মেয়েদের ৫ কঠিন সমস্যা ও সমাধান
মেয়েদের ৫ কঠিন সমস্যা ও সমাধান - ছবি : সংগ্রহ
২৫ নভেম্বর আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস ছিল। নারী নির্যাতন বিষয়টি বড়ই নাজুক। নির্যাতিতা এবং নির্যাতনকারী আবার সেই নারী-পুরুষই, স্বামী-স্ত্রী-পুত্র-কন্যা নিয়ে যেখানে তৈরি হয় মহা সুখের ঘর, স্বামী-স্ত্রী পরস্পর সঙ্ঘাতের কারণে শান্তির সে ঘরটিই হয়ে যায় ‘মৃত্যুকূপ’। কত আইন-কানুন, নীতি-নৈতিকতা, সমিতি-সঙ্ঘ, সেল-উইং তৈরি হয়েছে কিন্তু নির্যাতন, নিষ্ঠুরতা, হত্যা বন্ধ করা যাচ্ছে না। অবিবাহিত বা বিবাহিত, অশিক্ষিত-শিক্ষিত, ধনী-দরিদ্র, গ্রাম্য-শহুরে নির্বিশেষে এ নির্মম এবং লজ্জাজনক ঘটনা ঘটছেই। সহজ, সরল, সুখী দম্পতি বা পরিবার এ নিয়ে বড়ই বিব্রত ও ব্যথিত।
ঘর মানুষের সবচেয়ে প্রিয় এবং সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ শান্তির আশ্রয় স্থল। সেখানে যখন অশান্তি, নির্যাতন খুনাখুনি- তা বন্ধ করতে কিছু পরামর্শ তুলে ধরতে চাই। কেবল আইন করে নয়; বরং জ্ঞান অর্জন, জ্ঞান চর্চা, ধৈর্য, ত্যাগ, অন্যকে গুরুত্ব দেয়া, শ্রদ্ধা করা, পরিস্থিতি সামাল দেয়া, সুদূরপ্রসারী চিন্তা ইত্যাদির মাধ্যমে অনেক জটিলতা দূর করা যায়। জটিলতা কিছু থাকবেই। হতাশ হলে চলবে না।
১. বিয়েপূর্ব প্রশিক্ষণ : নতুন জীবনের এ সম্পর্ক তৈরির আগে এ ব্যাপারে কোনো প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নারী-পুরুষ কারো জন্যই নেই। পারিবারিক বা পারিপার্শ্বিক পরামর্শ, আলোচনা ইত্যাদি থেকে যা শেখা হয়, তা দিয়েই জীবনের নতুন তরী ভাসানো হয়। এতে আল্লাহর রহমতে অনেকে সুখ শান্তিতে তীরে পৌঁছে যান। কিন্তু বাকি সবার জীবনে জটিলতা সৃষ্টি হয়। তারপর, ঝগড়া, এমনকি খুনাখুনি। সবার পারিবারিক আদর্শ, নীতি, নৈতিকতা এক হয় না। তাই সামান্যতেই সুখের বদলে সংসারের মৃত্যু ঘটতে পারে। আমরা ছোটখাটো কাজেও প্রশিক্ষণ নেই। এতে ভালো ফল পাওয়া যায়। সাংসারিক জীবনের মতো এতবড় কাজের জন্য ভালো কোনো প্রশিক্ষণই নেয়া হয় না। বিয়ের পরে কাউন্সেলিং ও সালিশ ইত্যাদির চেয়ে বিয়ের আগে প্রশিক্ষণ বর-কনে এবং তাদের পরিবারের জন্য বেশি কাজে আসবে।
২। বিয়েপূর্ব ফরম পূরণ করা : আমাদের সমাজে মা-বাবা বা অভিভাবকরাই কেমন ‘ছেলের বউ বা মেয়ের স্বামী চাই’ তা নিয়ে আলোচনা করেন। এটি ঘটক এবং অভিভাবকদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কেমন ‘ছেলের বউ চাই’ তা কনে হয়তো জানতেই পারল না কিংবা চাহিদা হয়তো কনের যোগ্য বা পছন্দ নয়। কিন্তু অভিভাবক হয়তো বলে দিলেন, সব ঠিক আছে। সবদিকে যোগ্য।’ অনেক সময় সত্য-মিথ্যা বলে নতুন হতে যাওয়া সম্পর্ককে বিপজ্জনক করে তোলা হয়। ছেলেপক্ষও তা করে থাকে। তাই এ ব্যাপারে পাত্রপাত্রীর সাথে সরাসরি কথা বলা দরকার। কারণ সে যা নয়, তা বলে দেয়া হলো। এটা সে জানতেও পারল না এবং সেভাবে চলতেও পারল না। বিয়ের ক্ষেত্রে এটি মারাত্মক হয়ে দাঁড়ায়। তাই বর-কনের সাথে এ ব্যাপারে আলাপ করা ছাড়াও স্বীকারোক্তিমূলক একটি লিখিত ফরম পূরণ এবং নিকাহনামার সাথে (প্রেমের বিয়েতেও) তা সংযুক্ত করা দরকার। এতে উভয়ই জানতে পারবে, তাদের করণীয় কী এবং সেভাবে চলতেও পারবে। এতে সমস্যা অনেক কমে যাবে বলে আশা করা যায়। প্রতিশ্রুতিও ভঙ্গ হবে না। উল্লেখ্য, অনেকে নিকাহনামায় কী লেখা আছে, তাও জানে না।
৩. সংসার পৃথক করা : নতুন বউকে শ্বশুরবাড়িতে কী কী নিয়মনীতি পালন করতে হবে তা বিয়ের আগেই জানিয়ে দেয়া উচিত। অনেক পরিবারেই স্বামী ছাড়াও অন্যান্য সদস্য থাকেন। মা-বাবার সেবা করা প্রত্যেক নারী-পুরুষের ওপর ফরজ। কিন্তু স্বামী ছাড়া শ্বশুরবাড়ির কারো জন্য এমন নির্দেশনা নেই। তবে স্বামীর নির্দেশনা, নেকি ও সহযোগিতার জন্য এবং তার কর্তব্য পালনে স্ত্রী, স্বামীকে সহযোগিতা করা উচিত। পরিবারের শান্তি ও সুখের জন্য এতটুকু করা প্রত্যেক স্ত্রীর উচিত। আবার পরিবারের সদস্যদেরও নববধূকে সেভাবে গুরুত্ব দেয়া এবং মূল্যায়ন করা উচিত। স্ত্রীরা শ্বশুরবাড়ি এসে নতুন জায়গায় অনেক সময় ‘ভ্যাবাচেকা’ খেয়ে যায়। তাই স্বামীদেরও কিছু দিন ‘ঘর জামাই’ থাকার নিয়ম করা যেতে পারে। শেষ পর্যন্ত বনিবনা না হলে সংসার পৃথক করে দেয়াই উচিত। তবে এভাবে একান্নবর্তী সংসারগুলো ভেঙে যাচ্ছে।
৪। বিয়েবিচ্ছেদ : ঘরবাঁধাই ধার্মিক-অধার্মিক সবার জন্য শান্তির জায়গা। দুনিয়ার এত সম্পর্কের মধ্যে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন একমাত্র ‘স্বামী-স্ত্রীর’ সম্পর্ককে বলেছেন, ‘তারা তোমাদের পোশাকস্বরূপ এবং তোমরা তাদের পোশাকস্বরূপ’। পোশাক যেমন আব্রু রক্ষা করে, তেমনি শরীরে ঘনিষ্ঠভাবে লেগে থাকে। এর চেয়ে ঘনিষ্ঠ কিছু আর হতে পারে না। স্বামী-স্ত্রী আল্লাহ তায়ালার সেরা দান। একজন অন্যজনের সৎ চরিত্রের এবং শান্তির উপকরণ। এজন্য পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা থাকা এবং আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা উচিত।
মারধর, অত্যাচার, নির্যাতন, হত্যার চেয়ে পরস্পর বিয়েবিচ্ছেদ উত্তম। এতে জীবন হানি, জেল ফাঁসি ইত্যাদির মধ্যে পড়তে হয় না। স্বামী-স্ত্রী ছাড়াও শিশু, যুবা, বিভিন্ন শ্রেণীর নারী, নির্যাতন, ধর্ষণ, হত্যা ইত্যাদি আমাদের চরমভাবে ব্যথিত করে। আমরা মাকে প্রচণ্ড ভালোবাসি। সেভাবে আমার সন্তানের মাকেও যদি সম্মান দিই এবং ভালোবাসি তবে কোনো সমস্যাই থাকে না। সংসারে যেমন মা-বোন আছেন, তেমনি প্রেমিকা, স্ত্রী, কন্যাও আছেন। নারীদের প্রতি মন্দ উত্তেজনা সৃষ্টি হয় এমন কোনো কাজ বা কিছু থাকা উচিত নয়। এ ব্যাপারে সরকার ও জনগণসহ সবাইকেই সাবধান হওয়া উচিত। ইসলামধর্ম নারীদের নিরাপত্তা দানের ক্ষেত্রে সর্বশ্রেষ্ঠ। তাই শিখে-বুঝে এ ধর্মটি অনুসরণ করা উচিত।
৫। নীতি নৈতিকতা ও মা বাবার কর্তব্য : মানুষ উন্নতির যতই শিখরে আরোহণ করুক, সর্বাবস্থায়ই নীতি নৈতিকতার অনুসারী হওয়া আবশ্যক। পৃথিবী অনেক বদলে গেলেও অনেক কিছুই অক্ষুণ্ন রয়েছে, যা হারিয়ে গেলে মানুষ আর মানুষ থাকে না। অনেকে নীতি নৈতিকতাকে সেকেলে অচল এমনকি মৌলবাদ বলে প্রত্যাখ্যান করে থাকেন। কিন্তু সেই সাথে অশান্তিকেও সাদরে আমন্ত্রণ জানান। অনেক উন্নত দেশের বা আমাদের দেশের বেপরোয়া সচ্ছল পরিবারকে দেখলেই এর প্রমাণ পাওয়া যায়। তাদের কোনো অভাব নেই শুধু শান্তি ছাড়া।
এদিকে ছেলে বা মেয়ে মা-বাবা আমরাই। সন্তানদের কিভাবে বড় করি যে, বড় হয়ে তারা পরস্পর শত্রুতে পরিণত হয়ে যায়? মেয়ের জন্য যেমন ভাবি, ছেলের বউয়ের জন্য অন্যরকম ভাবি কেন?
কিংবা ছেলের জন্য একরকম কিন্তু মেয়ের স্বামী থেকে অন্য রকম আশা করি কেন? পরমগুরু মা-বাবার পক্ষ থেকে এমন বৈষম্যও আমাদের পারিবারিক জীবনে নারী-পুরুষ তথা স্বামী-স্ত্রীর মাঝে মারাত্মক সমস্যা সৃষ্টি করে। অনেকেই আছেন যারা বেতন বাবদ কিছু টাকা পান বিধায় চরম কঠিন ও অমর্যাদাকর অফিসের প্রতি ও অনুগত থাকেন। কিন্তু যাদের উসিলায় পরম সম্মানের শান্তির সংসার পেলেন, বেতন পান না বলে সেই গুরুজনদের অবলীলায় অবহেলা করা কি ঠিক?