কী আছে ভারতের বৃহত্তম আটক কেন্দ্রে
কী আছে ভারতের বৃহত্তম আটক কেন্দ্রে - ছবি : সংগৃহীত
ভারতের আসাম রাজ্যের গোয়ালপারা জেলায় নির্মাণাধীন ভারতের বৃহত্তম আটক কেন্দ্রে বিদ্যুতকর্মী হিসেবে কাজ করছেন আলী (২৫)। কেন্দ্রটির হাসপাতাল ব্লকের সামনে একটু বিরতি নেয়ার সময় তার মাথায় চিন্তাটি ভর করল।
তিনি বলেন, আজ আমি এখানে কাজ করছি। কাল হয়তো এই স্থানটিই হবে আমার ভগ্নিপতির জন্য কারাগার। আর তাতে ধ্বংস হয়ে যাবে আমার বোনের পরিবার।
আলীর ভগ্নিপতির নাম জাতীয় নাগরিকপঞ্জিতে (এনআরসি) স্থান পায়নি। ওই তালিকায় স্থান না পাওয়া ১৯ লাখ লোকের ঠাঁই এই আটককেন্দ্রগুলোর মতো কোনো একটিতে হতে পারে।
প্রায় তিন লাখ বর্গ ফুট জমির ওপর স্থাপিত কেন্দ্রটির অবস্থান রাজ্যের রাজধানী দিসপুর থেকে ১২৬ কিলোমিটার দূরে গোয়ালপারার মতিয়া গ্রামে। এখারেন তিন হাজার লোক বাস করতে পারবে।
গোয়ালপারার প্রত্যন্ত এলাকায় নির্মাণ করা এই কেন্দ্রের তিন দিকে খোলা জায়গা, একদিকে থাকা রাস্তাটির সাথে রাজ্যের প্রধান নগরী গৌহাটির সংযোগ রয়েছে।
রাস্তাটি যে পথ অতিক্রম করেছে, তার একদিকে রয়েছে ‘ভূতের’ পাহাড়। স্থানীয় কিংবদন্তিতে বলা হয়, এই পাহাড়ে ভূতেরা থাকে, কোনো মানুষ এই পাহাড়ে যেতে পারে না।
গোলাম নবি বলেন, এখানেও আমার একই ভাবনা আসে। কোনো লোক একবার এই আটককেন্দ্রে প্রবেশ করলে, সে আর বের হতে পারবে না।
কম্পাউন্ডটির উঁচু প্রাচীরের দিকে তাকিয়ে তিনি বলেন, পরিবার, লোকসমাজ থেকে কোনো ব্যক্তিকে আলাদা করে এই বিশাল দেয়ালের ভেতরে রাখাটা কতটা মানবিক?
আটক কেন্দ্রের হাসপাতালের পাশে আছে খাবার এলাকা, স্কুল, বিনোদনকেন্দ্র। পুরুষ ও নারীদের বসবাসের এলাকা আলাদা।
আসাম পুলিশ হাউজিং বোর্ডের প্রকৌশলী ও আটক কেন্দ্রটির নির্মাণের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রবীন্দ্র দাস বলেন, নারী ও পুরুষ ওয়ার্ডের মাঝে থাকবে একটি ছয় ফুট লাল রঙের দেয়াল। প্রতিটি চার তলা করে পুরুষদের ব্লক হবে ১৩টি, আর নারীদের হবে দুটি।
তিনি আল জাজিরাকে বলেন, পুরো কম্পাউন্ডটি দুটি প্রাচীর দিয়ে ঘেরা থাকবে। ভেতরেরটি হবে ২০ ফুট উঁচু, বাইরেরটি হবে ৬ ফুট।
নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এখানে থাকবে ছয়টি ওয়াচ টাওয়ার। আর একটি ১০০ মিটার উঁচু বিম লাইটের ব্যবস্থাও থাকবে।
নির্মাণ কার্যক্রমে সম্পৃক্ত কর্মকর্তারা জানান, ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত জুনে এটি নির্মাণের বরাদ্দ দিয়েছে। ডিসেম্বরে এর কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে এখন তা বাড়িয়ে এপ্রিল করা হয়েছে।
দাস বলেন, এটি কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্প। আমরা এপ্রিলের মধ্যে তা শেষ করব।
ভারতের অন্যান্য আটক কেন্দ্র
ভারত সরকার এখনো সারা দেশে এনআরসির কথা ঘোষণা না করলেও দেশটির বিভিন্ন স্থানে আটক কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। আসামে ইতোমধ্যেই ছয়টি আটক কেন্দ্রের কাজ শুরু হয়েছে। ভারতের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জি কিষেন রেড্ডি বলেন, বিদ্যমান কেন্দ্রগুলোর মধ্যে গোয়ালপারায় ২০১ জন, কোকরাঝাড়ে ১৪০ জন, সিলচরে ৭১ জন, দিব্রুগড়ে ৪০ জন, জোরহাটে ১৯৬ জন, তেজপুরে ৩২২ জন আটক রয়েছে।
২০০৮ সাল থেকে আটক কেন্দ্রগুলোতে প্রায় ১০০ জন মারা গেছে। আত্মহত্যার ঘটনাও রয়েছে।
গত ২২ ডিসেম্বর দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কর্নাটকে একটি আটক কেন্দ্র খোলা হয়। এখানে নথিহীন অভিবাসীদের রাখা হয়।
গোয়া রাজ্যে ২৯ মে প্রথম আটক কেন্দ্রটি উদ্বোধন করা হয। রাজস্থানে একটি কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে রয়েছে একটি আটক কেন্দ্র।
পাঞ্জাবে চলতি বছরের মে মাসে আটক কেন্দ্রের নির্মাণকাজ শেষ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মহারাষ্ট্রে পূর্ববর্তী বিজেপি সরকার জায়গা নির্বাচন করেছিল। তবে বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব থ্যাকারে সেটি নির্মাণ থেকে সরে আসার ঘোষণা দিয়েছেন।
খবরে প্রকাশ পশ্চিমবঙ্গের সরকারও রাজধানী কোলকাতা ও উত্তর ২৪ পরগনায় দুটি আটক কেন্দ্র নির্মাণের জায়গা নির্বাচন করেছে। তবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বলেছেন, এসব গুজবে কান দেবেন না। জীবন থাকতেও বিজেপিকে পশ্চিমবঙ্গে আটক কেন্দ্র নির্মাণ করতে দেব না।
কেরালাতেও বাম সরকার আটক কেন্দ্র নির্মাণের স্থান নির্বাচনের কাজ স্থগিত রেখেছে।
সরকারি কোনো হিসাব না থাকলেও ভারতের শক্তিশালী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে এক নির্বাচনী সমাবেশে দাবি করেছিলেন যে ভারতে ৪০ লাখ নথিহীন অভিবাসী রয়েছে।
আল জাজিরা