ইরান কি করতে পারে?
ইরানি সামরিক বাহিন - ইরান কি করতে পারে?
শীর্ষ কমান্ডার কাসেম সোলাইমানকে হত্যা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ইরান বলেছে, তারা এর প্রতিশোধ নেবে। এখন সবারই প্রশ্ন হলো, ইরান কিভাবে সেই প্রতিশোধ নেবে? দু’দেশের সামরিক সক্ষমতার মধ্যে বিস্তর ব্যবধান রয়েছে। এ নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মত দেখা যায়। তুরস্কের জনপ্রিয় দৈনিক ইয়েনি সাফাক পত্রিকার সম্পাদক ইব্রাহিম কারাগুলের মতে, ইরান কখনো যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরাইলের বিরুদ্ধে সরাসরি লড়াই করবে না। এখন যে সংকট বা উত্তেজনা, তা শেষ পর্যন্ত পারস্পরিক হুমকির বাইরে খুব একটা যাবে না। তার পর্যবেক্ষণ অনুসারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরাইল সিরিয়া ও ইরাকে ইরানি লক্ষ্যবস্তুতে যখন আঘাত করছিল, তখনো তেহরান কোনো সাড়া দেয়নি। তিনি ট্রাম্পের একটি বক্তব্যের উল্লেখ করেছেন। এতে ট্রাম্প বলেছেন, ‘ইরান কখনোই যুদ্ধে জেতেনি, তবে এটি কখনো কোনো আলোচনায় পরাজিত হয়নি।’ ট্রাম্পের এই বক্তব্যে ইঙ্গিত পাওয়া যেতে পারে যে, আলোচনার সময় শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু এখন যে সমঝোতার কথা বলছেন, তা কি কৌশলের বিষয় নাকি তিনি সত্যি সত্যি যুদ্ধ এড়াতে চান, সে বিষয়ে তেহরানের নিশ্চিতভাবেই সন্দেহ রয়েছে বলে মনে হয়।
কারাগুলের যে পর্যবেক্ষণ তা আংশিক সত্য হতে পারে। ইরান যে ভেবেচিন্তে পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলেছে, তাতে মনে হয়, সোলাইমানির হত্যার প্রতিশোধ কার্যক্রম ইরাকের মাটিতেই নেয়া হবে। যুক্তরাষ্ট্র এবং ইরান তাদের প্রভাব আরো বাড়ানোর জন্য যুদ্ধকে ইরাকে বাড়িয়ে তুলছে। অনেকের মতে, আসলে এ সঙ্ঘাত ইরান এবং সৌদি আরবের মধ্যে সঙ্ঘটিত হতে চলেছে। ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে শক্তির যে লড়াই ইরাকে কয়েক সপ্তাহ ধরে চলছে, আমেরিকার পদক্ষেপে তা আরো বড় হচ্ছিল। এখন এর মাত্রা আরো বাড়তে পারে।
উত্তেজনা বাড়লেও ইরান যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সরাসরি বা আনুষ্ঠানিক লড়াইয়ে এবারো সম্ভবত নামবে না। দেশটি প্রক্সি যুদ্ধের মাধ্যমে পরোক্ষ উপায়ে মার্কিন পদক্ষেপের সাড়া দেবে। ইরান তার ছায়া সহযোগী শক্তির মাধ্যমে পরোক্ষ উপায়ে আফগানিস্তান থেকে লেবানন সিরিয়া বা আশপাশের দেশে মার্কিন স্বার্থে আঘাত করতে পারে। সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো যুক্তরাষ্ট্রের উপসাগরীয় মিত্র দেশগুলোতেও আঘাত করতে পারে। ‘হাউছি ক্ষেপণাস্ত্র’ সৌদি অপরিশোধিত তেলের সরবরাহ সুবিধা, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতি অথবা দুবাইয়ের ওপর পড়তে পারে। অন্য দিকে, যুক্তরাষ্ট্রও ইরানের মূল ভূখণ্ডের পরিবর্তে বাইরের দেশে ইরানি শক্তি বা প্রক্সির ওপর আঘাত হানতে পারে। আমেরিকার ভূ- রাজনৈতিক কৌশল হলো মুসলিম বিশ্বে বিবদমান শক্তি ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে লালন করে যাওয়া। ফলে চূড়ান্ত কোনো লড়াই, যেখানে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র দু’পক্ষেরই বিপুল ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে তাতে আমেরিকাও নামবে বলে মনে হয় না। তবে মাত্রা যাই হোক না কেন মধ্যপ্রাচ্যে বড় ধরনের যুদ্ধের সূত্রপাত হওয়ার যে শঙ্কা সেটিই জেগে উঠবে সব ধরনের আঘাত আর পাল্টা আঘাতে। একপর্যায়ে যুদ্ধ ও শোডাউন ইরাকের সীমানা ছাড়িয়ে উপসাগরে তীব্র হতে পারে। এর অর্থ, ইরান-সৌদি সংঘর্ষ। একই সাথে এর অর্থ হবে, পারস্য উপসাগরে বিবদমান পক্ষগুলোর হুমকি ক্রমেই বৃদ্ধি পাওয়া। এরপর মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি সম্ভবত আরো অনেক বেশি জটিল হয়ে উঠবে যার প্রভাব পড়বে বিশ্ব রাজনীতিতে। আর পরিস্থিতির উপর নিয়ন্ত্রণহীনতা সৃষ্টি হলে তা নিয়ে তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধ বেধে যাওয়ার যে আশঙ্কার কথা বলা হয়, তা ঘটে যাওয়াটাও বিচিত্র কিছু নয়।
mrkmmb@gmail.com