সেই লাবুশেন এখন স্বপ্নের নায়ক
লাবুশেন - ছবি : সংগৃহীত
সকাল দেখে ধারণা করা যায় না দিনটা কেমন যাবে। অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান মার্নাস লাবুশেনের শুরুটা দেখেও ধারণা করা যায়নি তার দুপুর যে এমন জ্বলজ্বলে হবে। রাতের আধার শেষে সকালে সূর্যের হাসি প্রাকৃতিক নিয়মেই সবাই চায়। ক্রিকেটও অন্ধকার সময়টা পার করে ব্যাটে রানের হাসি ব্যাটসম্যানদেরকাম্য। সেই হাসিটাই যেন ভর করেছে লাবুশেনের ব্যাটে।
২০১৮ সালের ৭ অক্টোবর দুবাইতে পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেট দিয়ে অভিষেক হয় লাবুশেনের। অভিষেকটা একদমই সুখকর ছিল না। ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট খেলতে নেমে রানের খাতা খোলার আগেই মাত্র ৩ মিনিট ক্রিজে থেকে সাজঘরে ফিরতে হয় তাকে। দ্বিতীয় ইনিংসেও নিজেকে মেলে ধরতে হন ব্যর্থ। এবার শূন্য নয়, ১৩ রানে সন্তুষ্ট থাকতে হয় তাকে।
ক্যারিয়ারের প্রথম আট ইনিংসে নামের পাশে মাত্র একটি ফিফটি। অস্ট্রেলিয়ার মতো দলে এমন পারফরম্যান্স করে নিজের জায়গা নিয়ে শঙ্কা থাকাও একটি বিষয়; কিন্তু কপালে যদি লিখা থাকে খন্ডায় কে? দলের দুই অন্যতম ব্যাটসমান ডেভিড ওয়ার্নার ও স্টিভেন স্মিথের উপর আইসিসির নিষেধাজ্ঞা থাকায় লাবুশেন এতদিন খেলতে পেরেছেন। যখনই দলে তারা ফিরলেন লাবুশেনেরও হারাতে হয় তার জায়গাটি। সুযোগের সৎ ব্যাবহার করতে না পারায় অ্যাশেজ সিরিজে শুরুতে সাইডলাইনে বসে থাকতে হয় তাকে। কিন্তু অ্যাশেজের তৃতীয় টেস্টে ভাগ্য আবারো অজি তারকার পাশে এসে দাঁড়ায়। লর্ডস টেস্টে স্মিথ ইনজুরির শিকার হলে বিশে^ প্রথম ‘কনকাশন সাব’ (বদলি খেলোয়াড়) হিসেবে দলে সুযোগপান লাবুশেন। দ্বিতীয় সুযোগে ক্যারিয়ারের পথটা পাল্টে ফেললেন এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান।
স্মিথের জায়গায় ব্যাটিং করতে হলে একজন ব্যাটসম্যানের যে যোগ্যতা লাগে, তা তিনি শিখিয়ে দিয়েছেন তিনি। অ্যাশেজে তুলে নিয়েছেন টানা চারটি অর্ধশতক। স্মিথের ইনজুরি তার উত্থানের পথ তৈরী করে দেয়। শিখে নেন স্মিথ কীভাবে দলকে সামনের দিকে এগিয়ে নেন। তারই যোগ্যউত্তরসূরী তিনি। যার প্রামণ এই পরিসখ্যানে তাকালেই বুঝা যায়, ক্যারিয়ারের প্রথম আট ইনিংস যথাক্রমে- ০, ১৩, ২৫, ৪৩, ৩৮, ৮১, ৬ ও ৪ রান এবং সর্বশেষ আট ইনিংস- ১৮৫, ১৬২, ১৪৩, ৫০, ৬৩, ১৯ (রান আউট), ২১৫ ও ৫৯ রান।
গত নভেম্বরে ব্রিসবেন ও অ্যাডিলেডে পাকিস্তানের বিপক্ষে তুলে নেন দুটি সেঞ্চুরি। পার্থে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১৪৩ রানের ইনিংস খেলে করেন সেঞ্চুরির হ্যাটট্রিক। গতকাল শেষ হওয়া এই সিরিজে তুলে নেন ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি এবং দ্বিতীয় ইনিংস খেলেন অর্ধশতকের ইনংস।
৬০.০০ রান গড়ে ১৮ ইনিংসে স্পর্শ করেন ক্যারিয়ারে এক হাজার রানের মাইলফলক। স্মিথের একটি ইনজুরি জন্ম দিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার নতুন এক স্মিথ। সর্বশেষ কয়েকটি ইনিংসে স্মিথ ব্যর্থ হলেও জ্বলে উঠছেন নতুন স্মিথ (লাবুশেন)। ২০১৯-২০ মৌসুমে ১১২ গড়ে ৮৯৬ রান সংগ্রহ করেন লাবুশেন। যা এক মৌসুমে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে সর্বোচ্চ অ্যাভারেজধারী ক্রিকেটারও তিনি। এর আগে ২০০৩-০৪ মৌসুমে ১০৭.২২ গড়ে ৯৬৫ রান করেছিলেন রিকি পন্টিং। একই মৌসুমে ১০৫.৭৭ গড়ে ৯৫২ রান করেন ম্যাথু হেডেন।
স্টিভেন স্মিথকে বর্তমান টেস্ট ক্রিকেটের সেরা ব্যাটসম্যান বললে হয়তো ভুল কিছু হবে না। সেই স্মিথকেও ছাড়িয়ে গেছেন লাবুশেন। স্মিথের যেখানে ৬২.৮৪ সেখানে লাবুশেনের গড় ৬৩.৪৩। এমন জাদুকরি পারফরম্যান্সে স্মিথের সাথে তুলনা করা হচ্ছিল তাকে; কিন্তু স্পষ্টভাবে লাবুশেন সেটাক উড়িয়ে দিলেন। সাংবাদিকদের লাবুশেন বলেন, ‘স্মিথের সাথে কোনো তুলনা নয়। স্মিথ অনেক উচ্চমানের ক্রিকেটার। তাকে সবাই দেখুন এবং তার খেলা উপভোগ করুন।’ তিনি আরো বলেন, ‘স্মিথ তুলনায় আমি জিরো।’
মূলত স্মিথের জয়গায় ব্যাট করতে নামা, এটাই তার উৎসাহ-উদ্দীপনার জায়গা। যা তিনি অ্যাশেজে বলেছিলেন। নিজের ভবিষ্যত ক্যারিয়ারটাকে যে আরো রাঙাতে চান সেই প্রত্যাশার কথাও জানিয়ে দিয়েছেন এবার। দেখার বিষয় লাবুশেন নিজেকে কতদূর নিয়ে যান।