পরমাণু বোমা ব্যবহার কি সম্ভব
পরমাণু বোমা - ছবি : সংগৃহীত
মানুষের কিছু কিছু শখ থাকে যা আত্মঘাতী; যেমন সাপুড়ে সাপ পোষে। শুনেছি, সাপুড়ে নাকি সাপের কামড়েই মারা যায়। রাষ্ট্রীয়পর্যায়ে ঠিক তেমনি একটি শখ হলো, পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণ ও মজুদ করা। এটাকে ‘শখ’ বলছি এ কারণে যে, এর ‘ফেসভ্যালু’ ছাড়া আজ আর কোনো মূল্য আছে বলে মনে হয় না। বিশ্বযুদ্ধের শেষলগ্নে জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে এর প্রয়োগের পর খোদ যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়নও এর ব্যবহার সম্পর্কে ভয় পেয়ে গিয়েছিল। ১৯৬২ সালে কিউবা মিসাইল সঙ্কটকালে পারমাণবিক যুদ্ধ বেধে যাবে এমন বিরাট আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল। ব্রিটিশ দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেলের আন্তরিক ও সক্রিয় অনুরোধে তদানীন্তন সোভিয়েত নেতা নিকিতা ক্রশ্চেভ সাড়া দেয়ার ফলে সে আশঙ্কা বিদূরিত হয়। এর পরেও আমেরিকা ও রাশিয়া প্রচুর পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি ও মজুদ করেছে। বিশ্বে আরো নতুন নতুন দেশ এ অস্ত্র বানিয়েছে ও মজুদ করেছে। তৃতীয় বিশ্বের দু’টি বিবদমান দেশ, এ উপমহাদেশের ভারত ও পাকিস্তানও এর ব্যতিক্রম নয়।
এবার ভারতের নতুন সেনাপ্রধান জেনারেল মনোজ মুকুন্দ নারাভানে বলেছেন, কাশ্মিরের ‘নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর প্রি-এম্পটিভ স্ট্রাইক’ চালানোর অধিকার নয়া দিল্লির আছে।’ এর জবাবে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, পাকিস্তানের ভূখণ্ডের ভেতরে অথবা আজাদ জম্মু-কাশ্মিরে ভারতের যেকোনো আগ্রাসী তৎপরতাকে রুখে দেয়ার জন্য পাকিস্তান প্রস্তুত। ‘ক্রাইসিস’ গ্রুপ নামক একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা এই মর্মে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছে, কাশ্মিরে ভারতীয় বাহিনীর ওপর পুলওয়ামা স্টাইলে আবার কোনো হামলা চালানো হলে ভারত পাকিস্তানের ওপর আবার হামলা করতে পারে। ‘ক্রাইসিস গ্রুপ’ আরো বলেছে, ‘সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি যেটা হতে পারে, পারমাণবিক শক্তিধর দেশ দু’টি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে।’ যদি তা হয় তবে এটাই হবে পারমাণবিক অস্ত্রে সজ্জিত হওয়ার পর দু’দেশের মধ্যে প্রথম সর্বাত্মক যুদ্ধ। এর পরিণাম করত ভয়াবহ হবে তা বলা মুশকিল। সম্প্রতি ভারত-পাকিস্তান যথাযথ কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে ১৯৮৮ সালের ৩১ ডিসেম্বরে এ সংক্রান্ত বিষয়ে স্বাক্ষরিত চুক্তি মোতাবেক নিজ নিজ পরমাণু স্থাপনার তালিকা বিনিময় করেছে। পরমাণু স্থাপনায় হামলা নিষিদ্ধকরণ সংক্রান্ত চুক্তির আওতায় এ নিয়ে এই দু’দেশের মধ্যে ২৯তম বারের মতো এ তালিকা হস্তান্তর করা হলো এবার। উল্লেখ্য, দেশ দু’টি পরমাণুু শক্তিধর হওয়া সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত কোনো দেশই এনটিপিতে (পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি) স্বাক্ষর করেনি। এর অর্থ দাঁড়ায়, দেশ দু’টি ইচ্ছেমতো পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণ করে যেতে পারে।
পরমাণু স্থাপনার তালিকা বিনিময়ের অর্থ হলো, যেন উভয় দেশের মধ্যে যুদ্ধকালে এসব স্থাপনা ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। দেশ দু’টির সীমান্ত লাগোয়া এবং যুদ্ধকালে যেকোনো একটি দেশের পরমাণুু স্থাপনা ধ্বংস হলে উভয় দেশই এর মারাত্মক ক্ষতিকারক পরমাণু বিকিরণের প্রভাববলয়ের আওতায় চলে আসবে এবং ভয়ানকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সুতরাং সাবধান!
এর মানে কি এই দাঁড়ায় না যে, দেশ দু’টির মধ্যে পরমাণু অস্ত্র প্রতিযোগিতা নিরর্থক বিলাসিতা মাত্র? ভারত কি চীনের বিরুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করবে? সে অবস্থায় চীন কি তা কেবল চেয়ে চেয়ে দেখবে? পাকিস্তান কি ইসরাইলের বিরুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করবে? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কি তা হতে দেবে বা ইসরাইল কি তা চেয়ে চেয়ে দেখবে? এত গেল পাকিস্তান-ভারতের কথা। বিশেষজ্ঞদের বিশ্বে পারমাণবিক অস্ত্রে সজ্জিত দেশের সংখ্যা ১৫ থেকে ১৮তে দাঁড়াবে। তবে কথা এটাও ঠিক, বিশ্বে পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণ প্রতিযোগিতা কমে আসছে। কেউ কেউ বলছেন, বিশ্বশান্তি রক্ষার্থে বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশগুলোর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষার জন্য এই অস্ত্রের প্রয়োজন আছে। তবে এ যুক্তি যুদ্ধবাজদের বাইরে অনেকেই মানতে নারাজ।
অন্তত ৯টি দেশে পারমাণবিক অস্ত্রের মজুদ আছে। দেশগুলো হলো- যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, রাশিয়া, চীন, ভারত, পাকিস্তান, উত্তর কোরিয়া ও ইসরাইল। এদের কেউ কি কারো বিরুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের সাহস রাখে? অথচ এদের হাতে সর্বমোট ২৭ হাজার পারমাণবিক অস্ত্র মজুদ আছে, যা দিয়ে বহু বৈচিত্র্যপূর্ণ, এই সুন্দর পৃথিবীটাকে কয়েকবার ধ্বংস করা যাবে। কেউ এবং কোনো কিছুই তখন রক্ষা পাবে না। তথাপি পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণ প্রতিযোগিতা চলছে এবং ভবিষ্যতেও চলবে। এটা কি খেয়ালের বশে আত্মঘাতী শখের মহা পাগলামো নয়? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যে পরিমাণ পারমাণবিক অস্ত্র মজুদ আছে তার মূল্য প্রায় এক দশমিক দুই ট্রিলিয়ন ডলার, যা পাকিস্তানের মোট জাতীয় উৎপাদন, এক ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের চেয়ে শূন্য দশমিক দুই ট্রিলিয়ন বা দুই শ’ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বেশি।
সারা বিশ্বে মজুদ করে রাখা পারমাণবিক অস্ত্রের মূল্য যদি আনুমানিক ৫.০ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারও ধরা হয়, তা হবে ভারতের জাতীয় উৎপাদন ২.৬ ট্রিলিয়ন ডলারের প্রায় দ্বিগুণ। এই পরিমাণ অর্থ দিয়ে পৃথিবীর দারিদ্র্য বিমোচন করে বিশ্বশান্তির পথ সত্যিই সুগম করা যেত। বিশেষজ্ঞদের মতে বিশ্বদারিদ্র্য বিমোচনে ১৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার কিংবা বিশ্বসামরিক ব্যয় ১.৮ ট্রিলিয়নের ১০ শতাংশ যা ০.১৮ ট্রিলিয়ন বা ১৮০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হলেই যথেষ্ট। এরপর বিশ্বে হানাহানি থাকার কোনো কথা ছিল বলে মনে হয় না। কিন্তু বিশ্বনেতারা সে পথে হাঁটছেন না। শখের অস্ত্র প্রতিযোগিতার পাগলা ঘোড়া সামনের দিকে দৌড়ে চলেছে উন্মত্তের মতো। টেনে ধরার মতো কেউ নেই। বিশ্ব যদি দারিদ্র্য-ধনবৈষম্যমুক্ত হয় তা হলে বিশ্বে শক্তির ভারসাম্য ফিরে না আসার কোনো কারণ থাকে না। আর যে গ্লোবাল ভিলেজের কথা বলা হচ্ছে, তা-ও বাস্তবায়িত না হওয়ার কোনো কারণ নেই।
শুরুতে বলেছি পারমাণবিক অস্ত্রে সজ্জিত হওয়া একটি শখ। এ কথা স্বীকার করেও বলতে হয় বর্তমান বিশ্বপরিস্থিতিতে কোনো পারমাণবিক শক্তিধর দেশের অসদাচরণের জবাবে অন্য কোনো একটি দেশ একই রকম অস্ত্র নির্মাণে বাধ্য হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র এবার ড্রোন হামলা করে ইরানের কুদস বাহিনী কমান্ডার জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে হত্যা করায় ২০১৫ সালের ঐতিহাসিক পরমাণু চুক্তি আর না মানার ঘোষণা দিয়েছে তেহরান। অবশ্য ২০১৮ সালেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই চুক্তিটি ‘ত্রুটিপূর্ণ ও একপেশে’ বলে অভিযোগ তুলে তা থেকে সরে এসে ইরানের ওপর আবার ব্যাপক অবরোধ আরোপ করেছেন। তারপর এবারই প্রথম ইরান ঘোষণা দিল যে, তারা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করবেন। এই ঘোষণায় আঞ্চলিক প্রতিপক্ষ ইসরাইলের সাথে ইরানের উত্তেজনা আরো তুঙ্গে উঠল। কারণ ইসরাইল প্রতিজ্ঞা করেছে, তারা ইরানকে কখনোই পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে দেবে না। এতে বোঝা যায়- পারমাণবিক অস্ত্রের আসল বিপদটি কোথায়।
কেবল সমরাস্ত্র নির্মাণের কাজে কেন, পারমাণবিক শক্তি নানা চিত্র শান্তিপূর্ণ কাজে ব্যবহারও বিপজ্জনক প্রমাণিত হয়েছে। ২৬ এপ্রিল ১৯৮৬ সালে অধুনালুপ্ত সোভিয়েট সোস্যালিস্ট রিপাবলিকের (বর্তমান ইউক্রেনের) চেরনোবিলের নিওক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্টে যে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে গেল, তাতে তাৎক্ষণিকভাবে ১৩৪ জনকে রেডিও অ্যাকটিভ সিনড্রোমজনিত কারণে হাসপাতালে স্থানান্তরিত করতে হয় এবং এদের মধ্যে ২৮ জন এক মাসের মধ্যে মৃত্যুবরণ করেন। পরবর্তী ১০ বছরের মধ্যে ১৪ জন রেডিও-ইন্ডাকটেড ক্যান্সারে মৃত্যুবরণ করেছেন। সে ঘটনার পর ১১৭,০০০ লোককে ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে সত্য, তবে এর ফলে নানাবিধ জটিলতা থেকে তারাও রক্ষা পাননি। এ ছাড়াও ইউরোপের প্রায় ১৩টি দেশ এ ঘটনার দ্বারা আক্রান্ত হেেয়ছে এবং সেসব দেশে বিভিন্ন রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। আরেকটি পারমাণবিক দুর্ঘটনা ঘটে যায় ১১ মার্চ, ২০১১ সালে জাপানে সুনামিসংবলিত এক ভূমিকম্পের ফলে। এটা ফুকোশিমা ডেইচি নিউক্লিয়ার ডিজেস্টার নামে অভিহিত। এখান থেকেও বহু লোককে অপসারণ করে নেয়া হয়েছে। তবে এর সুদূরপ্রসারী বিরূপ প্রতিক্রিয়া, যেমন থাইরোয়েড ক্যান্সারসহ নানাবিধ রোগ থেকে সেখান থেকে সরিয়ে নেয়া শিশুরা রেহাই পায়নি।
১৯৭১ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে পরাজয়ের পর পাকিস্তানের চতুর্থ প্রেসিডেন্ট (১৯৭১-১৯৭৩) জুলফিকার আলী ভুট্টো বলেছিলেন ‘ঘাস খেয়ে হলেও আণবিক বোমা তৈরি করব’। এর কিছু দিন পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ১৯৭৪ সালে প্রথম সফল পারমাণবিক মারণাস্ত্র পরীক্ষা করেন। এর দু’যুগ পর অবশ্য ১৯৯৮ সালেও ভারত পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা চালায়। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ ১৯৯৭ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে ১৯৯৮ সালে প্রথম এ অস্ত্র পরীক্ষা করেন। এ পর্যন্ত ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশই একাধিকবার পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা করেছে।
এ দু’টি দেশের সরকার তাদের পারমাণবিক অস্ত্রের মজুদ সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে অনুমান করা হয় ভারতের হাতে ১৩০ থেকে ১৪০টি এবং পাকিস্তানের হাতে ১৪০ থেকে ১৫০টি পারমাণবিক বোমা আছে। দক্ষিণ এশিয়ার এ দু’টি দরিদ্র দেশে এটা এক বিশাল বোঝা। সম্প্রতি এ দু’দেশের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে পারমাণবিক স্থাপনার তালিকা বিনিময়ের মধ্যে দিয়ে একটি বিষয় পরিষ্কার হয়েছে যে, তাদের পারমাণবিক অস্ত্রের স্থাপনা ও ভাণ্ডার নিয়ে নিজেরা বেশ উদ্বিগ্ন। ‘নিরাপত্তার’ খাতিরে পারমাণবিক অস্ত্রের যে ‘মণি হার’ দেশ দু’টি গলায় পরেছে, তা যেন গলার ফাঁসে পরিণত হয়েছে। এটা রবি ঠাকুরের- ‘এ মণিহার আমায় নাহি সাজে’ গানটির কথা মনে করিয়ে দেয়। এ গানেরই পরের লাইন- ‘এরে পরতে গেলে লাগে, এরে ছিঁড়তে গেলে বাজে/ কণ্ঠ যে রোধ করে, সুর তো নাহি সরে -/ ওই দিকে যে মন পড়ে রয়, মন লাগে না কাজে’। প্রচলিত প্রবাদে এটাকে বলা যায়, ’গরিবের ঘোড়ারোগ’।
জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকি থেকে যদি কোনো দেশ শিক্ষা নিয়ে থাকে তবে পৃথিবীর কোনো পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশ তা যুদ্ধে প্রয়োগ করবে বলে মনে হয় না। যদি কেউ তা করেও, তবে আপন প্রাণটি হাতে নিয়েই করতে হবে। এরপরও বিশ্বে মানববিধ্বংসী এই অস্ত্রের বিপুল ভাণ্ডার শুধু নিরর্থকই নয়, বিরাট বিপজ্জনকও বটে। পারমাণবিক অস্ত্রের ভাণ্ডার গড়ে তুলতে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়েছে এর তুলনায় অনেক অল্প খরচে পৃথিবীকে দারিদ্র্যমুক্ত করা যায়। কেবল তখনই প্রতিষ্ঠিত হতে পারে বিশ্বশান্তি। বিশ্বের রাজনৈতিক নেতারা তা বুঝেও উল্টো কাজ করছেন। তাই জর্জ বার্নার্ড শ-এর ভাষায় বলতে হয়, ‘politics is the last resort for the scoundrel’ দেখা যাচ্ছে, উক্তিটিই সঠিক!
পৃথিবীর সব শুভবুদ্ধিসম্পন্ন সভ্য লোক পারমাণবিক অস্ত্রের বিলোপ চায়। তবু তার বিলোপ হচ্ছে না। যুদ্ধবাজ নেতা ও জেনারেলরা কি এতই শক্তিধর যে, বিপজ্জনক অস্ত্রটির মজুদ বাড়তেই থাকবে এবং কোনো দিনই এর বিলোপ হবে না? মনে হয়, তা নয়। বর্তমান বিশ্বে পারমাণবিক অস্ত্রের ভাণ্ডার বৃদ্ধির হার কমে এসেছে। এর বিরুদ্ধে জনমতও বাড়ছে। আমরা আশা করতেই পারি, এর মজুদও একদিন শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে। বিশ্বব্যাপী মানুষ আজ সজাগ ও সচেতন হচ্ছে। বিংশ শতাব্দীতে দু-দু’টি বিশ্বযুদ্ধ ঘটার ফলে ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যবাদের কাল আজ আর নেই। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশ এখন স্বাধীন এবং একের ওপর অপরের বাণিজ্যিনির্ভরতা ব্যাপক। দেশে দেশে দারিদ্র্যবিমোচন এবং উন্নয়নের যুগ এটা। আজকের যুগে মানুষ আর যুদ্ধ চায় না। তাই সভ্য মানুষের আকাক্সক্ষার জয় অচিরেই ঘটবে এবং পারমাণবিক অস্ত্রের ভাণ্ডার সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হবে।
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও ভাইস প্রিন্সিপাল, কুমিল্লা মহিলা সরকারি কলেজ