নেপালের কূটনীতি : জলে কুমির, ডাঙ্গায় বাঘ

কমল দেব ভট্টরাই | Jan 02, 2020 07:51 am
প্রধানমন্ত্রী কে পি অলি

প্রধানমন্ত্রী কে পি অলি - ছবি : সংগৃহীত

 

দেশে নেপাল ২০১৯ সালে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করেছিল। কিন্তু দেশের বাইরে দেশটি নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ, ইস্যু ও নানা পরিস্থিতির মুখে পড়েছিল। কমিউনিটি লিডার থেকে প্রধানমন্ত্রী হওয়া কে পি শর্মা অলির এসব ইস্যু সামাল দেয়ার সামর্থ্যের ওপর অনেকাংশে ২০২০ সালে নেপালি পররাষ্ট্রনীতির ধারাটি অবয়ব নেবে।

২০১৯ সালের শুরুতে ভেনেজুয়েলা বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়। প্রধানমন্ত্রী অলি দেশের বাইরে থাকার সময় ক্ষমতাসীন নেপাল কমিউনিস্ট পার্টির কো-চেয়ার পুস্প কমল দহল (সাধারণভাবে প্রচন্ড নামে পরিচিত), প্রকাশ্য বিবৃতি দিয়ে ভেনেজুয়েলার জনগণ ও প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেন। এতে করে স্বঘোষিত অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট জুয়ান গুইডোর প্রতি সমর্থন প্রদানকারী যুক্তরাষ্ট্র ব্যাখ্যা দাবি করে নেপাল সরকারের কাছে। অলি যদিও কাঠমান্ডুতে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের কাছে ব্যক্তিগতভাবে জানান যে প্রচন্ডের বিবৃতিতে ত্রুটি রয়েছে, কিন্তু তবুও এই ঘটনাটি এখনো দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে অবিশ্বাসের পরিবেশ সৃষ্টি করে রেখেছে।
উজ্জ্বলতর বিষয় হচ্ছে, ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে অলি অলি অংশ নেন ডাভোসে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের সম্মেলনে। এই প্রথমবারের মতো এ সম্মেলনে অংশ নিতে নেপালি প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো হলো। অলি নেপালের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও বিনিয়োগবান্ধব আইনের কথা বলে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হন। এই সম্মেলনে যোগ দেয়ার ফলে দেশেও অলির মর্যাদা বাড়ে। কারণ এটিকে নেপালের সদ্য পাওয়া রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রতি স্বীকৃতি হিসেবে দেখা হয়।

ভারতের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে মিশ্র ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্কে বেশ কিছু নতুন ইস্যুতে টানাপোড়েন সৃষ্টি হলেও কয়েকটি পুরনো দ্বিপক্ষীয় প্রকল্প ও এজেন্ডা সামনে অগ্রসর হয়েছে।
আগস্টে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এজ জয়শঙ্কর কাঠমান্ডু সফর করেন নেপাল-ভারত যৌথ কমিশনের সভায় যোগ দিতে। এতে দ্বিপক্ষীয় প্রকল্প ও ইস্যুগুলো পর্যালোচনা করা হয়। সেপ্টেম্বরে নেপাল ও ভারত ৬৯ কিলোমিটার দীর্ঘ আন্তঃসীমান্ত পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন উদ্বোধন করে। এতে ভারত থেকে নেপালে পেট্রোলিয়াম পণ্যের সাবলীল সরবরাহ শুরু হয়ে যায়। প্রকল্পটির ফলে ব্যয় হ্রাস পাওয়ার সাথে সাথে বায়ু দূষণও হ্রাস করবে। ইতোপূর্বে ট্রাকে করে পণ্যটি সরবরাহ করার ফলে পরিবেশের ক্ষতি হতো। তবে এর ফলে পেট্রোলিয়াম পণ্যে ভারতের ওপর নেপারের নির্ভরশীলতাও বাড়ল।

একইভাবে নেপাল ও ভারত দীর্ঘ দিন স্থগিত থাকার পর অরুন-৩ জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে পেরেছে। এই প্রকল্পে ৯০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হওয়ার কথা। দুই দেশের মধ্যে আরো কয়েকটি প্রকল্প আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে।
তবে নতুন কয়েকটি ইস্যু ২০১৯ সালে নেপাল ও ভারতের সম্পর্কে টানাপোড়েন সৃষ্টি করেছে। গত নভেম্বরে ভারতের রাজনৈতিক মানচিত্রে নেপালের দাবি করা ভূখণ্ড কালাপানি অন্তর্ভুক্ত করা হলে কাঠমান্ডুতে বিক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ২০১৫ সালে ভারতের অর্থনৈতিক অবরোধের পর ভারতবিরোধী বিক্ষোভ নেপালে এটিই ছিল প্রথম। নেপাল এ নিয়ে আলোচনার দাবি জানালেও তাতে অগ্রগতি হয়নি। একইভাবে নেপাল-ভারত ইমিনেন্ট পারসন্স গ্রুপের (ইপিজি) প্রতিবেদন নিয়েও কোনো ফয়সালা হয়নি।

যুক্তরাষ্ট্রের সাথেও নেপালের সমস্যা রয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাফিসিক স্ট্র্যাটেজিতে নেপালের অংশগ্রহণ নিয়ে টানাপোড়েন আছে। যুক্তরাষ্ট্র চায়, নেপাল এতে অংশ নিক। কিন্তু নেপালে এ নিয়ে বিরোধিতা রয়েছে। বলা হয়ে থাকে, এই পরিকল্পনা চীনকে সংযত করার একটি জোট। নেপাল তা গ্রহণ করতে পারে না।
যুক্তরাষ্ট্র এ নিয়ে নেপালকে রাজি করানোর অনেক চেষ্টা করলেও এখন পর্যন্ত তাতে সাফল্য আসেনি। আবার মিলিনিয়াম চ্যালেঞ্জ করপোরেশনের (এমসিসি) আওতায় মার্কিন সাহায্য নিতেও অস্বীকার করে আসছে নেপাল। নেপাল বলছে, এটি আসলে ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজির অংশ। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র তা অস্বীকার করে আসছে। এমসিসির আওতায় নেপালকে অবকাঠামো খাতে যুক্তরাষ্ট্র ৫০০ মিলিয়ন ডলার মঞ্জুরি দিতে প্রস্তাব করেছে।
২০১৯ সালে চীনের সাথে নেপালের সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ হয়েছে। অক্টোবরে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং নেপাল সফর করেন। এই সফরের সময় দুই দেশ আরো কয়েকটি চুক্তিতে সই করে। সড়ক কানেকটিভিটি, রেলওয়ে কানেকটিভিটি, টানেল কানেকটিভিটির মতো প্রকল্প নিয়ে দুই দেশ বেশ অগ্রসর হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে সরকারি পর্যায়ে সফর বিনিময়ও বেড়েছে।

তিন পরাশক্তি- ভারত, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টায় নেপাল তার কূটনীতিকে বৈচিত্র্যমুখী করেছে, অর্থনীতি বিকল্পগুলো নানামুখী করেছে। অর্থনৈতিক কূটনীতিকেই প্রাধান্য দিয়েছে নেপাল। এছাড়া যুক্তরাজ্য, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স ও রাশিয়ার মতো ঐতিহ্যবাহী উন্নয়ন অংশীদারদের সাথেও দ্বিপক্ষীয় সম্পৃক্ততা বজায় রেখেছে নেপাল।

দি ডিপ্লোম্যাট


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us