২০২০ : বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বাস্তবতা

২০২০ : বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বাস্তবতা - ছবি : সংগ্রহ
নানা বিপত্তির মধ্য দিয়েও বড় কোনো অঘটন ছাড়া ২০১৯ সাল পার করতে পেরেছে বাংলাদেশ। প্রশ্ন হলো, ২০২০ সাল কি পার হবে কোনো সঙ্কট বা বড় আকারের বিপত্তি ছাড়া? উত্তপ্ত দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক অবস্থায় বাংলাদেশ কতটা ভারসাম্য রক্ষা করতে পারবে সেটি নিয়ে নানা ধরনের অনুমান আছে। কিন্তু অর্থনৈতিক বাস্তবতা এমন যে, তাতে বাস্তব পরিস্থিতি আড়াল করা কঠিন হয়ে পড়ে।
বাংলাদেশের প্রতিবেশী তিন দেশ- ভারত, পাকিস্তান ও চীন অর্থনৈতিক টানাপড়েনের মধ্য দিয়ে চলছে। চীনের সঙ্কট মূলত যুক্তরাষ্ট্র ও তার অনুগামী কয়েক মিত্রের বাণিজ্যযুদ্ধকে কেন্দ্র করে। এ ছাড়া ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ প্রকল্পের ওপর মাত্রাতিরিক্ত গুরুত্ব দেয়া এবং বিনিয়োগপ্রবাহও চীনা অর্থনীতিকে চাপে ফেলেছে।
খানিকটা এর ফলে দুই অঙ্ক থেকে চীনা অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি নেমে এসেছে ৬-এর কোটায়। ভারতীয় অর্থনীতির চাপটা সে তুলনায় অনেক বেশি। বিগত অর্থবছরের সর্বশেষ প্রান্তিকে দেশটির বিকাশ হার নেমে আসে সাড়ে ৪ শতাংশে। পুরো বছরের গড় প্রবৃদ্ধি নেমে আসতে পারে ৬ শতাংশের নিচে। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর স্বয়ং উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অর্থনীতির অবনতিশীল পরিস্থিতিতে। ভারতের মোদি সরকার অর্থনীতির পরিবর্তে দেশের অভ্যন্তরে এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক নিয়ে উত্তেজনা জাগিয়ে তোলার ফলে রিয়েল সেক্টরের বিকাশের পরিবর্তে প্রতিরক্ষা শিল্প অধিক গুরুত্ব পেয়েছে। ফলে কর্মসংস্থান ও বাজারের চাহিদা দুটোই কমে গেছে। পাকিস্তানের অর্থনীতি এখনো বেহিসেবি বিদেশী বিনিয়োগের কারণে চাপের মুখে রয়েছে। বাণিজ্যিক শর্তে অবাণিজ্যিক অবকাঠামোতে ঋণ নিয়ে এখন দায়-দেনার বিপুল চাপে পড়েছে ইসলামাবাদ।
প্রতিবেশী দেশগুলোর অর্থনীতিতে এই বিপত্তির মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনীতির বিকাশ নিয়ে বাইরের মূল্যায়ন ও পূর্বাভাসে সরকার বেশ খানিকটা উল্লসিত। ২০১৯ অর্থবছরে ৮ শতাংশের বেশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন করা হয়েছে। ২০২০ অর্থবছরের জন্য লক্ষ্য ধরা হয়েছে সাড়ে ৮ শতাংশ। কিন্তু প্রবৃদ্ধির অঙ্ক আর বাজেট পরিকল্পনার সাথে বিশ্বের অন্যতম সর্বাধিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির এই দেশের বাস্তব চিত্রটা সেভাবে মিলছে না।
বাংলাদেশ অর্থনীতির যে গঠন কাঠামো তাতে অর্ধেকের বেশি আয় আসে সেবা খাত থেকে। এর অর্থ হলো জাতীয়ভাবে যে আয় আসছে তার অধিকাংশ আসছে ব্যবসাবাণিজ্য, সামরিক-বেসামরিক চাকরি, ব্যাংক-বীমা, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবাসহ অন্যান্য সার্ভিস থেকে। মাত্র ১৫ শতাংশ আসে কৃষি থেকে আর ৩০ শতাংশের মতো আসে শিল্প থেকে। কৃষি ও শিল্প খাতের উৎপাদন আবার প্রভাবিত করে সেবা খাতের আয়কে। প্রশ্ন হলো কৃষি ও শিল্প খাতের বাস্তব অবস্থাটা কী?
কৃষি বিশেষত খাদ্যশস্য উৎপাদনে বাংলাদেশ ধারাবাহিকভাবে সাফল্য পেয়েছে। এ খাতে এখন দুই-তিন শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও খাদ্যশস্য উৎপাদন বিশেষত ধান উৎপাদনে বাংলাদেশ এক প্রকার স্বনির্ভরতা অর্জন করেছে। মৎস্য ও পোলট্রি-ডেয়ারি খাতেও বাংলাদেশের অর্জন কম নয়। কিন্তু সঙ্কট দেখা দিয়েছে এর উৎপাদন ব্যয় ও বিক্রি মূল্যের ব্যবধান তথা মুনাফা নিয়ে। প্রতি মণ ধান উৎপাদন করে এখন গড়পড়তা ৫০০ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। সার ও সেচের মূল্য আর মজুরি বৃদ্ধির কারণে উৎপাদন খরচ যেভাবে বেড়েছে সেভাবে ধানের মূল্য পাচ্ছেন না কৃষকরা। অথচ ভোক্তারা কিন্তু অতটা শস্তায় চাল পাচ্ছেন না। মধ্যস্বত্বভোগীরা খাদ্য উৎপাদনের মুনাফা হাতিয়ে নিচ্ছেন, বিশেষত সরকারের ধান-চাল কেনার কর্মসূচির সুফল পাচ্ছেন না চাষিরা। মৎস্য ও পোলট্রি শিল্পেও উপকরণের ব্যয় যেভাবে বাড়ছে সেভাবে মাছ মুরগির দাম পাচ্ছেন না উৎপাদকরা।
২০১৯ সালের এই দুরবস্থার প্রভাব ২০২০ সালে পড়তে পারে। এতে লোকসানে পড়ে মূলধন হারানো অনেক চাষি নতুন করে চাষাবাদ করতে চাইবেন না। এর প্রভাব বিশেষভাবে পড়তে পারে আসন্ন বোরো মৌসুমে।
শিল্প খাতের মধ্যে ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের অবস্থা সুখকর নয়। রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধি নি¤œমুখী। মূলধনী যন্ত্রপাতি ও শিল্প কাঁচামাল আমদানি কমছে। যা আমদানি হচ্ছে তার মধ্যেও রয়েছে অর্থ পাচার করার মতো এলসি, যেখানে আমদানির বিল পরিশোধ করা হয় কিন্তু পণ্য আসে না বা কম আসে। স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশে এখনকার মতো অর্থপাচারের রেকর্ড আগে কোনো সময় পাওয়া যায়নি। বিদ্যুৎ খাতের বিনিয়োগ গত কয়েক বছরে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এখন যে পরিমাণ বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে তাদের কাছ থেকে পিক টাইমে ২ ঘণ্টার বাইরে বিদ্যুৎ নেয়া যাচ্ছে না। ফলে চুক্তির লোড ফ্যাক্টর শর্ত অনুসারে বিদ্যুৎ সরবরাহ না নিয়েই বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে। এ বাস্তবতার কারণে এ খাতের প্রবৃদ্ধি আগের মতো বাড়বে না। এ অবস্থায় সরকারি নির্মাণ খাতে বড় বড় প্রকল্পের বিনিয়োগ বাস্তবায়নের ওপর বেশ খানিকটা নির্ভর করতে হবে শিল্প খাতের সার্বিক বিকাশের জন্য।
সরকারকে টিকিয়ে রাখতে চীন এখন উদারহস্তে বৃহৎ প্রকল্পগুলোতে অর্থ ছাড় করছে বলে জানা যাচ্ছে। এটি সরকারের জন্য বেশ খাকিটা স্বস্তিকর হলেও ভারত-চীন দুই দেশের সাথে ভারসাম্য রক্ষার চ্যালেঞ্জ জয় করা বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের জন্য কঠিন হতে পারে।
বর্তমান সরকারের ওপর অনেকেই নানাভাবে নানা দিকে আশা-ভরসা করে থাকেন। এর মধ্যে একমাত্র ব্যতিক্রম সম্ভবত শেয়ারবাজার। শেয়ারবাজারের সূচক নামতে নামতে ২০১৯ সালের শেষলগ্নে এসে এক প্রকার তলানিতে। একসময় ৫-৬ গুণ বেশি দামে বিক্রি হওয়া অনেক ব্যাংক শেয়ারের দাম এখন বুক ভ্যালুর নিচে নেমে এসেছে। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে আইসিবিসহ বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সহযোগী সিকিউরিটি প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হওয়ার উপক্রম হয়েছে। নতুন কোনো বিনিয়োগপ্রবাহ ঘটলেই কারসাজির নায়করা উত্থান-পতন ঘটিয়ে বাজারপ্রবাহ থেকে অর্থ বের করে পকেটে ভরেন। ফলে বাংলাদেশের শেয়ারবাজার বর্তমান সরকারের আমলে আস্থাহীনতার প্রতীকে পরিণত হয়েছে। অথচ শেয়ারবাজার হলো শিল্পায়নে মূলধন সরবরাহের প্রধান খাত। এ ক্ষেত্রটির অকার্যকারিতা শিল্পায়নের পথে একটি বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
বাংলাদেশ অর্থনীতির সবচেয়ে বড় বিপদের জায়গাটি হলো ব্যাংক ও আর্থিক খাত। এই খাতটি এখন বেশ খানিকটা কাগুজে হিসাবনির্ভর হয়ে চলছে। খেলাপি ঋণের যে হার দেখানো হচ্ছে বাস্তব অকার্যকর ঋণের অঙ্ক সেটি নয়, তার চেয়ে অনেক বেশি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি প্রভাবিত করে যে ঋণ কোনো দিন আদায় হবে না, সেটাকে কোনো ডাউন পেমেন্ট ছাড়াই লম্বা সময়ের জন্য নবায়ন করা হচ্ছে। অদৃশ্য ক্ষমতা ব্যবহার করে কয়েকটি গ্রুপের হাতে ব্যাংকের মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রীভূত করা হয়েছে।
এর পর এসব ব্যাংক থেকেই নামে-বেনামে দৃশমান-অদৃশ্যমান প্রকল্পে বিপুল অঙ্কের তহবিল বের করে নেয়া হয়েছে। আনুষ্ঠানিক ঋণের বাইরে নন-ফান্ডেড ঋণ মঞ্জুর করে সেটি অপরিশোধিত রেখে ব্যাংককে আয়বঞ্চিত করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে এমন ঘটনাও বের হয়েছে যে, বিপুল অঙ্কের ঋণ মঞ্জুর করার পর ব্যাংকের কাগজে সেই বিনিয়োগ অবমুক্ত না করেই টাকা বের করে নেয়া হয়েছে। এ ধরনের জালজালিয়াতি সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে ভূরি ভূরি ঘটছে। কিন্তু এসব উদঘাটন করার মতো অনুসন্ধান কেন্দ্রীয় ব্যাংককে করতে দেয়া হচ্ছে না। অন্য দিকে, ব্যাংকের নির্বাহীরা মালিকদের কাছে ক্রেডিট নেয়ার জন্য অনিয়মিত ঋণকে নিয়মিত দেখাচ্ছে নানা উপায়ে। ফলে দেখানো মুনাফার ৪০-৪৫ শতাংশ সরকারের কোষাগারে কর হিসাবে জমা হচ্ছে। অথচ যে মুনাফা বিনিয়োগের বিপরীতে হিসাব করা হয়েছে, তার বড় অংশই কোনো দিন ফিরে আসার মতো নয়। এভাবেই ব্যাংকের মূল কাঠামোকেই দুর্বল করে ফেলা হচ্ছে।
ব্যাংক খাতের পরিচালনা ও সুশাসনের এখন যে অবস্থা বিরাজ করছে তাতে যেকোনো দিন একাধিক ব্যাংক গ্রাহকের আমানত দিতে না পেরে অচল হয়ে যেতে পারে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক নানাভাবে ঠেকা দিয়ে পতন রোধ করতে চেষ্টা করেও পারবে বলে মনে হচ্ছে না। ফলে এখন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান একীভূতকরণের জন্য আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান হলো একটি দেশের অর্থনীতির রক্ত সঞ্চালনের মতো। এই খাতে বিপর্যয় সার্বিক অর্থনীতিতে বিপর্যয় ঘটার কারণ হতে দেখা গেছে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে। একটি পর্যায় পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে প্রকৃত হিসাব আড়াল করেও পার পাওয়া যায়। কিন্তু এক পর্যায়ে সেটি প্রকাশ হয়ে পড়ে। জরুরি সংশোধনমূলক পদক্ষেপ নেয়া না হলে ২০২০ সালের প্রথমার্ধেই তেমন একটি ঘটনা ঘটতে পারে।
কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়টা হলো সরকারের অর্থনৈতিক নীতিনির্ধারকরা উল্টোপথে হাঁটতে চাইছেন। সরকারের এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত হলো, শিল্প খাতে সুদহার ১ অঙ্কে নিয়ে আসা। এটি ঠিক যে, শিল্প খাতে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ ১ অঙ্কে আনতে পারলে সেটি উদ্যোক্তাদের জন্য সুবিধাজনক হয়। কিন্তু যেখানে বছরের পর বছর ৬ শতাংশের উপরে মূল্যস্ফীতি থাকে সেখানে ৯ শতাংশে ব্যাংককে ঋণ দিতে হলে অন্তত ৫ শতাংশে সীমিত রাখতে হবে তহবিলপ্রাপ্তি খরচ। আমানতকারীদের ৫ শতাংশ সুদ দেয়ার অর্থ হলো তাদের টাকার প্রকৃত মূল্যমান বৃদ্ধির পরিবর্তে আরো কমে যাবে।
দেশের অর্থনৈতিক চিত্রটা খানিকটা এ রকম- ব্যাংকিং খাত দুর্দশায় আটকে আছে। খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়ছে। বিদ্যমান ব্যাংকিং ব্যবস্থায় উচ্চ প্রবৃদ্ধির টেকসই লক্ষ্য নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। রাজস্ব আহরণে প্রতিকূলতার পাশাপাশি আছে পুঁজিবাজারের তীব্র সঙ্কট। রেমিট্যান্স ইতিবাচক থাকলেও, ১০ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো (প্রথম প্রান্তিক) রফতানি প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে সামষ্টিক অর্থনীতিতে আগামীতে বড় ধরনের চাপের আশঙ্কা প্রকাশ করেছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।
সংস্থার পর্যবেক্ষণ অনুসারে, অর্থনীতি যে হারে বড় হচ্ছে, রাজস্ব আহরণ সে হারে বাড়ছে না। ফলে সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা অনুযায়ী জিডিপির ১৪ শতাংশ রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে না। উন্নয়নশীল দেশে জিডিপির ১৫ শতাংশ যেখানে রাজস্ব আহরণ হওয়ার কথা, সেখানে বাংলাদেশে এই অঙ্ক মাত্র ৯ শতাংশ। গত পাঁচ বছরে জিডিপি যেভাবে বাড়ছে, আয়কর আহরণ সেভাবে বাড়ছে না। অন্য দিকে, ব্যাংকিং খাত হতাশাজনক অবস্থায় রয়েছে। এ খাতের ভঙ্গুরতা উদ্বেগজনক এক অবস্থায় চলে যাচ্ছে কিন্তু এ পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসার কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি হয়ে পড়েছে সুতাকাটা ঘুড়ির মতো। বাস্তবতার সাথে সুতার যে সংযোগ থাকে, সেটা এখানে নেই। বেসরকারি বিনিয়োগ জিডিপির ২২-২৩ শতাংশের মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। অথচ প্রবৃদ্ধি ৫ থেকে ৮ শতাংশ হয়েছে। বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহও সাম্প্রতিককালে সবচেয়ে কম। আবার ব্যক্তিরা ঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না। তারা বলছেন, লাভ করতে পারছেন না। পুঁজিপণ্য আসা নেতিবাচক হয়ে গেছে। সরকারি পর্যায়ে যারা প্রবৃদ্ধি গণনা করেন, তাদের প্রকাশ্যে এসে তথ্য-উপাত্ত মূল্যায়নের আহ্বান জানিয়েছিলেন অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। সে আহ্বানে অবশ্য সাড়া মেলেনি।
ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা বা শেয়ারবাজারের কারিগররা যখন রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক নীতি-প্রণেতা হয়ে পড়েন তখন জনস্বার্থ রক্ষা পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। বাংলাদেশ এখন তেমন এক সময় পার করছে। ব্যাংকের মালিক বা শেয়ারহোল্ডারদের জিম্মি করে নিয়ন্ত্রণ অধিগ্রহণ করে ব্যাংক থেকে তহবিল বের করা হচ্ছে। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ঋণ মঞ্জুর করতে বাধ্য করা হচ্ছে নির্বাহীদের। এই পরিস্থিতি কোনোভাবেই টেকসই ৭-৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের একটি দেশের চিত্র হতে পারে না। ইউরোপের গ্রিসে অর্থনৈতিক ধস নামার আগে এই পরিস্থিতি দেখা গিয়েছিল। এর পরের চিত্র ছিল বেতন-ভাতা সুযোগ-সুবিধা আর ভর্তুকির অব্যাহত হ্রাস এবং সম্ভব সব ক্ষেত্রে করারোপের মাধ্যমে জনজীবনকে দুর্বিষহ করে তোলা। যার ফলে বছরে কয়েকটি সরকারের পতন ঘটেছে দেশটিতে। এক মেয়াদে নির্বাচন করতে হয়েছে কয়েকবার।
বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত ও অর্থনীতির ভেতরের খবর যারা রাখেন তারা ভালো করেই জানেন কেন সরকারের জনবলের বেতন দেয়া আর জরুরি উন্নয়ন অর্থের জোগান দিতে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব তহবিলের দেড় লাখ কোটি টাকা সরকারের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে হচ্ছে, যেটি স্বাধীনতার পর কোনো সময় ঘটেনি। কেন কর্মবাজারে শিক্ষিত ছেলেমেয়েদের বেকারত্ব ও আধা বেকারত্বের অভিশাপ টানতে হচ্ছে। আইটি ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার, এমবিএ ডিগ্রিধারীদের ১০-১৫ হাজার টাকার চাকরির জন্য লাইন দিতে হচ্ছে। বিসিএসের ১৯০০ পদের জন্য চার লাখের বেশি এবং রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের সাত হাজার চাকরির জন্য ১১ লাখ বিশ্ববিদ্যালয় গ্র্যাজুয়েট কেন আবেদন করছেন?
এসব কারণে ২০২০ সাল বাংলাদেশের জন্য অর্থনৈতিক অঙ্গনে কোনো সুখবর আসবে বলে মনে হয় না। যদিও আইএমএফ বিশ্বব্যাংক এডিবি এমনকি ইকোনমিস্টও বলছে, এ সময় বাংলাদেশ ৭.৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে। এর আগের একটি লেখায় ছয় মাস থেকে এক বছর সময়ে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একটি বিপর্যয় বা ধস অনিবার্য হয়ে উঠতে পারে বলে মন্তব্য করেছিলাম। সম্ভবত সে অবস্থা আগত নতুন বছরে ঠেকানো কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।
mrkmmb@gmail.com