সিটি নির্বাচনে বিপাকে আওয়ামী লীগ

নিজস্ব প্রতিবেদক | Jan 06, 2020 06:25 am
সিটি নির্বাচনে বিপাকে আওয়ামী লীগ

সিটি নির্বাচনে বিপাকে আওয়ামী লীগ - ছবি : অন্য দিগন্ত

 

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আলোচিত ও বিতর্কিত কাউন্সিলররা ফের মনোনয়ন পাওয়ায় বেশ ক্ষুব্ধ হয়েছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা। চলমান শুদ্ধি অভিযানে শুদ্ধ প্রার্থী বাছাইয়ের ব্যাপারে শুরু থেকেই দৃঢ় মনোভাব ছিল দলটির। কিন্তু প্রার্থী ঘোষণার পর অন্তত অর্ধশতাধিক বিতর্কিত প্রার্থী মনোনয়ন পাওয়ায় নতুন করে ভাবতে হচ্ছে আওয়ামী লীগকে। ফলে বিতর্কিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের মনোনয়ন দেয়া নিয়েও বিপাকে পড়েছে দলটি। ইতোমধ্যে স্থানীয় নেতাকর্মীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তিনটি ওয়ার্ডে প্রার্থীও পরিবর্তন করা হয়েছে। বিতর্কিত অন্যদের ব্যাপারে যাচাই-বাছাই চলছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

আওয়ামী লীগের ডিএসসিসি ও ডিএনসিসি কাউন্সিলর প্রার্থীদের তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, দুই সিটির ১২৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে মাত্র দু’টি ওয়ার্ডে নারী প্রার্থী দিয়েছে আওয়ামী লীগ। নতুন মুখ এসেছে ৫১টি ওয়ার্ডে। আর সংরক্ষিত ৪৩টি নারী ওয়ার্ডের মধ্যে ২৫টিতে এসেছে নতুন মুখ। এর মধ্যে ক্যাসিনো কাণ্ড, মাদক, দখলবাণিজ্য, পরিবহনে চাঁদাবাজি, ফুটপাথ নিয়ন্ত্রণ, বৈঠকে অনুপস্থিত থাকাসহ নানা বিতর্কে জড়িয়ে পড়ায় বাদ পড়েছেন ৪০ জন।

স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানান, প্রত্যেক ওয়ার্ডে একাধিক ত্যাগী ও যোগ্যপ্রার্থী থাকলেও তাদের মনোনয়ন না দিয়ে ক্যাসিনোকাণ্ড, টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ, মাদক কারবার, সরকারি ও ব্যক্তির জমি দখল, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্মের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে এমন ব্যক্তিদের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। দৃষ্টিহীন ব্যক্তিদেরও মনোনয়ন দেয়ায় নেতাকর্মীদের মধ্যে নানা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। ইতোমধ্যে ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে প্রথমে মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল মো: ইলিয়াস রশীদকে। স্থানীয় নেতাকর্মীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে পরিবর্তন করে মো: আউয়াল হোসেনকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।
৪১ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান কাউন্সিলর সরোয়ার হোসেন আলো। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে তার ব্রেইন স্ট্রোক হলে তিনি দুই চোখের দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন। বর্তমানে আলো অন্যের সাহায্য ছাড়া চলাফেরা করতে পারেন না বলে জানিয়েছেন ওয়ারী থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও কাউন্সিলর প্রার্থী রশিদুল হক ভূঁইয়া। এমন অবস্থায় সরোয়ার হোসেন আলো কিভাবে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেলেন এ নিয়ে স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ও নানা সংশয় দেখা দিয়েছে। স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানান, ৪১ নম্বর ওয়ার্ডে একাধিক যোগ্যপ্রার্থী থাকা সত্ত্বেও একটি সিন্ডিকেট একজন অসুস্থ ও দৃষ্টিহীন মানুষকে মনোনয়ন পাইয়ে দিয়েছেন। ওই সিন্ডিকেট আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে ডুবানোর জন্যও কাজ করছেন। তা ছাড়া যিনি অন্যের সাহায্য ছাড়া চলাফেরা করতে পারেন না তিনি কিভাবে নির্বাচন করবেন আর এলাকার মানুষের সেবা কিভাবে করবেন এ নিয়ে জনমনে বড় ধরনের প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে সরোয়ার হোসেন আলোর ব্যক্তিগত ফোনে কল দিলে তিনি রিসিভ করেননি।

৫ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়েছেন বর্তমান কাউন্সিলর আশ্রাফুজ্জামান ফরিদ। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ- জমি দখল, মাদক ব্যবসা, সরকারি জমিতে বাজার বসিয়ে অর্থবাণিজ্য, সিএনজি স্টেশন থেকে মাসিক চাঁদা আদায় করেন ফরিদ। সম্প্রতি আওয়ামী লীগের শুদ্ধি অভিযান চলাকালে ক্যাসিনোকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে একাধিক গণমাধ্যমে বিভিন্ন সংবাদও প্রকাশিত হয়েছে। এসব বিষয়ে তার ব্যক্তিগত মোবাইলে গতকাল ফোন দিলে তিনি রিসিভ না করায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। ১২নং ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়েছেন বর্তমান কাউন্সিলর গোলাম আশরাফ তালুকদার। প্রথমে এ ওয়ার্ডে সমর্থন দেয়া হয় মামুনুর রশিদ শুভ্রকে। পরে তা প্রত্যাহার করে তালুকদারকে সমর্থন দেয় দলটি। তালুকদারের বিরুদ্ধে ভিকারুননিসা নুন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সভাপতি থাকাকালে নিয়োগ ও ভর্তি বাণিজ্যের অভিযোগ আছে। এ অভিযোগের বিষয়ে জানতে তার ব্যক্তিগত মোবাইলে ফোন দিলে তিনি রিসিভ করেননি।

২৬ নং ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর হাসিবুর রহমান মানিকের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয়রা জানান, ডিএসসিসির প্রকল্পের কাজে বাধা দিয়ে ঠিকাদারের কাছ থেকে বড় অঙ্কের অর্থ আদায়, এলাকার দোকান, মার্কেটসহ বিভিন্ন স্থাপনা থেকে চাঁদা আদায় ও মাদক ব্যবসায় সহযোগিতা করাসহ বহুবিধ অভিযোগ রয়েছে মানিকের বিরুদ্ধে, যা একাধিক গণমাধ্যমেও বিভিন্ন সময় প্রকাশিত হয়েছে। গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলের নির্দেশ অমান্য করে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে তিনি নির্বাচন করেছিলেন। এত অভিযোগ থাকার পরও কিভাবে আওয়ামী লীগের সমর্থন পেলেন তা নিয়ে বড় ধরনের প্রশ্ন তৈরি হয়েছে নেতাকর্মীদের মধ্যে। এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে হাসিবুর রহমান মানিকের ব্যক্তিগত মোবাইলে একাধিকবার কল দিলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এ ছাড়াও ২০ নম্বর ওয়ার্ডে মানোনয়ন পাওয়া ফরিদ উদ্দিন রতন, ৫১ নং ওয়ার্ডে হাবিবুর রহমান (হাবু), ৫৩ নং ওয়ার্ডে নূর হোসেন, ৫৫ নং ওয়ার্ডে নূরে আলম, ৬৯ নং ওয়ার্ডে মনোনয়ন পাওয়া হাবিবুর রহমান হাসুর বিরুদ্ধেও নানা অভিযোগ রয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১নং ওয়ার্ডে আফছার উদ্দিন খান, ৪নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর মো: জামাল মোস্তফা, ৫নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবদুর রউফ নান্নু, ১৮ নং ওয়ার্ডে জাকির হোসেন বাবুল, ২৭ নং ওয়ার্ডে ফরিদুর রহমান খান, ২৯ নং ওয়ার্ডে নুরুল ইসলাম রতন, ৩০ নং ওয়ার্ডে আবুল হাসেমের (হাসু) বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে বলে জানা গেছে। ইতোমধ্যে স্থানীয় নেতাকর্মীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ১২ নং ওয়ার্ডে প্রথমে মুরাদ হোসেনকে পরিবর্তন করে মো: ইকবাল হোসেন তিতুকে মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ। পরে আবার ইকবালকে পরিবর্তন করে মুরাদ হোসেনকে মনোনয়ন দেয়া হয়। ৪১ নং ওয়ার্ডে আবদুল মতিনকে পরিবর্তন করে শফিকুল ইসলামকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।

বিতর্কিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো: হুমায়ুন কবির নয়া দিগন্তকে বলেন, আমাদের যেসব কাউন্সিলর প্রার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আসছে আমরা যাচাই-বাছাই করছি। অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিতর্কিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ মো: বজলুর রহমান নয়া দিগন্তকে বলেন, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কয়েকটি ওয়ার্ডে ইতোমধ্যে প্রার্থী পরিবর্তন করা হয়েছে। আর যেসব প্রার্থীদের ব্যাপারে অভিযোগ আসছে তাদের বিষয়গুলো আমরা যাচাই-বাছাই করছি। দেখেশুনে অভিযোগগুলো সঠিক হলে সেখানেও প্রার্থী পরিবর্তন করা হবে।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গণমাধ্যমকে বলেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কোনো ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের প্রার্থী উন্মুক্ত করা হয়নি। ওয়ার্ডের প্রার্থী নির্বাচনে বিভিন্ন জরিপ রিপোর্টের ভিত্তিতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ড আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সব সিদ্ধান্ত ঠিক নাও হতে পারে। এ জন্য টিম ওয়ার্ক হচ্ছে। কোথায় কোথায় প্রার্থীর অবস্থা কি, কোথাও বিতর্কিত প্রার্থী যদি থেকে থাকে তা আমরা খুঁজে বের করব। এরপর যথাযথ প্রার্থীর নাম ঘোষণা করব।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us