সদ্য-মায়েদের বিষণ্নতা : কিভাবে বুঝবেন, কী করবেন
সদ্য-মায়েদের বিষণ্নতা : কিভাবে বুঝবেন, কী করবেন - ছবি : সংগ্রহ
শিশুপ্রসবের পর অনেক মা কিছু দিনের জন্য মন খারাপে ভুগে থাকেন, কিন্তু প্রতি ১০ জনের মধ্যে একজন নতুন মা পোস্ট ন্যাটাল নামক ডিপ্রেশনে আক্রান্ত হন। একে পিএনডিও বলা হয়।
পোস্টন্যাটাল ডিপ্রেশন শুধু মন খারাপ নিয়েই আসে না, এর সাথে থাকে-
ষ ক্ষুধা থাকে না/রুচিহীনতা।
ষ মনকে সান্ত্বনা দেয়ার জন্য কখনো কখনো বেশি বেশি খাওয়া
ষ শিশুর সাথে মিশে নতুন জীবন উপভোগ করতে না পারা
ষ উদ্বিগ্নতা
ষ অপরাধবোধ
ষ একাকিত্বতার ভয়
ষ বেঁচে থাকার কোনো অর্থ খুঁজে না পাওয়া
মনের এ ব্যাধিটি সপ্তাহখানেক বা এক মাসও স্থায়ী হতে পারে এবং এটি শিশু প্রসবের এক থেকে ছয় মাসের মধ্যে যেকোনো সময় হতে পারে। কারণ এ মনোরোগের সঠিক কারণ এখনো জানা সম্ভব হয়নি। তবে কিছু কিছু ফ্যাক্টর এ সমস্যা হতে সাহায্য করতে পারে যেমন- আপনি অতীতের কোনো এক সময়ে ডিপ্রেশনে আক্রান্ত হয়েছিলেন। আপনার সমর্থন দেয়ার মতো কোনো আপনজন বা বন্ধু-বান্ধব নেই। আপনার শিশু অসুস্থ। আপনি যখন শিশু ছিলেন তখন আপনার মাকে হারিয়েছিলেন। অল্প সময়ের মধ্যে আপনার মধ্যে অনেক রকমের স্ট্রেস চলতে থাকে।
সাহায্য নেয়া
আপনার মনোরোগ চিকিৎসক আপনার ডিপ্রেশনের ব্যাপারে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবেন। আপনি যদি মনমরায় আক্রান্ত হন তাহলে কাউকে বলুন, বিশেষ করে আপনার আপনজনকে।
টকিং হেল্প বা কথাবার্তার মাধ্যমে সাহায্য
আপনি আপনার বন্ধু-বান্ধব বা প্রিয়জনের সাথে আপনার সুখ-দুঃখের কথা বলতে পারেন, আপনার আপনজনের সাথে কথা বলতে পারেন অথবা আপনার মনোচিকিৎসকের সাথে কথা বলতে পারেন।
কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি
আপনি কিভাবে নিজের সম্পর্কে ভাবেন এসব খোঁজখবর নেয়ার দ্বারা আপনার ডিপ্রেশনকে জয় করা যেতে পারে। অন্যান্য ধরনের থেরাপির মাধ্যমে জানা যাবে আপনার অতীত দিনের ডিপ্রেশনের কথা এবং আপনার ডিপ্রেশনকে বুঝতে সাহায্য পাওয়া যাবে। টকিং ট্রিটমেন্ট বা কথাবার্তার মাধ্যমে চিকিৎসা একেবারেই নিরাপদ। কিন্তু এগুলো কোনো কোনো সময় আপনার অতীত জীবনের করুণ স্মৃতিগুলো আপনার মনের মধ্যে জাগিয়ে দিতে পারে। একজন ভালো থেরাপিস্ট আপনাকে এর মাধ্যমে সাহায্য করতে সক্ষম হবেন।
অ্যান্টিডিপ্রেশান্টস আপনাকে সাহায্য করবে যদি আপনার ডিপ্রেশন মারাত্মক ধরনের হয়। অথবা অন্য থেরাপিতে যদি আপনার রোগের ভালো কোনো উন্নতি না হয় তখন ওষুধ আপনাকে সাহায্য করবে। তবে এখানে কথা হলো ওষুধের দ্বারা চিকিৎসায় একটু ধৈর্য ধরতে হয়, কারণ এ ক্ষেত্রে ভালো ফল পেতে কয়েক দিন লেগে যেতে পারে আর এ ধরনের ওষুধ কমপক্ষে চার থেকে ছয় মাস ধরে গ্রহণ করে যেতে হয়। তবে এগুলোর আবার কোনো কোনো সময় কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায় যেমন- উদ্বিগ্নতা, বমি বমি ভাব, ল্যাথারজি, মুখ শুষ্কতা। কিছু কিছু অ্যান্টিডিপ্রেশান্টস ওষুধ খাওয়ার সময়ও শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো যায়। এসব ওষুধ হঠাৎ খাওয়া বন্ধ করে দিলে কারো কারো বেলায় উইথড্রয়াল সিম্পটম বা ওষুধ প্রত্যাহারজনিত লক্ষণ দেখা যায়। তাই ওষুধ সরাসরি বন্ধ না করে প্রয়োজন হলে তা ধীরে ধীরে মাত্রা কমিয়ে আনতে হবে তারপর এক সমবন্ধ করা যেতে পারে।
টকিং ট্রিটমেন্ট বা কথাবার্তার মাধ্যমে চিকিৎসা এবং অ্যান্টিডিপ্রেশান্টস উভয়েই সমানভাবে কার্যকরী। কিন্তু অ্যান্টিডিপ্রেশান্টস খুবই উপকার করে যখন ডিপ্রেশন থাকে প্রচণ্ড মাত্রায় অথবা যদি তা দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকে। টকিং ট্রিটমেন্ট বা কথাবার্তার মাধ্যমে চিকিৎসা এবং অ্যান্টিডিপ্রেশান্টস চিকিৎসা দুটোই একসাথে রোগীর ওপর প্রয়োগ করা যায়।
আপনি সম্ভবত ভালোবোধ করবেন চিকিৎসা ছাড়াই অনেক মাস পর। তবে এ সময়ে হয়তো মারাত্মক কিছু ঘটে যেতে পারে, তাই চিকিৎসাহীন থাকা যুক্তিযুক্ত নয়। কারণ এ সময় আপনার দাম্পত্য জীবনে ফাটল দেখা দিতে পারে, আপনার কোলের শিশুর ক্ষতি হতে পারে। তাই ডিপ্রেশন যত তাড়াতাড়ি দূর করা যায় ততই মঙ্গল। চিকিৎসার ক্ষেত্রে কোনো রকম অবহেলা করা ঠিক নয়। কারণ অবহেলার অনেক কঠিন মূল্য হতে পারে।
সাপোর্ট
পোস্টন্যাটাল ডিপ্রেশন বা পিএনডি প্রতিরোধের তেমন কোনো ব্যবস্থা বা উপায় নেই, তবে কিছু কিছু বিষয় সাহায্য করতে পারে।
যা করবেন না
ষ সুপারওমেন হওয়ার চেষ্টা করবেন না।
ষ নিজেকে কাজকর্মে খুব বেশি ক্লান্ত করবেন না।
ষ যদি সম্ভব হয় গর্ভাবস্থার সময় অন্য বাড়িতে চলে যান, এক জায়গায় থাকার চেষ্টা
করবেন না এ সময়।
ষ নিজেকে দোষ দিতে যাবেন না।
ষ কারো সাহায্য নিতে ভয় পাবেন না।
যা করবেন
ষ যতটা সম্ভব বিশ্রাম নিন।
ষ ভালো ও সুষম খাবার খান
ষ আপনার স্বামীর সাথে আনন্দ ও ফুর্তি করতে চেষ্টা করুন।
ষ স্বামীর সাথে ঘনিষ্ঠ সময় কাটান।
ষ কথা বলার মতো আপনজনকে বেছে কথা বলুন।
ষ জেনারেল প্র্যাকটিশনার ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ রাখুন নিয়মিতভাবে।
ষ ভালো বইপুস্তক পড়ুন।
আপনি যদি পোস্টন্যাটাল ডিপ্রেশনে আক্রান্ত হয়েই যান বিচলিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। কারণ ভালো সাপোর্ট, কাউন্সিলিং এবং ওষুধ দ্বারা চিকিৎসার মাধ্যমে আপনি ভালো হয়ে উঠবেন। তবে এসব ক্ষেত্রে দেরি করা মোটেই উচিত হবে না। কারণ দেরি করা মানে রোগকে শুভেচ্ছাসহ গ্রহণ করে নেয়া।