অমিত-জয়শঙ্কর বিরোধ!
অমিত-জয়শঙ্কর - ছবি : সংগৃহীত
নরেন্দ্র মোদি সরকারের জম্মু ও কাশ্মিরে বিদেশী দূতদের দ্বিতীয় সফর আয়োজনটি ফ্লপ হয়েছে, আবার উপত্যকার পরিস্থিতিও উত্তপ্ত রয়ে থাকছে। গত নভেম্বরে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের ডানপন্থীদের প্রথম সফরটি ‘পিআর স্টান্ট’ হিসেবে অভিহিত হয়েছে, আর গত সপ্তাহের ১৫ দূতের দু’দিনের সফরটির যে ফলাফল পাওয়া গেছে তা প্রত্যাশিত ছিল না। কারণ এতে মোদি সরকারের পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দুটির মধ্যকার উত্তেজনা প্রকট করে তুলেছে।
উভয় ঘটনায় মোদি সরকারের উদ্দেশ্য ছিল জম্মু ও কাশ্মিরে (গত বছরের আগস্ট মাসে ভারতীয় সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৭০ বাতিল করার মাধ্যমে সাবেক এই রাজ্যের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নেয়ার প্রেক্ষাপটে) যে ‘স্বাভাবিক অবস্থা’ বিরাজ করছে তা বিশ্বর কাছে প্রদর্শন করা। ডানপন্থী পার্লামেন্ট সদস্যদের প্রথম সফরটি হিতে বিপরীত হয়েছিল। আর দ্বিতীয় প্রয়াসটিও দৃশ্যত ব্যর্থ হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র কর্মকর্তারা মনে করেন, আর যাতে আন্তর্জাতিক সমালোচনা না হয়, সেজন্য এই জটিল সমস্যাটির দ্রুত সমাধান করা উচিত। কিন্তু অমিত শাহের নেতৃত্বাধীন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তারা খুব সামান্য সহায়তাই পাচ্ছেন।
তাড়াহুড়ার সফর
মোদি সরকার হয়তো তা বুঝতে পারেনি। কিন্তু পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র উভয় মন্ত্রণালয়ের যৌথ আয়োজনে হওযা এই সফর থেকে সমস্যা আরো বেড়েছে। দূতেরা বর্তমান কেন্দ্র-শাসিত এলাকায় মাত্র এক রাত কাটিয়েছেন সেখানে (জম্মুতে)।
দূতেরা ৯ জানুয়ারি নয়া দিল্লি ত্যাগ করেছিলেন সকালে, তারা সরাসরি কাশ্মিরের শ্রীনগরে যান। কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে তারা সামরিক সদরদফতর সফর করেন, একই দিন জম্মুর উদ্দেশে শ্রীনগর ত্যাগ করার আগে নাগরিক সমাজের কয়েকটি গ্রুপের সাথে সাক্ষাত করেন। তারা ৯ জানুয়ারি রাত জম্মুতে অতিবাহিত করে পর দিন কাশ্মিরি পণ্ডিতদের উদ্বাস্তু ক্যাম্পগুলো পরির্দশন করেন। একই দিন সন্ধ্যায় তারা দিল্লিতে ফিরে আসেন।
সাধারণ মানুষের সাথে দূতদের কোনো যোগাযোগ হয়নি, আর স্থানীয় রাজনীতিবিদেরা তো আটকই আছেন।
আরো ঝামেলা
এই সফরে লাভের চেয়ে খারাপই হয়েছে বেশি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের স্বীকৃতি লাভের বদলে মোদি সরকারের সমস্যাগুলো প্রকট হয়ে পড়েছে।
দূতদের দলে ভারতে নিযুক্ত আমেরিকান রাষ্ট্রদূত কেনেথ জাস্টারও ছিলেন। তিনি দিল্লিতে ফিরে আসার ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে অব্যাহতভাবে যোগাযোগব্যবস্থা অচল রাখার জন্য ভারতের তীব্র সমালোচনা করে যুক্তরাষ্ট্র। ইন্টারনেটের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ, স্থানীয় রাজনীতিবিদদের ৫ মাসের বেশি সময় ধরে আটকের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর।
দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক মার্কিন প্রধান উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যালিস ওয়েলস শনিবার টুইটে বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন উপত্যকায় স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসার অপেক্ষায় রয়েছে। তিনি চলতি সপ্তাহে দিল্লি সফরও করতে যাচ্ছেন। তিনি বিষয়টি মোদি সরকারের কাছে উত্থাপন করতে পারেন।
দ্বিতীয়ত, এর ফলে আরেকটি নিয়ন্ত্রিত সফর আয়োজনের পথে বাধা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। সিনিয়র কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ বিদেশী কূটনীতিকদের কাশ্মিরে নিয়ে যাওয়াকে মোদি সরকারের ‘দ্বৈত নীতি’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি ভারতীয় রাজনীতিবিদদের উপত্যকা সফরের ওপর নিষেধাজ্ঞার কথা উল্লেখ করেন এ প্রসঙ্গে।
নিরাপত্তা ফাঁক
অনুচ্ছেদত ৩৭০ বাতিল করার পর থেকে জম্মু ও কাশ্মিরে মোদি সরকারের প্রধান নজর ছিল নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদারের ওপর। বিদেশী দূতদের উপস্থিতিতে এ ধরনের কিছু ঘটা কোনোভাবেই কাম্য ছিল না। বিমানবন্দরে ডিএসপি দেবিন্দর সিং ছিলেন দূতদের নিরাপত্তার অন্যতম দায়িতেব্। দক্ষিণ কাশ্মিরে শনিবার হিজবুল মুজাহিদিন ও লস্কর-ই-তৈয়বার দুই উগ্রবাদীর সাথে তাকে আটক করা হয়। তার বিরুদ্ধে বেআইনি কার্যক্রম পরিচালনা করা ও সন্ত্রাসীদের সাথে সম্পর্ক রক্ষার অভিযোগ আনা হয়েছে।
মোদি সরকারের জন্য বিষয়টি ভালো হয়নি। আর মোদি সরকার আন্তর্জাতিক সমর্থন দ্রুত হারাচ্ছেন। ভারতীয়-আমেরিকান কংগ্রেস দস্য প্রমিলা জয়পালের কাশ্মিরবিষয়ক প্রস্তাবটি গত ৬ ডিসেম্বর প্রতিনিধি পরিষদে পেশ করা হয়েছে। এতে গত সপ্তাহে আরো ছয় সদস্য সমর্থন দিয়েছেন। ফলে মোট কো-স্পন্সরের সংখ্যা দাঁড়াল ৩৬।
প্রস্তাবে জম্মু ও কাশ্মিরে যত দ্রুত সম্ভব যোগাযোগ বিধিনিষেধ ও গণ আটক প্রত্যাহার করা ও সব অধিবাসীর জন্য ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে। এই প্রস্তাবটি কখনো আইনে পরিণত না হলেও এতে স্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে মার্কিন কংগ্রেসে ভারত যে একতরফা সমর্থন পেয়ে আসছিল, তা নিশ্চিতভাবেই হ্রাস পাচ্ছে।
দি প্রিন্ট