এফএটিএফ : পাকিস্তানের কাছে ভারতের পরাজয়!
এফএটিএফ : পাকিস্তানের কাছে ভারতের পরাজয়! - ছবি : সংগৃহীত
প্যারিসে ১৬ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থা ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্সের (এফএটিএফ) সভায় পাকিস্তানের ‘গ্রে লিস্টে’ থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা ’৭৫ ভাগ’ বলে ভারত মনে করছে মর্মে মিডিয়ায় যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে তা দিল্লির পূর্ববর্তী প্রত্যাশার চেয়ে বেশ ভালো অবস্থান। ওই সময় ভারত মনে করেছিল যে অর্থ পাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়নের অভিযোগে ওই তালিকায় পাকিস্তান অতল গহ্বরে ঝুলতে থাকতে থাকতে ‘কালো তালিকাভুক্ত’ হয়ে পড়বে।
তবে সাম্প্রতি মাসগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্কে ইতিবাচক পরিবর্তন হওয়ার ফলে ভারতীয় কূটনীতির পায়ের তলা থেকে মাটি যে সরে গেছে, সেটা আর গোপন রাখা সম্পভব হয়নি। দিল্লি অনিচ্ছুকভাবে বাস্তবতার সাথে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা করছে।
অবশ্য ভারতীয় মিডিয়া পাকিস্তানের জন্য কল্যাণকর সবকিছুর জন্যই চীনকে কৃতিত্ব দিয়ে থাকে এবং ভারতের জন্য হওয়া সবকিছুর জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে ধন্যবাদ দিয়ে থঅকে। এ কারণে এফএটিএফে পাকিস্তানের বিপুল অগ্রগতির জন্য চীনা লবিকে কৃতিত্ব দিচ্ছে। সেইসাথে এফএটিএফ অভিজ্ঞ এক বেসরকারি পরামর্শদাতার কথাও উল্লেখ করছে।
পাকিস্তান যে তার এফএটিএফ অবস্থান উন্নয়তি করতে অনেক প্রয়াস চালিয়েছে, সেটা স্বীকার করার মতো মানসিক অবস্থা নেই ভারতের। এফএটিএফ এমন একটি কারিগরি সংস্থা এবং এর সদস্যদের নিজস্ব ধ্যান-ধারণা রয়েছে।
বৃহত্তর বাস্তবতার কারণে ভারতের স্বীকার করে নেয়া উচিত যে ২০১৫ সালের এফএটিএফের বিবৃতির পর থেকে ৩৯ জাতির এই গ্রুপে পাকিস্তানের অবস্থান ধীরে ধীরে উন্নতি হয়েছে। এফএটিএফ পাকিস্তানে যেসব মারাত্মক ত্রুটি রয়েছে বলে আগে জানিয়েছিল, দেশটি সেগুলো দূর করতে অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর ফলে গ্রুপটিতে পাকিস্তান আর আগের মতো চাপের মুখে নেই।
২০১৫ সালের প্রতিবেদনে পাকিস্তানকে এফএটিএফের নজরদারি প্রক্রিয়া থেকে বাদ দেযার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছিল। পাকিস্তানের মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৮ সালের ফেব্রুয়অরিতে এফএটিএফ দেশটির অর্থ পাচার রোধ ও সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন বন্ধবিষয়ক ব্যবস্থায় অনেক ত্রুটি পেয়েছিল। এসব থেকে উত্তরণের জন্য সংস্থাটি ২৭ দফা অ্যাকশন প্লান দিয়েছিল। এসব বাস্তবায়নের ওপরই নির্ভর করছিল পাকিস্তান গ্রে লিস্ট থেকে বাদ পড়বে কিনা। গত বছরের অক্টোবের পাকিস্তানকে আরেক দফা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলা হয় যে ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় সংস্থার বৈঠকে পাকিস্তানকে পূর্ণভাবে ওইসব বাস্তবায়নের বিষয়টি প্রদর্শন করতে হবে।
পাকিস্তানি প্রতিবেদনে দাবি করা হয় যে এখন দুটি শর্তে নেমে এসেছে। এর একটি হলো নগদ অর্থ পরিবহন ও সন্ত্রাসে অর্থায়নের মামলাগুলোতে শাস্তি প্রদানের বিষয়টি। এ দুটি বিষয়ে পাকিস্তান এখনো তেমন সাফল্য অর্জন করতে পারেনি। পাকিস্তানকে গ্রে লিস্ট থেকে বের হতে হলে ও দুটি বিষয়ে উন্নতি করার জন্য আরো তিন থেকে ছয় মাস সময় দেয়া হতে পারে।
গত সোমবার ভারপ্রাপ্ত সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যালিস ওয়েলেসের নেতৃত্বাধীন সফররত মার্কিন প্রতিনিধিদলের সাথে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আইজাজ শাহের বৈঠকের পর এই আশাবাদের সঞ্চার হয়। বলা হয় যে মার্কিন প্রতিনিধিদল সম্পদের সীমাবদ্ধতার মধ্যেও পাকিস্তান যে অগ্রগতি হাসিল করেছে তাকে খুশি।
ভারতের প্রেক্ষাপটে বলা যায় যে পাকিস্তানের জন্যই এটি বিপুল তাৎপর্যপূর্ণ বিষয। এফএটিএফ থেকে প্রত্যাশা অনুযায়ী পাকিস্তানকে যদি অব্যাহতি দেয়া হয়, তবে তা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের লড়াইকে বিপুলভাবে স্বীকৃতি দেয়া হবে। অন্য দিকে নয়া দিল্লি এখন প্রপাগান্ডার দিকে থেকে যে সুবিধাজনক অবস্থায় আছে, তা থেকে বঞ্চিত হবে।
এফএটিএফ নিয়ে ইতোমধ্যেই পাকিস্তানের ওপর মার্কিন চাপ হ্রাস পেয়েছে। অথচ ভারতীয় কর্মকর্তারা মনে করেছিলেন যে পাকিস্তানের গলার ওপর ছুড়ি ঝুলে আছে। এখন এখন দেখা যাচ্ছে, পাকিস্তানের গলা কাটার বিষয়টি ভাবছে না যুক্তরাষ্ট্র।
খুব সম্ভবত আফগানিস্তানের শান্তিপ্রক্রিয়ায় পাকিস্তানের সফলভাবে ভূমিকা রাখতে পারার কারণেই এমনটা ঘটেছে।
আসলে বাস্তবতার আলোকেই যুক্তরাষ্ট্র এমন অবস্থান গ্রহণ করেছে। অন্যদিকে ভারতের মনোভাব তার বদ্ধমূল ধারণার আলোকে গৃহিত।
পাকিস্তানের সাথে সংলাপ নিয়ে ভারতের অবস্থান ক্রমবর্ধমান হারে নাজুক হয়ে পড়ছে। আর এফটিএএফে পাকিস্তানের ভালো অবস্থানের কারণে ভারত অস্বস্তিতে পড়ে যাবে। ভারত এক দিকে বলছে যে কাশ্মির প্রশ্নে তারা তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্ততা মেনে নেবে না, আবার একইসাথে তারা বলে আছে যে সংলাপের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে সমস্যার সমাধানের জন্য তারা পাকিস্তানের সাথে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকেও বসবে না। এর ফলে ভারতের অবস্থানটি আসলে তার নিজস্ব সমস্যায় জর্জরিত থাকার ফুটিয়ে তুলছে। পাকিস্তান হলো ক্ষমতাসীন এলিটের প্রিয় হুইপিং বয়। একইসাথে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিখ্যাত লাইনটি উদ্ধৃতি করে বলা যায় যে ‘প্লাবনকে’ কোনোভাবেই পুনঃচিন্তাকে প্লাবিত করতে দেয়া হবে না। তবে ইন্দ্রপ্রস্তের প্লাবন হলো সুরক্ষিত জলাভূমি, এখানে ডিপ স্টেট প্রজনন ঘটায়, ব্যাঙের বিচরণ ঘটে।
ইন্ডিয়ান পাঞ্চলাইন