তাজু কি টেস্ট কেস?

তাজু কি টেস্ট কেস? - ছবি : নয়া দিগন্ত
প্রচারণা শুরু হওয়ার আগেই নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন বিএনপির প্রার্থীরা। বিগত সিটি নির্বাচন ও জাতীয় নির্বাচনে ঘটে যাওয়া নানা অনিয়মকেই তারা এ ক্ষেত্রে সামনে আনছেন। ভোট সুষ্ঠু হবে কি না তা নিয়ে দারুণ সংশয় রয়েছে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের। এরই মধ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার বিএনপি সমর্থিত একজন কাউন্সিলর প্রার্থীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই ঘটনার পর আতঙ্ক আরো বেড়েছে। ঢাকা সিটির নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দ পেতে আরো আট দিন বাকি; তারপর শুরু হবে প্রচারণা। এর মধ্যেই আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীরা যেখানে নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছেন, ওয়ার্ড কাউন্সিলর অফিসগুলো যখন তাদের উপস্থিতিতে সরগরম, তখন বিএনপির সমর্থিত প্রার্থীরা অত্যন্ত সতর্কতার সাথে পথ চলছেন। পাশাপাশি হামলা হতে পারে এমন ভয়ও প্রকাশ করেছেন তারা।
বিএনপির এক কাউন্সিলর প্রার্থীকে পুরনো একটি মামলায় গতকাল গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতার হওয়া তাজউদ্দিন আহমেদ তাজু বিএনপির বংশাল থানা সভাপতি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির সমর্থনে কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন তিনি।
নির্বাচনে মনোনয়নপত্র যাচাইয়ের দিন গতকাল বিকেল সোয়া ৪টার দিকে তাজুকে মতিঝিলের ইত্তেফাক মোড় থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
বংশাল থানার ওসি শাহীন ফকির জানান, তাজউদ্দিনের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক আইনে একাধিক মামলা রয়েছে এবং কয়েকটিতে গ্রেফতারি পরোয়ানাও রয়েছে।
ঢাকা দক্ষিণ-৬ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী মো: শামসুল হুদা বলেন, ইভিএম নিয়ে আমাদের আশঙ্কা আগেও ছিল এখনো আছে। এতে জনগণের ভোটাধিকারের সত্যিকার প্রতিফলন ঘটবে কি না তা এখনো নিশ্চিত নই। তবু আমরা আন্দোলনের অংশ হিসেবে এই নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। সুষ্ঠু ভোট হলে আমরা বিজয়ী হবো। আশা করি, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে কমিশন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
উত্তরের ৬, ৭ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী স্বপ্না আহমেদ বলেন, ভোটে কারচুপি যে হবে না, সেটা বলা যাচ্ছে না। বিএনপি সমর্থিত আরেক প্রার্থী সৈয়দা মিলি জাকারিয়া চৌধুরী বলেন, ভোট স্বতঃস্ফূর্ত হবে কি না, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। প্রতীক বরাদ্দ হলে দেখি কী ঘটে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতিকূল পরিবেশেও সিটি নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকতে চায় বিএনপি। সুষ্ঠু নির্বাচন হবে, এটা নিয়ে দলটির খুব একটা আশাবাদ নেই। তবে নির্বাচনের প্রতিযোগিতায় থাকলে কিভাবে সরকার ভোট জালিয়াতি করে, তা অন্তত ফুটে উঠবে বলে তারা বলছেন।
কোনো কোনো নেতার মতে, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলতে হলে মাঠের নেতাকর্মীদের রাজপথমুখী করাই মূল লক্ষ্য। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা দুইভাবে চাঙ্গা হন। একটি হলো ভোটের মাধ্যমে। অন্যটি দল পুনর্গঠনের মাধ্যমে। দু’টি কাজই বিএনপি একসাথে করে যাচ্ছে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল বলেন, নির্বাচনের অতীত ও সাম্প্রতিক ইতিহাস দেখলে এটা কোনোভাবেই বলা যায় না, ভোট সুষ্ঠু হবে। শঙ্কা রয়েছে। তারপরও আন্দোলনের অংশ হিসেবে শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে থাকতে চাই। তিনি বলেন, ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ নিয়েও দেশ-বিদেশে নানা আপত্তি আছে। আমিও চাই স্বচ্ছ ব্যালটে ভোট হোক।
ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে বিএনপির প্রার্থী প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন বলেন, প্রতিপক্ষ প্রার্থী নিয়ে কোনো ভয় পাচ্ছি না। আমাদের ভয় নির্বাচনব্যবস্থা নিয়ে। ইভিএম নিয়ে জনমনে শঙ্কা কাজ করছে। ভোটাররা সঠিকভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন কি না সেটা নিয়েই আমাদের ভয়। তারপরও আমি ভোটের শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকতে চাই। তবে ইভিএমে ভোট কারচুপির কোনো সুযোগ থাকবে না বলে দাবি করে নির্বাচন কমিশন বলেছে, ইভিএমের ভোট নিয়ে প্রার্থীদের সন্তুষ্টির জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হবে।
ভোটের আগে ২৫ এবং ২৬ জানুয়ারি প্রত্যেক কেন্দ্র ও পাশের এলাকায় কিভাবে ইভিএমে ভোট দিতে হয় সে বিষয়ে প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হবে। ২৮ জানুয়ারি ফাইনাল মক ভোটিং হবে।