ বছরে ১০ থেকে ১২ হাজার ধর্মান্তরিত হয়ে খ্রিষ্টান ধর্ম গ্রহণ করেছে। বেকারত্ব আর দারিদ্র্যকে পুঁজি করে ধর্মান্তরের টোপ দেয়া হচ্ছে মানুষকে। শুধু যুবক-যুবতী আর অভাবী মানুষকে নয়, কোমলমতি শিশুদেরও খ্রিষ্টান করার অপতৎপরতা চলছে। এ জন্য আটটি জেলায় কমপক্ষে ৩০-৪০টি নার্সারি স্কুল খোলা হয়েছে। এসব স্কুলের ক্লাসরুমে বিশেষ ধর্মের সংস্কৃতির বিভিন্ন ছবি ও অনুষঙ্গ টাঙ্গিয়ে রাখা হয়। পাঠ্যবই পড়ার পাশাপাশি ওইসব ছবি দেখিয়ে শিশুদের সম্পর্কে জ্ঞান দেয়া হয়।
আমাদের সীমান্তের ওপারে সেভেন সিস্টার নামে খ্যাত মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, হিমাচল, অরুণাচল প্রভৃতি পাহাড়ি অঞ্চলের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী এখন ধর্মান্তরিত। ওইসব অঞ্চলসংলগ্ন বাংলাদেশের পার্বত্য এলাকায়ও ইতোমধ্যে উল্লেখযোগ্য হারে খ্রিষ্টানের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। ইউরোপীয় দাতাগোষ্ঠী ও এনজিও চক্র পার্বত্য চট্টগ্রামকে টার্গেট করে সামনে এগোচ্ছে। প্রায় দুই বছর স্থগিত থাকার পর ইউএনপিডি রাঙ্গামাটি, বিলাইছড়ি, বান্দরবান ও থানচিতে ২০ লাখ মার্কিন ডলারের ‘কমিউনিটি উন্নয়ন কর্মসূচি’ নামক প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে। ২০০১ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামে তিন বিদেশী নাগরিককে (ব্রিটিশ ও ডেনিশ) অপহরণের পর বিদেশী সংস্থাগুলো তাদের তৎপরতা সাময়িকভাবে স্থগিত রেখেছিল। ইতোমধ্যে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা উন্নয়নের নামে দেদার বৈদেশিক অর্থ দিয়ে ধর্মান্তরিত খ্রিষ্টান জনগোষ্ঠীকে পুনর্বাসনের কাজে লিপ্ত রয়েছে। কমিউনিটি ডেভেলপমেন্টের প্ল্যানের অধীনে তারা এ যুবকদের উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা প্রভৃতি দেশে পাঠায়। এটা অব্যাহত থাকলে পার্বত্য অঞ্চলে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে সচ্ছল এবং রাজনৈতিক দিয়ে বিপজ্জনক জনগোষ্ঠী গড়ে উঠতে পারে। বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী ভারতীয় ছয়টি রাজ্যের পাহাড়ি এলাকায় বহু দিন ধরে এনজিও এবং মিশনারিরা আদিবাসীদের ধর্মান্তরের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে সুকৌশলে। ওইসব সংস্থার সাথে এ অঞ্চলের উগ্রপন্থী সংগঠনের সম্পর্ক থাকার খবর পাওয়ার পর ভারতের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা তদন্ত শুরু করেছে।
খ্রিষ্টান মিশনারিদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে আমাদের মধ্যে দ্বিধা থাকা উচিত নয়। ১৮৫৭ সালে East India Company Board of Directors-এর সভায় গৃহীত প্রস্তাবে যে বক্তব্য রাখা হয়েছে, তা এদের উদ্দেশ্য বুঝতে একান্ত সহায়ক : ‘প্রকৃতি ভারতীয় উপমহাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলটি এ জন্য ব্রিটেনের কাছে সোপর্দ করে, যাতে এতদঞ্চলের একপ্রান্ত হতে অপরপ্রান্ত পর্যন্ত মিশনারিদের বিজয় পতাকা উড্ডীন হয়। এতদঞ্চলকে খ্রিষ্টান রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য প্রত্যেকের আপ্রাণ চেষ্টা করা উচিত।’
মুসলিম রাষ্ট্রগুলোতে মিশনারি প্রেরক সমিতির সভাপতি কিস জুয়াইমর মিশনারিদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে যে মন্তব্য করেন তা উদ্বেগজনক। তিনি বলেন, ‘আমাদের খ্রিষ্টান মিশনারিদের বড় উদ্দেশ্য এই যে, যেসব ছাত্র আমাদের স্কুল-কলেজ থেকে শিক্ষা সমাপন করে বের হচ্ছে তারা নিশ্চিতরূপে ইসলাম থেকে বের হয়ে গেছে, যদিও বের হওয়া আনুষ্ঠানিক নয়। অর্থাৎ নাম ও পরিচিতিতে খ্রিষ্টান না হলেও মন-মেজাজ, ধ্যান-ধারণা ও চিন্তা-চেতনা ইত্যাদিতে সে ইসলামবিমুখ হয়ে গেছে। বরং সে সম্পূর্ণ অজ্ঞাতে আমাদের মিশনের একজন বড় পৃষ্ঠপোষক। তার পক্ষ থেকে আমাদের অনিষ্ট হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই। সে আমাদের ও আমাদের মিশনের বিরুদ্ধে টুঁ-শব্দটিও করতে পারে না। এটা আমাদের সে সফলতা, দুনিয়ায় যার নজির নেই।’
ভয়াবহ পরিস্থিতির এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের মুসলমানদের দ্বীনের দাওয়াতি ও সেবাকাজের ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে বাস্তব কর্মসূচি হাতে নিতে হবে, যাতে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, উত্তরাধিকার ঐতিহ্য ও লালিত কৃষ্টি রক্ষা করা যায়। রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী, আলেমসহ সর্বস্তরের মুসলমানদের এ বিষয়ে সুচিন্তিত কর্মপন্থা নির্ধারণ করতে হবে। পার্বত্য এলাকায় ইসলামের দাওয়াতি তৎপরতা চালানোর জন্য টাস্কফোর্স গঠন করা সময়ের অপরিহার্য দাবি। যেসব মানুষ ইসলামের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে পুরনো ধর্ম ত্যাগ করেন, তারা পরিবার ও সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। তাদের স্থায়ী পুনর্বাসন, বাসস্থান, শিক্ষা ও জীবিকা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মজবুত ফান্ড গড়ে তুলতে হবে। অনেক সময় ধর্মান্তরিত মুসলমানদের ভিক্ষা করতে দেখা যায়। এটি বেদনাদায়কও বটে। ভারতীয় উপমহাদেশে ইংরেজ রাজত্বে খ্রিষ্টান মিশনারিদের অপতৎপরতার বিরুদ্ধে মাওলানা রহমতুল্লাহ কিরানবী রহ:, হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কি রহ:, আল্লামা কাছেম নানুতুভী (রহ:), মুন্সী মেহেরুল্লাহ (রহ:) ও পণ্ডিত রিয়াজুদ্দীন মাশহাদী রহ: যেভাবে বক্তৃতা, লেখনী ও কর্মকৌশলের মাধ্যমে আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন তা আমাদের জন্য প্রেরণার উৎস।
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক,
ওমর গণি এমইএস কলেজ, চট্টগ্রাম