সোলাইমানিকে কেন এত ভয়?
কাসেম সোলাইমানি - ছবি : সংগৃহীত
মার্কিন হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রভাবশালী সামরিক কমান্ডার কাসেম সোলাইমানি। ইরানের বিশেষ বাহিনী রেভ্যুলশনারি গার্ডের অভিজাত বাহিনী কুদস ফোর্সের প্রধান। বিগত বছরগুলোতে মধ্যপ্রাচ্যে ইরানি প্রভাব বিস্তারে বারবারই তার নাম আলোচনায় আসছিল। এর আগেও তাকে হত্যা চেষ্টা করেছিল যুক্তরাষ্ট্র্র। ইরানের আঞ্চলিক শক্তি বৃদ্ধির প্রধান কারিগর জেনারেল কাসেম। তিনি ইরানের বিপ্লবী বাহিনীর সবচেয়ে প্রভাবশালী কমান্ডার। সিরিয়া ও ইরাকে আইএস-বিরোধী লড়াইয়ে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। গত অক্টোবরেও তাকে হত্যাচেষ্টা বানচাল করে দেয়ার দাবি করেছিল ইরান।
১৯৯৮ সাল থেকে কাসেম সোলাইমানি ইরানের কুদস ফোর্সের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। ইরান রেভ্যুলশনারি গার্ডসের এই অভিজাত বাহিনীটি দেশের বাইরে গুপ্ত হামলা চালিয়ে থাকে। তবে ১৯৮০-এর দশকে ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময় দায়িত্ব পালন করার সময় তিনি প্রথম পরিচিতি লাভ করেন। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে বাশার আল আসাদের ইরান সমর্থিত সরকারকে মদদ দেয়া এবং ইরাকে ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন জেনারেল সোলাইমানি।
ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক দীর্ঘ সময় ধরে শত্রুভাবাপন্ন হলেও ইরাকে আইএসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে আদর্শগত দিক বিবেচনায় পরোক্ষভাবে একে অপরকে সহায়তা করেছিল তারা। জেনারেল সোলাইমানি দুই বৈরী ভাবাপন্ন দেশের মধ্যে সংযোগ স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
বিগত বছরগুলোতে ইরানের পররাষ্ট্র নীতি নির্ধারণ করার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন কাসেম। গত ১৫ বছর ধরে মেজর জেনারেল কাসেম সোলাইমানি একজন গুরুত্বপূর্ণ সামরিক কৌশলী হিসেবে তৈরি হয়েছেন। ইরাক ও সিরিয়ায় ক্ষমতা নির্ণয়েও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের উপস্থিতি সুসংহত করতে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি।
ট্রাম্প প্রশাসনের অভিযোগ, মধ্যপ্রাচ্যে লেবাননের হিজবুল্লাহ অভিযান ও ফিলিস্তিনি ইসলামী জিহাদের মতো যুক্তরাষ্ট্রের চিহ্নিত সংগঠনগুলোকে পৃষ্ঠপোষকতা ও সমর্থন করত ইরানের ‘প্রাথমিক অস্ত্র কুদস ফোর্স।’ এসব সংগঠনকে তারা অর্থায়ন, প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করে বলে অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্রের। ইরানের রেভ্যুলশনারি গার্ড ও তাদের অধীনস্থ কুদস ফোর্সকে গত এপ্রিলে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। সূত্র : বিবিসি ও রয়টার্স।
যেসব ঘটনার ধারাবাহিকতায় সোলাইমানিকে হত্যা
বিমান হামলায় গতকাল শুক্রবার ইরানের বিপ্লবী গার্ডের (আইআরজিসি) অভিজাত শাখা কুদস বাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল কাসেম সোলাইমানির প্রাণহানির বিষয়টি অনেকের কাছেই আকস্মিক ঠেকছে। মার্কিন পর্যবেক্ষকদের ভাষ্যে, ঘটনাটির জের শুরু হয়েছে গত সপ্তাহে রকেট হামলায় এক মার্কিন ঠিকাদারের প্রাণহানির পর। পুরো সপ্তাহের ঘটনাক্রম জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন।
শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) : সরকারবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল ইরাকে রকেট হামলায় এক মার্কিন ঠিকাদার নিহত হন।
রোববার (২৯ ডিসেম্বর) : যুক্তরাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনী ইরাক ও সিরিয়ায় বিমান হামলা চালায়। ওই হামলা হয় ইরান-সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীর পাঁচটি স্থাপনায়।
মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) : বাগদাদে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসে হামলা চালায় ইরান-সমর্থক বিক্ষোভকারীরা। তারা দূতাবাস লক্ষ্য করে পাথর ছোড়ে। সেখানকার নিরাপত্তা চৌকিতে আগুন দেয়।
বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) : ইরান-সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে কড়া হুঁশিয়ারি বার্তা দেয় মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের সদর দফতর পেন্টাগন।
শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) : যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনীর বিমান হামলায় ইরানের সবচেয়ে পরাক্রমশালী মেজর জেনারেল কাসেম সোলাইমানির নিহত হওয়ার খবর দেয় পেন্টাগন।