হান্টিংটনের নীতির বাস্তবায়ন!
হান্টিংটনের নীতির বাস্তবায়ন! - ছবি : সংগ্রহ
ইতিহাসের আদিকাল থেকে মানুষে মানুষে, জাতিতে জাতিতে, গোত্রে গোত্রে সংঘর্ষ, হত্যা-নির্যাতনের সাথে মানবজাতি পরিচিত। এসব আত্মহননকারী ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড কখন মানবসমাজে প্রবর্তিত হলো তা নির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা কঠিন। কখন এ পৃথিবীতে মানুষ অত্যাচারীকে অত্যাচার করতে, সবলকে দুর্বলের সর্বস্ব লুণ্ঠন করতে দেখেছে; তাও অজানা। অত্যাচার ও আত্মহননের এ কাহিনী ইতিহাসে কখনো সাম্রাজ্যবাদ, কখনো উপনিবেশবাদ, আবার কখনো বিশ্বায়ন হিসেবে পৃথিবীতে প্রবর্তিত হয়েছে। তাই Survival of the fittest-এর মূলমন্ত্রে উদ্বুদ্ধ হয়ে এ পৃথিবীতে তাদের জয়যাত্রার বিজয় কেতন উড়াতে দেখা যায়।
সাম্রাজ্যবাদ, তা যেকোনো পরিমণ্ডলে এবং যেকোনো আকৃতিতে হোক, জুলুম ও অত্যাচারের ওপর ভিত্তি করেই প্রতিষ্ঠিত। ভিন্ন ও অসহায় জাতিকে গোলাম বানানোর পরিকল্পনা, দুনিয়াকে অধীন করার উচ্চাভিলাষ এবং অন্যের ওপর স্বীয় সভ্যতা-কৃষ্টি চাপিয়ে দেয়ার বাসনা ও শোষণ প্রাচীনকাল থেকে চলে আসছে। মহাবীর আলেকজান্ডার প্রাচীন দুনিয়াকে পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত ‘গ্রিস’ বানানোর সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। বিশ্বের প্রতি কোণে গ্রিক সভ্যতার রাজত্ব চলবে, এটাই ছিল তার স্বপ্ন। আলেকজান্ডারের পর রোমান সাম্রাজ্য সামরিক শক্তির বলে গোটা দুনিয়ায় নিজেদের সভ্যতা ও সংস্কৃতি চালু করতে চেয়েছিল।
রোম ও পারস্যের মাঝে দীর্ঘ যুদ্ধের মূল কারণ ছিল নিজ নিজ দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠা করা। তদানীন্তন বিশ্বের এ দুই পরাশক্তি স্বীয় আধিপত্য ও দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠা করার জন্য পরস্পর লড়াই করেছিল। কিন্তু ইসলামের আগমন এ দুই পরাশক্তির অহমিকা ধুলায় মিশিয়ে দিয়ে পৃথিবীর বুকে এক নতুন আবহ সৃষ্টি করে। ফলে ইউরোপের বুকে খ্রিষ্টীয় যাজকরা এ নতুন সভ্যতার জোয়ারকে স্তিমিত করতে ক্রুসেড নামে সাম্প্রদায়িক উন্মাদনার সৃষ্টি করে। ইউরোপের রাজরাজড়া আর সামন্ত প্রভুরা কথিত এ ধর্মযুদ্ধে প্রধান চালিকাশক্তি ছিল। তারা প্রায় তিন শ’ বছর ইউরোপ ও এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে সঙ্ঘাতের মাধ্যমে হত্যাযজ্ঞ, রক্তপাত ও লুণ্ঠনের এক বীভৎস অধ্যায় রচনা করে। এটা ছিল খ্রিষ্টীয় ইউরোপের ধর্মান্ধতার ফল এবং পরিকল্পিত সন্ত্রাসবাদের অপচেষ্টা। এরপর, ১৫০০ শতকের পরবর্তীকালে ইউরোপে শিল্পবিপ্লব আরম্ভ হয়। তখন কারিগরি জ্ঞানের প্রসারে নিত্যনতুন যন্ত্র চালু এবং কলকারখানা প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে। দেশে দেশে বিপুল পণ্যদ্রব্য তৈরি হতে থাকে। এসব পণ্যের জন্য প্রয়োজন হয়ে পড়ে কাঁচামাল এবং ফিনিশড গুডসের বাজার।
ইতোমধ্যে স্টিম ইঞ্জিন আবিষ্কার হওয়ায় মানুষের গতিবেগ বৃদ্ধি পায়। জাহাজে এ ইঞ্জিন ব্যবহার করে ইউরোপের মানুষ দূর-দূরান্তে কাঁচামাল সংগ্রহ এবং কারখানায় তৈরী পণ্যের বাজারজাতকরণের জন্য বাজারের অনুসন্ধানে দিগি¦দিক ছুটতে থাকে। তাদের যান্ত্রিক প্রাধান্যের জন্য তারা দুনিয়ার বুকে উপনিবেশ স্থাপনে কৃতকার্য হয়। ইংরেজ, ফরাসি, ওলন্দাজ, বেলজিয়ান, ইতালিয়ান, জার্মান, স্প্যানিশ ও পর্তুগিজরা সাম্রাজ্যবাদের পুরোধা হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করে। এ দিকে, আমেরিকা মহাদেশ আবিষ্কৃত হলো। সে দেশের মানুষদের, যারা ছিল আদি বাসিন্দা, নিষ্ঠুরভাবে হত্যা ও নির্যাতনের মাধ্যমে প্রায় নিশ্চিহ্ন করে ফেলা হয়। এ নতুন উপনিবেশে কৃষিকাজ ও বসতি স্থাপনের জন্য আফ্রিকা মহাদেশ থেকে প্রায় ১৪ মিলিয়ন মানুষকে গোলাম বা দাস বানিয়ে আমেরিকায় নিয়ে মানবেতর জীবনযাপনে বাধ্য করা হয়। মোট কথা, সমগ্র আফ্রিকা, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য, পশ্চিম এশিয়া, পূর্ব এশিয়া ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো সাম্রাজ্যবাদের শিকার হয়েছিল। তাই বলা যায়, ঊনবিংশ শতাব্দী হলো, সাম্রাজ্যবাদী শক্তির উত্থানের কাল। কিন্তু বিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভে সাম্রাজ্যবাদের সূর্য অস্তগামী হতে শুরু করে। প্রথম ও দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে নিজেদের উপনিবেশগুলোর ওপর থেকে তাদের হাতের মুঠো ফসকাতে থাকে। অপর দিকে, পুঁজিবাদী শোষণের বিরুদ্ধে এক নতুন আদর্শের আবির্ভাব হলো, যা কমিউনিজম বা সাম্যবাদ নামে পরিস্থিতি লাভ করে। প্রথম মহাযুদ্ধের সময় ১৯১৭ সালে রাশিয়ার জারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে লেনিনের নেতৃত্বে রাশিয়ায় বলশেভিক বিপ্লব সফল হয়।
দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সমাপ্তিলগ্নে যখন ‘অক্ষশক্তি’ সম্পূর্ণ পর্যুদস্ত এবং মিত্রশক্তির ইউরোপীয় অংশীদাররা রণক্লান্ত, তখন যুক্তরাষ্ট্র জাপানের নাগাসাকি ও হিরোশিমায় পারমাণবিক ধ্বংসযজ্ঞের মাধ্যমে নিজেদের পৃথিবীর একমাত্র সুপার পাওয়ার হিসেবে জানান দিয়ে বিশ্বে আবির্ভূত হয়। তারা তখন বেপরোয়াভাবে পৃথিবীর বুকে কর্তৃত্বের ছড়ি ঘোরানো আরম্ভ করে। তখন প্রতিদ্বন্দ্বী কমিউনিস্ট রাশিয়া যুদ্ধের ধকলে ধুঁকছিল। কিন্তু এ অবস্থা বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। অল্প কিছু দিনের ব্যবধানে রাশিয়া পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণের মাধ্যমে আরেক প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করে এবং যুক্তরাষ্ট্রের একক সুপার পাওয়ার হওয়ার দাবির প্রতি চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হয়। তখন থেকে এ দুই পরাশক্তি নিজেদের প্রভাব বিস্তারে লিপ্ত হয়ে পড়ে।
এ পরাশক্তি দু’টি পরস্পরের বিরুদ্ধে দু’টি সম্পূর্ণ বিপরীত আদর্শের প্রতিনিধি হিসেবে পৃথিবীতে ‘ঠাণ্ডা’ যুদ্ধের আমেজ সৃষ্টি করে। এ অবস্থা প্রায় সত্তর বছর বাঘে-মোষে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাধ্যমে পৃথিবীর বুকে এক অনিশ্চিত অবস্থার সৃষ্টি করে। গত শতকের নব্বইয়ের দশকের প্রারম্ভে সোভিয়েত মহারাষ্ট্রের পরিসমাপ্তির পর যুক্তরাষ্ট্র একক পরাশক্তি হিসেবে পদচারণা পুনরারম্ভ করে। ইতোমধ্যে আমেরিকার বিশিষ্ট চিন্তাবিদ স্যামুয়েল হান্টিংটন এক নতুন ঠাণ্ডা বা স্নায়ুযুদ্ধের বার্তা দিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতার এক নব্য মতবাদ প্রচার করেন, যাকে তিনি ঈষধংয ড়ভ ঈরারষরুধঃরড়হ হিসেবে নামকরণ করেছেন।
হান্টিংটন বলতে চেয়েছেন, ঠাণ্ডা যুদ্ধ অবসানের পরবর্তীকালে নতুনভাবে যে প্রভাব বিস্তারের লড়াই শুরু হচ্ছে বিশ্বের বুকে, সে লড়াই হবে পাশ্চাত্য শক্তির সাথে প্রাচ্যের সভ্যতার লড়াই। তিনি মনে করেন, ‘যদিও আগামীতে পাশ্চাত্য বহুদিন প্রভাবশালী সভ্যতা হিসেবে টিকে থাকবে, কিন্তু তারা তাদের ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি অন্য সভ্যতার কাছে হারাতে থাকবে। আর এ সময় মুসলিম সভ্যতা সর্বব্যাপী অগ্রসরমান থাকবে। এ সময় পাশ্চাত্যের নেতৃত্বে থাকবে যুক্তরাষ্ট্র।’ তার এ বক্তব্যকে লুফে নেয় যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতাসীনরা বিশেষ করে বুশ (সিনিয়র ও জুনিয়র) আমলে। তারা মুসলমানদের প্রধান টার্গেট বানিয়ে তাদের ‘শায়েস্তা’ করার প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন শুরু করে। এর প্রতিফলন দেখা যায় ইরাক-ইরান যুদ্ধে আর ইরাক ও আফগানিস্তানে ধ্বংসতাণ্ডব পরিচালনায়। অপর দিকে, ইহুদি ইসরাইলের পারমাণবিক বোমা এবং মুসলিম ফিলিস্তিনিদের ওপর তাদের অকথ্য অত্যাচারের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের মৌন সম্মতি মধ্যপ্রাচ্যে এক ভারসাম্যহীন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের সৃষ্টি করে। তারা ‘ওয়ার অন টেরর’ ও বিশ্বায়নের নামে প্রাচ্যে আগ্রাসী তৎপরতা শুরু করে।
বিশেষ করে মুসলিম বিশ্ব তাদের হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। ইতিহাস বিকৃত করে পাশ্চাত্যের খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী কিছু লোকের হিংসাত্মক সন্ত্রাসী কার্যক্রম, অত্যাচার, রক্তপাতের ইতিহাস বিকৃতি করে মুসলিম সভ্যতার বিরুদ্ধে অসত্য কথনে লিপ্ত হয়। এজন্য যেমন তারা অতীতে নানা স্লোগানের সৃষ্টি করেছিল, তেমনি এবারো স্লোগান সৃষ্টির মাধ্যমে তাদের বিদ্বেষমূলক ষড়যন্ত্র কার্যকর করা আরম্ভ করে। All Muslims are not terrorists, but most of the terrorists are Muslims, war on terror ইত্যাদি সব স্লোগান দিয়ে পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রগুলো বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র মুসলমানদের সন্ত্রাসবাদী বা টেররিস্ট হিসেবে চিহ্নিত করতে চাচ্ছে, যেমনটি বলা হয়ে থাকে Give the dog abad name and kill it.
গত দশকে আশির দশকের শেষের দিকে কমিউনিস্ট সাম্রাজ্যের পতন ঘটতে থেকে এবং মার্কিনিরা বিশ্ব-মোড়ল হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে লাগল। তখন পৃথিবীর বুকে তিনটি শক্তি তৎপর ছিল- ১. পাশ্চাত্যের সাম্রাজ্যবাদ, ২. কমিউনিস্ট ব্লক এবং ৩. ‘তৃতীয়’ বিশ্ব। কমিউনিস্ট ব্লকের মূলোৎপাটনের পর মানবজাতির বিভক্তির ভিত্তি আর আদর্শ রাজনীতি বা অর্থনীতি রইল না; বরং মানবজাতি নিজেদের সভ্যতা সংস্কৃতির নিরিখে নিজেদের পরিচিত করা আরম্ভ করে। জাতিগুলো পূর্বপুরুষদের পরিচয়ে নিজেদের প্রকাশ করতে শুরু করল। ধর্ম, ভাষা, মূল্যবোধ, রীতিনীতি প্রতিষ্ঠান এবং সভ্যতা তাদের পরিচিতির ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত হতে লাগল। আগের মতো রাষ্ট্রের যুথবদ্ধতা তিনটি ব্লকে সীমাবদ্ধ রইল না; বরং তা পৃথিবীর ৭-৮টি সভ্যতায় বিভক্ত হয়ে যায়। অপশ্চিমা দেশগুলো অর্থনৈতিক উন্নতি করতে থাকে, বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো। তারা পাশ্চাত্যের পতিত সাংস্কৃতিক মূল্যবোধগুলো প্রত্যাখ্যান করতে লাগল।
বর্তমানে নতুন পৃথিবীতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো মানবজাতির দ্বন্দ্ব-সংঘর্ষ সামাজিক শ্রেণী বিভাজনের কারণে হচ্ছে না। অর্থাৎ, ধনী-দরিদ্র অথবা অন্যান্য অর্থনৈতিকভাবে চিহ্নিত বিভাজিত মানুষের মধ্যে হচ্ছে না। তা হচ্ছে সাংস্কৃতিক মূল্যবোধে বিভাজিত মানুষের মাঝে। সার কথা হলো, বর্তমান স্নায়ুযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে পৃথিবী তিনটি ব্লকের পরিবর্তে সাতটি সভ্যতা ও বিভিন্ন ধরনের স্বার্থের অনুকূলে বিভক্ত হয়ে গেছে। গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলো বিভিন্ন সভ্যতার অংশ।
প্রতিটি সভ্যতা প্রধানত একে অপর থেকে ভিন্ন। তাই প্রতিটি সভ্যতা একে অপর থেকে প্রধানত অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অবস্থানে ভিন্ন। ক্ষমতার বলয় পশ্চিমা দেশগুলো থেকে অপশ্চিমা দেশগুলোতে সরে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক রাজনীতিও তাই মাল্টিপোলার থেকে মাল্টি সিভিলাইজেশনাল বা বহু মেরু-কেন্দ্রিক হয়ে যাচ্ছে। প্রায় সব আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বা বহু সত্যতাভিত্তিক রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ স্বীকার করেন, ইসলামী সভ্যতা অপর সব সভ্যতা থেকে ভিন্ন। সপ্তম শতকে আরব উপদ্বীপে শেষ ও শ্রেষ্ঠ নবী হজরত মুহাম্মদ সা: ইসলাম ধর্ম প্রচার করেছিলেন। সাম্য, মৈত্রী ও একত্ববাদের ধর্ম ইসলাম অতি দ্রুত উত্তর আফ্রিকা থেকে শুরু করে ইউরোপের আইবেরীয় উপদ্বীপ এবং পূর্ব দিকে মধ্য এশিয়া, ভারতীয় উপমহাদেশ হয়ে পূর্ব-দক্ষিণ এশিয়া পর্যন্ত প্রসার লাভ করে।
দীর্ঘকাল ঔপনিবেশিক শাসনের অধীনে থাকার পর এসব মুসলিম ঔপনিবেশিক শাসকের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে থাকে এবং দলে দলে মানুষ বিভিন্ন দেশে ইসলামে দীক্ষিত হতে থাকে। ইসলামের এ পুনরুত্থান, মুসলিম সমাজে নবদীক্ষিতদের ইসলামী জীবনবিধানের প্রতি আকর্ষণ এবং মুসলিম দেশগুলোতে যুবকদের সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে মুসলমানদের মাঝে নবজাগরণ সৃষ্টি হয়। ১৯৭০-এর দশক থেকে মুসলমানদের ইসলামিক প্রতীক ব্যবহার, বিশ্বাস এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ইসলাম প্রচার, ১.৫ বিলিয়ন মুসলমান সুদূর মরক্কো থেকে ইন্দোনেশিয়া আর নাইজেরিয়া থেকে কাজাখস্তান পর্যন্ত মুসলমানদের সক্রিয় সহায়তা লাভ করে। অনেক যুব মুসলিম তাদের কমপক্ষে মাধ্যমিক শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ায় ইসলামী সমাজ উজ্জীবিত ও উদ্দীপ্ত। তাই মনে করা হচ্ছে, একবিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে অপরাপর সভ্য সমাজ মুসলমানদের পুনরুত্থানকে বিস্মিত নয়নে দেখছে। এটাই অধ্যাপক হান্টিংটন তার ‘ক্ল্যাশ অব সিভিলাইজেশন অ্যান্ড দি মেকিং অব ওয়ার্ল্ড অর্ডার’ বইতে উপস্থাপন করেছেন। তার এ কথার কারণে আমেরিকা আজ মুসলিম দেশগুলোতে হামলে পড়েছে। পরিণামে পূর্ব তিমুর ও দক্ষিণ সুদান হাতছাড়া হয়ে গেছে মুসলমানদের। ইরাক, ইয়েমেন, আফগানিস্তান, লিবিয়া, মিসর ও সিরিয়া প্রাশ্চাত্যের সন্ত্রাসে পর্যুদস্ত। পাকিস্তান, লেবানন, ফিলিস্তিন, তুরস্ক খণ্ড-বিখণ্ড হয়ে যেতে পারে।
মধ্যপ্রাচ্যে ধ্বংসযজ্ঞের প্রধান ইন্ধনদাতা হলো যুক্তরাষ্ট্র। মধ্যপ্রাচ্য ধ্বংসস্তূপে পরিণত হতে যাচ্ছে। ইরানের জেনারেল সোলাইমানিকে মার্কিনিদের হত্যা মধ্যপ্রাচ্যের সে অগ্নিস্তূপে আগুন দেয়ার প্রচেষ্টা এবং মধ্যপ্রাচ্যে মুসলিমদের ধ্বংসযজ্ঞের অংশ।
লেখক : বিমানবাহিনীর স্কোয়াড্রন লিডার (অব:)