চীন-পাকিস্তান নৌমহড়ার টার্গেট কে?
চীন-পাকিস্তান নৌমহড়ার টার্গেট কে? - ছবি : সংগৃহীত
চলতি সপ্তাহের প্রথম দিকে উত্তর আরব সাগরে সি গার্ডিয়ান্স-২০২০ নামে চীন ও পাকিস্তান তাদরে ষষ্ট দ্বিপক্ষীয় নৌমহড়া শুরু করেছে। এ ধরনের মহড়ায় দুই দেশের মধ্যকার নিরাপত্তা সহযোগিতা বাড়ায় বলে ধারণা করা হয়। চীনা মিডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, নৌমহড়াটির লক্ষ্য চীন পাকিস্তান যৌথ মহড়া নতুন পদ্ধতিতে করা যায় কিনা তা খতিয়ে দেখা এবং সাগর সন্ত্রাস ও অপরাধের মতো ইস্যুগুলো যৌথভাবে মোকাবিলার সামর্থ্য অর্জন করা।
এই মহড়া স্পর্শকাতর বিষয়ও। কারণ তা হচ্ছে ভারতের পশ্চিম উপকূলে। এটি নয়া দিল্লির দৃষ্টিকোন থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা এলাকা। আরব সাগরে কিভাবে কাজ করা যায়, তা অনুধাবনের জন্য এই মহড়া চীনের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অধিকন্তু, পাকিস্তানের মাধ্যমে আরব সাগরে প্রবেশের আরো সুযোগ লাভও চীনাদের কাছে আগ্রহের বিষয়। মালাক্কা প্রণালীর চোক পয়েন্টের কাছে যেকোনো নৌঅবরোধের ক্ষেত্রে এটি হবে জ্বালানি সংগ্রহের জন্য চীনের জন্য বিকল্প রুট।
অধিকন্তু, ভারতের আরব সাগর উপকূলে কান্দলা, ওখা, মুম্বাই, নব সেবা (নাবি মুম্বাই), মোরমুগাও, নিউ ম্যাঙ্গালোর ও কোচির মতো গুরুত্বপূর্ণ ভারতীয় বন্দর রয়েছে এখানে। আর চীনের বিমান ও নৌ স্থাপনা জিওয়ানির প্রেক্ষাপটে আরব সাগর চীনের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। এটি গোয়াদর ও ইরানি চাবাহার বন্দরের কাছাকাছি অবস্থিত।
চীন সম্ভবত নিয়মিত ভিত্তিতে এ ধরনের মহড়া আয়োজনে উৎসাহী। চীনা সংবাদপত্র গ্লোবাল টাইমসে পিএলএ নেভাল মিলিটারি স্টাডিজ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো জাং জানশির মতে, এ ধরনের মহড়া নিয়মিতভাবে আয়োজন করা হলে তা পাকিস্তান ও চীনের মধ্যকার বন্ধুত্ব ও সহযোগিতা আরো বাড়িয়ে দেবে। তিনি বলেন, দুই নৌবাহিনীর সাবমেরিনগুলো তাদের সক্ষমতা পরীক্ষা করতে পারবে, সর্বোচ্চ পর্যায়ে কৌশলগত আস্থাও প্রকাশিত হবে এর মাধ্যমে। মহড়ার ব্যাপারে মন্তব্য করতে গিয়ে পাকিস্তানে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও জিং বলেন, চীন ও পাকিস্তানি নৌবাহিনী যৌথভাবে একটি অভিন্ন সামুদ্রিক গন্তব্য নির্মাণ করতে চাচ্ছে এবং সামুদ্রিক শান্তি ও নিরাপত্তা যৌথভাবে সুরক্ষিত রাখতে আস্থা ও সক্ষমতা প্রদর্শন করছে।
মহড়াটি করাচিতে পাকিস্তান নৌবাহিনীর ডকইয়ার্ডে শুরু হয়। উদ্বোধন করেন চীনা মহাপরিচালক ভাইস অ্যাডমিরাল দং জান ও পাকিস্তানের ভাইস অ্যাডমিরাল আসিফ খালিক।
চীন জোর দিয়ে বলছে যে মধ্যপ্রাচ্যে চলমান পরিস্থিতির সাথে এই মহড়ার কোনো সম্পর্ক নেই। তাছাড়া এটি তৃতীয় কোনো দেশকে লক্ষ্য করেও করা হচ্ছে না।
মহড়ায় চীন ৫টি গুরুত্বপূর্ণ জাহাজ পাঠিয়েছে। এসবের মধ্যে রয়েছে গাইডেড মিসাইল ডেস্ট্রোয়ার ইয়িনচুয়ান, গাইডেড-মিসাইল ফ্রিগেট ইয়ুচেঙ, কম্প্রেহেনসিভ সাপ্লাই শিপ ওয়েশানহু ও সাবমেরিন রেসকিউ শিপ লিয়াগুনদাও। আর পাকিস্তান দুটি জুলফিকার ক্লাস এফ২২পি/এফ২১ ফ্রিগেট, দুটি ফাস্ট অ্যাটাক্ট ক্রাফট, একটি সাবমেরিনে টহল বিমান, দুটি জাহাজবাহী হেলিকপ্টার মোতায়েন করেছে।
জানা গেছে যে দুই নৌবাহিনী আরো কিছু প্রশিক্ষণ কর্মসূচি পরিচালনা করবে। এসবের মধ্যে রয়েছে যৌথ টহল, বিমান প্রতিরক্ষা, যৌথ সাবমেরিন বিধ্বংসী মহড়া। বলা হচ্ছে, পাকিস্তান নৌবাহিনী তাদের কারিগরি ও কৌশলগত সক্ষমতা বাড়াতে এই মহড়াকে ব্যবহার করছে।
চীন ও পাকিস্তানের মধ্যে কয়েক দশক ধরে কৌশলগত অংশীদারিত্ব উপভোগ করছে। তারা বেশ কিছু সামরিক মহড়া পরিচালনা করেছে। তবে এসব মহড়া আরো বেশি জটিল হচ্ছে এবং চীন-পাকিস্তান বন্ধুত্ব প্রতীকীভাবে প্রদর্শনের চেয়েও বড় কিছু হয়ে আত্মপ্রকাশ করছে। সাম্প্রতিক চীন-পাকিস্তান-ইরান-রাশিয়া নৌমহড়ার আলোকে এসব দ্বিপক্ষীয় মহড়াকে বিবেচনা করা উচিত। এসব মহড়ায় ভারত ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলোও সম্ভবত উদ্বিগ্ন হবে।
দি ডিপ্লোম্যাট