ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে কবে কোন দেশের যাত্রীবাহী বিমান বিধ্বস্ত হয়েছিল
ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে বিধ্বস্ত হয়েছিল মালয়েশিয়ার বিমান - ছবি : সংগৃহীত
১২ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০
ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে বিধ্বস্ত মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের এমএইচ ১৭ যাত্রীবাহী বিমানের একটি ভাঙা অংশের ওপর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন এক নিরাপত্তাকর্মী (ফাইল ছবি) : ইন্টারনেট -
সামরিক সঙ্ঘাতে বেসামরিক বিমান ভূপাতিত করার ইতিহাস নতুন নয়। এর আগেও বহুবার সামরিক হামলায় বিধ্বস্ত হয়েছে বিভিন্ন দেশের বেসামরিক বিমান। হতাহত হয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। কখনো এই ঘটনা ঘটেছে ইচ্ছাকৃত, আবার কখনো অনিচ্ছায়। আলজাজিরা সেসব ঘটনা নিয়ে একটি তালিকা তৈরি করেছে।
ইরানের রাজধানী তেহরান থেকে ইউক্রেনগামী একটি বিমান গত বুধবার উড্ডয়নের তিন মিনিটের মাথায় বিধ্বস্ত হয়ে ১৭৬ জন আরোহীর সবাই নিহত হয়। ইরানের সামরিক বাহিনী স্বীকার করেছে তারা ভুল করে সে দিন ওই বিমানটি ভূপাতিত করেছিল। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ বলেছেন, ‘একটি শোকের দিন, সঙ্কটকালীন সময়ে ‘মানবিক ভুলের’ কারণে এই বিপর্যয়। আমাদের জনগণ, ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবার এবং অন্যান্য ক্ষতিগ্রস্ত জাতির প্রতি আমাদের গভীর অনুশোচনা, ক্ষমা ও শোক প্রকাশ করছি।’
৮ জানুয়ারি ২০১৯ : ইউক্রেন এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ৭৫২
কমান্ডার কাসেম সোলাইমানি হত্যার বদলা নিতে ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাঘাঁটিতে অন্তত ২২টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে ইরান। এর ঘণ্টা কয়েক পরেই তেহরানে বিধ্বস্ত হয় ইউক্রেনের একটি যাত্রীবাহী বিমান। মারা যান ১৭৬ জন বেসামরিক যাত্রী। বিমানটিতে থাকা অধিকাংশ আরোহীই ইরানি এবং ইরানি বংশোদ্ভূত কানাডীয় নাগরিক। নিহতদের মধ্যে ৮২ জন ইরানি, ৬৩ জন কানাডীয়, ১০ জন সুইডেনের, চারজন আফগানিস্তানের, তিনজন জার্মানির এবং তিনজন ব্রিটেনের নাগরিক। অপর দিকে ৯ ক্রুসহ ১১ জন ইউক্রেনের নাগরিক নিহত হয়েছেন। ইরান জানিয়েছে, এ ঘটনায় দোষীদের বিচারের আওতায় আনা হবে।
১৭ জুলাই ২০১৪ : মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্স ফ্লাইট ১৭
মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্স ফ্লাইট এমএইচ-১৭ যাত্রীবাহী বিমানটি আমস্টারডাম থেকে কুয়ালালামপুর যাচ্ছিল। পূর্ব ইউক্রেনের আকাশে থাকা অবস্থায় এটি বিধ্বস্ত হয়। মারা যান বিমানে থাকা ২৯৮ যাত্রীর সবাই। সে বছরই জুন মাসে একটি আন্তর্জাতিক তদন্তদল জানায়, এমএইচ-১৭ বিমানটি আসলে গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছে। রাশিয়াপন্থী স্থানীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীরা এই ঘটনার সাথে জড়িত।
২৩ মার্চ ২০০৭ : বেলারুশ কার্গো বিমান ভূপাতিত
২০০৭ সালের ২৩ মার্চ সোমালিয়ার রাজধানী মোগাদিসু থেকে উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পরেই বেলারুশ এয়ারলাইন্সের ইলিউশিন ২-৭৬ কার্গো বিমান একটি রকেটের আঘাতে ভূপাতিত করা হয়। এতে ১১ জন যাত্রী নিহত হন। বিমানটি বেলারুশের প্রকৌশলী এবং প্রযুক্তিবিদদের বহন করছিল।
৪ অক্টোবর ২০০১ : সাইবেরিয়া এয়ারলাইন্স ফ্লাইট ১৮১২
সাইবেরিয়া এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজটিতে ছিলেন ৭৮ জন যাত্রী। যাদের অধিকাংশই ছিলেন ইসরাইলের নাগরিক। তারা যাচ্ছিলেন ইসরাইলের তেল আবিব থেকে রাশিয়ার নোভোসিবিরস্ক শহরে। তবে কৃষ্ণসাগরের রাশিয়া উপকূলে এটি বিধ্বস্ত হয়। পরবর্তী সময়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট স্বীকার করেন, তার দেশের বিমানমহড়া থেকে ছোড়া গোলার আঘাতে ধ্বংস হয় রাশিয়ার যাত্রীবাহী বিমানটি।
৩ জুলাই ১৯৮৮ : ইরান এয়ার ফ্লাইট ৬৫৫
যুদ্ধবিমান ভেবে পারস্য উপসাগরে ইরানের বেসামরিক উড়োজাহাজ এয়ারবাস এ ৩০০ গুলি করে ভূপাতিত করে যুক্তরাষ্ট্র। মারা যায় বিমানে থাকা ৬৬ শিশুসহ ২৯০ যাত্রীর সবাই। ‘ইউএসএস ভিনসনেস রণতরী’ থেকে দু’টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয় বিমানটি লক্ষ্য করে। ওই হামলার পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে ইরানকে ক্ষতিপূরণও দেয় যুক্তরাষ্ট্র। ইউএসএস ভিনসনেস রণতরীর কমান্ডার উইল সি রজার্সকে পরবর্তী সময়ে পুরস্কৃতও করেছিল যুক্তরাষ্ট্র।
১ সেপ্টেম্বর ১৯৮৩ : কোরিয়ান এয়ার লাইন্স ফ্লাইট ০০৭
সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের আকাশসীমায় প্রবেশ করায় গুলি করা হয় কেএএল ০০৭ বিমানটিকে। মারা যান ২৬৯ বিমানযাত্রী। সোভিয়েত কর্তৃপক্ষ এই ঘটনার দায়িত্ব স্বীকার করে জানায়, তারা ভেবেছিল এটি কোনো গুপ্তচর মিশন।
২৭ জুন ১৯৮০ : ইটাভিয়া ফ্লাইট ৮৭০
ইতালির এই বিমানটি কেন বিধ্বস্ত হয়েছিল তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা ছিল অনেক বছর। দেশটির বোলোগনা থেকে সিসিলি যাওয়ার পথে তাহহেনিয়ান সাগরে এটি বিধ্বস্ত হয়। ২০১৩ সালে ইতালির সর্বোচ্চ আদালত রায়ে জানায়, ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে দুই ইঞ্জিনের ম্যাকডোনাল ডগলাস ডিসি-৯ বিমানটির এমন পরিণতি হয়।
১২ ফেব্রুয়ারি ও ৩ সেপ্টেম্বর ১৯৭৯ : এয়ার রোডেশিয়া ফ্লাইট ৮২৭ ও এয়ার রোডেশিয়া ফ্লাইট ৮২৫
রোডেশিয়া হচ্ছে বর্তমান জিম্বাবুয়ে। কারিবা থেকে উড্ডয়নের পরপরই বিমান দু’টি বিধ্বস্ত হয়েছিল। এই উড়োজাহাজ দু’টিতে আঘাত হানে সোভিয়েত ইউনিয়নের তৈরি স্ট্রেলা ক্ষেপণাস্ত্র। দুই ঘটনায় মারা যায় ১০০ জন।
২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৪ : লিবিয়ান আরব এয়ারলাইন্স ফ্লাইট ১১৪
সিনাই উপত্যকা ঘিরে বিবাদের জেরে ইসরাইলের যুদ্ধবিমান এই বেসামরিক উড়োজাহাজে গুলি ছোড়ে। ১১২ যাত্রীর মধ্যে মাত্র চারজন বেঁচেছিলেন। বিমানটি লিবিয়ার ত্রিপোলি থেকে কায়রো যাচ্ছিল।
২৭ জুলাই ১৯৫৫ : ইএল এএল ফ্লাইট ৪০২
লন্ডন থেকে তেল আবিব যাওয়ার পথে নিজেদের আকাশসীমায় প্রবেশ করায় বুলগেরিয়ার যুদ্ধবিমান এই উড়োজাহাজকে ভূপাতিত করে। বুলগেরিয়া সে সময় সোভিয়েত ব্লকের সদস্য ছিল।
২৩ জুলাই, ১৯৫৪ : ক্যাথি প্যাসিফিক ভিআর-এইচইইউ
সে সময় ব্রিটিশ কলোনিভুক্ত ছিল হংকং। ক্যাথি প্যাসিফিক এয়ারলাইন্স হংকংভিত্তিক। চীনা যুদ্ধবিমান গুলি করে এই এয়ারলাইন্সের একটি বিমান বিধ্বস্ত করে। মারা যায় ১৮ বিমানযাত্রী। পরবর্তী সময়ে চীন জানায় ভুলবশত এমনটি হয়েছে।
২৪ আগস্ট ১৯৩৮ : দ্য জিওলিন হামলা
হংকং থেকে চংকং যাচ্ছিল চীনা আমেরিকান ডিসি-২। সে সময় যুদ্ধে বেধেছিল চীন আর জাপানের মধ্যে। জাপানের যুদ্ধবিমান গুলি ছুড়ে এই উড়োজাহাজটিতে। মারা যান ১৪ জন। তবে বেঁচে গিয়েছিলেন মার্কিন পাইলট।
সূত্র : আলজাজিরা