ফয়েজ আহমদ ফয়েজ ও কবির লড়াই
ফয়েজ আহমদ ফয়েজ - ছবি : সংগ্রহ
দেশের সীমান্ত আছে, কবির সীমান্ত নেই। কবির সুরকে যেমন আটকাতে পারে না কাঁটাতারের বেড়া, তেমনি সে আবদ্ধ থাকে না কোনো বিশেষ কালের খাঁচায়। যেসব কবি মানুষের জীবনসত্য ও স্বপ্ন-সুন্দরের মশালচী, তারা তাই বিশেষ কোনো দেশের হয়েও সব দেশের, বিশেষ কালের হয়েও সব কালের। আমাদের বেদনা ও আশার শব্দাবলিকে তাদের কণ্ঠে উচ্চারিত হতে আমরা শুনি। ফলে সেই উচ্চারণে আমরা নিজেদের খুঁজে পাই। অতএব উর্দু কবি ফয়েজ আহমদ ফয়েজ যখন বলেন, ‘দিনরাত্রির তিক্ততা আরো বাড়বে জানি, শোষকও চালিয়ে যাবে শোষণের খেলা’ মনে হয় দূরের কোনো দেশের কথা নয়, কালের কথা নয়। যখন তিনি এ প্রেক্ষাপটে ঘোষণা করেন, ‘মানলাম এ তিক্ততা, মেনে নিলাম এ নির্যাতন। কিন্তু প্রাণ যদি থাকে দুনিয়ার দুঃখের প্রতিবিধান করব আমি’, তখন তাকে মনে হয় বিপন্নজনের কত আপন, কত নিজের!
দুনিয়াজুড়েই ফয়েজ তাই অনিবার্য। সেই অনিবার্যতাকে ব্যাখ্যা করেছেন অ্যাডওয়ার্ড সাইদ। যিনি নিজে ছিলেন ফয়েজের ভক্ত। তিনি দেখিয়েছেন, ফয়েজের কবিতা যেমন বুদ্ধিজীবীদের মনের ক্ষুধা নিবারণ করে, তেমনি আনন্দ দেয় সাধারণ মানুষকে। সাইদ সাক্ষ্য দিয়েছেন, ‘তার কবিতা এত নিখুঁত আর এত বিশুদ্ধ যে, সেখানে কান পাতলেই শোনা যায় কিটসের ইন্দ্রিয়ময়তা, সহজেই অনুভব করা যায় নেরুদার তেজ!’ অনেক উত্তাপ আর অনেক মনোহর কোমলতা সহাবস্থান করেছে তার পঙ্ক্তিমালায়। দ্রোহের দামামায় গগনবিদারী নিনাদের মধ্যে বিস্ময়কর মাধুর্য ঢেলে ছড়িয়ে পড়েছে বসন্তের মায়া। মানবমুক্তির অঙ্গীকারে উচ্চকিত ছিল তার শিল্পবোধ। জীবন, শিল্প ও সংগ্রামকে তিনি যে তাৎপর্যে অবলোকন করেন তা আজকের দুনিয়ার কবি, শিল্পী ও বুদ্ধিজীবীদের জন্য দিকনির্দেশক। স্পষ্টই তিনি ঘোষণা করেন, ‘আমি শুধু এটাই বলতে চাই যে, মানুষের সমন্বিত লড়াইকে পুরোপুরি উপলব্ধি করে সেই মুক্তিরণে শামিল হওয়ার জ্ঞানপূর্ণ প্রয়াস কেবল জীবনের দাবি নয়, শিল্পেরও দাবি। শিল্প তো জীবনেরই এক শাখা, শিল্প সাধনা তো সংগ্রামেরই এক ধরন।’
লড়াই ফয়েজের জীবনে ছিল নিত্যসহচর। যেমন- শিল্পে, তেমনই যাপনে। ধ্রুপদ কাব্যধারায় তিনি পশ্চিমা আধুনিকতাকে যুক্ত করে উচ্চারণ করতেন প্রাচ্যের খোয়াব। ব্যক্ত করতেন বঞ্চিত ও মেহনতি মানুষের দুনিয়া যে বেদনায় কাতর, সেই বেদনার স্নিগ্ধ অগ্নিশিখা। আর এভাবে তিনি ইকবালের মতো শায়েরে মাশরিক বা প্রাচ্যের কবিকণ্ঠ উপাধি নিয়ে আপন স্বাতন্ত্র্যে যুক্ত হন বিশ্বকবিতার সেই ধারায়, যেখানে আছেন মায়াকোভস্কি, লুই আরাগঁ, পল এলুয়ার, কুয়ো মোজো, নাজিম হিকমত প্রমুখ। উর্দুকাব্যে নযম, কাসিদা, কিতআ, মসনবি ইত্যাদি আঙ্গিকে লিখলেও মূলত তার প্রস্ফুটন ঘটেছে গজলে। গজল আসলে এক বেদনা। ব্যথাদীর্ণ চিৎকার! উর্দু কবি গোরখপুরি যাকে ব্যক্ত করেছেন এভাবে- ‘অরণ্যে শিকারি কুকুর লেলিয়ে দিলো হরিণের পেছনে। হরিণ ছুটতে ছুটতে আটকে গেল ঝোপে। যেখান থেকে তার বের হওয়া অসম্ভব। এ সময় অসহায় হরিণের হৃদয়গলিত যে আর্তসুর কণ্ঠ চিরে বের হবে, তার নাম গজল।’ ফয়েজ মূলত ছিলেন গজলের কবি। করুণ বেদনা ছিল তার কাব্যে আর ছিল মুক্তির হৃদয়বিদারী হরিণসুর!
জীবনেও ছিল লড়াই। যখন বিশ্বযুদ্ধে দুনিয়া জ্বলছে, তখন জন্ম তার। ১৯১১ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি। পাকিস্তানের শিয়ালকোটে ঐতিহ্যবাহী শিক্ষিত এক পরিবারে তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা। বাবার নাম সুলতান মুহাম্মদ খান, মা ফাতেমা সুলতান। মৌলভি ইবরাহিম মিরের হাতে মক্তব থেকে শুরু ফয়েজের লেখাপড়া। এরপর স্কচ মিশন স্কুল, শিয়ালকোট ম্যারি কলেজ, লাহোর সরকারি কলেজ, লাহোর ওরিয়েন্টাল কলেজ ইত্যাদিতে ফয়েজের পড়াশোনা। উর্দুর পাশাপাশি ফারসি, আরবি, ইংরেজি ভাষায় ছিল তার সাবলীল দক্ষতা। ১৯ বছর বয়সে বিয়ে করেন ব্রিটিশ তরুণী এলিসকে। অমৃতসর এমএও কলেজে ইংরেজির শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন ১৯৩৫ সালে। এরপর যান লাহোর হ্যালি কলেজে। ১৯৪২ সালে শুরু করেন সৈনিক জীবন। ক্যাপ্টেন থেকে শুরু করে ব্রিটিশ আর্মির উচ্চপদে হন আসীন। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ সেনাবাহিনী ত্যাগ করে লাহোরে এসে শুরু করেন সাংবাদিকতা। পাকিস্তান টাইমসের হন প্রধান সম্পাদক। ১৯৫৯ সালে সম্পাদক হন পাকিস্তান আর্ট কাউন্সিলের। ১৯৬৪ সালে সাংবাদিকতা ছেড়ে করাচির আবদুল্লাহ হারুন কলেজের অধ্যক্ষ হন। ১৯৬৫-এর পাক-ভারত যুদ্ধকালে যোগ দেন পাকিস্তান তথ্য অধিদফতরে। বোঝাই যাচ্ছে, এক অস্থির স্থান বদলের মধ্য দিয়ে গেছে ফয়েজের জীবন। এটা হয়েছে তার মানসিকতার কারণে। কোনো কিছুই তাকে তৃপ্ত করতে পারছিল না। দিতে পারছিল না স্বস্তি।
যুক্ত ছিলেন জনতার সংগ্রামে। সামরিক শাসন এলে সংগ্রামের প্রয়োজনে চলচ্চিত্রকে কর্মক্ষেত্র বানিয়ে নেন। পূর্ব পাকিস্তানের আর্থসামাজিক দুরবস্থা নিয়ে রচনা করেন চলচ্চিত্র ও গান, যা নিষিদ্ধ করে পাকিস্তান সরকার। পরে মস্কোতে সেই চলচ্চিত্র হয় পুরস্কৃত, এমনকি ২০০৭ সালে প্যারিসে চলচ্চিত্র উৎসবে তা হয় প্রদর্শিত। সাহিত্যিক আন্দোলনে সম্পৃক্ত থেকেছেন বরাবরই। ১৯৩৬ সালে যোগ দেন লেখক সঙ্ঘে, হন পাঞ্জাবের সাধারণ সম্পাদক। ১৯৫৮ সালে আফ্রো-এশীয় লেখক সঙ্ঘের হন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। প্রতিবাদী ও লড়াকু ভূমিকার জন্য কারাগারে কাটাতে হয় কয়েক বছর। ১৯৫১ সালে কবিতার জন্য রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে হন অভিযুক্ত। এই দাগ দাগ ভোরের আলো, এই রাতের খাপে ঢাকা ভোর, কবিতার জন্য ১৯৫১ থেকে ১৯৫৫ সাল অবধি তাকে খাটতে হয়েছে জেল। ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খানের সরকার তাকে আবারো পাঠায় জেলে। ১৯৭৭ সালে সার্বক্ষণিক পুলিশি নজরদারির আওতায় রাখা হয় তাকে। ১৯৮৪ সালে নোবেল পুরস্কারের জন্য শর্ট লিস্টে তার নাম মনোনীত হয়। কিন্তু বন্ধু ইয়াসির আরাফাতের অনুরোধে নিজের নাম প্রত্যাহার করে নেন তিনি। ১৯৬২ সালে লেনিন শান্তি পুরস্কার অবশ্য তিনি গ্রহণ করেছিলেন। ১৯৮৪ সালের ১০ নভেম্বর লাহোরে ইন্তেকাল করেন তিনি। মৃত্যু অবধি তিনি শাসকদের বৈরিতার মধ্যে থেকেছেন। কোনো জনবিরোধী সরকারই তাকে শেষ পর্যন্ত সুনজরে দেখতে পারেনি। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনী যখন গণহত্যা করছে বাংলাদেশে, মুক্তি অস্ত্র হাতে রণাঙ্গণে নামছে, সেই মার্চেই তিনি আমাদের পক্ষে লেখেন- ‘আমার শরীর থেকে দূরে থাক’। বলেন, ‘সাজাবো, তবে কিভাবে সাজাবো গণহত্যার শোভাযাত্রা/আমার রক্তের চিৎকারে আকর্ষণ করব কারে?’ ‘বাংলাদেশ-২’ নামক কবিতায় লেখেন, ‘প্রতিটি গাছ রক্তের মিনারের মতো/প্রতিটি ফুলও রক্তমাখা/প্রতিটি চাহনি যেন রক্তের বর্শার তীর’।
শোষক ব্যবস্থা ও গণবিরোধী শাসকদের সাথে তার অব্যাহত লড়াইয়ের রাজসাক্ষী বহু কবিতা। এর মধ্যে একটি গীতিকবিতা সম্প্রতি চলে এসেছে আলোচনার কেন্দ্রে। এটি যদিও বরাবরই বিখ্যাত ছিল এবং উর্দুভাষীদের মধ্যে এটি জনপ্রিয়তায় অনন্য থেকেছে ধারাবাহিকভাবে। গীতিকবিতাটির নাম ‘হাম দেখেঙ্গে।’ একদিন দেখে নেবো তোদের। পাকিস্তানি একনায়ক জেনারেল জিয়াউল হকের আমলে লেখা হয় গীতিটি। ১৯৭৮ সালে। প্রতিবাদ তখন পাকিস্তানের বুকে গমগম করছে। ফয়েজ লিখলেন, ‘একদিন তোদের আমরা দেখে নেবো/তোদের আমরা অবশ্যই দেখে নেবো/ এটা ঘটবেই, আমাদের তা দেখতেই হবে। আমরা দেখব.../যেদিন জুলুম আর বেইনসাফির হিমালয়/তুলার মতো ফর ফর উড়ে যাবে তুফানে/মজলুমের পায়ের তলায়/ধরিত্রী কাঁপবে থর থর থর থর আর থর থর/আর ক্ষমতাওয়ালাদের মাথার উপর/বিজলী ও বিদ্যুৎ চমকাতে থাকবে কড় কড় আর কড় কড়/আমরা সেদিন তোদের দেখে নেবো/আমরা সেদিন তোদের দেখে নেবো।’ (তর্জমা : ফরহাদ মজহার)।
গনগনে গণশক্তির গণঘোষণা। অতএব, গণকণ্ঠে বন্দিত হলো গীতিটি। প্রতিবাদের প্রতীক হিসেবে কালো রঙ নিষিদ্ধ করেছিলেন জিয়াউল হক। কিন্তু বিখ্যাত গজলশিল্পী ইকবাল বানু কালো রঙের শাড়ি পরেই ৫০ হাজার মানুষের সমাবেশে সবাইকে নিয়ে গাইলেন এ গীতি। তারপর থেকে যেকোনো আন্দোলন-সংগ্রামে এ গীতি ভারত-পাকিস্তানে সমানভাবে উচ্চকিত হয়ে আসছে। বিখ্যাত শিল্পীদের কণ্ঠে, টিভি চ্যানেলে, অত্যাধুনিক সঙ্গীতায়োজনে, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এটি হয় জনপ্রিয়। সম্প্রতি ভারতে ধর্মের ভিত্তিতে প্রণীত কানুন সিএএ ও নাগরিক নিবর্তনমূলক এনআরসির প্রতিবাদে জামেয়া মিল্লিয়া ইসলামিয়া দিল্লির শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদে সরব হন। পুলিশ তাদের ওপর বেধড়ক অত্যাচার করে। প্রতিবাদে ভারতের শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইআইটি কানপুর ক্যাম্পাসে ছাত্রছাত্রীরা মিছিল বের করে ১৭ নভেম্বর। সেখানে তাদের কণ্ঠে ছিল ফয়েজের এই গান। এরপর আইআইটির শিক্ষক বশিমন্ত শর্মাসহ অনেকেই অভিযোগ করেন, গানটি হিন্দুবিরোধী। তারা এর প্রমাণ হিসেবে পেশ করেন কিছু পঙ্ক্তিকে, যেখানে বলা হয়েছে- ‘যেদিন এই দুনিয়ার খোদার কাবা থেকে/সব মূর্তিগুলো পিটিয়ে অপসারিত করা হবে/পবিত্রঘর থেকে বিতাড়িত আদিপবিত্র মানুষগুলোকে যেদিন/আল্লার ঘরে তুলে এনে ফের অধিষ্ঠিত করা হবে পবিত্র মসনদে/আর সব মুকুটগুলো ছুড়ে ফেলা হবে ঊর্ধ্বাকাশে/আর শাসকের তখত গড়াগড়ি খেতে থাকবে নিচে, মাটিতে/... ব্যস, শুধু সেই এক এর নাম থাকবে- আল্লাহ’ (তর্জমা : ফরহাদ মজহার)।
ফয়েজ আহমদ ফয়েজ ছিলেন সেকুলার ও আপাদমস্তক কমিউনিস্ট। এখানে তিনি ম্যাটাফোর হিসেবে ব্যবহার করেছেন কাবা, মূর্তি ইত্যাদিকে। অন্য কবিতায় যেমন নিজের রক্ত ও অশ্রু দিয়ে মূর্তি ধুয়ে দেয়ার প্রত্যয় ঘোষণা করেছেন। কিন্তু এখানে মূর্তি এসেছে খোদা সেজে চেপে বসা শোষককে বুঝাতে। কিন্তু আইআইটি কবিতাটির বিরুদ্ধে হিন্দুবিরোধিতার অভিযোগ খতিয়ে দেখতে গঠন করে তদন্ত কমিটি। কেননা, কবিতাটি ভারতের ভাবাবেগকে আঘাত করেছে! বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি ডিরেক্টর মনিন্দ্র আগরওয়াল বলেন, ‘ফয়েজকে কে চেনে? আমরা দেখে নেবো, কবিতাটি আসলেই হিন্দুবিরোধী কি না?’ যদিও ভারতের বিখ্যাত ইতিহাসবিদ ইরফান হাবিব বলেছেন, একে হিন্দুবিরোধী বলা হলে আইআইটির মূর্খতাই প্রমাণিত হবে! জাবেদ আখতার বলেছেন, গানটি সম্পর্কে এ অভিযোগ একেবারেই হাস্যকর। বিষয়টি কথা বলারই উপযুক্ত নয়। ২ জানুয়ারি দৈনিক আনন্দবাজারে প্রকাশিত এক রিপোর্ট থেকে জানা যায়, বছর তিনেক আগে এই ক্যাম্পাসেই গানটি গাওয়া হয় জেএনইউ-এ ছাত্র আন্দোলনের সময়। তখন কিন্তু অভিযোগ আসেনি। ভারতে সম্প্রতি গান, কবিতা ইত্যাদি আক্রান্ত হচ্ছে মনুবাদের হাতে। আনন্দবাজারের এ রিপোর্ট জানায়, কিছু দিন আগে কবি ইকবালের এক প্রার্থনাসঙ্গীত ছাত্রদের গাওয়ানোর কারণে উত্তর প্রদেশের পিলিভিটের এক প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষককে সাসপেন্ড করা হয়। আসামে মিয়া কবিতায় বঞ্চনার ব্যথা উচ্চারণের জন্য গ্রেফতার করা হয় হাফিজ আহমদসহ ১০ কবিকে। পশ্চিমবঙ্গে কবি শ্রীজাতের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে কবিতার একটি শব্দের কারণে!
ফয়েজ আহমদ ফয়েজ আসলে এ পরিস্থিতিরই দুশমন। নাগরিক অধিকার যখন আক্রান্ত হয়, যেখানে আক্রান্ত হয়, সেখানেই তিনি প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠেন। যেমন হয়েছেন ভারতে। পাকিস্তানে তার কবিতা আক্রান্ত হয়েছিল পাকিস্তানবিরোধিতার অভিযোগে, ভারতে আক্রান্ত হচ্ছে ভারতবিরোধিতার অভিযোগে! কবিতা সীমানা পেরিয়েছে, পেরিয়েছে কাল। শাসকের চরিত্র থেকে গেছে একই জায়গায়। ফয়েজের প্রতীক ও রূপকগুলোকে তারা ভয় পায় নিজেদের মনের সঙ্কটে!
এমনই হয়। রুশ কবি ওপিস মান্দেলস্টাম স্টালিনের আমলে একটি কবিতা লেখেন, যাতে প্রতীক ছিল এমন একজন, যার গোঁফ ছিল আরশোলার মতো। স্টালিনের মনে হলো, তার গোঁফ নিয়ে মশকারা করা হয়েছে। ১৯৩৩ সালে তিনি কবিকে রাষ্ট্রদ্রোহীর লকব দিয়ে জেলে ভরে দেন। পুড়িয়ে ফেলা হয় তার সব লেখা। তার স্ত্রী নাজেদজা ছিলেন নাইট শিফটের শ্রমিক। তিনি কাজ করতেন আর বিড় বিড় করে আওড়াতেন ওপিসের কবিতা, যেন তা হারিয়ে না যায়, আবার লেখা যায়।
ওপিসের কবিতা হারিয়ে যায়নি, বরং সংগ্রামের নতুন শিখা জ্বালিয়েছে। ফয়েজের ব্যাপারটাও এমন। কবিতা স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে মানুষের জন্য এভাবেই লড়ে যায়!
লেখক : কবি, গবেষক
71.alhafij@gmail.com