খাওয়ার সময় যেসব সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে
খাওয়ার সময় যেসব সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে - ছবি : সংগ্রহ
মুখরোচক পছন্দসই খাবার পেলে আমরা কোনো বাছ-বিচার না করেই মুখে পুড়ে দেই। কিন্তু আপনি জানেন কি? এ পছন্দের খাবারের সাথেই আপনি হয়তো খেয়ে নিচ্ছেন মারাত্মক কোনো অসুখের জীবাণুকে। কারণ খাদ্য গ্রহণে অসতর্কতার জন্য বেশির ভাগ রোগের জীবাণু খাদ্য ও পানির মাধ্যমে আমাদের দেহে প্রবেশ করে। তাই শুধু একটু খাদ্য সতর্কতা, সাবধানতা, কিছু পরামর্শ মেনে চললেই আপনি বেঁচে থাকতে পারেন কঠিন কোনো অসুখের ছোবল থেকে। আসুন দেখা যাক খাদ্য সতর্কতার এ, বি, সি, ডি ও ই-গুলো কী কী-
(অ) ‘এ’ ফর এডিটিভস : রঙ মেশানো খাবার সুন্দর দেখায়, এটা সবাই জানেন। কিন্তু বিপদের কথা হলো- আজকাল খাবারে যেসব রঙ মেশানো হচ্ছে (যেমন মেটালিক ইয়েলো) তা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই বিপজ্জনক। এদের ক্ষতিকারক প্রভাব সম্বন্ধে যা জানা গেছে তার তালিকা না বাড়িয়ে এটুকু বললেই যথেষ্ট হবে যে, এরা ক্যান্সারের অগ্রদূত। তাই সবার জন্য পরামর্শ এই, ঘরে তৈরি খাবার বেশি খান, দোকানের খাবার যথাসম্ভব পরিহার করুন। কৃত্রিম রঙ ও প্রিজারভেটিভ ব্যবহৃত হচ্ছে না যেসব খাবারে, শুধু সেগুলোই কিনুন। এ তো গেল রঙের কথা। এসব ছাড়াও আপনার পছন্দের প্যাকেট স্যুপ, টিনজাত খাবার, পটেটো চিপস ও সসের মধ্যে থাকে মোনাসোডিয়াম গ্লুটামেট, যা অনেকের মাথাব্যথা ও অ্যালার্জি বাড়িয়ে দেয়। বিশেষ করে গর্ভবতী মহিলা ও ছোট শিশুদের জন্য ক্ষতিকর। যাদের উচ্চ রক্তচাপ কিংবা ডায়াবেটিস রয়েছে, তাদের এসব খাবার থেকে কিডনির অসুখ হতে পারে। থ্যালাসেমিয়া রোগীর জন্য কর্নফ্ল্যাকার্স হতে পারে বিপজ্জনক।
(ই) ‘বি’ ফর ব্যাকটেরিয়া : ব্যাকটেরিয়া ফুডপয়জনিংয়ের অন্যতম প্রধান কারণ। এরা খুব তাড়াতাড়ি খাদ্যের দ্বিগুণহারে বাড়তে থাকে এবং টকসিন তৈরির মাধ্যমে খাদ্যে বিষক্রিয়ার সৃষ্টি করে। বিশেষ করে বোতলজাত খাবার, আচার, জেলি, নোনা মাছ, হোটেলের খাবার বা ঘরে খাদ্য বাসি হলে ব্যাকটেরিয়ার বিষক্রিয়ার সম্ভাবনা থাকে। এসব খাদ্য গ্রহণের ১২ থেকে ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে বমি, পাতলা পায়খানা, চোখে ঝাঁপসা দেখা বা শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। তাই এমনটি হলে জলদি ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
(ঈ) ‘সি’ ফর ক্যানফুড : ক্যানজাত খাবার সংরক্ষণের অসতর্কতার জন্য অনেক সময় হয়ে ওঠে স্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। ক্যানের মুখটা প্রথম ভালোভাবে পরিষ্কার করুন। পরে ছিদ্র করে বা কেটে নিন। টিনের খাবার খোলাভাবে ফেলে রাখবেন না, ফ্রিজে রেখে দু’দিনের মধ্যে খেয়ে ফেলুন। আর ফ্রিজ নিয়মিত পরিষ্কার করুন এবং পরিমিত তাপমাত্রায় রাখুন।
(উ) ‘ডি’ ফর ড্রেন : বাসন-কোসন ধোয়ার পর রান্নাঘরের ড্রেন পরিষ্কার করুন। খেয়াল রাখবেন, যেন ড্রেনের মুখে ময়লা বেঁধে না থাকে। সপ্তাহে অন্তত একবর গরম পানিতে ব্লিচিং পাউডার মিশিয়ে পরিষ্কার করুন।
(ঊ) ‘ই’ ফর এগ : ডিম অবশ্যই ভালোভাবে সেদ্ধ করে খাওয়া উচিত। কাঁচা কখনওই খাবেন না। এতে টাইফয়েড জীবাণু থাকতে পারে। কাঁচা ডিম ধরার পর সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত ধুয়ে ফেলুন। ডিম সবসময় ফ্রিজে রাখুন এবং শিগগিরই খেয়ে ফেলুন। সর্বোপরি রয়েছে আমাদের হাত। হাতের মাধ্যমে সাধারণত বেশির ভাগ জীবাণু সংক্রমিত হয়। তাই হাত সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা উচিত। বিশেষ করে বাথরুম থেকে বের হওয়ার পর, ময়লা-আবর্জনা ধরার পর হাত অবশ্যই ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। আসুন এসব খাদ্যসতর্কতা মেনে চলে আমরা হয়ে উঠি খাদ্যসচেতন, দেহকে করে তুলি রোগমুক্ত।
লেখিকা : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় কর্মরত