ভারতকে যেভাবে বদলে দিচ্ছে মুসলিমরা

সি পি সুরেন্দ্রন | Jan 03, 2020 10:07 am
ভারতকে যেভাবে বদলে দিচ্ছে মুসলিমরা

ভারতকে যেভাবে বদলে দিচ্ছে মুসলিমরা - ছবি : সংগৃহীত

 

 তীব্র বিরোধে ক্ষতবিক্ষত বছরটির শেষ ভাগ অতল গহ্বরে নিজেকে টেনে নেয়ার প্রেক্ষাপটে সিএএবিরোধী (সংশোধিত নাগরিক আইন) ও এনপিআরবিরোধী (জাতীয় জনসংখ্যা নিবন্ধন) বিক্ষোভের মাধ্যমে ভারতীয় মুসলিমেরা অবশেষে নীরব থাকতে বা অদৃশ্যমান থাকতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বের হয়ে এসেছে।

তাদের মধ্যে যাদের বয়স কম, তাদের সামাজিক মাধ্যমে হাজির হতে কোনো সমস্যা হয়নি। ভারতের মুসলিমেরা বুঝতে পেরেছে যে তাদের আর গোপনে থাকার অবকাশ নেই, তাদেরকে লড়াইই করতে হবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, দিল্লিতে জামা মসজিদের আশপাশে সমাবেশ করার সময় মুসলিম বিক্ষোভকারীরা তাদের হাতে ভারতীয় সংবিধানের কপি উঁচু করে তুলে ধরেছে। এই সংবিধানই তাদেরকে সেক্যুলার প্রজাতন্ত্রে সমান অধিকার দিয়েছে। শত শত লোক ভারতীয় জাতীয় পতাকা তুলে ধরে।

ভারতের স্বাধীনতার পর থেকে প্রায় সাত দশক ধরে দেশটির মুসলিম জনসাধারণ, দাঙ্গার সামান্য কিছু সময় বাদ দিলে, তাদের ক্ষোভ প্রকাশ থেকে বিরতই থেকেছে। তারা তাদের রাজনীতির বিষয়টি প্রকাশ করার জন্য ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস বা মুসলিম লিগের বিভিন্ন সংস্করণের মতো রাজনৈতিক দলের ওপর নির্ভর করেছে।

কিন্তু বছর শেষের বিক্ষোভে ইঙ্গিত দিচ্ছে যে তারা আর রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর আস্থা রাখতে পারছে না। একইভাবে বলা যায়, ভারতে যে রাজনৈতিক শূন্যতার (বিক্ষোভে আসলে কোনো নেতা থাকে না) কারণে শিক্ষিত ও তরুণ মুসলিমদের নতুন প্রজন্ম আর কোনো একটি রাজনৈতিক দলের সাথে থাকার প্রয়োজন দেখছে না।
অন্য দিকে নিজেদের প্রথা আঁকড়ে ধরে (তাদের অনেকে বোরকাও পরেছে) জাতীয় পতাকা ও সংবিধানের কপি প্রদর্শনকে গোঁড়ামিতে লিপ্ত না থেকে সেক্যুলারবাদের প্রতি তাদের আস্থার বিষয়টিই প্রতিফলিত হয়েছে বলা যায়।
এমন ধারা টিকে গেলে তা ভবিষ্যতের জন্য বড় একটি ঘটনা হিসেবে গণ্য হতে পারে। এর মানে এটিও যে সংখ্যালঘুদের ভোট ব্যাংক হিসেবে পরিচিত কংগ্রেস ভারতীয় মুসলিমদেরকে মূলধারায় আনতে পারেনি, আর মেরুকরণের শক্তি বিবেচিত বিজেপি নিজস্ব মতাদর্শের কারণেই একমুখী ধারা সৃষ্টি করতে পেরেছে।

নতুন-পুরাতন সেক্যুলার ধারা
২০২০ সালজুড়ে এই ধাঁধা বিজেপিকে সুরক্ষা দেবে। দিল্লি রাজ্যে আম আদমি পার্টির অরবিন্দ কেজরিওয়াল ক্ষমতায় আছেন ৫ বছর ধরে। জানুয়ারির শেষ দিকে এখানে রাজ্য বিধান সভার নির্বাচন হবে। নরেন্দ্র মোদির তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বী কেজরিওয়াল নিশ্চিতভাবেই তরুণ মুসলিমদের নতুন-পুরাতন সেক্যুলার ধারার সুযোগ নিতে চেষ্টা করবেন।
২০২০ সালের নভেম্বর মাসটিও গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় বিহারে নির্বাচন হবে। এখানেও সংখ্যালঘু রাজনীতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। দিল্লিতে যদি কেজরিওয়াল বাজিমাত করতে পারেন, তবে কংগ্রেসের জন্য ফেরার সুযোগ সৃষ্টি হবে। তারা সুস্পষ্টভাবে বুঝতে পারবে যে বিজেপির পায়ের তলা থেকে মাটি সরতে শুরু করেছে।
এমনটা ঘটলে মোদি বা শাহের পেছনে হটা অসম্ভব নয়। সব কঠোর সরকার ও শক্তিশালী রাজ্য চায় জনগণের সমর্থন। ভারতে নোট বাতিল করা বা জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি)- যাই হোক না কেন, সমর্থনই রাষ্ট্রীয় শক্তির আকার ও কাঠামো নির্ধারণ করে দেয়।

সমর্থনের কারণ
সমর্থন পাওয়ার জন্য মোদির সরকার অনেক কারণ তুলে ধরবে, এমনটাই স্বাভাবিক। অনেক কিছু পাওয়ার আশায় লোকজন তাদের দেয়া যুক্তিগুলো সমর্থন করতে পারে। তবে জনসমর্থনের ফলে যদি হিন্দু ভোট সংহত করে, লোকজনকে আরো প্রান্তিক করে তোলে, তখন অন্য কিছু ঘটতে পারে। তবে বিজেপি ওই পথেই হাঁটতে পারে।
কোনো যুদ্ধের হুমকি বা সন্ত্রাসী ঘটনা হিন্দু ভোটকে সহজেই সুসংহত করতে পারে। তবেযে বছরটি অতিবাহিত হলো, তা ভারতের অর্থনীতির জন্য ভালো ছিল না। চলতি বছর ভালো হবে, এমন সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না। অর্থনীতিতে খারাপ অবস্থার কারণে রাজনৈতিক বা সাংস্কৃতিতক দিক থেকে কিছু করতে হবে। ফলে দেশপ্রেমিক বা হিন্দুর পরিচিতির চেয়ে ভালো কিছু আর কী হতে পারে। আর যদি দুটিই হয়?
রাজনৈতিক দলগুলোকে ২০২০ সালে সামনে এগিয়ে যেতে হলে মনে হচ্ছে সঙ্ঘাতের চেয়ে ভালো কিছু তাদের হাতে নেই বলেই মনে হচ্ছে। তবে আশার আলো দেখা যাচ্ছে ভারতীয় মুসলিমদের মধ্যে সেক্যুলারবাদের বোধ। আর নতুন বছরে ভারত এ দিক থেকে বিজেপির কাছে কৃতজ্ঞ থাকতে পারে।

গালফ নিউজ


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us