২০২০ সালেই ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ!
২০২০ সালেই ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ! - ছবি : সংগৃহীত
কাশ্মির নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যে উত্তেজনা চলছে, তা ২০২০ সালেও প্রশমিত হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ, বরং এ নিয়ে দুই প্রতিবেশীর মধ্যে যুদ্ধও হয়ে যেতে পারে। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বেড়ে যায়, ৫ দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো একে অপরের বিরুদ্ধে আকাশযুদ্ধে নিয়োজিত হয়। ওই মাসেই ভারত অভিযোগ করে যে পাকিস্তানভিত্তিক একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ তাদের বাহিনীর ওপর আত্মঘাতী হামলা চালিয়েছে। এর বদলা নিতে কথিত সন্ত্রাসী আস্তানায় হামলা চালায় ভারতীয় বিমান বাহিনী। এরপর ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার কাশ্মিরের স্বায়াত্তশাসন বাতিল করে দেন। এতে পাকিস্তানি সরকার ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে। এসব ঘটনা দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্কের মারাত্মক অবনতি ঘটায়।
নতুন আইনগত মর্যাদা
ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরে ৩০ বছর ধরে চলা বিদ্রোহে সবচেয়ে বড় হামলাটি হয় ১৪ ফেব্রুয়ারি। ওই দিন এক আত্মঘাতী হামলাকারী ভারতের একটি আধা সামরিক বহরের ওপর চড়াও হয়। পুলওয়ামা জেলায় সংঘটিত ওই হামলায় আধাসামরিক বাহিনীর ৪০ জন সদস্য নিহত হয়। ভারত ওই হামলার জন্য জৈশ-ই-মোহাম্মদকে দায়ী করে। এর ১২ দিন পর তারা সীমান্ত অতিক্রম করে জৈশ-ই-মোহাম্মদের কথিত ঘাঁটিতে হালা চালায়। পর দিন পাকিস্তানও হামলার জবাব দেয়। দুই দেশের আকাশযুদ্ধে ভারতের একটি বিমান ভূপাতিত করে পাকিস্তান। ওই পাইলটকেও আটক করা হয়। ১ মার্চ ওই পাইলটকে মুক্তি দেয় পাকিস্তান। এর মাধ্যমে যুদ্ধের দ্বারপ্রান্ত থেকে ফিরে আসে দতুই দেশ।
পুলওয়ামা হামলাটি ঘটেছিল মোদির পুনঃনির্বাচনী প্রচারণার সময়। এর ফলে মোদি তার হাতে জাতীয় নিরাপত্তার মতো শক্তিশালী একটি ইস্যু পেয়ে যান। দেশের স্থবির অর্থনীতি থেকে নজর ফেরাতে সক্ষম হন তিনি। পরিণতিতে ওই নির্বাচনে বিপুল বিজয় পায় ভারতীয় জনতা পার্টি। ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর কংগ্রেস ছাড়া আর কোনো দল দেশের নিম্নকক্ষে পরপর দুবার একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করতে পারেনি।
দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় ফেরা নিশ্চিত করার পরপরই ৫ আগস্ট জম্মু ও কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করেন মোদি। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৭০ ও ৩৫ক বাতিল করার পাশাপাশি জম্মু ও কাশ্মিরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয় এবং উভয় অংশকেই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করা হয়। পাকিস্তান এই সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানায়। ইমরান খান বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যদি এতে হস্তক্ষেপ করতে না পারে, তবে এ নিয়ে পরমাণু শক্তিধর দেশ দুটির মধ্যে যুদ্ধও হতে পারে।
চলমান বিদ্রোহ
ফেব্রুয়ারির পর থেকে ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরে যেসব হামলা হচ্ছে তার বেশির ভাগই চালাচ্ছে তিনটি সংগঠন। এগুলো হচ্ছে জৈশ-ই-মোহাম্মদ, লস্কর-ই-তৈয়বা ও হিজবুল মুজাহিদিন। এই তিন সংগঠনের নেতারাই অবস্থান করছেন পাকিস্তানে। ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে তারা আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে। এসব হামলা অব্যাহত রয়েছে এবং এজন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে আসছে ভারত।
আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ
সন্দেহাতীতভাবে বলা যায়, ২০২০ সালে মোদির জন্য সবচেয়ে বড় নিরাপত্তাগত চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিরাজ করছে কাশ্মির পরিস্থিতি। ভারত সরকার ৩ ডিসেম্বর দাবি করেছে, নিয়ন্ত্রণ রেখা দিয়ে পাকিস্তান থেকে অনুপ্রবেশ বেড়েছে ৫০ ভাগ। এর ফলে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক হামলার আশঙ্কা বেড়ে যাচ্ছে। ভারত তার নিরাপত্তা বাহিনীর মৃত্যু ঠেকাতে নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর হামলা চালাতে পারে। আর তাতে করে পাকিস্তানও জবাব দিতে পারে।
বিজেপি নির্বাচনের সময় জম্মু ও কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তা করার মাধ্যমে বিজেপি ভারতের ভূখণ্ডগত ঐক্য সমুন্নত রাখার দিকে জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তবে তা করা হয়েছে বিপুল মূল্যে। কাশ্মিরে এখনো ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। সাবেক মুখ্যমন্ত্রীদের আটকে রাখা হয়েছে, অবাধে চলাচলের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে। এ ধরনের নিরাপত্তাগত সমস্যা সমাধান না করা ও স্বাভাবিক অবস্থায় না ফেরা পর্যন্ত মোদি যেভাবে কাশ্মিরে অভিবান ও বিনিয়োগ আশা করেছেন, তা হবে না। আর এর ফাঁকে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার সম্পর্ক অব্যাহতভাবে অবনতিই হতে থাকবে।
স্টার্টফর