কোন দিকে পাকিস্তান-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক
ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইমরান খান - ছবি : সংগৃহীত
গত ৪০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্ক আফগানিস্তানের লেন্স দিয়ে দেখা হচ্ছে। আফগানিস্তানের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক ঠিক কিভাবে ও কখন বদলাবে, তা অস্পষ্ট থাকলেও মার্কিনিরা দেশটিতে তাদের অবস্থান হ্রাস করবে এবং ভবিষ্যতে ভিন্ন ধরনের সম্পৃক্ততা বজায় রাখবে। পাকিস্তানের জন্য এটি স্বীকার করে নেয়া গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যে তালেবান যদি ‘জয়ী’ হয়, তবে সেজন্য যুক্তরাষ্ট্র অনেকাংশেই পাকিস্তানকে দায়ী মনে করবে।
সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর বিপুল আত্মত্যাগ এবং এই অঞ্চল নিয়ে তাদের নিরাপত্তা উদ্বেগ অনেকটাই বিস্মৃতির আড়ালে চলে যাবে। পাকিস্তান এখানো তাদের দেশে রয়ে যাওয়া উদ্বাস্তুদের পাশাপাশি আরো লাখ লাখ উদ্বাস্তের মুখে পড়বে, তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে এজন্য কোনো ধরনের সহানুভূতিই পাবে না। ফলে পাকিস্তানের উচিত হবে আলোচনার টেবিলে খালিলজাদের সফল হওয়ার ফলে যেন তালেবানের পরিচালিত ইসলামি আমিরাতের সৃষ্টি না হয়।
আবার আফগানিস্তানের বাইরে পাকিস্তানের সাথে অনেক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। একটি মাত্র ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে পাকিস্তানের সম্পর্ক রাখা ঠিক নয়। অন্য একটি দেশের আলোকেও থাকা উচিত নয় এই সম্পর্ক।
জনসংখ্যার দিক থেকে পাকিস্তান এখন বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম দেশ। আগামী ১০ বছরে এই দেশের জনসংখ্যা দাঁড়াবে ২৪ কোটি ৫০ লাখ। পাকিস্তানে রয়েছে বৈশ্বিক হারে সর্বোচ্চ তরুণ জনসংখ্যা। তাদের শক্তি যথাযথভাবে কাজে লাগানো গেলে তারা দেশের জন্য আশীর্বাদে পরিণত হবে। তবে তাদেরকে উৎপাদনশীল খাতে কাজে লাগাতে না পারলে তারা হবে জনসংখ্যাগত টাইমবোমা।
পাকিস্তানের জনসংখ্যা ব্রাজিল, ইন্দোনেশিয়া ও নাইজেরিয়ার মতো অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশগুলোর পর্যায়ে। এসব দেশের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের কেবল নিরাপত্তা সম্পর্ক নয়, অর্থনৈতিক, জনগণ পর্যায়ের, প্রযুক্তিগত, শিক্ষা ও উদ্ভাবনমুখী সম্পর্কও রয়েছে। পাকিস্তানের সাথেও যুক্তরাষ্ট্রের এ ধরনের সম্পর্ক থাকা উচিত।
পাকিস্তান সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রে নানা সমালোচনা থাকলেও এটি দূর করা প্রয়োজন। আর ব্যাপকভিত্তিক সম্পৃক্ততার জন্য পাকিস্তানের প্রয়োজন হবে বিশ্বে তার ভূমিকা পর্যালোচনা করা। আবার ভারতের লেন্স দিয়ে যাতে পাকিস্তানকে দেখা না হয়, সে ব্যবস্থাও করতে হবে। পাকিস্তান প্রসঙ্গ এলেই সামরিক ও প্রতিরক্ষা বিষয়টি এসে যায়। বলা হয় দেশটি ২০১৮ সালে দেশটি তার জিডিপির ৪ ভাগ ব্যয় করেছে। অথচ ২০১৭ সালে ব্যয় করেছিল মাত্র ২.৯ ভাগ।
পাকিস্তানের সম্ভাবনা
কৃষি সম্ভাবনার দিক থেকে পাকিস্তান হতে পারে আরেকটি আর্জেন্টিনা বা ইউক্রেন। পাকিস্তানের কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি ২০ ভাগ এবং এতে তার কর্মশক্তির ৪৩ ভাগ নিয়োজিত। পাকিস্তানের রফতানিতেও কৃষি খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, এখান থেকে আগে প্রায় ৮০ ভাগ। বীজ ও কৃষি প্রযুক্তির মাধ্যমে এই খাতে আরো অগ্রগতি হাসিল করা সম্ভব।
পর্যটন খাতেও পাকিস্তানের সম্ভাবনা রয়েছে। প্রাচীন কালের ইতিহাস ও ধর্মীয় তাৎপর্য রয়েছে পাকিস্তানের। মাদশাহি ও গ্র্যান্ড জামে মসজিদের মতো ভবন এখানে যেমন আছে, হানজা ভ্যালি ও দেসোই ন্যাশনাল পার্কের মতো বিপুল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও এতে আছে। অথচ ভ্রমণের দিক থেকে পাকিস্তান অনেক কম প্রতিযোগিতামূলক দেশ। ২০১৭ সালে পাকিস্তানে এসেছিল মাত্র ১৭ লাখ সফরকারী, অথচ শ্রীলঙ্কায় একই সময় যায় ২৩ লাখ, জর্ডানে ৪২ লাখ।
পাকিস্তানের জলবিদ্যুৎ খাতেও বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। ৬০ হাজার মেগাওয়াট সম্ভাবনার মধ্যে মাত্র এক-দশমাংশ কাজে লাগানো হচ্ছে।
অন্য দিকে যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে সম্পর্ক ঢেলে সাজানোর জন্য বৃহত্তর ও ব্যাপকভিত্তিক পদক্ষেপ প্রয়োজন। পাকিস্তানকে সমস্যা হিসেবে না দেখে দক্ষিণ এশিয়ার সম্ভাবনাময় অর্থনৈতিক বাঘ বিবেচনা করা যেতে পারে।
বর্তমানে পাকিস্তানের ব্যাপারে বেশির ভাগ কংগ্রেস সদস্য সামরিক বিষয়কেন্দ্রিক। এই অবস্থা দূর করতে হবে।
দুই দেশের সম্পর্ক ঢেলে সাজানোর ব্যাপারে শিক্ষাও হতে পারে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ছাত্র বিনিময় কর্মসূচি দুই দেশের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করতে সহায়তা করতে পারে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে ১১ হাজার পাকিস্তানি ছাত্র পড়াশোনা করছে। সংখ্যাটি চীনের (সেখানে পড়াশোনা করছে ২২ হাজার) চেয়ে অর্ধেক।
পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর প্রশিক্ষণেও আরো ভূমিকা পালন করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। পাকিস্তান সামরিক বাহিনী আর অভ্যুত্থানের কাজে নিয়োজিত নেই। এ ব্যাপারে ভালো খবর হলো, কিছু বিরতির পর আবার পাকিস্তানের জন্য মার্কিন সামরিক প্রশিক্ষণের দরজা খুলতে যাচ্ছে। ফলে পাকিস্তানি সামরিক কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ বাড়বে যুক্তরাষ্ট্রে।
পাকিস্তান-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ককে দ্বিমুখী চলাচলের রাস্তায় পরিণত করতে হবে। আর যুক্তরাষ্ট্রের উচিত হবে রাস্তাটি পরিষ্কার রাখা। মার্কিন সহায়তাও অব্যাহত রাখতে হবে।
প্রায় ২০ বছর আগে কম্বোডিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক খারাপ ছিল। কিন্তু এসব দেশকে এখন অন্য দৃষ্টিতে দেখা হচ্ছে। পাকিস্তানের পক্ষেও এ ধরনের পরিবর্তন করা সম্ভব।
পাকিস্তানের তুলনামূলক নতুন সরকার ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে সহিংস চরমপন্থী গ্রুপ ও আগের সরকারগুলোর দুর্নীতিবাজ উপাদানগুলো থেকে নিজেকে সরিয়ে রেখে।
দি হিল