ভারতের এস-৪০০, কী করবে পাকিস্তান?
এস-৪০০ - ছবি : সংগৃহীত
পাশ্চাত্যে এস-২১ নামে গ্রোলার নামে পরিচিত দূরপাল্লার অত্যন্ত গতিশীল রাশিয়ার এস-৪০০ ট্রায়াম্ফ বিমান প্রতিরক্ষা ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র ভয়াবহ অস্ত্র। প্রাথমিকভাবে বিমান প্রতিরক্ষার জন্য মোতায়েনের উদ্দেশ্যে নির্মিত এই ক্ষেপণাস্ত্র আকাশে ৪০০ কিলোমিটার দূরের শত্রুর টার্গেটে আঘাত হানতে পারে।
গত ৯ সেপ্টেম্বর এশিয়ান নিউজ ইন্টারন্যাশনালে ইউজনো সাখেলিনস্কের লেখা এক প্রতিবেদনে বলা হয় যে আগামী ১৮-১৯ মাসের মধ্যে ভারতীয় বিমান বাহিনীর হাতে রাশিয়ার এস-৪০০ ট্রায়াম্প ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা হস্তান্তর করা হবে। প্রতিবেদনটি অনুযায়ী, ২০১৮ সালের ৫ অক্টোবর নয়া দিল্লিতে ১৯তম রাশান অ্যানুয়াল বাইলেটারাল সামিটে রাশিয়া ও ভারতের মধ্যে ৫টি এস-৪০০ ব্যবস্থঅ কেনার জন্য ৫.৪৩ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি হয়েছে। বিশ্বের এস-৪০০ হলো সবচেয়ে আধুনিক ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। এর পাল্লা ৪০০ কিলোমিটার (২৪৮ মাইল)। এটি একইসাথে ৮০টি টার্গেটে আঘাত হানতে পারে, প্রতিবার দুটি ক্ষেপণাস্ত্রকে লক্ষ্য করতে পারে।
এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্রের নিরপেক্ষ মূল্যায়ন
সুইডিশ গবেষণা সংস্থা (এফওআই) পরিচালিত এক গবেষণায় বলা হয় যে রাশিয়ার এস-৪০০ ট্রায়াম্ফ বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার পাল্লা ও এর সক্ষমতা নিয়ে অতিরঞ্জিত বক্তব্য দেয়া হচ্ছে। এতে বলা হয়, এর পাল্লা আসলে ১৫০-২০০ কিলোমিটার।
এফওআইয়ের কারিগরি বিশ্লেষকদের মতে, এস-৪০০-এর কার্যকারিতা অনেক কমে যায় নিচু দিয়ে আসা টার্গেটের ক্ষেত্রে। আবার ছোট টার্গেটে আঘাত হানাতেও এটি সমস্যায় পড়ে। ক্ষেপণাস্ত্রটি পরীক্ষার সময় নানা সমস্যা হয়েছিল বলেও বিশেষজ্ঞরা জানান।
এই ক্ষেপণাস্ত্রের রাডারব্যবস্থার কার্যকারিতা নিয়েও বিশেষজ্ঞরা প্রশ্ন তুলেছেন। আর রাডার যদি টার্গেট শনাক্ত করতে না পারে, তবে সেটির ওপর আক্রমণ চালানোও সম্ভব হয় না। রাডারব্যবস্থা নিয়ে রাশিয়া কিন্তু তেমন কিছু বলছে না।
আবার এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থাকে প্রতিরোধ করার নানা উপায়ও আছে। বিশেষ করে ইলেকট্রনিক জ্যাম ব্যবস্থার সাহায্যে এটি বেশ ভালোভাবে অচল করে দেয়া সম্ভব হয়।
পাকিস্তানের ওপর ভারতের এস-৪০০-এর প্রভাব
সুইডিশ গবেষণা সংস্থার হিসাব অনুযায়ী এস-৪০০-এর পাল্লা ৪০০ কিলোমিটার না হয়ে যদি ২০০ কিলোমিটারও হয়, তবুও তা পাকিস্তানের জন্য বেশ আশঙ্কার বিষয। পাকিস্তানের উচিত হবে তিনটি ভাগে ভাগ করে এর প্রভাব বিশ্লেষণ করা। প্রথমত, শান্তির সময়ে, দ্বিতীয়ত, বালাকোটের মতো ঘটনার ক্ষেত্রে এবং ঘোষিত যুদ্ধের সময়।
শান্তির সময়েও ভারতের এস-৪০০ নিয়ে পাকিস্তানকে সমস্যায় পড়তে হবে। ফরাসি যুদ্ধবিমান রাফাল ও ওয়াকস, বিমান পুনঃজ্বালানি সংগ্রহ ইত্যাদি ব্যবস্থার সহায়তাপুষ্ট হয়ে যদি এস-৪০০ মোতায়েন করা হয়, তবে পাকিস্তান বিমান বাহিনীর জন্য ভারতীয় টার্গেটে আঘাত হানা বেশ কঠিন হয়ে পড়বে। পুলওয়ামা ঘটনায় দেখা গেছে, ভারত, বিশেষ করে মোদি সরকারের আমলে অভ্যন্তরীণ সমস্যা থেকে দৃষ্টি আড়াল করতে সামরিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকে। সীমিত সামরিক আগ্রাসনে নিজ দেশে তারা বিপুল সাফল্য পেয়ে থাকে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তাদের মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত হয়ে থাকলেও দেশে তারা বেশ সুবিধা পেয়ে যায়।
ভারতীয় বেসামরিক ও সামরিক নেতৃত্ব মনে করে থাকতে পারে যে এস-৪০০ ব্যাটালিয়ন মোতায়েন করা হলে পাকিস্তান বিমান বাহিনী আর কোনোভাবেই বালাকোট-পরবর্তী ঘটনার মতো করে ভারতের বিমান হামলার জবাব দিতে পারবে না। এতে করে তারা পাকিস্তানের ওপর আরো বেশি হামলা চালাতে উৎসাহিত হতে পারে। এই অবস্থার জন্য পাকিস্তানকে তৈরি থাকতে হবে।
তবে পাকিস্তানের পরমাণু শক্তি এক্ষেত্রে নতুন হিসাবে আসতে পারে। ভারত যদি পাকিস্তানের অস্তিত্বে আঘাত হানে তবে পরমাণু শক্তির ব্যবহার করতে পারে পাকিস্তান- এমন ধারণা বিস্তারে কাজ দিতে পারে।
ভারত-পাকিস্তান পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের আশঙ্কা কম থাকলেও তা একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না। তবে তখন পাকিস্তান বিমান বাহিনী কাজ করবে তাদের নৌবাহিনী ও সেনাবাহিনীর সাথে। সেক্ষেত্রে এস-৪০০ কতটুকু কার্যকর থাকবে, সে প্রশ্নও থেকে যায়।
পাকিস্তানের জন্য বিকল্প
তবে এস-৪০০ একটি ভয়াবহ অস্ত্র। এটিকে অগ্রাহ্য করা সম্ভব নয়। তবে পাকিস্তান বিমান বাহিনীরও বিভিন্ন বিকল্প আছে। ভারতের যেকোনো হামলার জবাব দিতে তারাও তৈরী।
গ্লোবাল ভিলেজ স্পেস