সোলাইমানির হত্যাকাণ্ড : আগে ও পরে
কাসেম সোলাইমানি - ছবি : সংগ্রহ
ইংরেজি নববর্ষের শুভেচ্ছা ও শান্তি বিনিময় যখন অব্যাহত তখনই ইরানের কুদস ফোর্সের কমান্ডার মেজর জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে (৬২) টার্গেট করে দু’টি এমকিউ রিপার ড্রোন থেকে রকেট হামলা করা হয় বাগদাদ বিমানবন্দরে। নিখুঁত টার্গেটে কাসেম ছাড়া আরো ১০ জন ইরানি ও ইরাকে শীর্ষস্থানীয় সেনা কমান্ডার নিহত হয়েছেন। পেন্টাগন বলেছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্দেশে এই হামলা চালানো হয়েছে। সংবাদটি দ্রুত বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে সোলাইমানির ক্যারিশমেটিক চরিত্র এবং রাজনৈতিক ও সামরিক প্রজ্ঞার বিষয়টি বিশ্ববাসীর মধ্যে আলোচিত হতে থাকে। ট্রাম্প বলেন, 'This is not a warning but a threat.'
প্রভাবশালী জেনারেল সোলাইমানি সুপরিচিত কুদস ফোর্স পরিচালনা করতেন। এই ফোর্সের কাজ হলো ইরানের বাইরে বিভিন্ন দেশে ‘গোপন অভিযান’ পরিচালনা করা। সোলাইমানি তার কাজের জন্য শুধু আয়াতুল্লাহ খামেনির কাছে জবাবদিহি করতেন। ১৯৯৮ সালে ‘কুদস ফোর্স’ প্রতিষ্ঠিত হয়। এর পর কোথায় কোন সময় কুদস ফোর্স অভিযান পরিচালনা করেছে তা তেমন জানা যায় না। এতই গোপন ছিল তার সামরিক ও গোয়েন্দা অভিযান। বাগদাদে আমেরিকান দূতাবাসে বিক্ষোভ চলাকালে এবার দূতাবাস ভাঙচুর করা হয়, সম্পত্তির ক্ষতি সাধন ও অগ্নিসংযোগও হয়েছে। দূতাবাসকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছিল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, ইরানের কুদস ফোর্স এই ঘটনার জন্য দায়ী। শিয়া মিলিশিয়ারাই দূতাবাসে হামলা চালায় বলে ধারণা করা হয়। লেবানন থেকে সোলাইমানি নাকি ইরাকে গিয়েছিলেন। ইরানের রেভ্যুলশনারি গার্ড ও কুদস ফোর্স কেন এত গুরুত্বপূর্ণ? মধ্যপ্রাচ্যে ইরান যে প্রভাব বলয় সৃষ্টি করছে তার ‘মূল কারিগর’ এই কাশেম সোলাইমানি। ইরাকে তেহরানের প্রভাব সৃষ্টি করা, সিরিয়ায় ও লেবাননেও প্রভাব সৃষ্টি, ইয়েমেনের বিদ্রোহী হুতিদের সাথে যোগাযোগ- সবই কমান্ডার কাসেম সোলাইমানির ‘সামরিক কারুকাজ’। সিরিয়া, লেবানন, ইরাক ও ইয়েমেনে যেসব অপারেশন পরিচালিত হয়েছে তার মাস্টারমাইন্ড মনে করা হয় কাসেম সোলাইমানিকে।
এ চারটি দেশে অনেক সুন্নি মুসলমান রয়েছে; অথচ এখানেই সোলাইমানি আন্ডারগ্রাউন্ড অপারেশন করে সাফল্য লাভ করেছেন। ইরান পররাষ্ট্রনীতিতে কী পদক্ষেপ নেবে তা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলে দিলেও শেষ কথা তিনিই বলতেন। অর্থাৎ তার মতামতই শুধু গৃহীত হয়ে আসছে বলে মনে করা হয়। তিনি জীবদ্দশাতেই ইরানের জাতীয় বীরের মর্যাদা পেয়েছেন এবং মিডিয়ায় ফলাও করা হয় তার ব্যক্তিত্ব ও চরিত্র। আমেরিকার রাজনৈতিক রাডারে সব সময় সোলাইমানিকে ফলো করা হতো। কেননা ইরান মধ্যপ্রাচ্যে যে ভূ-রাজনৈতিক শ্রেষ্ঠত্ব বা প্রভাব তৈরি করতে চায়, সেটি রোধ করতে হলে সোলাইমানি ও কুদস ফোর্সের লাগাম টেনে ধরতে হবে আমেরিকাকে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ বলছেন, আমেরিকা যে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদকে লালন করছে এই হত্যাকাণ্ড তার আরো একটি উদাহরণ। ইরানের বর্তমান সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি বলেছেন, ‘যারা এই কাজ করেছে (সোলাইমানিকে হত্যা) তাদের জন্য কঠিন সাজা অপেক্ষা করছে।’ অতীতে আয়াতুল্লাহ খামেনি বলেছিলেন, ‘আমেরিকা শয়তান আর রাশিয়া শয়তানের লেজ। এদের পতন হবেই।’
যেকোনো সময় মধ্যপ্রাচ্যে বড় ধরনের যুদ্ধ শুরু হতে পারে। মাত্র সেদিন ইরানসংলগ্ন উপসাগরের হরমুজ প্রণালীতে যুদ্ধ হলো। সেখানে আর কয়েকটি দেশের পর এবার অস্ট্রেলিয়া এবং দক্ষিণ কোরিয়াও যোগ দিতে সেনা ও জাহাজ পাাঠিয়েছে।
এমন বিস্ফোরণোন্মুখ সময়ে সোলাইমানির হত্যা যুদ্ধের সুপ্ত হলাহলকে উসকে দিয়েছে। যেকোনো সময় ভয়াবহ প্রতিশোধের ঘটনা ঘটতে পারে। তা থেকে বড় যুদ্ধ শুরু হতে কতক্ষণ?
কুদস ফোর্সকে ‘সন্ত্রাসী’ বলার পর মরহুম সোলাইমানি মিডিয়ায় বলেছিলেন, ‘এমন অনেক ট্রাম্পকে আমরা মাটিতে পুঁতেছি।’ ইতঃপূর্বেও দেখা গেছে, যারা যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বেশি সরব, তাদের হত্যা করা হয়েছে। লাদেন, বাগদাদি, এবার সোলাইমানি। এরা ছাড়াও ইসরাইলের মোসাদ ইরানি বিজ্ঞানী মাসুদ আলী মোহাম্মদী, মাজিদ শাহরিয়ারি, দারিউস রেজায়ীনিজাদ, মোস্তফা আহমদি প্রমুখকে বিভিন্ন সময়ে হত্যা করেছে। জ্ঞান ও সমরে যেন ইরান মাথা তুলতে না পারে মার্কিন-ইসরাইল বাহিনী নিয়মিত সেই লক্ষ্যে ঘটনা ঘটিয়ে যাচ্ছে।
কাসেম সোলাইমানি যুদ্ধরত প্রায় সব দলের পরিচালক। ইরানের কুদস ফোর্সের মতো ইরাকের পপুলার মোবিলাইজেশন ফোর্সেরও তিনি ছিলেন কার্যত প্রধান! এই দল সরাসরি সোলাইমানির কাছে জবাবদিহি করে এসেছে। ইরানের ‘সব অঘোষিত যুদ্ধের নায়ক’ এবং আফগানিস্তান থেকে ইরাক, সিরিয়া, লেবানন ও ইয়েমেন পর্যন্ত যুদ্ধ ও ছায়াযুদ্ধের নির্দেশ ও পরামর্শদাতা হিসেবে তিনি আলোচিত। তিনি যেখানে পদচারণা করেছেন সেখানে রক্ত বয়ে গেছে বলে সমালোচনা করা হয়েছে। বলা যায় তিনি ‘ইসলামিক সিভিল ওয়ার’ দর্শনের নতুন ব্র্যান্ড এবং লক্ষ্য অর্জনে হিংস্রতাকে প্রয়োগ করে অন্তত শিয়া বিশ্বে কিংবদন্তির নায়কে পরিণত হয়েছেন। সিরিয়ায় ইরানের লক্ষ্য অর্জনে যুদ্ধ ও হত্যা, গোপন লড়াই আলেপ্পোর ধ্বংসযজ্ঞ- এসব কিছুর সাথে তাকে যুক্ত করা হয়েছে। তিনি তুরস্কের বিরুদ্ধে সিরিয়ায় কমান্ড পরিচালনা করেছেন বলেও জানা যায়। ঝুঁকিপূর্ণ এসব যুদ্ধের কারণে ইরান সিরিয়া ও ইয়েমেনে শক্তিশালী পক্ষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সোলাইমানির সমালোচকরা বলছেন, সৌদি আরবও ছিল তার লক্ষ্য।
আরব আমিরাতের প্রিন্স মোহাম্মদ বিন জায়েদ এবং সৌদি প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান সৌদি ফ্রন্টের নেতৃত্ব দিচ্ছেন আর সোলাইমানি ইরান তথা শিয়া ফ্রন্টের নেতৃত্ব দিয়েছেন। এ দু’টি ফ্রন্টে বিরোধ-হত্যা-যুদ্ধ মার্কিন পেন্টাগনের কাছে প্রাধান্য পেয়েছে। ইহুদি লবি-যুক্তরাষ্ট্রের অভীষ্ট লক্ষ্যের অনেকখানি এই বলয় পূরণ করে দিচ্ছে, আমেরিকার নব্য রক্ষণশীল বা ‘নিউকন’ ও ইসরাইলের চরম ডানপন্থী গোষ্ঠীর অ্যাজেন্ডাও এটি। এ বিষয়ে আমার একটি কলাম গত বছরের জুনে নয়া দিগন্তে প্রকাশিত হয়েছিল। ১৯৯১ সালের উপসাগরীয় যুদ্ধের পর যত যুদ্ধ হয়েছে, সব এই ধাঁচের এবং আরব দুনিয়ার মাটিতেই তা হয়েছে।
ইরাকে ইরানিদের প্রভাব অনেকেই ভালো চোখে দেখেনি। সেখানে সুন্নিরা বহুদিন ধরে নিপীড়িত। আমেরিকার চেয়ে শিয়া বনাম সুন্নি বিরোধ ইরাককে বেশি ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছে। অপর দিকে, ইরাকি কুর্দিরা প্রতিনিয়ত সব মাল-মসলা আমেরিকার হাতে তুলে দিচ্ছে। জনরোষ ও বিক্ষোভে ইরাকি সেনারা গত কয় মাসে ৪০০ মানুষকে হত্যা করেছে। ইরাকে আমেরিকার সরাসরি যুদ্ধ করার কী প্রয়োজন আছে? ইরাকের জনসাধারণ, সুন্নি ও কুর্দিরা ইরানের আধিপত্য চায় না। তাই আমেরিকা এদের ইরানের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে চায় এবং তাহলে ইরাকি সরকার আরো দুর্বল হয়ে ইরানের দিকে ঝুঁকে পড়তে পারে। ওই অঞ্চলে শান্তির দেখা আর মিলবে না সে অবস্থায়।
যুক্তরাষ্ট্রের হাউজ স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের যুদ্ধক্ষমতা কমিয়ে আনার জন্য হাউজে প্রস্তাব ওঠানো হচ্ছে। কেননা সোলাইমানি হত্যার পর মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বদলে গেছে।
ট্রাম্পের গত তিন বছরের শাসনে ইরানের সাথে সবচেয়ে খারাপ সম্পর্ক সৃষ্টি হয়েছে আমেরিকার, যা গত এক দশকেও হয়নি। বিশেষত এবার ৩ জানুয়ারির পর সম্পর্ক খুব খারাপ হয়েছে। ইরান ৫ জানুয়ারি পরমাণু চুক্তি সম্পূর্ণ পরিত্যাগ করে ২০ ডিগ্রি থেকে ওয়েপন গ্রেড ইউরেনিয়াম তৈরি করতে শুরু করেছে এবং এমনকি পরমাণু বোমা তৈরি করার ঘোষণা দিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে বলা যায়, একমাত্র ইরানই যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের পরিপন্থী। জেনারেল সোলাইমানির হত্যাকাণ্ডের পর আইএস ইউরোপে যুক্তরাষ্ট্র্রের বিভিন্ন স্থাপনায় আঘাত করার ঘোষণা দিয়েছে।
সিআইএর ডেপুটি ডাইরেক্টর মাইকেল কলিন্স বলেছেন, চীনও যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কোল্ড ওয়ার শুরু করেছে। রাশিয়া তো আছেই। তাই ট্রাম্পের চরম পদক্ষেপে এ বছরের শুরু থেকেই আমেরিকা এক বিপজ্জনক পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়ে গেছে। চীন শিগগিরই সমরাস্ত্রের দিক দিয়ে আমেরিকাকে পেছনে ফেলে দেবে। সেই চীন মধ্যপ্রাচ্যে ইরানকে সমর্থন দিয়েছে। অপর দিকে, আইএস নাইজেরিয়া, লিবিয়া ও পাকিস্তানে নিজেদের পুনঃগঠন প্রক্রিয়া শুরু করেছে। সিরিয়া ও ইরাকে আইএস পরাজিত হলেও আমেরিকা ও তার মিত্রদের স্বার্থে তার আঘাত করার শক্তি আগের চেয়ে বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে। আশঙ্কা হয়, আইএস, আলকায়েদা, আল শাবাব ও বোকো হারামকে সমর্থন দিতে ইরানি কুদস ফোর্স এখন আর কাউকে তোয়াক্কা করবে না। ফলে ক্ষমতাদর্পী আমেরিকার বিভিন্ন সেক্টরে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সঙ্কট বেড়ে গেছে।
আমেরিকার যুদ্ধজাহাজ ‘আব্রাহাম লিংকন’, যেখানে ৫০টি যুদ্ধবিমান ও ছয় হাজার নৌ-কমান্ডো রয়েছে; সেটি একসময় পারস্য উপসাগরে ভীতির সৃষ্টি করলেও এখন জাহাজটি ইরানের টার্গেটের মধ্যে। হামলা আক্রমণের জন্য ইরান এটাকে মোক্ষম সুযোগ মনে করে। ট্রাম্প বলেছেন, ''Iran never won a war, but it never lost a negotiation.' এই কেরিয়ার আক্রান্ত হলে পেন্টাগন বড় হামলা চালাবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। উল্লেখ্য, ন্যাটো একচেটিয়াভাবে আমেরিকার স্বার্থেই ব্যবহৃত হয়েছে। সেই জোট আর আগের মতো শক্তিশালী নেই। বড় ইউরোপীয় দেশগুলোও সোলাইমানি হত্যাকাণ্ডে আমেরিকাকে সমর্থন দেয়নি। খোদ পম্পেও সে কথা স্বীকার করেছেন।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সোমালি সীমান্তে মান্দা বে এয়ারফিল্ডে আল শাবাব বাহিনী তিনজন আমেরিকানকে হত্যা এবং ছয়টি বেসরকারি বিমানকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। ওইসব বিমান ঘাঁটিতে ছিল। আল শাবাবের সাথে আলকায়েদার যোগাযোগ রয়েছে।
মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট ইরাকে ভ্রমণের আগে ‘ওসিয়তনামা লিখে রাখা এবং নিজের ‘অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার ধর্মীয় আয়োজন’ নিজেই সম্পন্ন করে তারপর ভ্রমণের উপদেশ দিয়েছে। ইরাকে স্থানীয় স্টাফদের পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত দূতাবাসে না আসতে বলেছে, শুধু ইরাকি কুর্দিস্তানের ইরবিলের মার্কিন কনস্যুলেট খোলা রাখা হবে। ইরবিল কুর্দিরা পাহারা দিচ্ছে। কিন্তু সিরিয়ায় আমেরিকা যে ‘বেঈমানি’ করেছে, তাতে কুর্দিরা কোন সময় মোড় নেয়, বলা কঠিন।
সোলাইমানির হত্যাকাণ্ডের পর ইরাকি পার্লামেন্টে সব বিদেশী সৈন্য সে দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার বিল পাস হয়েছে। এখন ইরাক আরো একটি নতুন সঙ্কটে পড়ল; মার্কিন চাপ ও সামরিক কৌশলে যতটুকু শ্লথ গতি ছিল তা এখন জোরদার হবে। এমন হতে পারে তা আমেরিকার ধারণায় ছিল। তাই তারা দুই বছর আগে ইরবিলে বিশ্বের সবচেয়ে বড় কনস্যুলেট তৈরি করার কাজ শুরু করেছিল। এখন সেখানে আমেরিকার ঘাঁটি আরো পাকাপোক্ত করা হবে। ‘যে বোঝা বইতে পারে না’ সে বোঝাই ইরাক মাথায় নিয়েছে।
তার নিজের লোকজন সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত রাস্তায় বিক্ষোভ করছে সরকারের ব্যর্থতার বিরুদ্ধে। সেটি সামাল দেয়া মোটেও সম্ভব হচ্ছে না। ইরানের সরাসরি আমেরিকার সাথে যুদ্ধ করার শক্তি থাকার কথা নয়। এখন ইরান-যুক্তরাষ্ট্র বিরোধ ও সঙ্ঘাত ইরাকের মাঠিতে শুরু হবে। জজবা এক জিনিস আর গ্রাউন্ডে যুদ্ধ করা ভিন্ন বিষয়। অনেকের মতে, অবরোধের কারণে ইরান বিমানবাহিনীকে ঢেলে সাজাতে পারেনি। নিজস্ব বিমানগুলো নতুন প্রজন্মের মার্কিন বিমানের সাথে হয়তো পাল্লা দিতে পারবে না। তবে রাশিয়া যদি নতুন বিমান সরবরাহ করে তবে তা হবে ইরানের জন্য আনন্দের বিষয়। ইরান প্রক্সিযুদ্ধ শুরু করাই স্বাভাবিক, যা সোলাইমানি বহু আগেই শুরু করেছিলেন। ইরান সৌদি আরবেও আঘাত হানতে পারে। ইরানের জন্য এই কাজ কঠিন নয়। হুতিদের আক্রমণ আরো জোরদার হবে। ওদের মিসাইল আবারো সৌদি তেলের গুদামে আঘাত করতে পারে। হিজবুল্লাহও যুদ্ধের দামামা বাজাচ্ছে। তারা মাঝে মধ্যে এটা করে থাকে।
আরব দেশগুলোর এমন চিন্তা করা ঠিক নয় যে, জ্বালানি তেল বিক্রি করে সব খরচ মেটানো হবে। আমেরিকার রিজার্ভে প্রচুর তেল আছে। আরবদের তেল রিজার্ভ ফুরিয়ে গেলে য্ক্তুরাষ্ট্র তেল উৎপাদন করবে। সমুদ্র থেকে তেল আহরণ এক সময় কঠিন কাজ ছিল। এখন অনেকে দেশে ড্রিল করে তেল তুলছে সাগর থেকে। তাই ‘ওপেক’ চাইলেই তেলের বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। অনেক সময়ের দরকার হলেও ইরান তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যেই পরমাণু বোমা বানাতে পারবে। ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ইরানকে তা অর্জন করতে দেয়া হবে না। মোট কথা, বড় ধরনের যুদ্ধের ঝুঁকি রয়েই গেছে।
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব ও গ্রন্থকার