আল্লাহতায়ালা যে ৭টি গুণ পছন্দ করেন
আল্লাহতায়ালা যে ৭টি গুণ পছন্দ করেন - ছবি : সংগৃহীত
আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেছেন–
১. তাওবা (অনুতপ্ত হৃদয় ক্ষমা ভিক্ষা) ‘আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন, যারা তাঁর দিকেই (অনুতাপ ভরা হৃদয়ে) প্রতিনিয়ত ফিরে আসে। (সূরা আল বাকারাহ্, ২২২)
২. তাহারাত (পাক ও পবিত্র থাকা) ‘আল্লাহ তাদেরই ভালোবাসেন, যাঁরা নিজেদের পাক-পবিত্র রাখে। (সূরা আল বাকারাহ্, ২২২)
৩. তাকওয়া (পরহেজ্গার যারা প্রতিনিয়ত আল্লাহকে স্মরণ করে চলে) ‘আল্লাহ তাঁদেরই ভালোবাসেন, যাঁরা ইনসাফ-পসন্দ ও সংযমশীল। (সূরা আত্ তাওবা ৯৪)
৪. ইহসান (আল্লাহকে স্মরণ করে মানুষ বা জীবজগতের প্রতি দয়া ও করুণা) ‘আল্লাহ তাঁদেরই ভালোবাসেন, যারা ভালো কাজে নিয়ত থাকে। (সূরা আল ইমরান, ১৩৪)
৫. তাওয়াক্কুল (আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস ও নির্ভরতা) ‘আল্লাহ তাদেরই ভালোবাসেন, যারা তাঁর ওপর আস্থা রাখে ও নির্ভর করে। (সূরা আল ইমরান, ১৫৯)
৬. (ক) আদ্ল (ন্যায়বিচার) ‘আল্লাহ তাদেরই ভালোবাসেন, যারা সর্বদা ন্যায়বিচার করে।’ (সূরা মায়েদা, ৪২)
(খ) আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন, যারা সুবিচারকারী।
(সূরা হুজুরাত,৯)
৭. সবর (ধৈর্য্য) ‘আল্লাহ তাঁদেরই ভালোবাসেন, যারা দৃঢ়চিত্ত এবং ধৈর্য্যশীল (আস্-সাবিরিন)। (সূরা আল ইমরান ৩১৪৬)
আমানত রক্ষার ফজিলত
ফিরোজ আহমাদ
আমানত অর্থ গচ্ছিত রাখা। আমানতের বিপরীত অর্থ খিয়ানত করা। কারো কোনো সম্পদ গচ্ছিত রাখাকে আমানত বলে। যে আমানতের হিফাজত করে তাকে আল-আমিন বলা হয়। হজরত মুহাম্মদ সা: আমানতকারীদের সরদার। হজরত মুহাম্মদ সা:-এর কাছে শুধু মুসলমান নয়, অন্যান্য ধর্মাবলম্বীর লোকেরা তাদের মূল্যবান ধনসম্পদ আমানত রাখত। আমানত হিফাজতের জন্য কুরআন ও হাদিসে তাগিদ দেয়া হয়েছে। কুরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের আদেশ দিচ্ছেন আমানতসমূহ তার হকদারদের কাছে পৌঁছে দিতে’ (সূরা নিসা : ৫৮)। হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত, রাসূল সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তোমার নিকট আমানত রেখেছে; তার আমানত তাকে ফেরত দাও। আর যে ব্যক্তি তোমার আমানত আত্মাসাৎ করেছে, তুমি তার আমানত আত্মাসাৎ করো না’ (আবু দাউদ : ৩/৩৫৩৫)।
আমানত হিফাজতকারী ব্যক্তি হাশরের ময়দানে বিশেষ মর্যাদায় ভূষিত হবেন। হাশরের ময়দানে উপস্থিত অন্যান্য লোক দুনিয়ায় আমানত হিফাজতকারী ব্যক্তিদের দিকে তাকাতে থাকবে। একে অপরের নিকট আমানতকারী ব্যক্তিকে নিয়ে বলাবলি করতে থাকবে- তারা কে, তারা তো আমাদের সাথেই ছিল। আজ তারা আমাদের চেয়ে ভিন্ন স্থানে ও ভিন্ন মর্যাদার অধিকারী। হজরত আবু সাঈদ খুদরি রা: থেকে বর্ণিত, রাসূল সা: বলেছেন, ‘একজন সত্যবাদী ও আমানতদার ব্যবসায়ী আখেরাতে নবী-সিদ্দিক এবং শহীদগণের সাথে থাকবে’ (তিরমিজি : ৩/১২০৯)।
আমানত খিয়ানত করা মুনাফিকের আলামত। রাসূল সা: বলেছেন, ‘মুনাফিকের আলামত তিনটি : ১. যখন সে কথা বলে মিথ্যা বলে; ২. ওয়াদা করলে বরখেলাপ করে এবং ৩. আমানত রাখলে এতে খিয়ানত করে।’ (মিশকাত, পৃ. ১৭)। আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সা: মুনাফিকদের অপছন্দ করেন। কারণ, আমানত খিয়ানত করার মাধ্যমে ঈমান চলে যায়। এ জন্য কুরআন ও হাদিসে আমানত খিয়ানত না করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কুরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ ও রাসূলের খিয়ানত করো না। আর খিয়ানত করো না নিজেদের আমানতসমূহের, অথচ তোমরা জানো।’ (সূরা আনফাল : ২৭)। ‘নিশ্চয় আমি আসমানসমূহ, জমিন ও পর্বতমালার প্রতি এ আমানত পেশ করেছি। অতঃপর তারা তা বহন করতে অস্বীকার করেছে এবং এতে ভীত হয়েছে। আর মানুষ তা বহন করেছে। নিশ্চয়ই সে ছিল অতিশয় জলিল, একান্তই অজ্ঞ।’ (সূরা আহজাব : ৭২)। হজরত আনাস রা: থেকে বর্ণিত, রাসূল সা: বলেছেন, ‘যার মধ্যে আমানতদারি নেই, তার ঈমানও নেই। আর যে ওয়াদা পালন করে না তার মধ্যে দ্বীন নেই’ (আহমদ : ১/৮০৫)।
আমানতের হিফাজত করা মুমিনের বৈশিষ্ট্য। পরকালে সাফল্য লাভ করতে হলে আল্লাহ তায়ালার দেয়া আমানতের হিফাজত করতে হবে। যেমন- যৌবনের হিফাজত, চোখের হিফাজত, কানের হিফাজত, জবানের হিফাজত, হাত ও পায়ের হিফাজত ইত্যাদি। আল্লাহ তায়ালা সম্পদ দিয়েছেন, দ্বীনের পথে মানুষের কল্যাণে ব্যয় করার জন্য। তা না করে কেউ যদি অশ্লীল মন্দপথে সম্পদ ব্যয় করে; তাহলে সে আল্লাহর দেয়া আমানতের খিয়ানত করল। কুরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘যারা তাদের আমানত ও প্রতিশ্রুতির হিফাজত করে। যারা নামাজের ব্যাপারে যতœবান হয়। এ লোকগুলোই হচ্ছে (জান্নাতের) উত্তরাধিকারী। জান্নাতুল ফিরদাউসের উত্তরাধিকারও এরা পাবে; এরা অনন্তকাল (সেখানে) থাকবে’ (সূরা মুমিনুন : ৮-১১)।
লেখক : প্রবন্ধকার