আল্লাহর উপর ভরসা
আল্লাহর উপর ভরসা - ছবি : সংগৃহীত
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্তায়ালা বলেছেন: ‘মানুষ ভেবে দেখুক, একটা সময় তার অস্তিত্বের কথা কেউ কল্পনাও করেনি। আমি তাকে সামান্য এক ফোঁটা শুক্র থেকে সৃষ্টি করেছি। তাকে শোনার ও দেখার শক্তি দিয়েছি। এসব এ জন্যই করেছিল যেন তাকে পরীক্ষা করতে পারি।’ (সূরা দাহর, আয়াত :১-২)
কিছুই ছিলাম না থেকে এখন আমি অনেক কিছু হয়েছি। এই অনেক কিছুর পরও আবার কিছুই না-এর মতো জীবন-যাপন করতে পারলেই আল্লাহ্র পরীক্ষায় আমরা উত্তীর্ণ হতে পারব।
যখন মায়ের পেটে ছিলাম, তখন আমার কেউ ছিল না। শুধু আল্লাহ্ ছিলেন। আমি আর আমার আল্লাহ্। আল্লাহ্ খাইয়েছেন। আল্লাহ্ই আমার দেখভাল করেছেন। যখন মায়ের পেট থেকে ভূমিষ্ঠ হলাম, তখন যদিও বাবা-মা আমাকে লালন-পালন করেছেন, কিন্তু আমার শরীর-মন, দেহযন্ত্র সব কিছু আল্লাহ্র নির্দেশেই বেড়ে উঠেছে। একটা সময় বাবা-মায়ের কোল থেকে পৃথিবীর মাটিতে নেমেছি। ধীরে ধীরে অনেক বড় হয়েছি। এখন আমি নিজেই নিজের জন্য যথেষ্ট। হাঁটতে পারি। দৌড়াতে পারি। নিজের খাওয়া-পরার ব্যবস্থা নিজেই করতে পারিল বাইরে থেকে এমনটিই মনে হয়। আমার জন্য বুঝি আমিই যথেষ্ট। আসলেই কি তাই? না। আসলে তা নয়। মানুষ যত শক্তিশালীই হোক, যত উপকরণই তাকে ঘিরে থাকুক না কেন, সে নিজে কখনোই নিজের জন্য যথেষ্ট নয়। এ বড় নির্মম বাস্তবতা। (মানুষ যে নিজেই নিজের জন্য যথেষ্ট নয়,এ সত্য সে ভুলে যায়। ততক্ষণ সে ভুলে থাকে যতক্ষণ কোনও বিপদ তাকে স্পর্শ করে না। যতক্ষণ অসুস্থতা তার ওপর চড়াও হয় না। অভাব তার ঘরে হামলে পড়ে না। এমনিভাবে মানুষ যখন ছোট-খাটো বিপদে পড়ে তখন হাড়ে হাড়ে টের পায় তার শক্তি তার ক্ষমতা কিছুই নয়, সব মিছে। যারা মুমিন তারা সজাগ হন। সচেতন হন। আল্লাহ্র কাছে ফিরে আসেন। কান্নাকাটি করেন। হযরত ইউনুস নবী আ.-এর মতো বলে ওঠেন : ‘আপনি ছাড়া আমার আর কেউ নেই, নিশ্চয়ই আমি যালেম ছিলাম।’
বিপদ থেকে উদ্ধার হওয়ামাত্রই মানুষ আল্লাহ্কে ভুলে যায়। পবিত্র কুরআনের একাধিক আয়াতে আল্লাহ্ বলেছেন : ‘মানুষ অল্পতেই ঘাবড়ে যায়। যখন সে বিপদে পড়ে তখন মনেপ্রাণে আমাকে ডাকতে থাকে। যখন আমি তাকে বিপদ থেকে উদ্ধার করি, তখন সে এমনভাবে চলাফেরা করে, যেন কখনও সে বিপদেই পড়েনি আর আমাকে ডাকেওনি।’ (সূরা রূম, আয়াত : ৪৯)
এ ধরনের আচরণ যারা করে তারাই অকৃতজ্ঞ। বলা বাহুল্য, আমাদের আচরণ ঠিক এ রকমই। বিপদে না পড়া পর্যন্ত মনেই হয় না, আল্লাহ্ ছাড়া এক পাও সামনে এগোনোর শক্তি আমার নেই। আল্লাহ্ তাওফিক না দিলে পরের নিঃশ্বাসটুকুও নিতে পারব না।
একজন মুমিনের জীবনধারা তো এমন হওয়া উচিত নয়। সুস্থতা কিংবা অঢেল জীবনোপকরণ পেলে সে আল্লাহ্কে ভুলে যাবে আর বিপদে পড়লে কান্নাকাটি করে বুক ভাসাবে--- এটা মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয়। মুমিন সব সময় জানবে, আল্লাহ্ চেয়েছেন বলেই আমি সুস্থ আছি, বিপদমুক্ত আছি, ভালো আছি। যে মুহূর্তে প্রভুর রহমতের চাদর আমার থেকে সরে যাবে, সঙ্গে সঙ্গে আমার পুরো জীবন এলোমেলো হয়ে যাবে। তাই সব সময় নিজের ওপর নয়, প্রভুর রহমতের ওপর ভরসা করে চলতে হবে। মনেপ্রাণে সে এ কথাই বিশ্বাস করবে, হাসবুনাল্লাহা নি’মাল মাওলা ওয়া নি’মান নাসির। আমার জন্য আল্লহ্ই যথেষ্ট। তিনি কত চমৎকার বন্ধু! কত চমৎকার সাহায্যকারী!
যারা আল্লাহর ওপর ভরসা করে না, ভরসা করে নিজের ওপর, মানুষের ওপর, তাদেরকে আল্লাহ্ জিজ্ঞেস করছেন: বলো তো দয়াময় আল্লাহ্ ছাড়া আর কে তোমাদের বিপদ থেকে উদ্ধার করতে পারবে? এ সত্য যারা বুঝতে পারেন না তারা অলিক কল্পনায় ডুবে আছেন। (সূরা মুলক, আয়াত : ২০)
হ্যাঁ! যারা আল্লাহর ওপর ভরসা করার জীবনচর্চা করেন না– তারা সত্যিই অলিক কল্পনার জগতে বাস করছেন। হঠাৎ মুসিবতের ধাক্কায় তারা বাস্তবে ফিরে আসেন। তখন তারা বুঝতে পারেন আসলেই আল্লাহ্ ছাড়া কেউ নেই। কিছু নেই। আল্লাহ্ আমাদের তাওয়াক্কুল-নির্ভর জীবন-যাপনের তাওফিক দিন।
সূত্র : পূবের কলম