কুয়ালামপুর সম্মেলনে পাকিস্তানের জয়!

অন্য দিগন্ত ডেস্ক | Jan 04, 2020 08:35 am
মাহাথির, ইমরান ও এরদোগান

মাহাথির, ইমরান ও এরদোগান - ছবি : সংগৃহীত

 

ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহগুলোতে ৫টি গুরুত্বপূর্ণ মুসলিম দেশের- মালয়েশিয়া, তুরস্ক, কাতার, ইরান ও ইন্দোনেশিয়া- নেতারা অর্থনৈতিক সহযোগিতার জন্য কুয়ালামপুরে মিলিত হয়েছিলেন। তবে যেসব ভাষ্যকার এ দিকে নজর রেখেছিলেন, তারা বলছেন যে ইসলামি বিশ্বের ওপর সৌদি প্রাধান্যের বিরুদ্ধে লড়াই করাই ছিল এই শীর্ষ সম্মেলনের প্রকৃত কারণ। সম্মেলনের আয়োজক মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ এ ধরনের দাবি প্রত্যাখ্যান করা সত্ত্বেও এতে সই হওয়া চুক্তিগুলো ওই ইঙ্গিতই দিচ্ছে।

ইরানসহ এই ৫ দেশের ৪টিই সৌদি আরব-সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রাধান্যবিশিষ্ট ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সদস্য হলেও তারা সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সেইসাথে ব্যাপক অর্থে ওআইসিরও বিরোধী। গত কয়েক দশকে সৌদি আরব ও ইরান বেশ কয়েকবারই একে অপরের প্রভাব হ্রাস করার জন্য প্রক্সি ওয়্যারে সম্পৃক্ত হয়েছে।

অধিকন্তু কাতারি অংশগ্রহণকে সৌদি নেতৃত্বাধীন ও আমিরাত, মিসর ও বাহরাইনের অনুমোদিত দুই বছরের অবরোধকে প্রতিরোধের চিহ্ন বলে বিচেনা করা যেতে পারে। সৌদি আরবের সাথে কাতারের বিরোধের মূল কারণ দেশটির নিজস্ব পররাষ্ট্রনীতি পরিচালনা। এই নীতি সৌদি আরব ও আমিরাতে রাজনৈতিক ইসলাম নীতির চেয়ে ভিন্ন। আবার আরব বসন্তের সময় বিপ্লবীদের পক্ষেই ছিল কাতার।
আবার এই অবরোধের সময় কাতারকে কৃষিপণ্য ও অন্যান্য সহায়তা দিয়েছে তুরস্ক। রজব তাইয়্যেপ এরদোগানের নেতৃত্বাধীন তুরস্ক মুসলিম ইস্যুতে সোচ্চার হিসেবে নিজেকে ইসলামি দুনিয়ায় প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। এতে সৌদি আরবের নেতৃত্ব চাপের মুখে পড়ে যায।
একইভাবে বছর খানেক ধরে সৌদি আরবের কাছ থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে শুরু করেছে ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া। মালয়েশিয়া উদ্বেগে রয়েছে সেদেশে ওয়াবি প্রভাব বাড়া নিয়ে। আর ইন্দোনেশিয়ায় সৌদি বিনিয়েঅগ নিয়ে হতাশা রয়েছে। তাছাড়া ওই দেশে ইন্দোনেশিয়র শ্রমিকদের প্রতি করা আচরণ নিয়েও অসন্তুষ্টি রয়েছে। এর ফলে সৌদি আরব থেকে ইতোমধ্যেই মালয়েশিয়ার সৈন্যদের প্রত্যাহার করা হয়েছে, সৌদি তহবিলে গড়া সন্ত্রাসবিরোধী কেন্দ্র থেকেও মালয়েশিয়া সরে গেছে।

শীর্ষ সম্মেলন ও ভারতে সিএএবিরোধী বিক্ষোভ
মুসলিমবিশ্বে জায়গা করে নিতে কুয়ালামপুর শীর্ষ সম্মেলনে জোরালো রাজনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণের প্রত্যাশা ছিল। আর সেটিই হয়েছে ভারতের সংবিধান সংশোধনী (সিএএ) ও জাতীয় নাগরিকপঞ্জি-বিরোধী (এনআরসি) বিক্ষোভের সমালোচনা করার মাধ্যমে।
সিএএতে আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে ভারতে যাওয়া খ্রিস্টান, হিন্দু, জৈন ও বৌদ্ধদের দ্রুততার সাথে নাগরিকত্ব প্রদান করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতে মুসলিমদের প্রতি বৈষম্য করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ভারতের সেক্যুলার চরিত্র এর মাধ্যমে নষ্ট হয়েছে বলে অনেক শিক্ষাবিদ, রাজনীতিবিদ, নাগরিক সমাজের নেতারা এর বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন।

আবার আসামে এনআরসির ফলে ১৯ লাখ লোক রাষ্ট্রহীন হয়ে পড়েছে। এখানেও টার্গেট করা হয়েছে মুসলিমদেরকে। নিউ ইয়র্ক টাইমস, ইকোনমিক টাইমস, বিবিসি, আল জাজিরাসহ আন্তর্জাতিক মিডিয়া এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলোও এর বিরুদ্ধে সরব হয়েছে।
কুয়ালামপুর শীর্ষ সম্মেলন এই সুযোগটি গ্রহণ করে। অথচ এই সুরটি ওআইসির অবস্থানের চেয়ে ভিন্ন। সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতীয় পদক্ষেপগুলো প্রশ্নে ওআইসি হয় নীরব ছিল কিংবা দুর্বল প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছিল। ২০১৯ সালের এপ্রিলে পুলওয়ামায় সন্ত্রাসী হামলার প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হামলা চালালেও ওআইসি পাকিস্তানের পক্ষে তো আসেইনি, বরং পাকিস্তানের আপত্তি অগ্রাহ্য করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজকে ওআইসি কসম্মেলনে বক্তৃতা করতেও দেয়া হয়েছিল।
আবার আগস্ট মাসে কাশ্মিরের স্বায়াত্তশাসন মর্যাদা বাতিল করার পর সংযুক্ত আরব আমিরাত ভারতের বিরুদ্ধে সোচ্চার না হয়ে বরং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে সে দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক খেতাবে ভূষিত করে। সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত- উভয়ের সাথেই ভারতের বাণিজ্য সম্পর্ক বাড়ছে।
সৌদি আরব ও আমিরাতের সাথে পাকিস্তানের সম্পর্কও দীর্ঘ দিনের। এই দেশ দুটির সাথে পাকিস্তানের সামরিক সম্পর্কও ছিল। আর পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক থাকার কারণে ভারতের ব্যাপারে সতর্ক ছিল দেশ দুটি। কিন্তু এই অবস্থানে সাম্প্রতিক সময়ে পরিবর্তন এসেছিল।

ভারসাম্য পুনঃপ্রতিষ্ঠা
কুয়ালামপুর শীর্ষ সম্মেলনের যে ঘোষণা দেয়া হয়েছে, তা পাকিস্তানের অনুকূলেই গেছে। এই সম্মেলনে পাকিস্তানের যোগদানের কথাও ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সৌদিদের অসন্তুষ্টির ভয়ে পিছু হটে। বিনিময়ে পাকিস্তানকে সামান্য কিছু সুবিধা দিচ্ছে সৌদি আরব। এর একটি হলো, কাশ্মির ইস্যুতে ওআইসির একটি বৈঠক আয়োজনের কথা বলেছে সৌদি আরব।
এই ৫ দেশ এখন যদি বিশ্বজুড়ে মুসলিম নির্যাতনের ব্যাপারে সোচ্চার হয়, তবে ওআইসি আর নীবর থাকতে পারবে না। লাইললাইটে থাকার জন্য ওআইসিকেও সোচ্চার হতে হবে। আর তাতেই পাকিস্তানের লাভ, ভারতের ক্ষতি।
ফলে নিদ্বির্ধায় বলা যায়, সদ্য সমাপ্ত কুয়ালামপুর শীর্ষ সম্মেলনে উপসাগরীয় দেশগুলোর সাথে ভারতের সম্পর্ক জটিল করে ফেলেছে।

দি ডিপ্লোম্যাট


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us