প্রজন্মের ফেসবুক : শত্রু-মিত্র

প্রজন্মের ফেসবুক - ছবি : সংগ্রহ
ভার্চুয়াল অগ্রগতির বদৌলতে এখন প্রায় সবার প্রাত্যহিক যাপিত জীবনেই ফেসবুক, ভাইবার, ইমো, টুইটার, মেসেঞ্জারসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সাথে বেশ ওতপ্রোতভাবেই, মানুষ নিজেদের জড়িয়েছেন। বলা যায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সাথে আজকাল প্রায় সব বয়সীরই সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। বিশেষ করে নবপ্রজন্ম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর ওপর দিন দিন বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। ফলে তারা সবকিছুই ভার্চুয়াল দৃষ্টিকোণ থেকেই দেখে। এতে ভালো-মন্দ দুই দিকই রয়েছে। তবে এ দেশের বেশির ভাগ নেটিজেনরা এখনো অপরিপক্ব। গুজবে বিশ্বাসী।
হুট করেই আবেগপ্রবণ। আবার ঠিক কোনো কিছু বুঝার আগেই চরম উগ্র। যে উগ্রতা কখনো কখনো সামাজ, সংসার তথা রাষ্ট্রের জন্যও চরম হুমকি হয়ে দেখা দেয়। এমনকি তার পারিবারিক শিক্ষার প্রতিও প্রশ্নবোধক হয়ে পড়ে। ভার্চুয়াল অগ্রগতির সহজলভ্যতায় যেনতেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের কারণে ইদানীং মানুষ সাধারণ বিবেক, বুদ্ধি, বিবেচনা করার মতো মানসিকতা পর্যন্ত হারিয়ে ফেলছে। বাড়ছে সামাজিক অস্থিরতা। কমছে একে অপরের প্রতি সৌহার্দ্য, সৌজন্যতা। ফেসবুকের কল্যাণে সম্পূর্ণ অচেনা অজানা মানুষগুলো অল্পতেই হয়ে ওঠেন পরম আপন।
আর নিত্যদিন দেখা সাক্ষাৎ হওয়া চিরচেনা মানুষ, শুধু মাত্র লাইক-কমেন্টের বদৌলতে কখনো কখনো হয়ে যান চরম শত্রু। তবে ফেসবুক ব্যবহারে পাশে থাকা মানুষগুলোর ভেতরের রূপটা খুব ভালোভাবে বোঝা যায়। যে কারণে ফেসবুকের অপর নাম বলা যেতে পারে মনের আয়না।
একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী মনের অজান্তেই, সঙ্গীদের প্রতি তার ভেতরের মমতা, বন্ধুত্ব, ইতিবাচক বা নেতিবাচক বিষয়গুলো টাইমলাইন কিংবা কমেন্টে ফুটিয়ে তোলে। ফেসবুকের বহুবিদ নেতিবাচক দিক ছাড়াও ইতিবাচক অনেক দিকও রয়েছে। ফেসবুকের কল্যাণে অনেক গঠনমূলক সামাজিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়ে থাকে। ছোট্ট একটি পোস্টের কারণে দেশ ও জাতির বিশাল কল্যাণও বয়ে আনে। উপকৃত হয় অনেক দুস্থ ও অসহায় পরিবার।
আসুন জেনে নেয়া যাক, ফেসবুকে কী কী না করাই উত্তম।
১. হুটহাট পোস্ট দেয়া থেকে বিরত থাকুন।
২. কারো কোনো নেতিবাচক লাইক কমেন্ট দেখেই রিপ্লাই দেয়া থেকে বিরত থাকুন।
৩. যদি কোনো কারণে নেতিবাচক কমেন্টের রিপ্লাই দিয়েই ফেললেন, আর তার প্রতিউত্তর নোংরা ভাষায় আসে, তখন চুপ থাকাই শ্রেয়। নতুবা সেই বর্বর আপনাকেও তার পর্যায় নামিয়ে আনবে।
৪. কখনো কোনো স্ট্যাটাস বা কমেন্ট দিতে গিয়ে যদি ভুল করে ফেলেন, তাহলে তা শুরুতেই দুঃখ প্রকাশ করে উর্বর মানসিকতার পরিচয় দিন।
৫. খুব কাছের মানুষের ভেতরের কুৎসিত রূপটা যখন, ফেসবুকের বদৌলতে বুঝতে পারবেন, তখন তাকে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে নয়, সাক্ষাতে জানিয়ে দিন।
৬. আপনার পোস্টে কে বা কতজন লাইক কমেন্ট দিলো বা না দিলো, তা নিয়ে ভাবার চেয়ে আপনার পোস্ট সামাজিকমাধ্যমে কতটা গুরুত্ব বহন করল তা নিয়ে ভাবুন।
৭. অবসর সময়ে অনর্থক পোস্ট দিয়ে থাকলে, পরে তা সংশোধন বা মুছে দিন।
৮. অশালীন ভাষায় মন্তব্য করা, কারো সাথে তর্কে গেলেও এমন একটি মুহূর্তে তর্ক ছেড়ে দিন, যখন তার মন্তব্য নেটিজেনদের কাছে কুৎসিত মনের পরিচয় দেয়।
উল্লেখিত টিপসগুলো অনুসরণ করতে পারলে বর্তমান সময়ে ভার্চুয়াল জগতে যে অস্থিরতা তা অনেকাংশেই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে। মনে রাখতে হবে, শব্দ গঠনে সামান্য আকার, একার ভুলক্রমে না বসলেই সুন্দর একটি অভিব্যক্তির মন্তব্যও ভিন্নরকমভাবে উপস্থাপন হয়। সুতরাং ফেসবুক আসক্তি যেন মানসিক রোগের কারণ না হয়।